ক্যাপশনটি দেখে হয়তোবা ভাবছেন কি বারো বার পূর্ণ করলাম। আসলে অনেক আগে থেকেই আমার মধ্যে মানবতামূলক কাজগুলো করার প্রতি বেশ আগ্রহ কাজ করতো। অন্যদের সাহায্য সহযোগিতা করা, বন্ধু কিংবা অন্য যে কারো বিপদে পাশে দাঁড়ানো, সবাইকে সম্মানের চোখে দেখা, সর্বোপরি সকল অন্যায় কাজ (যেগুলোর কারণে অন্যের ক্ষতি হয়) থেকে দূরে থাকা এসব কাজ করার চেষ্টা করতাম। যদিও ধর্মীয় কাজগুলোর প্রতি অনীহা কাজ করে। অনীহা কাজ করলেও আল্লাহকে বিশ্বাস করি। মাঝে মাঝে ধর্মীয় কাজগুলো করে থাকি। কিন্তু সব সময় করা হয়ে ওঠে না।

মানবতামূলক কাজ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রক্তদান করা। এই বিষয়ের ক্ষেত্রে কখনো পিছপা হইনি। ইনশাআল্লাহ হবো না। তবে ইদানিং আমার মধ্যে একটি বদভ্যাস চলে এসেছে। সেটা হল ধূমপান শুরু করেছি। ধূমপানের কারণে রক্তের নিকোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে ধূমপায়ী ব্যক্তির রক্ত সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করানো যায় না। সুতরাং নেশাগ্রস্ত কিংবা অধিকমাত্রায় আসক্তি হওয়ার পূর্বেই, এই কাজটি যত দ্রুত সম্ভব পরিহার করা উচিত। যাই হোক এবার মূল কথায় আসা যাক।

গত সপ্তাহে আমি ১২ তম বার রক্তদান পূর্ণ করলাম। সেই ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষ থেকে রক্তদান কার্যক্রম শুরু করেছি। এরপর দেখতে দেখতে বারো বার সম্পন্ন করলাম বিষয়টি ভেবে মনের মধ্যে গর্ববোধ কাজ করে। অবশ্য ঢাকায় আসার পর এই প্রথম এই প্রথম রক্ত দিলাম। যে রোগীর রক্তের প্রয়োজন উনার দুজন আত্মীয় স্বজন ক্যাম্পাসে আমাদের হলে এসেছিলেন। এসে প্রথমে আমাদের হল এর একজন বড় ভাইকে ও পজেটিভ রক্ত দরকারের বিষয়টি উনি জানালেন। ও পজিটিভ ব্লাড গ্রুপের কথা শুনে ওই বড় ভাইয়ের প্রথমে আমার নামটি মাথায় চলে এসেছিল। কারণ উনি আগে থেকেই আমার রক্ত দানের বিষয় এবং রক্তের গ্রুপের বিষয়টিও খুব ভালভাবেই জানতেন। এরপর আমার কাছে গিয়ে ঘটনাটি খুলে বললেন। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওই মহিলাদের সঙ্গে রক্তদান করতে যাওয়ার পূর্বে আমাদের হলের আরো একজন বন্ধুকে সঙ্গে করে নিলাম। কারণ ঢাকার রাস্তাঘাট আমার খুব একটা চেনা জানা নেই। তাছাড়াও শুনেছি এখানে নাকি অনেক সিন্ডিকেট কাজ করে যারা রক্ত দানের জন্য নিয়ে গিয়ে অনেক সময় কিডনিও নিয়ে ফেলে। এই বিষয়টি মাথায় আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি চেষ্টা করলাম আমার সঙ্গে আরো একজনকে নিতে। বন্ধুকে নিয়ে উনাদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের প্রধান গেট থেকে বাসে করে সাভারের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সাভারের একটি ক্লিনিকে মূলত আমাকে রক্তদানের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। ক্লিনিকে যাওয়ার পর প্রথমে আমার রক্তের ক্রস ম্যাচিং সহ আরও নানা বিষয়াদি সম্পন্ন করা হলো। সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে সম্পন্ন করার পর আমার শরীর থেকে এক ব্যাগ রক্ত নেয়া হলো। গতবার রক্ত দেয়ার পর কিছুটা সমস্যা হলেও এবার অবশ্য তেমন একটা সমস্যা হয়নি।

রক্তদান কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর বাসে করে আবার ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ক্যাম্পাসে আসার সময় মনের মধ্যে অনেক ভালোলাগা কাজ করছিল। কারণটা হলো বারো তম বার রক্ত দানের মতো মহৎ মানব সেবা মূলক কার্যক্রমে নিজেকে যুক্ত করতে পারা। আসলে আমাদের সকলের উচিত এ ধরনের মানব সেবা মূলক কার্যক্রমের নিজেকে বেশি বেশি যুক্ত করা। আপনি প্রকৃতপক্ষে শিক্ষিত হতে পেরেছেন কিনা, এই ধরনের মানবতামূলক কাজে অংশগ্রহণ তার নমুনা।