দেশের জন্য আমার অন্তহীন হাহাকার!!!

প্রতিদিন সূর্য ওঠে আর ডুবে, কিন্তু এই বিদেশের মাটিতে আমার মনে হয় আমি যেন অন্ধকারে বাস করছি। প্রবাসে থাকি বহু বছর হলো, কিন্তু মনটা এখনও পড়ে আছে বাংলাদেশের মাটিতে। দেশের আকাশ, মাটির গন্ধ, গ্রামীণ পল্লীর পথ, সবকিছু আজও আমার স্বপ্নে আসে। সেই সব স্মৃতিগুলো বুকের মধ্যে এমনভাবে গেঁথে আছে যে প্রতিবার স্মরণ করলে হৃদয়টা কেঁপে ওঠে। আমার গ্রামের বাড়ির উঠোনের কথা মনে পড়ে। ছোট্ট একটা পুকুর ছিল, যেখানে সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে বসে গল্প করতাম। এখন এই ব্যস্ত শহরে সেই প্রশান্তি কোথায়? এখানে বড় বড় দালান, অজস্র গাড়ি আর কৃত্রিম আলো, কিন্তু কোথাও নেই সেই পাখির ডাক, সবুজ ধানক্ষেতের স্নিগ্ধ বাতাস। মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ, যে স্বাদ আমি সারা পৃথিবী খুঁজেও পাইনি। যখন আমি কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফিরি, চারপাশটা একেবারে নির্জন লাগে। তখন আমার মনে পড়ে বাংলাদেশের একান্নবর্তী পরিবারের সেই হাসি-আনন্দের দিনগুলো। ছোট ছোট বিষয় নিয়ে খুনসুটি, ঈদে নতুন জামা পড়ার আনন্দ, পিঠা-পুলি বানানোর সময় মা’র ব্যস্ততা, এসবই তো ছিল আমার জীবনের আসল রঙ। বছরে একবার দেশে ফিরি। এয়ারপোর্টে নামার সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভেতরটা এক অদ্ভুত অনুভূতিতে ভরে যায়। দেশের মাটি ছুঁতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তখনই মনে পড়ে, এই আনন্দ সাময়িক। আবার ফিরে যেতে হবে। বিদেশের এই আরামদায়ক জীবন আমাকে মানিয়ে নিতে শিখিয়েছে, কিন্তু আমার শিকড় যে সেই বাংলার গ্রামে, সেই সত্য আমি কখনও ভুলতে পারি না। অনেক সময় রাত জেগে দেশের গান শুনি। “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” এই গান শুনলেই মনে হয় যেন মাটি, পানি আর বাতাস আমাকে ডাকে। আমি কি ভুলে গেছি সেই পহেলা বৈশাখের উৎসব? ঢাক-ঢোলের আওয়াজে গ্রামের পথে নাচতে নাচতে ঘুরে বেড়ানোর মজা? কিংবা গ্রামের স্কুলে পড়ার সময়ের সেই সরল দিনগুলো? না, ভুলিনি। বরং এই স্মৃতিগুলোই আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। আমার শিশুকালের নদীর ধারাটা হয়তো অনেকদিন আগেই শুকিয়ে গেছে, কিন্তু আমার মনের নদী কখনো শুকাবে না। আমি এখনও সেই শ্যামল বাংলার পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ছোট্ট ছেলেটা। এখানে বিলাসিতা আছে, কিন্তু আবেগের জায়গা নেই। এখানে অর্থ আছে, কিন্তু স্বদেশের সেই আত্মার উষ্ণতা নেই।