আজকে আমি আপনাদের সামনে একটি নাটকের রিভিউ নিয়ে হাজির হয়েছি। নাটকের নাম হচ্ছে কাবিন। এই নাটকটি কিছুদিন আগে রিলিজ হয়েছে। এই নাটকটি অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। যাইহোক এই নাটকের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছে জাহের আলভি এবং অহনা রহমান। এই নাটকটি বেশ শিক্ষনীয় একটি নাটক,তাই দেখতে খুব ভালো লেগেছে আমার কাছে। মাঝে মধ্যে সময় পেলে আমি বাংলা নাটক দেখি। একসময় হিন্দি মুভি অনেক দেখা হতো, তবে এখন এতোটা সময় নিয়ে মুভি দেখার সময় হয়ে উঠে না। তাই বিনোদনের জন্য অল্প সময়ে বাংলা নাটক দেখা হয়। যাইহোক আপনাদের সাথে এই নাটকের রিভিউ শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করি আপনাদের কাছে খুব ভালো লাগবে।

নাটকের নায়ক আলভি এবং নায়িকা অহনা হচ্ছে স্বামী স্ত্রী। আলভির চাকরি চলে গিয়েছিল, তাই কিছুদিন ধরে সংসারে অভাব অনটন দেখা দিয়েছে। এমনই একদিন ঘরের মধ্যে রান্না করার মতো কিছুই ছিলো না। ক্ষুধার যন্ত্রণায় আলভির মা এবং বউয়ের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আলভি বাজার থেকে খালি ব্যাগ নিয়ে বাসায় ফিরে। কারণ তার কাছে কোনো টাকা ছিলো না নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য। তার চাকরি ছিলো না বলে কোনো দোকানদার তাকে বাকিতে কিছু দিতে রাজি হয় না। যাইহোক আলভি খালি হাতে বাসায় ফেরার পর,অহনার সাথে তুমুল ঝগড়া হয় এসব নিয়ে। এক পর্যায়ে অহনা বলে যে এই অভাবের সংসার সে করবে না। আলভি এবং আলভির মা অহনাকে আটকাতে চেয়েও পারেনি।

ইউটিউব থেকে স্ক্রিনশট নেওয়া হয়েছে

আলভি বলেছিল তাড়াতাড়ি একটি চাকরির ব্যবস্থা করবে এবং তারপর তাদের আর কোনো অভাব অনটন থাকবে না। কিন্তু অহনা তবুও নিজের বাবার বাড়িতে চলে যায়। যাওয়ার পর অহনার দুই ভাই এবং ভাবীদের কুবুদ্ধিতে, অহনা আলভিকে ডিভোর্স দিতে রাজি হয় এবং কাবিনের ৫ লাখ টাকাও আদায় করার জন্য প্ল্যান করে। অবশেষে অহনাদের বাড়িতে বিচার বসানো হয় এলাকার গণ্যমান্য লোক এবং মুরুব্বীদের নিয়ে। বিচারে অহনা আলভির বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়। বলে যে আলভি নেশাখোর,জুয়াখোর এবং অহনাকে মারধর করে। আলভি ভীষণ কষ্ট পেয়ে অহনার দেওয়া মিথ্যা অপবাদ স্বীকার করে নেয় সবার সামনে। তারপর আলভি তাদের বাড়িঘর ও তার মায়ের অলংকার বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা দিয়ে দেয় এবং তাদের ডিভোর্সের কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়।

ইউটিউব থেকে স্ক্রিনশট নেওয়া হয়েছে

কাবিনের ৫ লাখ টাকা অহনার ভাই ভাবীরা ভাগ করে নিয়ে যায় এবং বলে যে ধুমধাম করে অহনার বিয়ে দিবে তারা। কিন্তু এরপর শুরু হয়ে যায় অহনার উপর পৈশাচিক অত্যাচার। তারা দিনরাত অহনাকে দিয়ে পরিশ্রম করায়, খাবার দেয় না ঠিকমতো এবং মারধরও করে। অহনার বাবা মারা যাওয়ার পর তার দুই ভাই, অহনাকে বাসা থেকে বের করে দেয় এবং এরপর সে কিছুটা পাগলের মতো হয়ে যায়। রাস্তার ময়লা খাবার কুড়িয়ে খায়। এদিকে বাড়িঘর বিক্রি করে আলভি তার মা'কে নিয়ে অন্য এলাকায় চলে গিয়ে, ব্যবসা বাণিজ্য করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। অহনা যখন রাস্তা থেকে ময়লা খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছিলো, তখন আলভির সাথে দেখা হয়ে যায়। এরপর কি হলো সেটা জানতে হলে আপনাদেরকে অবশ্যই নাটকটি দেখতে হবে।

ইউটিউব থেকে স্ক্রিনশট নেওয়া হয়েছে

কথায় আছে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। আমরা সাধারণত যেমন কর্ম করি তেমন ফল পেয়ে থাকি। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হচ্ছে মধুর সম্পর্ক। স্বামীর খারাপ সময়ে স্ত্রীর উচিত সাপোর্ট দেওয়া। পক্ষান্তরে স্ত্রীর খারাপ সময়ে স্বামীর উচিত সাপোর্ট দেওয়া। কিন্তু এই নাটকে দেখলাম সংসারের অভাব অনটন দেখে অহনা বাসা থেকে চলে যায় একেবারে। এরপর কাবিনের টাকা আদায় করার জন্য, অহনার পরিবার আলভিকে সমাজের চোখে একেবারে খারাপ প্রমাণিত করে। বাস্তবেও কিন্তু এমনটা দেখা যায়। কাবিনের টাকা যোগাড় করতে না পেরে অবশেষে বাড়িঘর বিক্রি করতে হয়। অনেক কষ্ট নিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যায় তারা। পরবর্তীতে অহনা হাড়ে হাড়ে টের পায়, সে কতো বড় ভুল করেছে জীবনে। আসলে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ছাড় দেয়, কিন্তু ছেড়ে দেয় না। অহনা তার পাপের শাস্তি ঠিকই পায়। সুতরাং কারো সাথে অন্যায় করার আগে, হাজার বার আমাদের ভাবা উচিত। কারণ অন্যকে কষ্ট দিলে এবং অন্যের সাথে অন্যায় করলে,শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে। সেটা ইহকাল এবং পরকালেও। নাটকটি বেশ শিক্ষামূলক। আমাদের উচিত এই নাটকটি দেখে শিক্ষা নেওয়া। সবাই এককথায় দুর্দান্ত অভিনয় করেছে। সব মিলিয়ে নাটকটি বেশ উপভোগ করেছি।

আমার রেটিং