প্রাণ প্রিয় বন্ধুগণ, শরতের সাদামেঘের শুভেচ্ছা নিও । আশাকরি মহান আল্লাহতালার অশেষ রহমতে সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন । আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি । |
---|
আমি তখন সবে তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ছি । পড়াশোনা আমার কাছে খুব একটা সুখকর বিষয় না হলেও নতুন বই পাওয়ার সাথে সাথে বাংলা বই এর প্রতিটা গল্প এবং কবিতা পড়া হয়ে যেত । শুধু এই বইটিই আমার ছিল ভীষন পছন্দের ছিল প্রতিটা ক্লাসে । সেই হিসেবে তখনকার সবার ফেভারিট গল্প কুঁজোবুড়ি আমার পড়া হয়ে গেছে । তো এখন মুল ঘটনায় ফিরি ।
আমাদের এক আত্মীয় মারা গেছিল যার বাসা আমদের গ্রাম থেকে ৮ কি.মি . দূরে আমাদের বাড়ির সবাই সেখানে গেছি । জানাজা শেষ করে আসার সময় বিকেল প্রায় শেষের দিকে । তখন আমাদের বাড়ি থেকে যে রাস্তাটি সরাসরি ওই গ্রামে গিয়ে পৌছেছে সেই রাস্তাটি ছিল কাচা রাস্তা । আম্মু সহ অন্যরা অপর একটি রাস্তা ধরে আসবে যেদিক দিয়ে দুরুত্ব অনেক বেশী প্রায় ২২ কি.মি । তাই আম্মু চাচ্ছিলো আমি যেন আব্বুর সাথে কাচা রাস্তা ধরে সাইকেলে চড়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরি । আমি প্রথমে না যেতে চাইলেও অগ্যতা আব্বুর সাথে সাইকেলে চেপে বাড়ির পথ ধরলাম । আব্বু বিভিন্ন কথা বলতে বলতে আমাকে নিয়ে আসছিলো যেন আমি ঘুমিয়ে না পড়ি । এই অভ্যাসটা আমার খুব ভালই ছিল । নানা বাড়ি যেতে যেতে কয়েকদিন ঘুমিয়ে পড়ছি এমন রেকর্ড ও ছিল । কিছুদূর আসার পরে আব্বু আমাকে জিজ্ঞেস করছে " বাবু তুমি কুঁজো বুড়ির গল্প পড়েছ"? । আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম । আব্বু তখন হাতের ইশারায় সামনে কিছুটা দূরে দেখিয়ে বলল, "ঐ দেখ সেই কুঁজো বুড়ি আসছে" । আমি তো দেখে মোটামুটি হতভম্ব । বইয়ের কুঁজো বূড়ি এখন আমার সামনে । মনে মনে সেই কি আনন্দ । আজ সবার সাথে গল্প করে বলবো আমি কুঁজো বুড়ি দেখে এসেছি । আমি আরো বেশী বিশ্বাস করেছিলাম ঐ বুড়ির সাথে সাথে একটা কুকুর ও আসছিলো । আর কুকুরটির ছিল পিছের একটা ঠ্যাং ভাংগা । আব্বু ওইদিকে দেখিয়ে বলল, " এই কুকুরটার নাম বঙ্গা, এর পিছের ঠ্যাং ভাঙ্গা এই জন্য এর নাম বঙ্গা রেখেছে । আর ভাগ্যক্রমে বুড়ির কাকে ছিল এক আটি পুঁই শাকের ডাটা । আব্বু তখন আমার সামনে নতুন একটা গল্প ফেঁদে ফেললো । আব্বু বলল, কুঁজো বুড়ি এখন পুঁইডাঁটা নিয়ে নাতনীর বাড়ি যাচ্ছে । এর আগে শেয়াল আর বাঘের সামনে পড়েছিল আজকেও সন্ধ্যা লেগে যাচ্ছে তাই বঙ্গা কে সাথে নিয়েছে । যেন বাঘের হাত থেকে বাঁচাতে পারে । শিয়ালটা তো এর আগেই মেরে ফেলেছে । আমি তখন দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেললাম । আর ভাবছি যে বাড়ি যেতে আর কত সময় বাকি । এই গল্প গুলো কখন পাড়ার সব খেলার সাথীদের সাথে বলব ।
সন্ধ্যার কিছুটা আগেই আমি বাড়ি পৌঁছেগেলাম । আর বাড়ি এসেই সামনে যাকে পেয়েছি বলে বেড়িয়েছি বইয়ের কুঁজো বুড়িকে আমি দেখে এলাম আজকে । আমার মনে হলো সবাই বিশ্বাস ও করে নিল । আমাদের সময় হয়তো সবাই আমার মতই সহজ সরল ছিল ।
কিছুটা রাত হয়ে গেল আম্মু সহ অন্যরা বাড়ি ফিরতে । তখন আমদের বাড়ির নিয়মিত সদস্য ছাড়াও ফুফুরা এসেছিল আম্মুর সাথে । যখন সবাই এক সাথে বসে গল্প আলাপ করছিলো সেই সময়ে আব্বু হঠাৎ আমার কুঁজো বুড়ি দেখানোর গল্পটিও বলতে শুরু করলো । "যাহা শুনে আমি অত্যান্ত শরমিন্দা হইলাম" । আব্বু বলল " সহড়া বাড়ি থেকে এক বুড়ি ডাঁটা নিয়ে বাদীয়া পাড়ার দিকে যাচ্ছিলো আমি মারুফ কে দেখিয়ে বললাম এইটা হলো তোমাদের বইয়ের কুঁজো বুড়ি । আর সাথের ঠ্যাং ভাঙ্গা কুকুরটা হলো বঙ্গা মারুফ তা শুনেই বিশ্বাস করে নিল" । সেখানে আমার ফুপাতো বোন ও ছিল যার কাছে আমি কিছুক্ষণ আগেই অতিগর্ব ভরে বলে এলাম তুমিতো আমাদের সাথে এলে না । আসলে কুঁজো বুড়ি দেখতে পাইতা । সে কিছুটা আফসোস ও করলো । আর এখন আমার দিকে তাকিয়ে কি অট্টোহাসিটাই না দিলো । আমি শুধু ভাবতে লাগলাম পাড়ার ছেলে গুলো যখন এই ঘটনার সত্যতা জানতে পারবে তখন আমার কি হবে । এত বড় মুখ করে যে গল্প করে এলাম ।
আমার আজকের লিখা এখানেই সমাপ্ত করছি । ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনা করি ।
ধন্যবাদান্তে | @maruffhh |
---|