লাইফস্টাইল পোস্ট || জীবনে প্রথম বারের মতো রক্তদানের অভিজ্ঞতা এবং অনূভুতি

in hive-129948 •  last year 

আসসালামু আলাইকুম,

আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুরা ,আপনারা সবাই কেমন আছেন ? আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে খুব ভালো আছি।



প্রতিদিনের মতো আজকেও আমি আপনাদের সামনে আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। গত মাসের ২৮ তারিখ জীবনে প্রথম বারের মতো রক্তদান করলাম। এই তারিখটা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ এর আগে পরিচিত কয়েকজনকে রক্তদান করার কথা ছিলো। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজন না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত রক্তদান করা হয়নি। যাইহোক মূল কথায় ফেরা যাক। আমার এক বন্ধুর ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট ছিলো ৫ মাসের। তো সেই বন্ধু তার ওয়াইফকে নিয়মিত ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতো চেক-আপ করাতে। প্রথমে আমাদের নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া তে সবচেয়ে জনপ্রিয় পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একজন ডক্টরকে দেখাতো। পরবর্তীতে কয়েকমাস এর জন্য সেই ডক্টর আমেরিকায় চলে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ডক্টর পরিবর্তন করতে হয়। তারপর অল্প একটু দূরে নারায়ণগঞ্জের সলিমুল্লাহ রোডের ডন চেম্বারে অবস্থিত মেডিস্টার হসপিটালের একজন অভিজ্ঞ ডক্টরকে দেখায়।


Notes_231014_121708_201.jpg

Notes_231014_121706_ce7.jpg


কিছুদিন পর আলট্রাসাউন্ড করার পর ডক্টরের কিছুটা সন্দেহ হয়। তখন ডক্টর ওদেরকে বলে যে, হয়তো বাচ্চার ঘাড়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। তখন ক্লিয়ার আসছিল না সবকিছু। তাই ১৫ দিন অপেক্ষা করে ফোর ডি ডিজিটাল আল্ট্রাসাউন্ড করলে নিশ্চিত হতে পারবে কি সমস্যা হয়েছে। যথারীতি ১৫ দিন পর ফোর ডি ডিজিটাল আল্ট্রাসাউন্ড করার পর জানতে পারলো বাচ্চাটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই কথা শুনে তাদের মন খারাপ হয়ে যায় একেবারে। আসলেই ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। যাইহোক ডক্টর বললো যেহেতু ইতিমধ্যে ৫ মাস হয়ে গিয়েছে, তাহলে এটা ওয়াশ করে বের করতে হবে। আর সেজন্য ১ ব্যাগ ব্লাড লাগবে। আমার বন্ধুর ওয়াইফ এর রক্তের গ্রুপ "এ পজিটিভ"। তো আমার বন্ধু ব্লাড ডোনার ম্যানেজ করার জন্য কয়েক জায়গায় খবর নেয়। কিন্তু আশেপাশে থাকা সবাই ইতিমধ্যে ইদানীং কাউকে না কাউকে রক্তদান করে ফেলেছে।


Notes_231014_121726_bc9.jpg


আর আপনারা তো জানেন কেউ রক্তদান করলে ৪ মাসের আগে আবার রক্ত দান করা যায় না। মজার ব্যাপার হচ্ছে আমার বন্ধু জানতো যে, আমার রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ। সেজন্য আমাকে রক্তদান করার কথা জিজ্ঞেস করেনি। আমিও কয়েকদিন ব্যস্ত থাকায় বন্ধুদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। যাইহোক আমার সেই বন্ধু আমাকে ফোন করে বললো যে, আমার পরিচিত "এ পজিটিভ" ব্লাড ডোনার আছে কিনা। তখন আমি বললাম যে আমার রক্তের গ্রুপ তো "এ পজিটিভ"। তখন বন্ধু বললো যে আমি নিশ্চিত কিনা এই ব্যাপারে,তাহলে আর কাউকে খুঁজবে না। আমি বললাম ১০০% নিশ্চিত আমি। যাইহোক পরের দিন সকাল ৯টার দিকে আরেক বন্ধুকে সাথে নিয়ে মেডিস্টার হসপিটালে যাই। বন্ধুর ওয়াইফ এবং তাদের পরিবারের কয়েকজন সকাল সকাল চলে গিয়েছিল হসপিটালে।


Notes_231014_121724_77e.jpg


আমরা হসপিটালে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম আরও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। বন্ধুর ওয়াইফ তখন ইমারজেন্সিতে ছিলো। আমরা সেখানে কিছুক্ষণ বসার পর, হসপিটাল থেকে বের হয়ে আশেপাশে একটু হাঁটাহাঁটি করতে লাগলাম। তারপর আবারও হসপিটালের ভিতরে গেলাম। বেলা সাড়ে বারোটার দিকে ক্রস ম্যাচিংয়ের জন্য আমার ব্লাডের স্যাম্পল নেওয়া হল। বললো যে এক ঘন্টা পর জানতে পারবো আমি রক্তদান করতে পারবো কিনা। মোটকথা সবকিছু ম্যাচ হলে তাহলে রক্তদান করতে পারবো। যেহেতু বন্ধুর শ্বাশুড়ি, ভাবী এবং আরও কয়েকজন সেখানে ছিলো, আমরা ভাবলাম যেহেতু দুপুর হয়ে গিয়েছে সবার জন্য খাবার নিয়ে আসি এবং যেহেতু এক ঘন্টা লাগবে ক্রস ম্যাচিং টেস্ট করতে, এই ফাঁকে আমরাও খেয়ে আসি। এরপর কি হলো সেটা জানতে হলে অবশ্যই আপনাদেরকে পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। (চলবে)


Notes_231014_121704_791.jpg


2FFvzA2zeqoVJ2SVhDmmumdPfnVEcahMce9nMwwksSDdRvZA8GzS2DQRCenaYmQc8PKmKoqUpUeK1EYkXvpDQ1G4vq9r2thnL24nVMe9HEoTA18P3XxZmEBqKV5Qa.png

পোস্টের বিবরণ

ক্যাটাগরিলাইফস্টাইল
ফটোগ্রাফার@mohinahmed
ডিভাইসSamsung Galaxy Note 20 Ultra 5g
তারিখ১৪.১০.২০২৩
লোকেশনw3w

বন্ধুরা আজকে এই পর্যন্তই। আপনাদের কাছে পোস্টটি কেমন লাগলো, তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আবারো ইনশাআল্লাহ দেখা হবে অন্য কোনো পোস্টে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

9vWp6aU4y8kwSZ9Gw15LFL3aMdhmgmBBFMpDJregpdP328CzpX9QvbjSPXbrW8KqUMMwTrRCn3xcSQ6EA6R67TcD5gLnqAWu8W41xe41azymkyM19LEXr548bkstuK4YE8RXJKQJWbxQ1hVAD.gif

আমার পরিচয়

IMG_20220605_234413_388.jpg

🥀🌹আমি মহিন আহমেদ। আমি ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলায় বসবাস করি এবং আমি বিবাহিত। আমি দক্ষিণ কোরিয়াতে দীর্ঘদিন ছিলাম এবং বর্তমানে বাংলাদেশে রেন্ট-এ- কার ব্যবসায় নিয়োজিত আছি। আমি ভ্রমণ করতে খুব পছন্দ করি। তাছাড়া ফটোগ্রাফি এবং আর্ট করতেও ভীষণ পছন্দ করি। আমি স্টিমিটকে খুব ভালোবাসি এবং লাইফটাইম স্টিমিটে কাজ করতে চাই। সর্বোপরি আমি সবসময় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে আন্তরিকতার সহিত কাজ করতে ইচ্ছুক।🥀🌹

5ZJ4Z52ZRyQfNkCWFfXsATSsPtfkBwT3a5k8RVinr67352Jpu6E5J43D5L7yhn5d5CrcpnTvTLcF5db3ftZK7V9GzsAkLjb3PriF27x53soS8yKq9EnT1Gez2W6L2XUZu7jXnMduxdzGd4QzpYoozSDTPz3jUEkZ8x9rPrFry12vk2pkpsukTxq2kgJhF2zDYwrV.png

cyxkEVqiiLy2ofdgrJNxeZC3WCHPBwR7MjUDzY4kBNr81RRg3nBstm6z4qmufGsvFT24rqXwtpQD564XVCvACqesd3KULjLw7vQPhCNBNpraDPBk9z8jqn3ncuykugzMhQ2.png

6nSeSEzKEwjJN68tMqgZXvpyk1cf2ihqXgmWESDgXSh21PxWHDWW9CETD5B5Jw9Q6ERAnD25KhyHKAX53jBLJKQRtPJf1WFG3aJd6PXbp2rpTXdWPxnRnq65CqtM8PawHiD5knScnfCbWvcVRuFVv1rtwzsXe59AixEGDGYZT2EWzPMzrWjWrbujcJd79Q1Sjs2X.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

রক্ত প্রদান করা একটা মহৎ কাজ। একজনার শরীর থেকে আরেকজনকে বাঁচানোর জন্য রক্ত উৎসর্গ করার মত মহৎ কাজ আর হয় না। জেনে খুব ভালো লাগলো সুন্দর একটি বিষয় আজকে আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন দেখে। পাশাপাশি একটা বিষয় সম্পর্কেও ধারণা পেলাম।

আসলেই ভাই রক্ত দান করা মহৎ কাজ। আমার রক্ত দানের বিনিময়ে একজন মানুষ সুস্থ হয়েছে, এটা ভাবতেই খুব ভালো লাগে। যাইহোক যথাযথ মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

image.png

প্রথমবারের মত রক্ত দিয়েছেন জেনে খুশি হলাম।আর বন্ধুর পরিবারের জন্য খুব কষ্টদায়ক ঘটনা ছিল। তবে আল্লাহ যাকে রাখবে না তাকে আমরা কেউই ধরে রাখতে পারবো না এটাই বাস্তব।পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

ঠিক বলেছেন আপু, আমরা যতই বলি না কেনো, আল্লাহ না রাখলে কারো সাধ্য নেই ধরে রাখার। যাইহোক পরবর্তী পর্ব খুব শীঘ্রই শেয়ার করবো ইনশাআল্লাহ। সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

এটা শুনে খারাপ লাগলো যে বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে! আল্লাহ তায়ালা আপনার বন্ধু ও বন্ধুর ওয়াইফকে মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার তৌফিক দান করুক! আপনার বন্ধুর ওয়াইফের এ পজেটিভ আর আপনার বি পজেটিভ। আমি যতদূর জানি ক্রস ম্যাচিং রিপোর্ট আসলে আপনি রক্তদান করতে পারবেন। পরের পর্বে জানতে পারবো আশা করি

আমার বন্ধু ভুলবশত জানতো আমার রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ। তাই অন্য কাউকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমার রক্তের গ্রুপ এ পজিটিভ। তাইতো বন্ধুর ওয়াইফকে শেষ পর্যন্ত রক্ত দান করতে সক্ষম হলাম। যাইহোক এভাবে সাপোর্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

আসলে ভাইয়ার রক্তদান করা খুবই একটি বড় দান। এই রক্তের মাধ্যমে অন্য মানুষের জীবন বাঁচে আর এ নিঃস্বার্থভাবে রক্তদান করা হচ্ছে মনুষ্যত্বের পরিচরায়ক। আপনি প্রথমবারের মতো রক্ত দান করেছেন বিষয়টা জেনে আমার খুবই ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার রক্ত দানের অনুভূতিটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

আসলেই রক্ত দানের মাধ্যমে মানুষের মনুষ্যত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায়। যাইহোক গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

সত্যি কষ্ট দায়ক ঘটনা।কতো আশা থাকে একটা মায়ের আর যদি সে আশা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে আর শান্তনা দেয়ার মতো ভাষা খুজে পাওয়া মুসকিল।প্রথম বার কারো দরকারে রক্ত দান করেছেন শুনে বেশ ভালো লাগছে।আসলে তো আমরা মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

হ্যাঁ আপু এই ঘটনা গুলো খুবই কষ্টদায়ক। গত মাসে আমার ওয়াইফ এর সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে। আসলেই খুব কষ্ট পেয়েছি আমরা। যাইহোক দোয়া করবেন আপু আমাদের জন্য। সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

রক্তদান একটি মহৎ কাজ আর এই কাজে আপনি নিজেকে শামিল করতে পেরেছেন জেনে আমি খুবই খুশি হয়েছি। আপনি আপনার প্রথম রক্তদানের অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন সেই সাথে আপনার বন্ধুর স্ত্রীর জন্য নিজের রক্ত দান করেছেন বিষয়টি জেনে খুবই ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার রক্তদানের প্রথম অনুভূতিগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

পোস্টটি পড়ে যথাযথ মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। আশা করি সামনেও এভাবেই সাপোর্ট করে যাবেন সুন্দর সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে।

ভাইয়া কোথায় এনে শেষ করে দিলেন। আমাদেরকে বসিয়ে রেখে আপানারা খেতে চলে গেলেন। যায়হোক খেয়ে এসে জানাবেন,আপনার বন্ধুর ওয়াইফ কেমন আছে। আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যেটা হলো সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে আপনার বন্ধুর কেমন টাকা খরচ হয়েছে। ডাক্তারি বিষয়ে পড়তেছি তাই অভিজ্ঞতার দরকার আছে। ধন্যবাদ।

আমার বন্ধুর ওয়াইফ এখন ভালো আছে ভাই। ওয়াশ করতে ১২ হাজার টাকা চুক্তি হয়েছিল। তারপর ক্রস ম্যাচিং টেস্ট, মেডিসিন এগুলো সহ সর্বমোট ১৭/১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যাইহোক পরবর্তী পর্ব খুব শীঘ্রই শেয়ার করবো ইনশাআল্লাহ।