আস্সালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? দোয়া করি যে যেইভাবে আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আমিও কিন্তু মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি। আজ আবারও বসে গেলাম একটি গল্প লিখতে। আজ আমি বিশ্ব প্রেমিক খালেক চাচার গল্পটির দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব আপনাদের সাথে শেয়ার করবো যার আমার গল্পটির প্রথম পর্ব পড়েছেন তারা অবশ্যই গল্পটি সম্পর্কে জানেন। আর যারা গল্পটির প্রথম পর্ব পড়েন নি তাদের জন্য প্রথম পর্বের লিং নিচে দিয়ে দেওয়া হলো।

আর এভাবেই কিছুদিন কেটে গেল। এক সময় খালেক চাচার বড় ছেলে বদলি হয়ে ঢাকায় চলে আসে এবং বাবাকে বলে তাকে বিয়ে করিয়ে দিতে। কারন তারও প্রায় বিয়ের বয়স হয়েছে। এখন কোয়াটারের লোকজন খালেক চাচাকে তার বড় ছেলের বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এক সময় খালেক চাচা, তার ছেলে আর কোয়াটারের কিছু লোক মিলে তার বড় ছেলের জন্য একটি মেয়ে দেখতে যায়। কিন্তু সেখানেও যেন কি নিয়ে গন্ডগোল হয় এবং তারা ফিরে চলে আসে। তারপর কিছুদিন না যেতেই দেখা গেল ঐ মেয়েটাকেই খালেক চাচা বিয়ে করে নিয়ে আসে। এটাওকি সয্য করা যায় বলুনতো? ছেলের জন্য যেই মেয়ে দেখলো সেই মেয়েকেই সে বিয়ে করে সেই পরিবারেই নিয়ে এলো। কি আর করার এবার যেই মেয়েকে বিয়ে করে আনলো সে আবার যেমন তেমন নয়্য। সে সহজে হাল ছেড়ে চলে যাবার মত মেয়ে নয়। আর এখানে তো ছেলে ও তার বাবার দূরত্ব আরও বেড়ে গেল। এভাবেই চলে গেল তাদের জীবনের কিছু দিন। এক সময় খালেক চাচার দ্বিতীয় পরিবারে আরও তিনটি মেয়ে হলো।

এরপর খালেক চাচার নতুন বউ দেখলো যে খালেক চাচার চাকুরী আর বেশীদিন নেই। তাই সে খালেক চাচাকে হাত করে তার চাকুরী নিজে নিয়ে নিল। আর চাকুরীর পর খালেক চাচার কোয়াটারটিও নেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এই দিকে বড় ছেলেও একটি বিয়ে করল এবং সে তার বাবার কোয়াটার তার নামে করে নিল। এক সময় খালেক চাচা দুনিয়া ও পরিবারের মায়া ত্যাগ করে চলে যায়।

তারপর খালেক চাচার ছোট বউ তার তিন মেয়েকে নিয়ে কোয়াটার ছেড়ে চলে গেল। এদিকে কপাল পোড়া খালেক চাচার বড় স্ত্রী সে না পেল খালেক চাচার ভালোবাসা আর পেল সন্তানের ভালোবাসা। তার জীবন কেটে গেল অনেক কষ্টে। সে ছেলে ও ছেলের বউর হাতে অত্যাচারিত হয়ে বাড়ি থেকে চলে গেল । কারন ছেলে আর ছেলের বউ এর অত্যাচারে ভদ্র মহিলা বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়। বেশ কিছুদিন ভদ্র মহিলা তার ভাইদের কাছে ছিল। কি আর করতে পারতো ভদ্র মহিলা? তার একটি সন্তানও যে মানুষ হয়নি। আসলে সত্য বলতে কি- কোন জাহাজের ক্যাপ্টিন যদি ঠিক না থাকে তাহলে সেই জাহাজটি কিন্তু ডুবে যায় সহজে। আর খালেক চাচার সংসারটারও তাই হয়েছে। গোড়াই তো ভালো লড়বরে আর আগাতো ভেঙ্গে পড়ে যাবেই।

এক সময় দেখা গেল বড় ছেলে তার বউ ও সস্তানদের নিয়ে বেশ ভালো দিন পার করছিল। হঠাৎ খালেক চাচার বড় ছেলে এক রোড এক্সিডেন্টে স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে মারা যায়। কথায় তো আছে মায়ের মনের কষ্ট আল্লাহর দরবারে দৌড়ে পৌঁছায়। সবাই বলে খালেক সাহেবের বড় ছেলের বেলায়ও তার হয়েছে। তবে মা কিন্তু কোন সন্তান কে মন থেকে অভিশাপ দেয় না। ভদ্র মহিলা যেই সন্তানের মৃত্যুর কথা শুনলো সেই দৌড়ে চলে আসে সন্তান কে দেখতে। এদিকে বড় ছেলের মৃত্যুর পর খালেক সাহেবের ছেলের বউ তার সন্তানদের কে নিয়ে কোয়াটার ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু সাথে করে খালেক সাহেবের প্রথম স্ত্রীকে নেন না। অবশ্য পড়ে শুনেছি ভদ্র মহিলা নাকি ছেলের শোকে সেই কোয়াটার ছেড়ে আর যান নি। কখনও কখনও কোয়াটারের সিঁড়িতে, আবার কখনও বা কারও বাসায় কাজ করে সময় কাটিয়ে দেয়। এক সময়ে অনাদর আর অবহেলায় কোয়াটারের সিঁড়িতে থেকেই তিনি দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে চলে যান।

বিশ্বাস করুন এই কাহিনীর শেষ পরিনতি টা লেখার সময় আন্টির কথা মনে পড়ে আমার দু চোখ ভিজে গিয়েছিল। শেষে আর লিখতে পারছিলাম না একজন বিশ্ব প্রেমিক বটবৃক্ষের জন্য সংসারটি ধ্বংশ হয়ে গেল। হতেও তো পারতো এই সংসারটি একটি সুখি পরিবার। যাই হোক আমার এই লেখাটি কি আপনাদের মনে কোন দাগ কাটতে পেরেছে জানাবেন। আমি অপেক্ষায় রইলাম।

কেমন হলো আমার এই বাস্তব বিশ্ব প্রেমিক খালেক চাচার বিয়ের বিশ্ব কাহিনী। লেখার চেষ্টা করেছি। তবে ভালো মন্দ আশা করি আপনাদের সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে জানতে পারবো। আজ এখানেই বিদায় নিলাম। আল্লাহ্ হাফেজ।