ঈদের ঠিক দুই দিন আগে অপ্রত্যাশিতভাবে যেতে হয়েছিল হাসপাতালে

in hive-129948 •  3 years ago  (edited)

হ্যালো আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

Picsart_22-07-11_22-20-24-563.jpg

আর একদিন পরেই ঈদের ছুটি শুরু হয়ে যাবে হাতে খুব একটা সময় নেই। ব্যক্তিগত কোন ব্যস্ততার কথা বলছি না। ইতিমধ্যে আপনারা জেনেছিলেন জুন মাসের ক্লোজিং না হওয়ার কারণে বন্যা কবলিত এলাকায় আমাকে কয়েকদিন ঝটিকা অভিযান চালাতে হয়েছিল। সেটা করতে গিয়ে আমি নিজেও খানিকটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। যাইহোক শেষ পর্যন্ত সামান্য শারীরিক অসুস্থতা আমাকে খুব একটা ঘায়েল করতে পারেনি। অসুস্থতাকে সাথে নিয়েই ঈদের আগে ঝামেলাগুলো মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছিলাম। তাই সেদিন অনেক রাত অব্দি মার্কেটে থাকতে হয়েছিল কলিগদের সাথে।

কলিগদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে ঘুরে অনেক ব্যস্ত সময় পার করছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে হাসপাতাল থেকে আকস্মিকভাবে আমার কাছে একটি ফোন কল আসে। ওপাশ থেকে যে নিউজটা আমি পেয়েছি সেটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। তাই দ্রুত আমার সহধর্মিনী কে হাসপাতালে যেতে বলে আমিও কাজগুলো তাড়াতাড়ি শেষ করার চেষ্টা করলাম। তারপর দ্রুত ডক্টরের একটি এপয়েন্টমেন্ট ঠিক করে তাদেরকে ডক্টর দেখাতে বললাম। ভাগ্যিস আমার কাছে সেই ডক্টরের এটেন্ডেন্স এর মোবাইল নম্বর ছিল। তা না হলে সিরিয়াল জটিলতার জন্য অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। যাইহোক ডক্টর দেখাতে বলে আমিও কাজগুলো তাড়াতাড়ি সেরে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দিলাম।

20220711_215837.jpg
20220711_215810.jpg

হাসপাতালের দিকে রওনা দেয়ার সময় চলতি পথে বেশ কয়েকবার তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ডক্টর দেখানোর পর ডক্টর সরাসরি কেবিনে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেখানে ভর্তি করিয়ে সঙ্গে সঙ্গে স্যালাইন লাগিয়ে দিয়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করেছে। কিছু মেডিসিন দেয়ার পর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই নাকি ওটি করাতে হবে। এতক্ষণ ধরে আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো শুধু বলে যাচ্ছি। পেশেন্ট কে এবং তার কি হয়েছিল তা একদমই বলতে ভুলে গিয়েছি।
আমার স্ত্রীর একমাত্র ছোট বোন সে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। হঠাৎই অল্প কিছু ব্লিডিং শুরু হয়েছিল এক মাস আগে। ডক্টর চেকআপ করে ফলোআপে রেখেছিল তিন সপ্তাহ। কিন্তু শেষ রক্ষার আর হলো না। শেষ পর্যন্ত ঐদিন ডক্টর দেখে বিভিন্ন টেস্ট করার পর বলে দিল বাচ্চার হার্টবিট পাওয়া যাচ্ছে না। আর দেরি করা সম্ভব হবে না পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। ডক্টর যা ভালো বোঝে আমাদেরও সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়েছিল।

যাত্রাপথেই বেশ কয়েকবার ফোনে কথা হয়েছিল। জানতে পারলাম ওটিতে নেয়া হয়েছে। তাই সরাসরি আমি হাসপাতালে পৌঁছেই অপারেশন থিয়েটারের সামনে গেলাম। ওটির সামনে এসে জানতে পারলাম এখানকার কাজ শেষ হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারে কাজ হয়ে যাওয়ার পর পেশেন্টকে কেবিনে দেয়া হয়েছে। আমি এখন দ্রুত কেবিনের দিকে যেতে লাগলাম।

20220711_233417.jpg
20220711_233905.jpg

বেশি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে মানুষ যে ভুল করে বসে আজকে সেটা আরেকবার বুঝতে পারলাম। ৩০৩ নম্বর কেবিন খুঁজতে গিয়ে আমি তিন তলায় না উঠে দুই তলায় গিয়ে ২০৩ নম্বর কেবিনে ঢুকে গিয়েছিলাম। কেবিনে ঢুকে দেখি ভিতরে সব অন্য লোকজন আমি হতভঙ্গ হয়ে বেরিয়ে আসলাম। দ্রুতগতিতে তিন তলায় উঠে ৩০৩ নম্বর ক্যাবিনে ঢুকে দেখলাম সেখানে সবাই উপস্থিত আছে।

20220711_221346.jpg

কেবিনে আসার পর আমার সেদিনের ঘটনা ও সাথে আগের ঘটনাগুলো মনে পড়ে খুব খারাপ লাগলো। এইবার নিয়ে ওর চতুর্থ বারের মতো মিসক্যারেজ হয়ে গেল। একটা মেয়ের বিয়ে হওয়ার পর প্রথম স্বপ্ন থাকে কখন সে মা ডাক শুনতে পাবে। এইবার নিয়ে সে চতুর্থবারের মতো অনেক স্বপ্নের জাল বুনেছিলো। কিন্তু প্রত্যেকবারেই তৃতীয় মাস পার হওয়ার পর অনাকাঙ্ক্ষিত সেই ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিধাতার কি নির্মম পরিহাস এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমি এই কথাগুলো ভাবতে লাগলাম।

অনেক রাত অব্দি হাসপাতালে থাকার পর যখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছিল তখন বাসায় ফিরে আসি। পরের দিন খুব তাড়াতাড়ি হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলাম। যেহেতু আমাকেও কিছু ব্যস্ততা সেরে ঈদ উদযাপনের জন্য গ্রামে যেতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি হাসপাতালে বিল পরিশোধ করে ওদের বাসায় পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করলাম। অতঃপর আমিও বাজারে কিছু কেনাকাটা করে বাসায় পৌঁছে গেলাম। একদিন পরেই ঈদ আমিও চেষ্টা করলাম নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করার।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

ডিভাইসস্যামসাং গ্যালাক্সি A-10
ফটো@mayedul
লোকেশনw3w location

Logo-1.png

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

আসলে ভাই সমস্যা কখনো বলে আসে না। হঠাৎ করেই এইরকম চলে আসে। আপনার বউয়ের বোনের কথা শুনে বেশ খারাপ লাগল। এই সময়ে এইরকম সত্যি মেনে নেওয়া কষ্টকর। যাইহোক সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আশাকরি সে এখন সুস্থ‍্য আছে।।

হ্যাঁ শুধু এটুকুই প্রার্থনা আল্লাহ যেন তাকে ধৈর্য ধারণ করার শক্তি দান করেন।

আসলে ভাইয়া বিপদ কোন সময় বলে কয়ে আসেনা। প্রতিটি মেয়েরই ইচ্ছা থাকে কিন্তু যে ঘটনাটি আপনার স্ত্রীর একমাত্র ছোট বোনের সাথে হয়েছে সেটা সত্যি দুঃখজনক। তিন মাস অন্তঃসত্ত্বা থাকার পরে যখন বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে যায় তখন তা একটা মেয়ের জন্য সত্যিই অনেক কষ্টের ব্যাপার হয়। আপনার এই পোস্টটি পড়ে আমার কাছে অনেক খারাপ লেগেছে ভাইয়া।

আরো বেশি খারাপ লাগে এইবার নিয়ে চতুর্থবারের মতো এইরকম ঘটনা ঘটলো।

আসলে ভাই বিপদের কোন হাত পা নাই কখন যে আসে তার কোন ইয়ত্তা নাই। আসলে ঈদের ঠিক আগের মুহূর্তে এ ধরনের একটি ঘটনা ঈদের আনন্দ টুকে অনেকটা ম্লান করে দিয়েছে। আসলে এ ধরনের একটি ঘটনা খুবই দুঃখজনক তা সহজে মেনে নেয়া যায় না। আল্লাহ আপনার শালীকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দিক। আসলে মানুষের জন্য এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা আসে।

এখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আমাদের কিইবা করার আছে। আল্লাহ চাইলে সবকিছু সম্ভব আবার না চাইলে কিছুই হয় না।