ট্রেনে খড়গপুর থেকে পুনে সফর।। বাংলা থেকে মারাঠা

in hive-129948 •  4 months ago  (edited)

।। নমস্কার বন্ধুরা।।


~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~


নীলমের লেখামিতে আপনাদের স্বাগত



1000165562.jpg

কন্যারত্ন

ন্ধুরা কেমন আছেন? আশাকরি ঈশ্বরের কৃপায় আপনারা বেশ ভালোই আছেন পরিবার পরিজনদের নিয়ে। সত্যিই, পরিবার পরিজনরা সাথে থাকলে সেই ভালোথাকার পরিমান অনেকটাই বেড়ে যায়৷ একসাথে খাওয়া, একসাথে থাকা, গল্প -গুজব, আনন্দ হৈ-হুল্লোড়, দুঃখ, কষ্ট কোন কিছুতেই একা হওয়া যায় না। ঠিক বলছি তো? আসলে যারা একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছে তাদের কাছে একা থাকা মানে সব কিছু থেকে অনেকখানি বঞ্চিত হয়ে থাকা। তবুও থাকতে হয়। জীবন যেমন বয় সেভাবেই বয়ে যায়।

এতো কিছু কেন বলছি বলুন তো? আমার যে ছুটি শেষ। ফিরে যাচ্ছি প্রবাসে৷ মনটাও বেশ ভার। তবে আগে অনেক বেশি হত। এখন এসব অভ্যেস হয়ে গেছে। তবুও যাবার পথে বাড়ির কথাগুলো যেন বেশিই মনে হয়।

খড়গপুরে আমি হাওড়া পুনে আজাদহিন্দ ট্রেনে উঠেছি সন্ধে সাড়ে আটটা নাগাদ৷ অনেক লাগেজ থাকার কারণে আমাকে একটি কুলি করতে হয়েছে। লাগেজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বলতে আমার হারমোনিয়াম। যখন হঠাৎ মুম্বাইয়ের জীবন ছেড়ে গোয়াতে চলে গেলাম হারমোনিয়ামটা বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কারণ মুভারস প্যাকার্স যত্ন করে আনবে নাকি সে বিষয়ে ধারণা ছিল না৷ এবার সেটি নিয়ে যাচ্ছি৷ আমার তো গানবাজনা সেই কবেই মাথায় উঠেছে। তাও মা একবার জন্মদিনের উপহার হিসেবে দিয়েছিল, যাতে মেয়েটা অন্তত শেখে৷ বাঙালি বাড়ির মেয়েরা নাচ, গান, আবৃত্তি, আঁকা সমেত পড়াশুনো করবে এই যেন রীতি৷ আপনাদের দেশেও কি একই নিয়ম?

1000178100.jpg

ট্রেনের সিট

ট্রেনের সিট টু টায়ারে৷ মানে একটা কুপের এক দিকে দু'টো লম্বা লম্বা সিট৷ থ্রি টায়ার হলে তিনটি হয়৷ মাঝের বার্থটি নামানো থাকে। শোবার সময় তুলে দেওয়া হয়৷ ইন্ডিয়ান রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী থ্রি টায়ার বা টু টায়ার বা স্লিপার ক্লাসে যাদের টিকিট থাকে মিডিল ও আপার বার্থে তাদের সকাল সাতটা থেকে দুপুর দুটো এবং বিকেল চারটে থেকে রাত দশটা পর্যন্ত লোয়ার বার্থে বসতে দিতে হয়। দুপুরে ও রাতে ঘুমোবার সময় যে যার বার্থে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে৷ আমার যেহেতু টু টায়ার আর লোয়ার বার্থে সিট আমাকেও ওই একই নিয়ম মানতে হবে। কিন্তু টু টায়ারের আপার বার্থের সাথে সিলিং এর ডিস্ট্যান্স অনেকটা বেশি হবার কারণে যে কেউ সহজেই বসতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লোয়ারে এসে কেউ বসে না৷ আর এবার হল কি, ওপরের বার্থে লোক নেই৷ এখানে ছবি তে যে দেখছেন সাদা চাদর, আই আর সি টি সি থেকে প্রাপ্ত। যাত্রী পিছু দুটো সাদা চাদর একটি কম্বল আর একটি বালিশ৷ ট্রেনে ব্যবহার করে ট্রেনেই রেখে যেতে হয়৷ এক একটা জার্নির শেষে এইগুলো লন্ড্রি ওয়াশ করে আবার যাত্রীদের দেওয়া হয়। আই আর সি টি সি হল রেলের আউট সোর্স করে দেওয়া টেন্ডার৷ ট্রেনের যাত্রাকালীন ভালো মন্দ ওদেরই দেখার দায়িত্ব৷

বাড়ি থেকে সামান্য খাবার করে এনেছিলাম, পরোটা আলুভাজা। স্টেশনে বসেই সাবাড় করে দিয়েছি। ট্রেনে উঠে খিদে পেতে সামান্য মুড়ি খেলাম৷ আপনাদের ট্রেনে কেমন খিদে পায় বন্ধুরা? রাতে বিশেষ অ্যাক্টিভিটি থাকেনা কাররই৷ আমিও বিছানাপাতি করে শুয়ে পড়েছিলাম। ইন্ডিয়ান রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী বাচ্চাদের বারো বছর না হলে তার জন্য সিট বরাদ্দ থাকে না৷ আমার জনের ন'বছর বয়স৷ তাই সে আমার সাথেই৷ মা মেয়ে পা-মাথায় করে শুয়ে পড়লাম।

1000177846.jpg

সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ছিল যখন

ট্রেনটি খড়গপুর থেকে ছাড়ার পর প্রথম থামে টাটানগরে৷ সেই টাটানগর যেখানে শিল্পপতি রতনটাটার বাড়ি। জানেন শিল্পপতি জামসেদজি টাটা যিনি টিসকোর প্রতিষ্ঠাতা, তাঁর নাম অনুযায়ীই এই জায়গার নামকরণ হয়েছিল জামসেদপুর, যা বর্তমানে টাটানগর হিসেবেই বহুল পরিচিত৷ এরপর চক্রধরপুর, রায়পুর হয়ে ঢুকে পড়ে নাগপুরে ৷ অর্থাৎ ঝাড়খণ্ড, ছত্তিসগড়, হয়ে মহারাষ্ট্র৷ নাগপুর পর্যন্ত যে সময় লাগে সেই একই সময়ের সামান্য কম পুনে পর্যন্ত লাগে। বুঝতে পারছেন বন্ধুরা মহারাষ্ট্র আসলেই কত বড় রাজ্য৷

1000178095.jpg

আমাদের ক্ষণিকের জানালা

রায়পুর আসতেই ওপরের বার্থে লোক উঠে গেছিল। ততক্ষণে আমাদের সকালের ব্রাশ করে খাবারদাবার খাওয়া হয়ে গেছিল। এই ট্রেনটাতে প্যান্ট্রি নেই৷ মানে ট্রেনেই খাবার রান্না হয়না৷ তবে আই আর সি টি সি আছে যারা সবই সাপ্লাই করে। যাত্রীদের কিনে খেতে হয়৷ স্লিপার কোচে যতটা বাইরের হকার ওঠে সেকেন্ড এসিতে সেসব নেই। পুলিশ পাহারায় থাকে এছাড়াও সমস্ত ধরণের হেল্পলাইন ব্যবস্থা থাকে৷ যেখানে মেডিক্যাল ইমার্জেন্সিতেও কাছাকাছি স্টেশন থেকে ডাক্তার পাওয়া যায়৷ এমন মেডিক্যাল ইমার্জেন্সির অভিজ্ঞতা অনেক দেখেছি পরে কোন ব্লগে শেয়ার করব৷

1000178105.jpg

চলন্ত ট্রেন থেকে

আজকাল, ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কারণে সবই অ্যাপ সিস্টেম। যেমন স্টিমিটেরও অ্যাপ আছে। ট্রেনে বসে ভালো কোন রেস্টুরেন্টের খাবার খাওয়া যায় জানেন। জুপ বলে একটি অ্যাপ আছে এছাড়াও রেলওয়ে কেটারিং অ্যাপ আছে, ওখান থেকে ট্রেনে বসেই ঘন্টা কয়েক আগে আসন্ন স্টেশনের নাম উল্লেখ করে অর্ডার করলে খাবার ট্রেনের মধ্যে দিয়ে যায় ডেলিভারি বয়৷ ক্যাশ অন ডেলিভারি হয় আবার অনলাইনও পেমেন্ট করা যায়৷ তবে ট্রেনে বসে খুব একটা খেতে ভালো লাগে না। রাতে আমি প্রায় কিছুই খাই না। মেয়ে ডমিনোজের একটি পিৎজা খেল৷ ওই জুপ থেকেই অর্ডার করা। সকালের মিলটাও অর্ডার করে খেয়েছি।

1000165424.jpg

আমার খুদে বইপোকা

এতো লম্বা জার্নি একেবারেই বোরিং লাগে না জানেন৷ আমি বা আমার মেয়ে দুজনেই বইপোকা। প্রয়োজনীয় বই কাঁধের ছোট ব্যাগে ভরে নিই। যে যার মতো আরামদায়ক ভাবে বসে মুখ গুঁজে পড়ে থাকি। কখন যে সময় পেরিয়ে যায় বুঝতেই পারি না৷ হঠাৎ দেখি পৌঁছে গেছি। সহযাত্রীরা অনেকেই জিজ্ঞেস করেন আজকালকার ছেলেমেয়েরা যেখানে এতো মোবাইল দেখে সেখানে আমার জনটি কিভাবে এতো বই পড়ে, তাদের বলি "সন্তান তো কপি ক্যাট। যাই দেখে তাই শেখে।" আপনি যা দেখাবেন আপনার সন্তানটিও তাই শিখবে৷ আর আমার মেয়ের বই পড়ার গল্প বলতে আরেকটি ব্লগ লাগবে। সেও আবার না ম্যাক্রো পোস্ট হয়ে যায়৷ হা হা হা।

প্রায় দু'হাজার কিলোমিটার পেরিয়ে কাছের মানুষদের বাংলায় ফেলে যখন পরের রাজ্যে পৌঁছোলাম তখন প্রায় আটত্রিশ ঘন্টা কাটিয়ে ফেলেছি৷ অনেকটা ক্লান্তি নিয়ে বাসায় এসেছি। সাথে বাড়ির আনন্দের রেশ আর বেশ কিছু গাছের চারা। সেগুলোতে ফুল ফুটলে দেখাব।

1000178112.jpg

পুনে ঢোকার একটু আগে এম আই টি ইউনিভার্সিটির লোনি ক্যাম্পাস

আজ তবে এই পর্যন্তই থাক৷ কেমন লাগল আমার যাত্রাপথের গল্প আর ইন্ডিয়ান রেলওয়ের সামান্য পরিচিতি অবশ্যই জানাবেন৷ পরের দিন আবার অন্য কথা নিয়ে আসব। আজ আসি? আপনারা ভালো থাকুন ততক্ষণ। সব কিছু নিয়ে আনন্দে কাটান প্রতিটি মুহুর্ত৷

টা টা...

[সমস্ত ছবিই আমার মুঠোফোন স্যামসাং গ্যালাক্সি এফ-৫৪ এ তোলা।]



~লেখক পরিচিতি~

1000003467.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। তবে বর্তমানে বেশ কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ বর্তমানে ভারতবর্ষের পুনে তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা




Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!