প্রতিদিন সকালে, যখন আমি স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতাম, তখন আমাদের বাড়ির পাশে একটি ছোট্ট মোড় ছিল। এখানে গ্রামের লোকজন তাদের দোকান বসাতেন, এবং একটি দোকানে বিক্রি হত ভাপা পিঠা। এটি ছিল এক ধরনের জনপ্রিয় প্রাতঃরাশ, যার খোঁজ পাওয়া যেত গ্রামে গ্রামে। পিঠার সেই গরম গন্ধ শীতের সকালে আমার মনকে আকর্ষণ করত, যেন মিষ্টি স্বাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিল।স্কুলে যাওয়ার সময়, আমি প্রতিদিন ওই দোকানের সামনে দাঁড়াতাম, এবং আমার চোখ শুধু একটিই জিজ্ঞাসা করত—আজ কি ভাপা পিঠা থাকবে? পিঠাটি দেখতে খুবই আকর্ষণীয় ছিল। মোটা তাম্বুলের পাতা অথবা কলাপাতা থেকে তৈরি একটি প্যাকেটের ভিতরে লুকানো থাকত নরম, মিষ্টি, গরম ভাপা পিঠা। তার সাথে মুগডাল এবং নারকেলের মিশ্রণ, যা একে আরও সুস্বাদু করে তুলত।
অবশ্যই, দোকানদার ভাইয়াও তখন আমাকে চিনে ফেলেছিলেন। আমি একটু দেরি করলেই তার কাছ থেকে শুনতে পেতাম, "আজ আবার হালকা কুয়াশা, তাই পিঠার স্বাদ বেশি ভালো হয়েছে।" এই কথাগুলি মনে পড়ে এখন, কারণ তার আন্তরিকতা ও হাসিমুখটি যেন ভাপা পিঠার থেকেও বেশি মিষ্টি ছিল।তবে, ভাপা পিঠা খাওয়ার অনুভূতি শুধু স্বাদ ও গন্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং, সেই মুহূর্তটি ছিল এক ধরনের ছোট্ট আধ্যাত্মিক অনুভূতি। যখন আমি পিঠা খেতাম, তখন কেবল খাওয়ার আনন্দই ছিল না, সেই সময়ের কোলাহল, বন্ধুবান্ধবদের হাসি, তাদের সাথে স্কুল যাওয়ার পরিকল্পনা—সব মিলিয়ে এক আশ্চর্য অনুভূতি তৈরি হতো। সেই মুহূর্তগুলো ছিল আমার শৈশবের অমূল্য স্মৃতি।
আমরা, যারা একসাথে স্কুলে যেতাম, সবাই মিলে পিঠা খেতাম। কেউ একজন আরও বেশি মিষ্টি খেতে চাইত, কেউ চাইত একটু বেশি নারকেল। এবং সেই খাওয়া শেষে আমাদের মন পূর্ণ হত অদ্ভুত এক আনন্দে। স্কুলে যাওয়ার আগে যদি ভাপা পিঠার স্বাদ পেতাম, তবে সারাদিনের ক্লাসেও মনের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট আনন্দ থাকত, যেন সকালে খাওয়া সেই পিঠা আমার সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্তে থাকত।
শীতের সকাল ছিল আমাদের জীবনের এক বিশেষ সময়, যেখানে বিদ্যালয়ের পাঠ্যবই ও পড়াশোনার চাপে তেমন কিছু মনে হতো না। শীতের সকালে সেই ভাপা পিঠার সাথে অতীতের স্মৃতিগুলি জড়িত ছিল, যা কোনোদিন ভোলার নয়। এখনো যখন শীত আসে, সেই পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে, আর এক মুহূর্তে আমি ফিরে যেতে চাই সেই ছোট্ট গ্রামটিতে, সেই ভাপা পিঠার দোকানে, সেই শীতের সকালে।
এত বছর পরেও যখন আমি শহরের ব্যস্ত জীবনে চলে এসেছি, তখনও গ্রামে শীতের সকালে ভাপা পিঠা খাওয়ার সেই অনুভূতিগুলি মনে পড়ে। আমার কাছে এটি এক ধরনের নির্দিষ্ট মিষ্টতা এবং শৈশবের সঙ্গে সম্পর্কিত স্মৃতি। সেই ছোট্ট দিনের আনন্দের তুলনা আজকের ব্যস্ত জীবনে আর কোথাও নেই।
এভাবে, ভাপা পিঠা শুধু একটি খাবার ছিল না, বরং এটি ছিল শৈশবের নিরবধি সঙ্গী, এক ধরনের অনুভূতি যা প্রতিটি শীতের সকালে মনে পড়ে।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
X-Promotion
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কুয়াশা ভেজা সকালে মায়ের হাতে গরম গরম ভাপা পিঠা খেতে খুব ভালো লাগে। আপনার শীতের সকালে স্কুল পথে ভাপা পিঠার গল্প পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই। বেশ সুন্দর গল্প শেয়ার করেছেন আপনি। আপনার গল্প পড়ে শৈশবের অনেক কথা মনে পড়ে গেলো আমার। ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর গল্প শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিক বলেছে ভাই শীতের সকাল ছিল জীবনের এক দারুণ সময়। শীতের সকালে এই রকম পিঠা খাওয়ার অনূভুতি আমারও আছে। আহ কী সেই দিনগুলো। আপনি মনে করিয়ে দিলেন। বেশ ভালো লাগল আপনার পোস্ট টা পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit