আসসালামু অলাইকু/নমস্কার
“ ভালবাসার মানুষের সাথে বিয়ে না হওয়াটাই বোধ হয় ভাল। বিয়ে হলে মানুষটা থাকে ভালবাসা থাকে না। আর যদি বিয়ে না হয় তাহলে হয়ত বা ভালবাসাটা থাকে,শুধু মানুষটাই থাকে না। মানুষ এবং ভালবাসা এই দুয়ের মধ্যে ভালবাসাই হয়ত বেশি প্রিয়। ”- হুমায়ন আহমেদ
আমার বাংলা ব্লগের প্রিয় বন্ধুদের প্রতি রইলো আমার সালাম ও আশীর্বাদ। "শেয়ার করো তোমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি" যখন লেখা আহবান করা হয় তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই আমি একটি লেখা সাবমিট করব। পরবর্তীতে সম্পূর্ণ লেখাটি তৈরি করি। কিন্তু সর্বশেষ অনেক কিছু বিবেচনা করে লেখাটি আর সাবমিট করা হলো না। নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেল। পুনরায় দাদা আবার সময় বৃদ্ধি করলেন। প্রতিযোগিতার ঠিক আগের দিন ডিসকোর্ডে অনেক আলোচনা হয়। তারপর সিদ্ধান্ত নেই আমি আমার লেখাকে সাবমিট করব। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমার লেখা দেয়ার মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলাম।
তখন আমি ভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হই তখন ধনুক ভাঙ্গা শপথ নেই যে কখনো কারো সাথে কোন প্রেম করবো না। যতদিন থাকবো ততদিন শুধু পড়াশোনা নিয়ে নিজেকে নিয়োজিত রাখব। প্রেম-ভালোবাসা এই শব্দগুলো কখনো মাথায় আনবো না। এ ধরনের শপথের পেছনে আমার অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি দেখেছি প্রেম করে আমার আশেপাশে কেউ সফল হতে পারেনি। আমার এক ক্লাসমেট ছিল সে ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল ছিল কিন্তু প্রেমে পড়ে এমন অবস্থা হল এসএসসি পরীক্ষার আগে তার পরিবারের মান সম্মানের কথা বিবেচনা করে এক ফল ব্যবসায়ির ছেলের সাথে পালিয়ে যায়।
আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তাম তখন আমাদের ক্লাসে খুব সুন্দরী একটি মেয়ে ছিল। সে ছিল আমাদের হাই স্কুলের হেড স্যারের মেয়ে। তখন ক্লাসে আমার রোল নং ছিল এক, আর মেয়েটির ছিল চার। আসলে তখন তো ভালো লাগা ভালোবাসা এগুলো বোঝার বয়স ছিল না। যখন হাইস্কুলে উঠি তখন আমাদের দুজনের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয় কারন দুজনে একসাথে স্কুলে যেতাম। কিন্তু মেয়েটি আমাদের এক ক্লাশ উপরের একটি ছেলের সাথে প্রেমে পড়ে যায়। তখন সে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। তারপর বাবার চাকরির সুবাদে আমি ওই স্কুল ছেড়ে অন্য স্কুলে চলে আসি। যখন দশম শ্রেণীতে পড়ি তখন শুনলাম সে আত্মহত্যা করেছে। এই সংবাদটি আমার সারা জীবনের জন্য দাগ কেটে যায়। তারপর হতে মেয়েদের সম্পর্কে আমার আগ্রহ কমে যায় কিন্তু উৎসাহ থাকে। তখন ছেলে ও মেয়ে ভেদাভেদ নিয়ে আমার মধ্যে এক ধরনের নিরপেক্ষতা কাজ করে।
