রাগ অভিমান নিয়েই তো ভালোবাসা।
.
ঘুম ভেঙে বিছনায় শুয়ে আছি। চোখ থেকে ঘুমের
রেশ কাটেনি। চোখের উপর রোদের আলো
পরতেই চোখ মেলে তাকালাম। চোখ মেলে
তাকাতেই অধরা আমার পাশে বসে বলল
-ঘুম ভাঙল?
-না। এমনিই তাকিয়ে আছি।
-তো এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? ঘুম ভেঙে এভাবে
ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে!!
-সামনে এমন একজন বসে থাকলে এভাবে ন তাকিয়ে
উপায় আছে!! তাইত এভাবে তাকিয়ে থাকি আর প্রেমে
পরি।
-ইশ। শখ কত।
-অনেক শখ।
-এখন উঠ। অফিসে যাবেনা?
অধরার কথায় আমি চুপ করে থেকে হাত ধরে টান দিয়ে
বুকে নিয়ে বললাম
-না। আজকে অফিসে যেতে ইচ্ছা করছে না।
অধরা আমার কপালে হাত দিয়ে বলল
-কেন অসুখ করেছে!!!
আমি হেসে বললাম
-হ্যা। তবে প্রেমের অসুখ।
.
অধরা বিছানা ছেড়ে উঠে বলল
-সকাল সকাল এত প্রেম দেখাতে হবেনা। অফিসে
যেতে হবে।
-আজকে অফিসে যাব না। আজকে না গেলেও চলবে।
-উঠে নাস্তা করে নাও।
-তুমি যাও। আমি আসছি।
-আচ্ছা।
.
অধরা বেডরুম থেকে চলে গেল। প্রতিদিন অফিসে
যেতে না চাইলে অধরা রাগ দেখায় আর নাহয় ধাক্কা দিয়ে
জোর করে উঠিয়ে দেয়। কিন্তু আজ সেসব দেখলাম
না!! আজ এমন হওয়ার কারন বুঝতে পারছিনা। আসলে
মেয়েদের কিছু ব্যাপার বুঝা মুসকিল।
.
হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করতে বসলাম। অধরা আমার সামনে বসে
আছে। আমি তার ব্যাপার বুঝার চেষ্টা করছি। অধরা হঠাৎ বলল
-সত্যি তুমি আজ অফিসে যাবেনা?
-না। যাবনা। কেন?
-এমনিই। তুমি খাও।
.
নাস্তা সেরে রুমে গিয়ে আবার শুয়ে পরলাম। আজ অলসতা
বেড়ে গিয়েছে। অফিস ছুটি থাকলে যেন অলসতা
বেড়ে যায়। সেদিন ঘুম যেমন বাড়ে তেমন অলসতাও
বাড়ে।
.
ফোনের দিকে তাকিয়ে অলসতা ছেড়ে গেল। বস
ফোন দিয়েছে। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে বলল
-রাব্বি, তুমি কোথায়?
-আমিত বাসায়।
-বাসা থেকে বের হওতো।
-কেন!! আজ তো অফিস ছুটি আমার।
-আরে অফিসে না। এমনিই একটা কাজ আছে।
-আচ্ছা বের হচ্ছি।
.
বিছানা ছেড়ে উঠে তৈরি হলাম। রুম থেকে বের হতেই
অধরা সামনে এসে বলল
-কোথায় যাচ্ছ?
-একটু বাইরে যাচ্ছি।
-আমিও যাব। চল যাই।
-তুমি কোথায় যাবে?
-শপিং এ যাব তোমার সাথে।
-আমিত শপিং এ যাব না। আমার অফিসে কাজ আছে।
-তোমার না অফিস ছুটি আজ।
-বস ফোন দিয়েছিল। যেতে হবে।
অধরা মন খারাপ করে বলল
-আচ্ছা যাও।
আমি অধরার হাত ধরে বললাম
-তোমাকে নামিয়ে দিয়ে যাই চল।
.
অধরা চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসল। আমি পাশে বসে
নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। আজকে আমি নিজেই
তাকে নিয়ে শপিং এ বের হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বস
ফোন করায় সেটা হচ্ছেনা। বস আর বউ দুটো একসাথে
সামলান একটু কষ্টসাধ্য।
.
অধরাকে একটা শপিংমলের সামনে নামিয়ে দিলাম। অধরাকে
ডেকে বললাম
-এই। আমি কাজ শেষে এসে তোমার সাথে আবার বের
হব। তুমি বাসায় চলে যেও।
-আচ্ছা।
.
একটা রেস্টুরেন্ট ঢুকতেই বস আর তার বউকে
দেখতে পেলাম। বসের বউ বললে ভুল হবে, কারন তারা
এখনো প্রেমিক প্রেমিকা। বিয়ে করবে, কিন্তু এখন'ও
করেনি।
আমি তাদের সামনে যেতেই বস বলল
-বস।
-জ্বি স্যার।
-তোমরা কথা বল। আমি আসছি।
.
বস উঠে যাওয়ার কারন বুঝতে পারলাম। কয়েকদিন তাদের
ঝামেলা চলছে। কালকে বস আমাকে সব বলেছে। আর
ঝামেলা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য'ই আমাকে ডেকেছে।
.
বস যাওয়ার পরে অনেক্ষন কথা বলার পরে বসের
প্রেমিকাকে বুঝাতে সক্ষম হলাম। এখন আর ঝামেলা
হওয়ার কথা না। আমি বসকে ডেকে বললাম
-স্যার। আপনারা কথা বলুন। আমাকে যেতে হবে।
-কিছু খেয়ে যাও।
-আরেকদিন খাব। অধরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
ওকে নিয়ে বের হতে হবে।
.
বাসায় এসে অধরাকে খুঁজতে থাকলাম। কয়েকবার ডাকার
পরে অধরা রেগে বলল
-বাসায় আসলি কেন!!
অধরার এমন কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। অধরা
আমাকে তুই তোকারি করে বলছে কেন!! খুব রেগে
গেলে আর খুব রোমান্টিক হলে আমরা তুই তোকারি
করে বলি। কিন্তু এখন রোমান্টিক হয়ে বলছেনা। তাহলে
রেগে এমন করছে!!
.
অধরার হাত ধরতেই অধরা রেগে বলল
-ছুটির দিনে তোর যে কাজ সেই কাজ করতে যা। বাসায়
আসলি কেন?
-কি হয়েছে তোমার!! এমন করে কথা বলছ কেন?
-কেন বলছি বুঝিসনা!! রেস্টুরেন্ট অন্য একটা মেয়ের
সাথে প্রেম করার সময় মনে থাকেনা?
এতক্ষনে রাগের কারন বুঝতে পারলাম। অধরা আমাকে
বসের প্রেমিকার সাথে দেখেছে। তাই এত রাগ।
আমি অধরার কাধে হাত রেখে বললাম
-আরে ওটা আমার প্রেমিকা না। ওটা বসের...
আর কিছু বলার আগেই অধরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে রুম
থেকে বের করে দিল। বের করে দিল বলতে
নিজেই বেড়িয়ে আসলাম। নাহলে সে বাসা থেকে
বেড়িতে যাবে।
.
অনেক্ষন হল রুমের বাইরে বসে আছি। অধরা দরজা
লাগিয়ে ভিতরে বসে আছে। আমি তাকে কিছুতেই কিছু
বুঝাতে পারছিনা। দরজাও খুলছে না। তাই চুপ করে বসে
আছি।
.
অধরা দরজা খুলতেই দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
এতক্ষনে তাহলে রাগ ভাঙল। অধরার সামনে দাঁড়িয়ে আমার
নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছে। অধরার চোখ ফুলে লাল
হয়ে আছে। বুঝতে পারছি এতক্ষনে অনেক
কেঁদেছে। অধরাকে ব্যাপারটা আগে না বলায় কত বড় ভুল
করেছি সেটা বুঝতে পারছি।
.
অধরা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে বলল
-তোমার বস ফোন দিয়েছিল। কালকে আমাদের ডিনারের
দাওয়াত দিয়েছে।
তাহলে বস ফোন করেছিল। আর সেই সবকিছু
বলেছে।
আমি অধরার হাত ধরে বললাম
-এতক্ষনে তাহলে বুঝতে পেরেছ আসল কাহিনি!! না
বুঝেই তুমি কষ্ট পেলে!!
.
অধরা কিছু না বলে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরল। এখন তার
কান্না থামাচ্ছিনা। এই কান্নায় তার রাগ, অভিমান, কষ্ট সব ভুলে
যাবে। আমি শুধু অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। আমিও কিছু
বলতে পারছিনা। অধরাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে
নিয়েছি।
//