শুভ বিকাল,
আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে আমার নিজের লেখা একটি ভূতের গল্প শেয়ার করবো বলে মনস্থির করেছি। আজকের ভূতের গল্পটি ভূতুড়ে গ্রাম শিরোনামে লেখা। গল্পটি মূলত এক শতাব্দী আগের একটি গ্রামকে কেন্দ্র করে লেখা ।
তো চলুন শুরু করা যাক,
গ্রামটি খুবই জরাজীর্ণ এবং শতবর্ষী বটগাছ আর হিজল গাছে ঘেরা। চারদিকে সুনসান নীরবতা। দেখে সহজে বুঝার উপায় নেই যে এখানে একসময় মানুষ বাস করতো। মানুষের কিছু কঙ্কাল ,কিছু ভাঙ্গা প্রাচীর আর শেওলা যুক্ত বয়স্ক গাছগুলিই এখন গ্রামটিকে পাহারা দেয়। বলে রাখা ভালো, এই গ্রামের অবস্থা এক সময় এরকম ছিল না। একটি আদর্শ গ্রাম বলতে যা বোঝায় তার সবই এই গ্রামে এক সময় ছিল। কৃষকের গোয়াল ভরা গরু ছিল, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য ছিল মক্তব,ছিল মন্দির। ছিল নামকরা একজন হাতুড়ে ডাক্তার যার খ্যাতি ছিল চারদিকে।গ্রামটিতে হিন্দু এবং মুসলমানদের একত্রে বসবাস ছিল। বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোন উপায় ছিলনা যে ভিন্ন ধর্মের মানুষ এই গ্রামে বাস করে। মুসলমানদের ইবাদত করার জন্য যেমন মসজিদ ছিলো ঠিক তেমনি হিন্দুদের উপাসনা করার জন্যও ছিল মন্দির। তাদের এমন মেলবন্ধন থেকেই এই গ্রামের নাম হয়েছিল সুখীপুর। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এখন আর কেউ গ্রামটিকে সুখীপুর বলে না। সবাই গ্রামটিকে এখন ভুতুড়ে গ্রাম হিসেবেই চেনে।
এই গ্রাম থেকে হাফ কিলোমিটার দূরেই ঠিক দক্ষিণ পূর্ব দিকটায় শুক্রবার এবং সোমবারে হাট বসতো । মুরুব্বিদের মুখে শোনা যায় এই জায়গাটিতে একসময় অস্বাভাবিক বড় বড় প্রায় ডজনখানেকের মতো কবর ছিলো যেগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে পরবর্তীতে হাটের জন্য জায়গা দেওয়া হয়। হাটের জায়গাটিকে মূলত কয়েকটি দানব আকারের বটগাছ যুগ যুগ ধরে নিজেদের ছায়ায় আগলে রেখেছে। সুখীপুর গ্রাম থেকে হাটে যেতে হলে একটি কাঁচা রাস্তা দিয়ে হেটে বাঁশ দিয়ে তৈরি একটা খাল পেরোতে হয় ,যার অদূরেই তিন এলাকার শ্মশান ঘাট ছিলো । হাটটি খুব প্রসিদ্ধ হওয়াই নানান গ্রাম থেকে মানুষ আসতো সৌদা করতে। ঠিক তেমনি, হঠাৎ একদিন এক অচেনা লোকের পা পড়ে এই গ্রামে। লোকটার চুলগুলো ছিলো জঠলা পাকানো, পরনে ছিল লাল রঙের এক টুকরো কাপড় আর কাধে একটা ভারি থলে। লোকটি ছিল খুব হ্যাংলা পাতলা গড়নের। লোকটার পায়ের দিকে তাকালে তার সৌখিন হওয়ার একটা ব্যর্থ লক্ষণের দেখা মেলে, পায়ে ছিল লাল রং দেওয়া একজোড়া খরম। গলায় পড়েছিল মোটা পুতির অনেকগুলো মালা তার সাথে তালা সহ দুইটা চেইন। সব মিলিয়ে একটা অদ্ভূৎ অবয়বের লোক ছিল। কিন্তু গাঁয়ের লোকেরা তাকে গ্রামে ভিড়তে না দেওয়ায় লোকটি হাফ কিলোমিটার দূরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণের ঐ হাটের একটা বটগাছের নিচে কয়েকটা ছেঁড়া কাপড় বেঁধে আশ্রয় বানিয়ে নিয়েছে। ওই দিকটাতে মানুষের আনাগোনা খুবই কম ছিল, এমনকি হাটের বারেও ঐদিকটায় মানুষের যাওয়ার তেমন প্রয়োজন পড়তো না। এই গ্রামেরই একজন ব্যবসায়ী সিরাজ মিয়া। হাঁটে তার দোকান আছে। হাটের বার ছাড়াও কিছু দোকান খোলা থাকে এই হাটে। প্রতিদিনকার মতো এক রাতে তিনি দোকান বন্ধ করে হারিকেনের সলতেটা কিছুটা বাড়িয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলেন, যদিও চাঁদের অল্প স্বল্প পশর ছিলো তবুও বাড়তি সতর্কতা আর কি। সিরাজ মিয়া যখন হাটতে হাটতে খাল পাড়টায় আসলো, তখন রাত বাজে আনুমানিক ৯ টা। বলাবাহুল্য, গ্রামের নয়টা মানে এখনকার ঠিক মধ্যরাতের সমান। সন্ধার খাওয়ার পরেই গ্রামের সবাই ঘুমিয়ে পড়ে যার কারণে সন্ধ্যার পরেই পথে ঘাটে মানুষ আর তেমন থাকে না। তিনি খালপাড়ে এসে যা দেখলেন তার জন্য তিনি কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি দেখলেন ঝোপঝাড়ের পথটা ধরে শ্মশান থেকে কিছু লোক খাটিয়ায় করে কি যেনো খালপাড়ের দিকে নিয়ে আসছে। যেই তিনি খালপাড়টা ক্রস করতে যাবেন ঠিক সেই মুহূর্তে হঠাৎ একটা ঝড়ো বাতাসে তার হারিকেনটা নিভে গেল ,আর তখনই ঘটলো বিপত্তিটা। লোকগুলি ঠিক তার সামনে খাটিয়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খাটিয়ার দিকে চোখ পড়তেই দেখে রক্তমাখা একটি দেহ খাটিয়ায় শুয়ে আছে। সিরাজ মিয়া তখন ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো আপনারা কারা আর আমার কাছেইবা কি চান ?
তখন তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো, খাটিয়ার লাশটাকে শ্মশানে গিয়ে পোড়াতে হবে আপনার , আমরা যেতে পারছিনা। সাথে সাথেই কিছু লোক জোর করে সিরাজ মিয়াকে শ্মশানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে । পিছনে পিছনে যাচ্ছে খাটিয়া সহ লাশটি। শ্মশানে গিয়ে দেখে লাশ পোড়ানোর সবকিছুই প্রস্তুত করে রাখা ।তাই সিরাজ মিয়া আরো বেশি ঘাবড়ে গেলেন। তিনি যখন ভয়ে ভয়ে লাশটিকে পোড়ানোর জন্য প্রস্তুত করলেন ঠিক তখনই দেখেন লাশটি খাটিয়া থেকে রক্তমাখা শরীর নিয়ে উঠে বসেছে আর একদৃষ্টিতে সিরাজ মিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। এই অবস্থা দেখে তিনি সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। সকালে গ্রামের লোকেরা শ্মশান ঘাটে পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করে এবং বাড়িতে নিয়ে আসে। কিন্তু বাড়িতে আসার পর থেকেই তার শরীর নিজস্ব নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে। বারবার কেঁপে কেঁপে জ্বর আসে। তার ঠিক দু'দিন পরেই সিরাজ মিয়া মারা যায়। ঘটনাটি এখানেই শেষ হতে পারতো কিন্তু আসল ঘটনার শুরু যে এখান থেকেই....
সিরাজ মিয়া মারা যাওয়ার পর থেকেই প্রতি রাতে এই গ্রামের কেউ না কেউ উধাও হয়ে যায়।নয়তো তাদের অর্ধেক শরীর পড়ে থাকে এবরো তেবরো অবস্থায়। দিন যতই যাচ্ছে গ্রামে উধাও হওয়ার ভয়াবহতাও যেন আরো বেশী বাড়ছে যার থেকে গ্রামের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ,শিশু , যুবক-যুবতী কেউই রেহাই পাচ্ছে না। মানুষ সন্ধ্যার পর ঘরের ভিতরে থাকতেও ভয় পাচ্ছে। তেমনি এক রাতের শিকার হলো লেবু মিয়া। লেবু মিয়া সেদিন সন্ধ্যায় প্রাকৃতিক কাজ সাড়ার জন্য তার ঘর থেকে কিছুটা দূরে পূর্ব দিকটায় গিয়েছিলো। কিন্তু ঘন্টা দুয়েক হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ফিরে না আসায় বাড়ির সবাই হারিকেন নিয়ে তাকে খুঁজতে গিয়ে দেখে তার মাথার দিকটা কেউ যেন খুবলে নিয়েছে। তার এই অবস্থা দেখে এখানেই অনেকে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। এভাবে আস্তে আস্তে করে গ্রামটি মানুষ শূন্য হতে থাকে। অনেকেই এই গ্রাম ছেড়ে দূরের গ্রামগুলোতে চলে যায় বেঁচে থাকার তাগিদে। এভাবেই গ্রামটি একদিন নির্জন নিস্তব্ধ আর শ্যওলায় ঢেকে যায়। শুধু স্বাক্ষী হয়ে পড়ে থাকে শতবর্ষী গাছ গুলি আর ভাঙ্গা কিছু প্রাচীর । সাথে অচেনা কিছু কঙ্কাল।
পরবর্তীতে অন্য গ্রামে স্থানান্তরিত হওয়া লোকগুলোর কাছ থেকে জানা যায়, হাটের বটগাছের উদ্বাস্তু অচেনা এই লোকটাকে কখনোই আর কেউ দেখেনি। সাথে সাথে থলিয়ে যায় ভুতুড়ে গ্রামটির রহস্যটাও..
........................
আজকের গল্পটি আমি এখানেই শেষ করছি ।পরবর্তীতে আপনাদের সাথে আরো অনেক গল্প নিয়ে হাজির হবো ইনশা-আল্লাহ ।সে পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকুন ,নিরাপদে থাকুন এবং সর্বোচ্চ সতর্কতায় পথ চলুন ।ধন্যবাদ সবাইকে।
এই রাত্রি বেলা সবাইকে এতো ভয় দেখানোর মানে কি ভাই😃ভুতের গল্প পড়লে রাত্রি বেলা বাইরে গেলে সব ভুতুরে গল্প তখন মনে পরে
আপনার গল্পটা বেশ ভৌতিক
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার ভয় পাওয়ার তীব্রতায় যে আমার লেখার সার্থকতা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গল্পটি খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।আপনার পোস্টে সিরাজ মিয়ার কাহিনী শুনে @emon42 ভাই এর বাস্তব জীবনের গল্পটি মনে পড়লো আবারও।আপনার গল্পে শেষ মেষ সিরাজ মিয়া মারা যায় আর ইমন ভাই এর গল্পে সিরাজ মিয়া অনেক আগেই মারা গেছে।বাহ্ কি দারুন কি দারুন।
অনেক সুন্দর লিখেছেন ভাই।খুব ভালো লেগেছে।শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গল্পটি পড়ে সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ ভাই মেনশন করার জন্য। আমি এখন উনার গল্পটা পড়ব।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
🙃🙃
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এটা গল্প হলেও পড়তে পড়তে যেন আমি গল্পের মধ্যে ঢুকে গিয়েছি। এবং শেষ অংশে এই রকম বিভৎস দৃশ্যের বর্নণা আশা করিনি। যাইহোক সব মিলিয়ে গল্পটা ভালো ছিল। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মন্তব্যটি করার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit