পোষ্টের টাইটেল দেখে ছবির সাথে মিল খুঁজে পাচ্ছেন না আসলে মিল খুঁজে পাওয়ার কথা না তবে কারো কারো কাছে কিছুটা অনুভব হতে পারে। মূলত এই ঘটনাটা বর্ণনা করতে গেলেও নিজের কাছে খারাপ লাগে তবুও আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছি। সম্পদের প্রতি মানুষের লোভ কতটা নিচে নামাতে পারে সেটা আমাদের সমাজের ছোট ছোট ঘটনাগুলো দেখলেই বুঝতে পারা যায়। গত মঙ্গলবারে বিকেল বেলায় আমি কুষ্টিয়া থেকে বাড়ি আসছিলাম সেই মুহূর্তে দেখতে পেলাম একটি স্থানে গ্রামের মধ্যে বেশ কিছু লোক জড়ো হয়েছে সেই সাথে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি সাথে দুই গাড়ি ভর্তি পুলিশ রাস্তার পাশ দিয়ে লোকজন দাঁড়িয়ে আছে দেখে কিছুটা কৌতূহল সৃষ্টি হলো।

প্রথমে আসলে কি ঘটনা ঘটেছে সেটা বোঝার চেষ্টা করলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো এখানে কোন মারামারি হয়েছে যার কারণে পুলিশ এসেছে কিন্তু পরবর্তীতে আবার চিন্তা করলাম যদি মারামারি হয় সে ক্ষেত্রে তো ম্যাজিস্ট্রেট আসার কথা না। রাস্তার পাশে বাইক থামিয়ে আমি স্থানীয় কয়েকজন লোকের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম কিন্তু তারাও সঠিক তথ্য দিতে পারল না শুধু রাস্তার উপর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম বাড়ির ভেতরে দুপক্ষ সামনাসামনি তর্ক করছে আর ম্যাজিস্ট্রেট তাদের সাথে কথা বলছে। রাস্তার বিপরীত পাশ থেকে একের পর এক লোক এসে সেখানে ভিড় জমাচ্ছিল।

কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে ম্যাজিস্ট্রেট বেরিয়ে আসলো আর ম্যাজিস্ট্রেট তার গাড়ি নিয়ে জায়গা ত্যাগ করল তার কিছু সময় পর কিছু পুলিশ সদস্য সেখান থেকে বেরিয়ে আসলো এবং রাস্তার উপরে যে দুইটি পুলিশের গাড়ি ছিল সে দুইটা গাড়ি সামনে চলে গেল বাকি কয়েকজন পুলিশ সদস্য জনগণের সাথে কথা বলছিল। তখন আমি আরো সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। বলা চলে যে বাড়ির মধ্যে ঝামেলা তৈরি হয়েছে সেই বাড়ির মধ্যে চলে গেলাম। একজন লোকের কাছে বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করার পর জানতে পারলাম ছবিতে যে ঘর গুলো দেখছেন এই ঘরগুলো পুরোপুরি সরকারি জায়গায় তৈরি করা হয়েছে। ছবির বাম পাশে যে পাকা বাড়ি তৈরি করা হয়েছে সেটাও সরকারি জায়গার উপর তবে সেই পাকা বাড়িওয়ালা এখন সরকারি চাকরি করে তবুও সরকারি জায়গা দখল করে আছে। তাতেও কোন সমস্যা নেই তার পাশে যে ছোট্ট ভাঙা টিনের ঘর দেখতে পাচ্ছেন সেটা এক বৃদ্ধ মহিলার। এই বৃদ্ধ মহিলাকে এখান থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।

যিনি সরকারি জায়গায় পাকা বাড়ি করেছেন তিনি সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় বেশ টাকা পয়সা খরচ করে ভুয়া কাগজের মাধ্যমে বৃদ্ধ মহিলাটিকে এখান থেকে উচ্ছেদ করছেন। বৃদ্ধ মহিলার যে কাগজগুলো ছিল সেগুলো ভালো কথা বলে নিয়ে ছিড়ে ফেলেছে আর এখন প্রশাসনের লোককে বলছে এই বৃদ্ধ মহিলার কোন কাগজ নেই নিজের নামে জাল কাগজ তৈরি করে অফিসে কিছু টাকা ঘুষ দিয়ে নিজের নামে দখল করার চেষ্টা করছে। পুরো বিষয়টা যখন জানাজানি হয়ে গিয়েছে তখন গ্রামের লোকজন বৃদ্ধ মহিলার পক্ষ নিয়ে সরকারের জায়গাটি বৃদ্ধ মহিলাটিকে বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই সবাই একসাথে জড়ো হয়েছে। সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট যখন পুরো ঘটনাটার সত্যতা পেল তখন ম্যাজিস্ট্রেট বুঝতে পারল আসলে বৃদ্ধ মহিলাটি খুবই অসহায় তাকে এই জমিটির বুঝে দেওয়া উচিত।

স্থানীয় মক্কেল কিছু টাকা খেয়েছে এবং বলছে বৃদ্ধ মহিলার ভবিষ্যতে একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে কিন্তু স্থানীয় জনগণ বলছিল সরকারি জায়গা থেকে উচ্ছেদ করার পর বৃদ্ধ মহিলাটি কোথায় যাবে তখন আর তারা কোন উত্তর দিতে পারেনি। গ্রামবাসীদের মধ্যে কয়েকজন বলছিল যেহেতু বৃদ্ধ মহিলার ঘর ভেঙে দেয়া হয়েছে তাই এই দুষ্টু লোকটির ঘর আমরা ভেঙ্গে দিব। যখনই গ্রামের লোকজন সবাই মিলে দুষ্টু লোকটির ঘর ভেঙে দেয়ার জন্য আসলো তখন পুলিশ প্রথমদিকে বাধা দিল। পরবর্তীতে সাধারণ জনগণ বলছিল হয় বৃদ্ধ মহিলার আবার নতুন করে ঘর তুলে দিতে হবে অথবা দুষ্টু লোকটির এই সরকারি জায়গা ছেড়ে চলে যেতে হবে। এক পর্যায়ে কয়েকজন লোক বৃদ্ধ মহিলার ঘরটি পুনরায় তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব নেয় এবং তার কথা অনুযায়ী গ্রামের লোকজন কিছুটা শান্ত হয়। স্থানীয় কয়েকজন সম্মানী ব্যক্তি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৃদ্ধ মহিলার নতুন ঘর তুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

তখন চিন্তা করছিলাম আসলে মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে দুষ্টু লোকটি সরকারি চাকরি করে আবার সরকারি জায়গায় পাকা ঘর তুলেছে তাতেও তার শান্তি হয়নি। তার পাশে থাকা অসহায় বৃদ্ধ মহিলাটিকে সরকারি জায়গা থেকে বেআইনিভাবে উচ্ছেদ করে দিচ্ছে। একটা মানুষ কতটা নিচু মনের হলে এমনটা খারাপ কাজ বা খারাপ চিন্তা করতে পারেন আর যে সকল সরকারি কর্মকর্তা এই কাজের সাথে জড়িত রয়েছে তারাই কতটা নিম্ন মনের মানুষ একটু চিন্তা করে দেখেছেন। এমন একজন বৃদ্ধ মহিলা যার কোন ছেলে সন্তান নেই অসহায় ভাবে সরকারি জায়গায় ছোট্ট একটি ভাঙ্গা ঘরে বসবাস করে আর অপরের সহযোগিতায় জীবন পরিচালনা করছে তার সাথে এমন কাজ কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। সেখানে যত সাধারন মানুষ ছিল সবাই দুষ্টু লোকটির বিরুদ্ধে কথা বলছিল সবার মতামত ছিল দুষ্টু চরিত্রের লোকটির এখান থেকে নামিয়ে দেওয়া হোক তার পাকা ঘরটি বৃদ্ধ মহিলার নামে করে দেওয়া হোক। মানুষ যদি বিবেকহীন না হতো তাহলে এমন একজন ভূমিহীন বৃদ্ধ মহিলার কাছ থেকে কখনোই ভূমি কেড়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করত না।

এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।

সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan

আমার পরিচয়

আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও বাইক নিয়ে ঘুরতে খুবই ভালোবাসি। মনের অনুভূতির ডাকে সাড়া দিয়ে কবিতা লিখতে পছন্দ করি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।

|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||

>>>>>|| এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<

---

---

VOTE @bangla.witness as witness

OR

SET @rme as your proxy

---

JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

Follow @amarbanglablog for last updates

---

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP	500 SP	1000 SP	2000 SP	5000 SP

---

|| Join the Discord Server for more Details ||

---