অজানা কোন টানে ঘুরে এলাম বেলুড় মঠ|| একটু ছায়া একটু আলো মেখে এলাম||

in hive-129948 •  11 days ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


8961404c-27fb-4b30-ae37-2bb6080f0c9a_20241106_130752_0000.jpg







আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



খণ্ডন ভব বন্ধন জগ বন্দন বন্দি তোমায়।
নিরঞ্জন নর-রূপ-ধর নির্গুণ গুণময়॥
মোচন অঘদূষণ জগভূষণ চিদ্ঘনকায়।
জ্ঞানাঞ্জন-বিমল-নয়ন বীক্ষণে মোহ জায়॥
ভাস্বর ভাব-সাগর চির-উন্মদ প্রেম-পাথার।
ভক্তার্জন-যুগল চরণ তারণ-ভব-পার॥

অর্থাৎ, হে পরম গুরু, আপনার আরাধনা করি, আপনি পার্থিব মোহ-মায়ার খন্ডনকারী। সমস্ত মানুষ আপনার পুজো করে। কলঙ্কহীন হয়েও মনুষ্যরূপ ধারণ করেছেন। আপনি নির্গুণ হয়েও সকল গুণের আধার৷ হে পাপ ও কলঙ্কনাশকারী, আপনি জগতের রত্নরূপ, আপনি বিবেকের আধার। জ্ঞানের পবিত্র আলোতে পরিপূর্ণ আপনার বিমল নয়ন দুটি, যার দৃষ্টি অজ্ঞানতা ও মোহনাশকারী।

cf1e4e71-25e6-496d-8971-e6a9f5829f62_20241106_130645_0000.jpg

স্বামী বিবেকানন্দ লিখেছিলেন পুরো গানটি রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের উদ্দেশ্যে। আজ সেই গানটিই এই প্রতিষ্ঠানের প্রার্থনাগীত৷ রোজ ভোরে ও সন্ধেতে গাওয়া হয় সমবেত কণ্ঠে৷ উপস্থিত সমস্ত মানুষের মধ্যেই অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি হয়। সমস্ত অশান্তি নিমেষে মিলিয়ে যায়। এই পরম পবিত্র জায়গায় বার বার যেতে ইচ্ছে করে।

InShot_20241106_131306598.jpg

কলেজে পড়াকালীন প্রায় প্রতি মাসেই যেতাম। এখন আর সে সব সুযোগ হয় না৷ তাও যখনই সুযোগ হয় তখনই যাই৷ গতকাল শাশুড়ী মাকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে বেলুড় গিয়েছিলাম। ওনারও ইচ্ছে ছিল মঠে গিয়ে দুপুরের লাঞ্চ করার। অগত্যা দুজনেই চললাম। পা দিয়েই বুঝি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শান্তির পরিবেশ বোধহয় এখানেই।

InShot_20241106_131241218.jpg

বেলুড় রেল স্টেশন থেকে পনের টাকা টোটো ভাড়া দিয়ে পৌঁছে গেছিলাম বেলুড়মঠ৷ দুর্গাপুজো কালীপুজো সদ্যই শেষ হয়েছে ফলত এখানে লোকের ভিড় একটু কমই ছিল। এখানে মেইন গেটে ঢুকেই ফ্রীতে জুতো রাখার ব্যবস্থা আছে৷ কিন্তু সেখানে রাখলাম না। সত্যি বলতে কি আজকাল একেবারেই খালি পায়ে চলতে পারি না৷ তাই সোজা হাঁটা দিলাম মন্দিরের দিকে৷ মন্দিরের নিচে জুতো খুলে প্রবেশ করলাম। সোজাসুজি পাথরের রামকৃষ্ণদেব বসে রয়েছেন৷ কী চমৎকার করে তাঁর সামনে ফুল সাজিয়ে রাখা আছে। বহু বছর ধরে এই এক দৃশ্য দেখি৷ মনে গেঁথে আছে সমস্তটা। ওখানে বেশ কিছু সময়ে বসেছিলাম। মন থেকে হঠাৎ করেই যেন সব হারিয়ে গিয়ে একেবারে খালি হয়ে গেল। নিজেকে বড্ড হাল্কা মনে হচ্ছিল৷ পৃথিবীর মায়া মমতা সবই তো ক্ষণিক। এই মঠের অরায় তা মিশে আসছে৷

408ab8d9-ff92-40b8-ac04-430b993664a5_20241106_131100_0000.jpg

তাড়াহুড়োতে বাড়ি থেকে কিছু খেয়ে বেরনো হয়নি৷ তাই খিদেও পাচ্ছিল খুব৷ এখানে সাড়ে এগারোটা থেকে রোজই দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। কুপন কাটলেই খাবার পাওয়া যায়৷ তাই আমি গিয়ে দুটো কুপন কেটে নিলাম। তারপর ঘড়িতে দেখি এগারোটা পঁচিশ৷ হলের সামনে বিশাল লাইন পড়েছে৷ টুকটুক করে এগিয়ে গেলাম৷ বড় বড় চৌকো ড্রামে করে খাবার আমাদের সামনে দিয়েই ঢুকে গেল৷

