হরিহরেশ্বর বিচ ও শিবাজী মহারাজের রায়গড় ফোর্ট ভ্রমণ পর্ব-১

in hive-129948 •  3 months ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


20221229_175029.jpg








আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



আজকের ভ্রমণ পোস্ট শেয়ার করার আগে, আপনাদের সবার সুবিধার্থে আমি মহারাষ্ট্রের ভৌগলিক অবস্থানটা জানিয়ে রাখতে চাই। মহারাষ্ট্র হল পশ্চিম ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালার গা ঘেষা রাজ্য। যেখানে পাহাড় টপকালেই আরব সাগর। ফলে এখানে সমুদ্র এবং পাহাড় দুটোই দেখতে পাওয়া যায়। আমি যখনই বেড়াতে বের হই কখনো সমুদ্র অঞ্চলে যাই কখনো পাহাড়ে। পশ্চিমের পাহাড় কিন্তু পূর্ব দিকের বা উত্তর দিকের পাহাড় এর মত অত উঁচু নয়, এখানে পাহাড় গুলো মূলত ট্রেক করতে হয়। কারণ বেশিরভাগ পাহাড়ের মাথাতেই তৈরি করা ফোর্ট বা কেল্লা রয়েছে। পাহাড়ের উপরে কেল্লা তৈরি করার বড় কারণ ছিল, শত্রুরা সহজেই আক্রমণ করতে পারবে না এবং কবজা করতে পারবেনা। বেশিরভাগ ফোর্টই নষ্ট হয়ে গেছে কালের নিয়মে কোনোটা মুঘল রাজ জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে কোনটা আবার ব্রিটিশরা। তারইমধ্যে রায়গড় ফোর্টটি আজও দেখার মতো করেই টিকে রয়েছে।

20221229_175835.jpg

মহারাষ্ট্রে আছি দশ বছর ৷ এই দশ বছরে প্রায় অনেকগুলো শিবাজি ফোর্ট দেখলেও রায়গড় দেখা হয়নি। তাই এই ডিসেম্বরে ঠিক করলাম রায়গড় যাবো৷ পুনে থেকে রায়গড়ের দুরত্ব ১৩৫ কিলোমিটার। গাড়িতে ঘন্টা চারেক৷ আমরা ঠিক করলাম হরিহরেশ্বর বিচে থেকে যাবো একদিন৷ আর পরের দিন বিকেলে রায়গড়। তারপরের দিন ভোর ভোর ফোর্ট দেখে বাড়ি ফিরে যাবো৷ অর্থাৎ একটি উইকেন্ড হলেই যথেষ্ট।

20221231_080752.jpg

এবছরটা বেশ ঠান্ডা পড়েছে আমাদের এদিকটাতে৷ সময় মতো পৌঁছোতে চাইলে ভোর ভোর বেরোতে হবে৷ তাই সকাল সাতটার দিক করেই বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তায় শুরুতেই থামার চিন্তাভাবনা নেই। তাই যতটা টেনে দেওয়া যায়৷ কারণ এই সময়টাতে ট্রাফিক কম থাকে৷ আর পুনের ভেতরের ট্রাফিকে আটকে গেলে বেরতেই দম হাল্কা হয়ে যাবে৷ আমাদের পশ্চিমবঙ্গ হলে ছ'টার সময় সকাল হয়ে যায়। কিন্তু এখানে সকাল দেরি করে হয় আর সন্ধেও দেরীতে নামে। প্রায় নটার দিকে একটা ফুডকোর্টে দাঁড়ালাম লোনাভালা পেরিয়ে এসে। একটু রেস্ট খাওয়া দাওয়া সেরে হরিহরেশ্বর৷

পুনের রাস্তায় জ্যাম না পেলে কি পৃথিবীর অন্য কোথাও জ্যাম নেই? হরিহরেশ্বর ঢোকার আগেই রাস্তায় জ্যাম পাওয়ার জন্য অনেকটা দেরি হলো। বসে বসে তো আমার ঘুমই পেয়ে যায়৷ কোথায় চার ঘন্টার পথ ঢুকলাম যখন একটা পেরিয়ে গেছে। গাড়িতে বসতে বসতে যখন হরিহরেশ্বর যখন পৌঁছোলাম তখন পেটে ছুঁচোয় ছোটাছুটি করছে।

এখানে খুব একটা দারুণ মানের হোটেল নেই৷ তারই মধ্যে দেখেশুনে যেটা বুকিং ছিল তাতে আবার গুগুল পে কাজ করে না৷ উফ আজকের দিনে দাঁড়িয়ে গুগুল পে কাজ না করাটা যেন মস্ত অপরাধ। সময় লাগলেও আমরা অবশেষে ঢুকলাম। এদিকে লাঞ্চ আওয়ার প্রায় শেষের দিকে। তাই কোনরকম হাত পা ধুয়েই ডাইনিং হলে নেমে এলাম। মারাঠি খাবার খুব ঝাল হয়৷ আর অত্যধিক মশলা দেওয়া। তাই মিশেল পাও(ছবিতে) এর ওপরে উঠে লাঞ্চ বা ডিনারের খাবার বলতে ভাকরি চিকেনের দিকেই যাই। কিন্তু দুপুরে খেতে ইচ্ছে করছিল না। চাইনিজ ফ্রায়েডরাইস আর চিকেন মাঞ্চুরিয়ান অর্ডার করলাম। গোগ্রাসে গিলে যখন রুমে এলাম, মেয়ের বায়না, তাকে সুইমিং পুলে নিয়ে যেতে হবে৷ কারণ আমাদের জানালা থেকে পুলটা দেখা যাচ্ছিল। অগত্যা গেলাম। কিন্তু যা দেখলাম, তা সুইমিং পুল না সানবাথ পুল বলাই শ্রেয়।

20221230_093130.jpg

তারপর একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে মন্দির আর হরিহরেশ্বর বিচ দেখব বলে বেরোলাম। খুব একটা দূরে না প্রায় পাঁচশ মিটার দুরেই মন্দির। ঢুকতেই গোটা কতক দোকানে পূজো দেবার সামগ্রী৷ মন্দিরে পূজো দেবার অভ্যেস নেই বলে জুতো খুলে একবার দর্শনের জন্য গেলাম৷ ভেতরে রয়েছে একটি শিব লিঙ্গ যার বয়স বেশ পুরনো বলেই মনে হলো। আর পাশেই কালভৈরব। (ছবি তোলা নিষিদ্ধ ছিল তাই তোলা হয়নি)

20221229_173458.jpg

মন্দির থেকে বেরিয়ে একটা রাস্তা পাহাড়ের ওপর উঠে যায়। খানিকটা গেলে উঁচু উঁচু সিঁড়ি। নিচে আরব সাগর৷ এই জায়গাটা দুটো পাহাড়ের মধ্যবর্তী। নাম গনেশ গলি। সেই ভাবে বাঁধানো সিঁড়ি কিছু ছিল না। তবে খাড়াই পথ। দু'দিকের রেলিং ধরে নেমে গেছি।

20221229_174416.jpg

আর নিচে নেমেই দেখলাম পাহাড়ের শরীরে অদ্ভুত গর্ত গর্ত ছাপ। ঠিক যেন পাথরের মৌচাক৷ খুব সম্ভবত জলস্রোতে এমন দাগ হয়েছে। এখানে পাহাড়ি পাটাতনে বসে ছিপ ফেলছে লোকাল লোকেরা। আর দু একটা ফিসিংবোট ঘুরছে৷ পাশ দিয়ে হেঁটে গেলাম হরিহরেশ্বর বীচে৷ আশে পাশে দোকানদার থেকে জানলাম এই বীচে এখানকার লোকজন অস্থি বিসর্জন দিতে আসে৷

অনেকটা সময় বলা চলে প্রায় পুরো বিকেল তাই আমরা এখানে কাটালাম। সন্ধ্যের দিকে পাশেই একটা ডাব দোকান থেকে ডাব খেয়ে ফিরে গেলাম নিজেদের হোটেলে। খুব একটা ভিড় বার্তা নেই এই সমস্ত জায়গায় একটু ফাঁকা ফাঁকা বলেই বেশি রাত করে থাকতে সাহস হয় না। শহরাঞ্চল হলে সেখানে অন্যরকম জীবনযাপন হয় কিন্তু ফাঁকা জায়গার দিকে একটু সাবধানেই পা ফেলা যুক্তিযুক্ত বলে আমি মনে করি।

হোটেলে ফিরে গিয়ে খাবার সময় আমরা আবার নিচে নেমে খাওয়া-দাওয়া করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আসলে লং ড্রাইভ করার পর শরীরে একটু রেস্ট প্রয়োজন হয়।

ভ্রমণের গল্প আজ এই পর্যন্তই, বাকি কথা পরে হবে।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণট্রাভেলগ
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনরায়গড় ,মহারাষ্ট্র(https://what3words.com/broadcasting.monstrously.apologetics)


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

PUSS_-_4.jpg

PUSS.zip_-_18.png

1000205505.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
1000331029.jpg1000331028.jpg1000331027.jpg1000331026.jpg

ছবিগুলো দেখে ও আপনার বর্ণনা পড়ে মনে হচ্ছে জায়গাটা বেশ সুন্দর। তবে দু পাহাড়ের মধ্যে রাস্তাটা দেখে বেশ ভয় লাগছে। এই পথ দিয়ে নামাটা বেশ রিস্ক। বেড়ানোর সুন্দর মুহূর্বেতগুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ।সেই সাথে অপেক্ষায় রইলাম পরবর্তি পর্বের ।

হ্যাঁ৷ সুন্দর জায়ায়গা৷ আর গ্রামের ভেতর তো তাই খুব একটা ভিড় ছিল না৷

ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে মহারাজ শিবাজীর নাম। একসময় তার শাসনে মারাঠা সাম্রাজ্যের যে উত্থান তা কাঁপিয়ে দিয়েছিল স্বয়ং মুঘল সম্রাটকেও। তাই তার দুর্গ দেখে বেশ ভালো লাগলো। যদিও মারাঠা সাম্রাজ্যের পতন তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধে হঠাৎ করেই হয়। আর তারপর থেকে তারা দাঁড়াতে পারেনি। তবে শিবাজীর জয়গাথা আজ ও চারদিকে ছড়িয়ে আছে।

শিবাজীর ফোর্ট পরের পর্বে আসবে৷