তারপর ভার্সিটির দিনগুলি আমার খুব পড়াশোনার মধ্যে কাটতে থাকে। সকালে নয়টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরী চলে যেতাম সারাদিন লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করতাম। ফাঁকে ফাঁকে ক্লাসে যেতাম, ক্লাস শেষে আবার লাইব্রেরীতে চলে যেতাম। আমার লাইফটা ছিল ক্লাস টু লাইব্রেরী। আমি ঈদের বন্ধে কখনো বাড়িতে যাইনি। সারা দিন লাইব্রেরীতে পড়ে থাকতাম। বাংলা সাহিত্যের যত গল্প কবিতা উপন্যাস আছে আমি সব পড়েছি । পাশাপাশি ইংরেজি সাহিত্যের বিখ্যাত উপন্যাস বিখ্যাত লেখকদের গল্পকবিতা নিয়মিত পড়েছি। মেয়েরা আমাকে অনেক পছন্দ করত কারণ তাদেরকে আমি বিভিন্ন নোট দিয়ে অনেক সহযোগিতা করতাম। আর আমি যে প্রেম করা পছন্দ করি না এ বিষয়টি আমাদের ক্লাসের মেয়েরা সবাই জানতো । তাই তারা আমার প্রতি আগ্রহ দেখাতো না এমনকি জুনিয়র মেয়েরাও। একটি মেয়ে আমাকে সবসময় বলতো তুই জীবনে ভালো একজন স্ত্রী পাবি।
প্রেমটা ছিল আমার কাছে সর্দি কাশির মত। সর্দি কাশি হয়নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া যেমন দুষ্কর তেমনি কেউ বলতে পারবে না যে তার জীবনে প্রেম আসেনি। তাই আমার জীবনেও প্রেম এসেছিল। সে প্রেম কখনো প্রকাশ করিনি। যাকে ভালো লাগতো সেই জানতো তাকে ভালো লাগার কথা কিন্তু সাহস করে কখনো তাকে বলতে পারিনি। ফিরিয়ে দেওয়ার ভয়ে। তাই একে আর আমার প্রথম প্রেম বলা চলে না।
শুরুতে যেখানে ছিলাম, ভার্সিটি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। একদিন গভীর রাত্রে ফোন বেজে উঠলো। মোবাইল রিসিভ করে হ্যালো বললাম। কিন্তু ওদিক থেকে কোন শব্দ আসছে না বারবার হ্যালো বললাম । তারপরও কোন শব্দ আসছে না অবশেষে রাগে বিরক্ত হয়ে ফোনটি রেখে দিলাম। সকাল হলে ভার্সিটির ক্লাসে চলে গেলাম। তাই রাতের কথা বলে ভুলে গেলাম। ফোনের কথাও ব্যাবালুম ভুলে গেলাম। আবার রাত্র আড়াইটা কি তিনটার দিকে ফোন বেজে উঠল। এদিকে হলের রুমমেটরাও খুব বিরক্তি অনুভব করল। আমি দ্রুত মোবাইলটি নিয়ে দরজার বাহিরে আসলাম। এবং হ্যালো হ্যালো বললাম কিন্তু ওপাশ থেকে কোন শব্দ আসছে না। এভাবে বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেল। তারপর দিনে ওই নম্বরে ফোন দিলাম, ফোন রিসিভ করে কিন্তু কোন কথা বলেনা।
ইউনিভার্সিটিতে আমার এক বন্ধু ছিল। প্রথম বর্ষ থেকে তার সাথে পরিচয়। ছেলে বন্ধু। তার সাথে আমার অনেক ভাব ছিল। তার একটি ছদ্মনাম দিলাম জিশান কারণ আমার এ লেখার সাথে তার অনেক কিছু জড়িত। জিশানের সাথে আমি পড়াশোনা সবসময় আদান প্রদান করতাম। সেও খুব ভালো ছাত্র ছিল । বিকেলে তার সাথে আড্ডা দিতাম। আমিও ছিলাম তার ভালো বন্ধু। ইউনিভার্সিটিতে তার সাথে আমার সবচেয়ে বেশি সময় কেটেছে। সে আমার সবকিছু জানে। সে জানে আমি কখনো প্রেম করবো না, প্রেম করা পছন্দ করিনা। একদিন তাকে ফোনের ঘটনার কথা বললাম। সে আমার কাছ থেকে নাম্বারটি নিয়ে ওই নাম্বারে যোগাযোগ করে কথা বলার জন্য। তারপর কি ঘটেছে তা আমার আর জানা নাই।
একদিন শুক্রবার বিকেলে ক্যাম্পাস মাঠে বসে আছি। এমন সময় ওই নাম্বার থেকে আবার ফোন আসলো। আজ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি। কখনো মোবাইল কাটবো না যতক্ষণ না ওই পাশ থেকে কাটে। ফোন রিসিভ করার পর সে হ্যালো বলে। তার কন্ঠস্বর শুনে আমি অবাক হয়ে যাই কত চমৎকার শিথিল ঠান্ডা কণ্ঠস্বর। কন্ঠটা ছিল অনেকটা অল্প বয়সের বালকের গলার মত মসৃন এবং প্রশস্ত। মনে মনে ভাবতে লাগলাম এর গলার সুরে একটা স্বাদ আছে স্পর্শ আছে।
তারপর হতে প্রতিদিন দুই-তিন মিনিট কথা হতে থাকে। সে তার পরিচয় আমার কাছে গোপন করে রাখে। আমার মোবাইল নাম্বার কোথায় পেয়েছে এ কথা জানতে চাইলে সে জানায় তার এক বান্ধবীর কাছ থেকে নিয়েছে। আমি তখন কোচিং সেন্টারে ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নিতাম। সেখানে আমার নাম্বার দেয়া ছিল। ভেবে নিলাম ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার কোন ছাত্রী আমার সাথে মজা করছে।
কথার এক পর্যায়ে তাকে জানিয়ে দিই যে আমি কখনো কারো সাথে প্রেম করবো না। তাকেও নিষেধ করে দিই কখনো যেন আমাকে প্রেমের অফার না করে। যদি ভুল ক্রমে কোনদিন আমি ভালোবাসি কথাটি বলেও ফেলি সে যেন জেনে নেয় এটা আমার মনের প্রকৃত কথা নয়। আমি হয়তো আপনার সাথে কথা বলার কোন পর্যায়ে বলতে পারি যে “তোমাকে ভালবাসি কিংবা তোমাকে আমার ভালো লাগে। যখন আমার শপথের কথা মনে পড়ে যাবে তখন কিন্তু তোমাকে আমি আবার ভুলে যাব”। সুতরাং আপনি কখনো আমাকে ভালোবাসতে যাবেননা । যদি মনে করেন আমাদের সম্পর্কটা কেবল বন্ধুত্বের তবে আমি আপনার সাথে কথা কন্টিনিউ করব নতুবা এখানেই আমার ফোন রেখে দিলাম।
না না ফোন রাখবেন না। আমিও আপনার সাথে কেবল বন্ধুত্বের খাতিরে কথা বলব। আপনার সাথে আমার কখনও ভালোবাসার সম্পর্ক থাকবে না। আমরা কেবল বন্ধু। ওপাশ থেকে তখন সে আমার বন্ধুত্বের স্বার্থে শর্ত মেনে নেয়। তাই এখানে মেয়েটির একটি ছদ্ম নাম দিলাম। মেয়েটির নাম রোদেলা। বর্তমানে আমি আমার বিভিন্ন লেখায় রোদেলা নামটি দেয়ার চেষ্টা করি। তাকে আমার স্মৃতিতে ধরে রাখতে চেষ্টা করছি।
আমাকে কেউ যেন প্রতারক বলতে না পারে সে কারণে বিষয়টি আমি আবার রিপিট করছি। সে আমাকে আশ্বস্ত করে যে কখনো আমার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক থাকবে না। সে আমাকে জানায় সে কেবল আমার বন্ধু হতে চায়। আমিও বন্ধুত্বের শর্তে তার সাথে কথা বলি।
এভাবে আমাদের মধ্যে প্রতিদিন কথা হতে থাকে। একদিন সে তার সত্যিকার পরিচয় আমাকে দেয়। সে জানায় ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা তার ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে আমার নাম্বার নেয়া। তার ছোট ভাইটি ছিল একেবারে সহজ-সরল। পরীক্ষা দিতে আসে আমার এক ফ্রেন্ডের রেফারেন্সে সে আমার রুমে ওঠে। তখন ছেলেটিকে দেখে আমার অনেক মায়া হয়। তাকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করি। একথা যখন সে বাড়িতে তার বড় বোনের নিকট বলে তখন তার বড় বোন আমার ভক্ত হয়ে যায়। এ কথা সে আমাকে জানায়। যে মেয়েটির সাথে আমার কথা হতো সে জানায় সে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। অনার্স তৃতীয় বর্ষে। সে যে বিষয়ে পড়ে বলে সে বিষয়ে তার ভার্সিটিতে আমার বাড়ির এক ছোট ভাই পড়ে। ছোট ভাইটির কাছ থেকে সে যা বলেছে তার সত্যতা খুঁজে পাই। আমার বাড়ির ছোট ভাইটির কাছ থেকে জানতে পারি সে খুবই মেধাবী ছাত্রী । অনার্সে তার পজিশন দ্বিতীয়। তার বিশ্বাসই হয়নি যে মেয়েটি আমার সাথে কথা বলে এবং আমার সাথে প্রেম করতে চায়। তার বড় ভাই জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির প্রভাষক। একদিন তার কথায় তার সাথে আমি ক্যাম্পাসে দেখা করি। আমাদের খুব ভালো একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
দিনগুলি তখন অনেক সুন্দর কেটে যায়। বিভিন্নভাবে আকারে ইঙ্গিতে সে আমাকে পটাতে চায়। যতবার আমাকে ভালোবাসার কথা বলে মন ঘুরাতে চায় ততবার আমি এড়িয়ে যাই। ততবার তাকে আমি আমার শপথের কথা মনে করিয়ে দেই। তাই সে বেশি একটা সাহস পায় না।
অপরদিকে আমার মনে হয় মেয়েটি মাঝে মাঝে জিশানের সাথে কথা বলে। তার জিশানের সাথে কথা বলার বিষয়টি সে আমার কাছে গোপন রাখে । তখন একটি জিনিস আমি বুঝতে পারি যে আমার পড়াশোনা দিন দিন একটু খারাপের দিকে যাচ্ছে । আগের মতো মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে পারছিলাম না। তাই তার সাথে আমি কৌশলে কথা বলা কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। কয়েকদিন ব্যস্ততার কথা বলে মোবাইল কেটে দিয়েছি। কিন্তু কেন যেন থাকতে পারিনা।
একদিন গভীর রাতে তখন আড়াইটা বাজে সে আমাকে ফোন দেয়। আমি খুব চুপটি করে রুম হতে বের হয়ে ছাদে চলে যাই। তখন হলে আমার একটা গুডউইল ছিল ভালো ছেলে বলে। কারো সাথে প্রেম করি না। রাতে কেন কথা বলছি সন্দেহ করবে বিদায় ছাদে কথা বলতে চলে যাই। সেদিন কেন যেন অনেক আবেগের বশবর্তী হয়ে পড়ি। সেদিন সে আমাকে অনেক কথা বলে। অনেক রোমান্টিক কথা বলে। সারারাত কথা বলার পর শেষ রাতের দিকে কথা বলার এক পর্যায়ে আমার কাছ থেকে আদায় করে নেয় যে তাকে আমি ভালোবাসি। আমার মুখ থেকে কয়েকবার ভালোবাসার শব্দটি আদায় করে নেয়। তারপর ফজর নামাজ পড়ে ঘুমোতে চলে যাই। ঘুম থেকে ওঠার পর মারাত্মক ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে যায় আমার। তখন নিজের কাছে নিজেকে প্রচন্ড অপরাধী মনে হয় আরে আমি তো অনেক বড় ভুল করে ফেললাম। তারপর তাকে ফোন করি জানাই যে আমি রাত্রে ভুল করে তাকে ভালোবাসি বলে ফেলেছি। আসলে এটা আমার মন থেকে বলা কথা নয়। বারবার তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেই। তখন আমার এ কথা শুনে সে একেবারে কান্না করতে থাকে। প্রচন্ড কান্না।
তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে সে আমাকে বলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। আমার সাথে দুষ্টুমি করেছে রাত্রে। তারপর আমরা আবার বন্ধুর মত কথা বলতে থাকি। আমি তাকে যতই এড়িয়ে চলতে চাই সে ততই আমার কাছে আসে। এরই ফাঁকে আমার বন্ধু জিশানের সাথে তার বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায়। তারা দুজনে প্রায়ই কথা বলে। কিন্তু জিশান আমাকে জানায় না যে সে রোদেলার সাথে কথা বলে। কিন্তু জিশান কৈাশলে আমার কাছে জানতে চায় আমি রোদেলাকে ভালোবাসি কিনা ? সে জানে আমি রোদেলার সাথে কথা বললেও তাকে ভালোবাসি না। কিন্তু আমি রোদেলাকে ভালো না বাসলেও আমি চাইনা যে আমার বন্ধু তাকে ভালোবাসোক, তার সাথ কথা বলুক।
রোদেলা একদিন আমাকে জানায় আমার বন্ধু জিশান তাকে প্রেমের প্রস্তাব করেছে। আমি বললাম প্রেম করে নাও সমস্যা কি। আমার খুব খারাপ লাগে। জিশান কেন মেয়েটির সাথে প্রেম করবে? দেশে কি আর মেয়ের অভাব আছে? আমি যখন ঢাকা যেতাম তখন জিশানদের বাসায় বেড়াতাম এবং জিশানের মা আমাকে খুব আদর করত। তাই আমি চাইতাম না মেয়েটির কারণে আমাদের দুজনের বন্ধুত্বের মাঝে কোন ফাঁটল আসুক। মেয়েটির সাথে কথা বলা আমি ধীরে ধীরে অনেকটা কমিয়ে দিই ।
আমি বুঝতে পারি মেয়েটি আমার বন্ধুর সাথে কথা বলছে। তারা প্রায়ই কথা বলে। একপর্যায়ে মেয়েটি আমাকে জানায় সে আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমাকে ছাড়া সে বাঁচবে না। আমি তার জীবনের প্রথম প্রেম। সে আমাকে জানায় সে আমাকে যে পরিমাণ ভালোবাসে পৃথিবীর কোন মেয়ে আমাকে সে পরিমাণ ভালোবাসতে পারবে না। দেখো আমি তোমাকে মন থেকে ভালবাসি। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না। একথাও জানি তোমার হৃদয়ের কোথাও আমি নেই। আমি আরো জানি যে তোমাকে বিয়ে করলে আমি কখনো সুখী হবো না তারপরও তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই। তোমাকে আমার জীবন সাথী বানাতে চাই কারণ তোমাকে আমার অনেক ভালো লাগে। এসব কথা আমাকে বলে।
দেখো তোমার বন্ধু জিশান আমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমিও জানো সে অনেক ভালো ছেলে অনেক ভালো স্টুডেন্ট তোমরা দুজনেই মেধাবী। সে তোমাকে অনেক ভয় পায়। সেও চায় তোমাদের দুজনের বন্ধুত্বের মাঝে কোন ফাটল না আসুক। তার সাথে আমি কথা বলি বিষয়টি তোমার খারাপ লাগে তা আমি জানি। কিন্তু তুমি কেন আমাকে ভালোবাসো না? বল। ভালোবাসা কি অপরাধ? ভালোবেসে বিয়ে করলে ভালোবাসা মরে যায়, এ কথা তোমাকে কে বলেছে? আমার দুর্বলতা কোথায়? আমি ইউনিভার্সিটির ভালো স্টুডেন্ট আমার বংশ ভালো তারপরও কেন তুমি আমাকে ভালোবাসবে না।
তাকে আমি কোন ভাল উত্তর দিতে পারি না। আমি শুধু তাকে এ কথাই বলি আমি ভালোবেসে কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা। কারণ ভালোবেশে বিয়ে করলে ভালোবাসা মরে যায়। তখন সে রাগে ফোন কেটে দেয় এবং আমাকে অনেক বকাঝকা করে।
তারপর রোদেলা আমাকে আরেকদিন ফোন দেয়। দেখো তোমার বন্ধু জিশান আমাকে নিয়ে তার স্বপ্নের কথা বলে। সে আমাকে ভালবাসার কথা বলে। আমি তার স্বপ্নের জগতে চড়তে চড়তে তোমাকে স্বপ্ন দেখি। আমার স্বপ্নে সে আসে না আমার স্বপ্নে শুধু তুমি। আমি সারা জীবন তোমাকে ভুলতে পারবো না। তোমাকে একটি কথা বলি আমার বিয়ে হয়ে গেলেও তোমার সাথে কথা বলবো তোমার সাথে সম্পর্ক রাখবো। তুমি যখন চাও তখন আমাকে পাবে। বিশ্বাস করো তুমি ডাকলে আমি তোমার কাছে ফিরে আসব।
তখন তার এসব কথা শুনে আমি অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ি। নিজেকে মনে মনে সান্ত্বনা দিতে থাকি। তখন তাকে আমি বলি দেখো ভালোবেসে বিয়ে করে কেউ সুখী হয় না। কেউ না। আমি কাউকে কখনো ভালবাসতে পারবনা। আমি আমার জীবনে ভালবেসে কাউকে সুখী হতে দেখিনি। আমার বড় মামা প্রেম করে বিয়ে করেছে । তখন আমার নানা নানি অনেক কষ্ট পেয়েছে দেখো আজ তাদের চারটি মেয়ে কোন ছেলে নেই । তাদের জীবনে এই অশান্তি। আমার দূর সম্পর্কের আরেক খালা প্রেম করে বিয়ে করেছে সেও জীবনে চরম অসুখী। প্রেম করে যে মেয়েটাকে ঘরে তোলা হয় সে মেয়েটাকে কিছুদিন পরেই যৌতুকের জন্য অগ্নিদগ্ধ করা হয়। তাহলে কিসের ভালোবাসা?
আমার যখন মাস্টার্স কমপ্লিট হয তখন তার অনার্স কমপ্লিট হয়। সে অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়। জানতে পারি ইউনিভার্সিটি টিচার হবে। পরবর্তী সে একেবারে ভেঙ্গে যায় এবং মাস্টার্সে তার রেজাল্ট খারাপ হয়। সে আমাকে দোষারোপ করে । পরবর্তীতে জানতে পারলাম সে আমার বন্ধুর সাথে প্রেম করে। জিসানকে একথা আমি কখনো জিজ্ঞাসা করিনি সে রোদেলার সাথে প্রেম করে কিনা। রোদেলার সাথে আমার যোগাযোগ একেবারেই কমে যায়। সপ্তাহে একবার কি দুবার কথা হয়, কেমন আছো ভালো আছো হাই হ্যালো ইত্যাদি।
মাস্টার্স পরীক্ষার রেজাল্ট হওয়ার আগে আমার ব্যাংকে প্রথম শ্রেণীতে জব হয়। আমার জবের প্রায় এক বছর পর বন্ধু জিশানের ব্যাংকে ভালো চাকরি হলে সে রোদেলাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। আমি তখন বিসিএস এর জন্য প্রচন্ডভাবে পড়াশোনা করতে থাকি। প্রেম-ভালোবাসা সব কিছু ভুলে যাই। তখন আমার একমাত্র চিন্তা ভালো ক্যারিয়ার নিয়ে। সে জানায় তাকে বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। সে আমার কাছে ফিরে আসতে চায়। আমাকে তার মত করে আর কোন মেয়ে ভালবাসতে পারবেনা। সে আমাকে জানায় আমি তার জীবনের প্রথম ও শেষ ভালোবাসা। এ কথাগুলো তখন আমার ভালো লাগতো না । তা আমি এক কান দিয়ে শুনতাম অন্য কান দিয়ে বেরিয়ে যেত। তখন আমি বিসিএস কেন্দ্রিক পড়াশোনায় খুব সিরিয়াস ছিলাম। তাই আমার মধ্যে কোন আবেগ কাজ করত না। তাকে জানাই আমি তাকে বিয়ে করতে পারব না কারণ ভালোবেসে আমি কখনো বিয়ে করবো না। আমাদের সম্পর্কটা কেবলমাত্র বন্ধুত্বের সম্পর্ক। তোমাকে তো আমি বলেছি আমি কাউকে ভালবাসবো না এবং কাউকে ভালোবেসে বিয়ে করব না। এতে আমার জেল জরিমানা ফাঁসি যাই হোক আমি মেনে নেব। জানি অনেকের নিকট খুব খারাপ লাগে শব্দগুলো শুনতে। কিন্তু আমি আমার জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতায় যে শপথ করেছি তা থেকে কখনো সরে আসবো না।
তারপর রোদেলার বেসরকারি ব্যাংকে প্রথম শ্রেণীর চাকরি হয়। জিশান আর রোদেলার বিয়ে হয়। তা আমার এক বন্ধু নিকট জানতে পারি। কিন্তু কেউ জানেনা আমাদের তিনজনের বিষয়টি। আমি আজও কারো কাছে বলিনি রোদেলা আমাকে ভালোবাসতো। এখন ঢাকায় গেলে জিশানের সাথে দেখা হয় কিন্তু তার বাসায় যাওয়া হয় না। তার মা আমাকে প্রায় বলে তার ছেলের বউকে দেখতে। জিসান ও রোদেলা কেউ আমাকে বলেনি তারা একে অপরকে বিয়ে করেছে। পরবর্তীতে রোদেলা আমাকে জানান আমার উপর প্রতিশোধ নিতে আমার বন্ধু জিশানকে সে বিয়ে করেছে। সে একথাও আমাকে জানায় কাজটি সে ঠিক করেনি। এটা আমার প্রথম প্রেম ছিল কিনা জানিনা তবে মেয়েটির প্রতি আমার দুর্বলতা ছিল আবেগের এক পর্যায়ে বলেছিলাম তাকে ভালোবাসি।
অনেক পরে বুঝতে পারি আসলে মেয়েটি আমার মনের কোথাও একটু জায়গা করে নিয়েছিল। মেয়েটি আজও আছে আমার মনে কোথাও এ কথা কেউ জানে না। তার হৃদয়ে আজো আমি আছি কিনা সে প্রশ্নের উত্তর কখনও খুজতে যাইনি।
সেদিন আমি কোন ভুল সিদ্দান্ত নেইনি। তার আবেগময়ী আচরণের জন্য সে আমার কাছে অনেক ক্ষমা চায়, আমি তাকে বলি বন্ধুত্বের মধ্যে কোন ক্ষমা চাইতে নেই। আমরা আজও আছি বন্ধুর নেয়। সে আমাকে জানায় আমি তাকে বিয়ে করেনি তাতে সে অনেক সুখী হয়েছে। মাঝে মাঝে তার সাথে কথা হয় কিন্তু দুজনের কথায় আগের মতো সেই উচ্ছ্বাস আর নেই, সেও বুঝতে পারে আমিও বুঝতে পারি। আমিও স্ত্রী- সংসার নিয়ে অনেক সুখে আছি। মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে আমি কি তার মন ভেঙ্গেছি? আমি কি কারো মন ভেঙ্গেছি।
লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
source
আহারে ভাই পুরোটা পড়লাম কী বলব বুঝতেছি না। এটা কী ধোকা না আপনি গুরুত্ব দেন নাই এই দুটির মাঝে একটু দ্ধিধা তৈরি হয়ে গেছে। যাইহোক অসাধারণ ছিল আপনার প্রথম প্রেম। তবে রোদলা একই সঙ্গে আপনার এবং জিসানের সঙ্গে কথা বলত এটা আমার কাছে খারাপ লেগেছে। যাইহোক যে থাকার না তাকে হাজার চেষ্টা করেও রেখে দেওয়া যাবে না।।
এটা একেবারে সত্য কথা। আমি অনেক জ্ঞানী মানুষের কাছেও শুনেছি এটা।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে আমি বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেইনি। আপনি ঠিক ধরেছেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাই আপনি অনেক সুন্দর ভাবে ও বিস্তারিত ভাবে আপনার প্রথম প্রেমের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। তবে এক ভাবে বলতে গেলে আপনি ভালই করেছেন প্রেম না করে। আপনার শপথ রক্ষা করেছেন। আপনি যেহেতু আগেই বলে দিয়েছিলেন কখনো প্রেম করবেন না, সে হিসেবে আপনি কারো মন ভাঙ্গেন নি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মন না ভাঙলে ও ভাই মেয়েটিতো অনেক কষ্ট পেয়েছে এবং আমার উপর প্রতিশোধ স্বরূপ আমার বন্ধুকে বিয়ে করেছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit