গত সপ্তাহে হঠাৎ একদিন চলে গেলাম রাজীব গান্ধী জুলজিক্যাল পার্কে।। লাইফস্টাইল পোস্ট

in hive-129948 •  7 months ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


1000221905.jpg








আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



বন্ধুরা, গত সপ্তাহে শনিবার দিন হঠাৎই ঠিক করলাম পুনেতে যে ছোট্ট জু-টি রয়েছে সেটি ঘুরে আসি। আসলে ছোট না অনেকটাই বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে কিন্তু অনেক বেশি পশুপাখি নেই বলেই আমার ছোটই মনে হয়েছে। সেদিনটা মেঘলা ছিল তাই আমাদের ঘোরাঘুরি করতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি। সামান্য কিছু কাজ ছিল সেই সব মিটিয়ে জু'র সামনে পৌঁছতে বেলা বারোটা বেজে যায়। জু'র ভেতরে যেহেতু খাবার-দাবারের কোন ব্যবস্থা নেই তাই বাইরে থেকে খাওয়া-দাওয়া করে ঢোকার কথা চিন্তা ভাবনা করলাম। তবে খুব একটা ভালো রেস্টুরেন্ট সামনে-পিছে কোথাও ছিল না। আর সামনে যে স্টল মতো টেম্পুরারি খাবারের দোকানগুলো ছিল সেগুলো সব খোলেনি, যে কটা খুলে ছিল সেখানে বেশিরভাগই মারাঠি খাবার। যেমন বড়া পাও, পাওভাজি, মিশেল পাও, সামোসা পাও। এই সমস্ত মারাঠি খাবারগুলো আসলে কি খাবার সেই বিষয়ে অন্য একদিন বিস্তর জানাবো। একটি দোকানে দেখলাম ধোসা, উত্তাপাম ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। আমরা ঠিক করলাম ধোসাই খেয়ে নেই কারণ পেট ভরানো প্রয়োজন। কিন্তু সে যা ধোসা খেলাম আমার ধারণা এত বছরের জীবনে এত খারাপ ধোসা এই প্রথম খেয়েছি। খেয়ে না ভরল পেট না ভরল মন তাই সামান্য কিছু চিপস বাদাম ভাজা নিয়ে ঢুকে পড়লাম। এখানে ঢুকতে আমাদের টিকিট লেগেছিল। বড়দের চল্লিশ টাকা করে আর ছোটদের দশ টাকা করে।

1000217270.jpg

ঢুকে এই হাতে তৈরি স্থাপত্যটি দেখতে পাই। সম্ভবত এটি একটি ফোয়ারা। কিন্তু জল না থাকার কারণে এটা কেমন একটা ন্যাড়া ন্যাড়া ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পাশে ছিল পুরো জু ঘুরে দেখার ম্যাপ। ম্যাপ দেখে নিলাম এবং একটি ছবিও তুলে নিলাম।

1000221824.jpg

আমরা শুরু করেছিলাম বাঁ দিক দিয়ে। বামদিকে স্নেক ওয়ার্ল্ড। শুরুতে যে ছোট ছোট চৌবাচ্চার মত রয়েছে সেগুলোতে একটিও সাপ ছিল না। কিন্তু ছবি তোলার জন্য সিমেন্টের তৈরি কিছু স্ট্যাচু ছিল সেখানে অনেকেই ছবি তুলছিল কিন্তু আমি ভয় যাইনি। তবে খানিকটা এগিয়ে যাওয়ার পরে অনেক রকমের সাপ ছিল। বুকের মধ্যে অনেকটা সাহস নিয়ে যেসব দেখেছিলাম সেটি অজগর। আর কোবরা, আরো কি সব ছিল যার নাম আমি জানিনা আর দেখিওনি।

1000221836.jpg

খুব করে চাইছিলাম এই জায়গাটা থেকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে। তো চলেও গিয়েছিলাম। খানেক এদিক-ওদিক ঘুরে দেখলাম একটা বিরাট খাঁচার মধ্যে অনেকগুলো ময়ূর কিন্তু তার ছবি আমি তুলতে পারিনি। তারপর শুরু করলাম ডানদিকে যাত্রা। শুরুতেই একটা সিমেন্টের তৈরি শিম্পাঞ্জি। তবে যেহেতু আসল নয় তাই ছবি তুলিনি। বেশ কিছুটা পথ প্রায় ৫০০ মিটার এগিয়ে যাওয়ার পর শুরু হল বন্য জীবনের জীবজন্তু।

1000217288.jpg

বিশাল খাঁচায় ঘেরা অনেকটা জমি জুড়ে দুটো চিতা রয়েছে। তারা নিজেদের মধ্যে অনবরত খুনসুটি করে যাচ্ছিল। তবে বর্ষাকাল যেহেতু তাই মাটি গুলো নরম এবং কাদা কাদা। ওদের গায়েও কাদা লাগা ছিল। অনেকটা দূরে যেহেতু ওরা ছিল তাই জুম করে ছবিটা তোলার জন্য ফেটে গিয়েছে। খানিকক্ষণ দেখে চলে গেলাম পাশের খাঁচায়।

1000217285.jpg

1000217282.jpg

দেখা পেলাম রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। বয়স হয়ে গেছে দেখেই মনে হল কারণ চামড়াগুলো সব ঝুলে গেছে। এই বাঘটি অনবরত গোল গোল হয়ে ঘুরছিল পুরো জায়গা জুড়ে। এখানে গাছ বলতে অনেকটা জায়গায় বাঁশ গাছ রয়েছে। তাই দেখে আমার মনে হল যেন বাঁশ তলায় বাঘ ঘোরাঘুরি করছে। একসময় বাঁশ তলায় আমরা খেলাধুলা করতাম আজ দেখছি বাঘ ঘোরাঘুরি করছে। ভীষণ হাস্যকর লেগেছিল। তবে বাঘটি ঘুরতে ঘুরতে তার অতি প্রয়োজনীয় নিত্যকর্মটিও করেছিল। ঠিক বিড়াল যেমন করে সেরকম।

1000221888.jpg

1000221889.jpg

তার পাশের খাঁচায় ঘোরাঘুরি করছি এই সাদা বাঘটি। কী অপূর্ব দেখতে। এই ছবিটি অনেকটা জুম করে তোলার কারণে অত ভালো আসেনি যত ভালো সামনে থেকে দেখেছিলাম। এই বাঘটি বেশ ছটফট করছিল এবং খুব আওয়াজও করছিল।

1000217279.jpg

বাঘের সেকশন শেষ হলে পরে আমরা আবার অন্যদিকে হাঁটা দিই। অনেক দূর থেকে দেখলাম দুটো ভাল্লুক ঘোরাঘুরি করছে। কিন্তু তার আর ছবি তুলতে পারলাম না। এছাড়াও ছিল প্রচুর হরিণ। হরিণেরও ছবি তোলার কথা মনে ছিল না। আসলে বাঘ দেখে নেওয়ার পর এইসব দেখতে আর ভালো লাগছিল না। তাছাড়া অনেকটা লম্বা পথ হেঁটেছি পাও ব্যথা হয়ে যাচ্ছিল। যে রাস্তা দিয়ে আসছিলাম সেখানে বাইসন ছিল। এছাড়াও হায়না , নীল গাই ইত্যাদি। খানিকটা পথ হেঁটে আমরা হাপিয়ে গিয়ে বসে পড়েছিলাম একটা বেঞ্চে। গোটা রাস্তাতেই এরকম অনেক বেঞ্চ হয়েছে যেখানে লোকজন বসে বিশ্রাম নিতে পারে। আমাদের বেঞ্চের পাশে আতা গাছ ছিল তাতে অনেক আতা হয়েছিল দেখে দুটো আতা পেড়ে নিয়েছিলাম। সারা রাস্তায় ময়ূরের ডাক পেয়েছি। তবে জু বলে নয় পুনেতে এত ময়ূর আমার ফ্ল্যাট থেকেও তাদের ডাক বা ঝগড়া শোনা যায়।

1000217276.jpg

প্রায় এক কিলোমিটার মতো হেঁটে যাওয়ার পর দেখলাম জু'র শেষ সীমান্ত। যেখানে মহারাজা সিম্বা অর্থাৎ সিংহ এই উঁচু মাচাটির ওপর ঘোরাঘুরি করছে। সে যে সিংহ, সে রাজা তা তার চলনবলন বলে দেয়। কি গাম্ভীর্য তার মুখে। সিংহের সিংহী ছিল, তবে সে খাঁচার ভেতরে মানে গুহার মধ্যে বসেছিল। এই জু'র এর প্রতিটা খাঁচাতেই বাঘ বা সিংহের জন্য গুহা তৈরি করা রয়েছে।

1000217291.jpg

1000217297.jpg

এছাড়াও আমরা কুমির দেখেছি ঘড়িয়াল দেখেছি। এবং পাখির সেকশনে ছিল জায়ান্ট স্কুইরাল, ও কয়েকরকম পাখি। আর ছিল নানান ধরণের বিড়াল। বিড়ালের খাঁচাগুলিতে খুব বেশি আলো ছিল না। আর বাইরের জালের থেকে অনেকটাই ভেতরে থাকার কারণে ছবি তোলা সম্ভব হয়নি।

এভাবেই এদিক ওদিক করে আমাদের জু ঘোরা হয়ে গেছিল। খুব একটা খারাপ লাগেনি, ৪০ টাকা টিকিটে এর থেকে বেশি কি হতে পারতো আমার জানা নেই। আমাদের ঘুরতে প্রায় সাড়ে তিন চার ঘণ্টা মত লেগেছিল কারণ অনেকটা দীর্ঘ জায়গা জুড়ে যেহেতু রয়েছে আর পুরোটাই আমরা হেঁটে গেছি। তবে এখানে ব্যাটারি গাড়ি রয়েছে যাতে করে টিকিট কেটে যাওয়া যায় কিন্তু তারা কোথাও নামতে দেয় না গাড়ি থেকেই বসে দেখে নিতে হয়। আমরা গাড়ি থেকে দেখবো না বলে হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। হেঁটে যখন হাঁপিয়ে যাচ্ছিলাম তখন বসে রেস্ট করছিলাম আবার হাঁটছিলাম। এভাবেই অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিল। তবে বেশ ভালই লেগেছিল। বিকেলের দিকে তো বেজায় খিদে পেয়ে গেছিল তাই বেরিয়ে সামান্য স্নাক্স খেয়ে নিয়েছিলাম।

কোন কোন ছুটির দিন এভাবে কেটে গেলে বেশ ভালোই লাগে। সেদিন বৃষ্টি হয়নি আবার খুব রোদের তাপও ছিল না। তাই আমাদের সামান্য ঘোরাঘুরিতে খুব একটা বাধা-বিপত্তি ঘটেনি।

বন্ধুরা আজকের ব্লগে এখানেই শেষ করছি। আবার আসব আগামীকাল অন্য কোন লেখা নিয়ে। ততক্ষণ আপনারা ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

টা টা

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণলাইফস্টাইল ব্লগ
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিখন


1000216466.jpg


৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

1000205505.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

রাজীব গান্ধী জুলজিক্যাল পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলেন দেখে খুবই ভালো লাগলো। যেহেতু কখনো কলকাতায় যাওয়ার সুযোগ হয়নি তাই নতুন এই জায়গাটি দেখে ভালো লাগলো দিদি। আশা করছি আবারো নতুন কোন জায়গা কিংবা সুন্দর মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করবেন।

না আপু এই জায়গাটি কলকাতাতে নয়, এটি পুনেতে আমি যেখানে থাকি ভারতবর্ষের আরেকটি রাজ্য মহারাষ্ট্রের অন্তর্গত পুণে জেলাটি। এখানে অনেক রকম জায়গা আছে দেখার মত বা ঘোরার মত আমি মাঝেমধ্যেই যাই। এর আগে তো কখনো ব্লক করা হয়নি এখন যখন করছি আপনাদের সাথে সবই শেয়ার করব ধীরে ধীরে।

বাহ। দারুণ পোস্ট৷ কত জীবজন্তুর ছবি দেখলাম। মনে পড়ে গেল ছেলেবেলায় নিয়মিত আলিপুর চিড়িয়াখানায় যাওয়া৷ আগে সেখানেও সাদাবাঘ ছিল৷ কত আনন্দ করতাম সেখানে গিয়ে৷ লুচি তরকারি নিয়ে সবাই মিলে সকাল সকাল চলে যেতাম। আজ এই চিড়িয়াখানার ছবিতে প্রাণবন্ত জীবজন্তুগুলি দেখে খুব ভালো লাগলো। আজকের যুগে এই পশুদের নিরাপত্তাও একটি বড় বিষয়। আমরা মানুষ হিসাবে এদের দিকটি দেখাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য৷ কিন্তু অনেকেই তা মনে রাখে না। তাই সামাজিক দায়িত্বটুকু আমরা সবাই যেন মেনে চলি। আর এমন ছোট ছোট ঘুরে বেড়ানো খুবই পজিটিভ হয়। ভালো থাক সবসময়।

রাজীব গান্ধী পার্কের ভিউ টা বেশ ভালো লাগলো।কলকাতার অনেক নিদর্শন আপনাদের মাধ্যমে দেখার সুযোগ হচ্ছে।সেটা আসলেই খুব ভালো লাগার বিষয়।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।