68307372-fb78-4de1-9935-c3714372cc06_20241106_131200_0000.jpg

InShot_20241106_131224462.jpg

আগে যখন আসতাম তখন নিচে বসিয়ে খাওয়ানো হত। এবার দেখলাম সব চেয়ার টেবিল সিস্টেম আর কী সুন্দর পরিষ্কার থালা ও জল ভরা গ্লাস রাখা রয়েছে প্রত্যেকের চেয়ারের সামনে৷ আমরা বসে পড়লাম। খাবার এলো৷ কী তৃপ্তির খাওয়া। জানি না কেন এই সাধারণ খিচুড়ি কুমড়োর তরকারি চাটনি পায়েসে মন পেট ভরে যায়। একবারও মনে হয় না বাইরে কোথাও খেলে ভালো হত৷ তবে আগে যখন আসতাম তখন ভাত সবজি এই সব দেওয়া হত৷

খাবারের ঘরটা বিবেকানন্দের বাসগৃহের পেছনেই৷ বলে রাখি এখানেই তিনি দেহত্যাগ করেছিলেন৷

InShot_20241106_131342828.jpg

এখানে আজ আবাসিক ছাত্ররা থাকে। পড়াশুনো করে। আর প্রত্যেকেই ভালো জায়গায় চলেও যায়৷ জানেন মিশনের ছেলেপুলেগুলো একেবারেই অন্যরকম৷ কী মানবিক। আপনারা আবার ভাববেন না এখানে শুধু হিন্দু ছেলেরাই থাকে৷ এখানে হিন্দু মুসলিম সবাই থাকে। আমার বেশ কিছু মুসলিম বন্ধু এখানে ছোট থেকেই পড়াশুনো করেছে৷

আসলে মানুষ হওয়ার পথ কখনই ধর্মীয় নয়৷ মুক্তির পথও ধর্মীয় নয়। শিক্ষালাভের পথও স্বতন্ত্র৷

4f881857-cf6f-4474-b5f6-8f65291518a2_20241106_131024_0000.jpg

খাওয়াদাওয়া সেরেই আমরা বেরিয়ে গিয়েছিলাম। তার আগে অবশ্য গঙ্গার ধারে একটু সময় দাঁড়িয়েছিলাম। আসলে আমাদের ডাক্তারের সময়ও হয়ে যাচ্ছিল। তাই বেশি সময় ধরে ঘোরার সুযোগ হয়নি। গত বছর এসে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের মিউজিয়ামটি দেখেছিলাম। আগে ছিল না৷ নতুন হয়েছে৷ সেখানে বিবেকানন্দের ও রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের সারদা দেবীরও অনেক ব্যবহারিক জিনিস রয়েছে। শান্ত নরম পরিবেশে বেশ ভালোই লাগে মিউজিয়ামটি দেখতে। পরের বার চেষ্টা করব আবার যাওয়ার৷

গোটা একটা বেলা এখানে পলকে কেটে গেল। টেরই পাইনি৷

মনে অনেক প্রশান্তি নিয়ে গতকাল বাড়ি ফিরেছিলাম। সেই প্রশান্তির রেশ থেকেই আজ এই ব্লগ লিখছি৷ আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে৷

আজ তবে আসি?

টা টা।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণভ্রমণ ব্লগ
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনবেলুড়, পশ্চিমবঙ্গ(https://what3words.com/mats.rephrase.tins)
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, ইনশট


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

Untitled_design.png

downloadfile.webp

1000205505.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

বেলুড় মঠ আমার কাছে এক প্রশান্তির জায়গা। আর সেই জায়গায় গিয়ে তুই এত সুন্দর করে একটা পোস্ট দিলি যে মন ভরে গেল। অসাধারণ একটি পোস্ট পড়লাম। প্রত্যেকটি ছবি ভীষণ ভালো হয়েছে। বিশেষ করে প্রার্থনা সভায় বসলে কিছুক্ষণ মন খুব শান্তিতে ভরে যায়।

সত্যি বেলুড় মঠ এমন একটি জায়গায় যেখানে মন প্রাণ সমস্ত কিছু জুড়িয়ে যায়। ভালোলাগা জানালাম।

জায়গাটার সাথে আপনার অনেক আগের পরিচয়। কিছু কিছু জায়গা আমাদের পছন্দ হয়ে যায়। আর তখন সেই জায়গাই গেলে অন‍্যরকম প্রশান্তি কাজ করে। এখন বেশ অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে আগের থেকে। বেশ লাগল আপনার পোস্ট টা। ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।

হ্যাঁ ভাইয়া৷ কলেজে পড়তেই প্রায় যেতাম৷ গঙ্গার ধারে এমন শান্ত পরিবেশ নিজেকেও স্নিগ্ধ করে দেয়৷

আপু আপনার বেলুড় মঠ ঘুরে আমরাও অনেক কিছু দেখতে পেলাম। বিশেষ করে খাবারের দৃশ্য গুলো খুবই ভালো লেগেছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ এসে খেয়ে যাই। খাওয়া দাওয়ার সিস্টেমটা অনেক সুন্দর। সবাইকে কত শৃঙ্খলভাবে বসে খাওয়া দাওয়া করছে। ধন্যবাদ।

রোজই খায়। তবে ছুটির দিনগুলোতে হাজার লোক খায়। এখানে সম্ভবত দুই হাজারের বেশি লোক একসাথে বসে খেতে পারে।

এই জায়গাটাই শৃঙ্খলার।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, যত্ন করে পড়লেন, ভালো লাগল।