মুভি রিভিউ- The একেন- রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান

in hive-129948 •  yesterday  (edited)

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,



কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ঈশ্বরের কৃপায় আপনারা বেশ ভালোই আছেন। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করি শুরু করছি আজকের ব্লগ।

১৪-ই এপ্রিল ২০২৩ এ মুভিটি রিলিজ করেছিল ঠিকই তবে প্রবাসে থাকার কারণে সিনেমা হলে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখার সুযোগ এখন আর হয় না। তাই অপেক্ষা করে থাকতে হয় কখন হইচই বা অ্যামাজন প্রাইম বা হটস্টারে আসবে। অবশেষে এই দীপাবলির ছুটিতে সিনেমাটি হইচই তে এনলিস্টেড হয়। আমি যেহেতু দেশের বাড়ি চলে গিয়েছিলাম তাই সাথে সাথেই দেখা হয়নি। ফিরে এসে দেখলাম। দিনে যতই ব্যস্ত থাকুক না কেন সিনেমা দেখতে আমি খুবই ভালোবাসি এবং সময় সুযোগ করে তা দেখেও নিই। এই সপ্তাহে যেহেতু দেখেছি তাই ভাবলাম আজ আপনাদের সাথে একেন বাবু নিয়েই গল্পগুজব করি।

হইচই আসার পর থেকে আমি প্রচুর বাংলা সিনেমা দেখি। বিশেষ করে থ্রিলার গুলো। বলতে দ্বিধা নেই বর্তমানে বাংলা সিনেমার যেন ভোল পাল্টে গেছে। বেশ কিছু সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ মনে রাখার মত তৈরি হয়েছে। একেন বাবু একটি রহস্য রোমাঞ্চ ওয়েব সিরিজ। তবে রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান কিন্তু সিনেমা। একেন বাবু চরিত্রটির মূল স্রষ্টা হলেন সাহিত্যিক সুজন দাশগুপ্ত। তবে এই সিনেমার ক্ষেত্রে গল্পটি সাজিয়ে লিখেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। আমি যদিও সবকটা গল্প পড়িনি তবে মুভিগুলো বা ওয়েব সিরিজ গুলো দেখতে ভালই লাগে। বর্তমানে বাংলা সিনেমা জগতে যতগুলো গোয়েন্দা হিট করেছে তার মধ্যে একেন অন্যতম। একেন চরিত্রের বিশেষ গুণ হল সর্বদাই একটা কমিক ক্যারেক্টারের মধ্যে নিজেকে মুড়ে রাখা। দেখে বোঝাই যায় না তিনি কলকাতা লালবাজারে কর্মরত জাঁদরেল গোয়েন্দা। এই কারণেই হয়তো আমার বিশেষ ভালোলাগা।

InShot_20241118_205534518.jpg

ইউটিউব স্ক্রিনশট


🎬 মুভিটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য 🎬


মুভির নামThe একেন- রূদ্ধশ্বাস রাজস্থান
প্লার্টফর্মহইচই
পরিচালকের নামজয়দীপ মুখার্জী
কলাকুশলীঅনির্বাণ চক্রবর্তী, সুহোত্র মুখোপাধ্যায়, সোমক ঘোষ, সন্দীপ্তা সেন, রজতাভ দত্ত, রাজেশ শর্মা ইত্যাদি
মুক্তির তারিখ১৪ ই এপ্রিল ২০২৩
ভাষাবাংলা
সময়দু'ঘণ্টা এক মিনিট
কান্ট্রি অফ অরিজিনভারতবর্ষ
থিমদেশের মিউজিয়াম থেকে থেকে পুরনো মুর্তি পাচার
ধারারহস্য রোমাঞ্চ, মিস্ট্রি থ্রিলার


🎬 মূল কাহিনী 🎬


InShot_20241118_204551943.jpg

ইউটিউব স্ক্রিনশট

ঠিক যেভাবে কোন গোয়েন্দা গল্প বা সিনেমা শুরু হয় সেরকমভাবেই শুরু হয়েছে। অর্থাৎ শুরুতেই আমরা দেখছি একটি মূর্তি একজনের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বিনিময় মোটা অংকের টাকা নিয়ে চলে আসছে একদল লোক, তারপর নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে সমস্যা বাঁধবে এমন সময় বুদ্ধি করে গাড়ি চালিয়ে এগিয়ে যাওয়া এবং যে তৎক্ষণাৎ ভাগ চেয়েছিল তাকে খুন করে বালিয়াড়িতে ফেলে দেওয়া হল। সেই দিন রাতেই ঘটনাটা ঘটে যেদিন একেন বাবু তার দলবল নিয়ে বেড়ানোর জন্য পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজস্থান। হ্যাঁ রাজস্থানকে ঘিরে সমস্ত ঘটনা যার জন্য গল্পের শিরোনামেও রাজস্থান রয়েছে এবং বালিয়াড়ির উপর দিয়ে গাড়ি ছুটিয়ে আনা দৃশ্যটিও শুরুতে দেখানো হয়েছে।

InShot_20241118_205217691.jpg

টিভির ছবি

একেন বাবু তার দুই সঙ্গী 'বাপি বাবু স্যার' এবং 'প্রমথ বাবু স্যার'(একেন বাবুর দেওয়া নাম) রাজস্থান বেড়াতে এসে উঠেছিলেন জয়সালমীরে, বাপি বাবুর এক দাদা ও বৌদির কাছে। যথারীতি তারা তাদের ছুটির দিন উপভোগ করেন এবং সাইড সিন করতে বেরন। কথোপকথনে সোনার কেল্লার কথা উঠে আসে। দেখতে দেখতে আমারও মনে পড়ে যায় ফেলুদার সোনার কেল্লার কথা। প্রথম দিন চাইছি নেই তাদের দেখা হয় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসর শতদ্রু ঘোষের সাথে। যিনি এখানে একটি বিশেষ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে এসেছেন। তার ছাত্রী রাজ্যশ্রী সেন এখানকার মিউজিয়ামে কর্মরত। সিনেমায় দেখা যায় শতদ্রু ঘোষের ওপর কিছু মানুষ হামলা চালায়, তিনি কোনমতে প্রাণ বাঁচান আবার কোথাও দেখা যায় রাজ্যশ্রী সেন এর সাথে বিশেষভাবে তর্কাতর্কি বা বোঝাপড়া চলছে। একেন বাবু শতদ্রু ঘোষের সাথে কথাবার্তা বলে জানতে পারেন, বিদেশের নামিদামি অকশন হাউসে যে সমস্ত মূর্তি বিক্রি হয় তার বেশিরভাগটাই রাজস্থানের। তার কিছু দ্বিমত রয়েছে 'নটিশিয়া মূর্তি' নিয়ে সেই কারণেই তিনি এখানে এসেছেন।

InShot_20241118_205146925.jpg

InShot_20241118_205122490.jpg

টিভির ছবি

সেই দিনই একেনবাবুর সাথে দেখা ও আলাপ হয় রাজ্যশ্রী সেনের বাঙালি বয়ফ্রেন্ড সুমন্তর সাথে যিনি এই মিউজিয়ামের ইনচার্জ। কথোপকথন এর মাঝেই শতদ্রু ঘোষ আবিষ্কার করেন মিউজিয়ামের অত্যন্ত মূল্যবান কলিভাঙ্গা ষাঁড়ের স্ট্যাচুটি নকল। তখন তাদের সন্দেহ হয় নটিশিয়া মূর্তি নিয়ে৷ রুদ্ধশ্বাসে ছুটে যান, মূর্তি দেখে প্রফেসর নিশ্চিন্ত হলেও মূর্তির পায়ের নিচে সেফটিপিন দেখে একেন বাবু আশ্বস্ত করেন নটিশিয়া মূর্তিও নকল। যেহেতু চুরি গেছে মূর্তি এবং তা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে তাই এই মুহূর্ত থেকে শুরু হলো ইনভেস্টিগেশন পর্ব। এই সময় আসেন এখানকার পুলিশ আদর্শ, যার সাথে একেনবাবু পূর্ব পরিচিত।

InShot_20241118_204958630.jpg

ইউটিউব স্ক্রিনশট

এরপর ঘটনার ঘনঘটা এগোতে থাকে, স্মাগলারদের কথোপকথন একেন বাবুর উপর হামলা, সবার মাঝখান দিয়ে একেন বাবুর হাস্যকর অ্যাপিয়ারেন্স, নানান ধরনের কৌতুকময় ডায়লগ সিনেমার গতিপ্রবাহ বাড়িয়ে তুলেছে। আর একেকটা করে জট খুলে যাচ্ছিল। তবে এখন বাবুর মাথায় একটাই কথা ঘোরে, সে হলো বাবুসাহেব, যে কিনা মৃতদেহ খেয়ে ফেলে । সে তবে কে? জয়সালমীরের বিখ্যাত কেমিস্ট্রির প্রফেসার আনন্দবাবুর সাথে দেখা হওয়া মূর্তি নিয়ে কথা বলা এবং তার বাড়ির নেমন্তন্ন রক্ষা করতে যাওয়ার সময় বেশ কিছু ক্লু তিনি খুঁজে পান৷ সবচেয়ে বড় খটকা লাগে আনন্দ বাবুর বাড়ির বাথরুমে ঢুকে। বিশাল বাথরুম, অভিনব বাথটব, এ যেন ফাইভ স্টারের থেকেও অধিক সৌন্দর্যময়। মানুষের বাড়ির বাথরুম এমনও হয়!

InShot_20241118_205020113.jpg

ইউটিউব স্ক্রিনশট

এরপর আবার ঘটনা প্রবাহ এগোতে থাকে। মাঝখানে সুমন্তর গ্রেপ্তার হয়, সন্দেহবশত রাজ্যশ্রীর বাড়িতে যান সদলবলে। এবং আবারো সেই খেতে বসে বৌদির মাংসের হাড় গলে যাওয়ার কথায় কানে খটকা তৈরি হয় আর সমাধান হয় সম্পূর্ণ রহস্যের। সে এক কেমিক্যাল লোচা। উদ্ধার হয় বাবু সাহেবের আসল চেহারা, যিনি শুরু থেকেই শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত রহস্য সমাধানের ঘুরিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে৷ তঅবে এখানে আমি তার নাম বলে দেব না আর এটাও বলব না তিনি কিভাবে সমস্ত লাশ খেয়ে ফেলতেন বা গায়েব করে দিতেন যার টিকিটিও কেউ পেত না৷

🎬 আমার মতামত 🎬


নামকরণেই আমরা বাঙালির লেজেন্ড সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টির ছোঁয়া পাই। মনে আছে ফেলুদা সিরিজে লালমোহন গাঙ্গুলীর লেখা সমস্ত গল্পের নামকরণই এরকম ধরনের, মানে জায়গার নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে আরেকটি রোমাঞ্চকর শব্দ বসিয়ে নামকরণ তৈরি করতেন তিনি। যেমন বোম্বাইয়ের বোম্বেটে, সাহারায় শিহরণ ইত্যাদি। বাঙালি হয়তো সত্যজিৎ রায় কে ছাপিয়ে অন্য কিছু আজও ভাবতে শেখেনি। তাই যাই করুক গুরুর ছাপ খানিকটা থেকেই যায়।

সিনেমায় সব থেকে চোখে লাগার মত বিষয় হল সিনেমাটোগ্রাফি। ক্যামেরাম্যানকে কুর্নিশ জানাই। কি অপূর্ব তিনি শুটিং করেছেন। এত সুন্দর সিনেমা এবং পারিপার্শ্বিক দৃশ্যের উপভোগ ক্যামেরাম্যান এবং ডিরেক্টার ছাড়া কখনোই সম্ভব হতো না।

InShot_20241118_204922307.jpg

সিনেমার সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো প্রাণবন্ত। টানা দু'ঘণ্টা যে কোথায় দিয়ে সময় ফুরিয়ে গেল তা বোঝা গেল না। আর সবচেয়ে উপভোগের বিষয় হলো একেন বাবুর হাস্যকর ডায়লগ। যেমন এক জায়গায় তিনি বলছেন, রাজস্থানের বউদের বলা হয় বালিকা বধূ কারণ বালি-কা-বধু! আশ্চর্য সেন্স অফ হিউমার। উটের পিঠে উঠে বলছেন উটকো ঝামেলা! এছাড়াও রয়েছে রাজস্থানী ভাষা নিয়ে অদ্ভুত সব হাস্যরসে পরিপূর্ণ ডায়লগ। এই সমস্ত কিছু যেন একেন বাবুর মধ্য দিয়েই ভালো লাগে। এই ধরনের কথাবার্তা এবং ছ্যাবলামি তিনি করেন বলেই তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি আসলে দুঁদে গোয়েন্দা।

InShot_20241118_204850340.jpg

অবশ্যই একেন বাবুর চরিত্র কি ফুটিয়ে তুলেছেন অনির্বাণ চক্রবর্তী। এই সমস্ত ক্রেডিট ডিরেক্টর ক্রিপ্ট রাইটার এবং কলাকুশলীদের। সবাই মিলে সমান ভাবে হাত না বাড়িয়ে দিলে এতো ভালো সিনেমা কখনোই সম্ভব নয়।

প্রত্যেকের মেকআপ ড্রেস সমস্ত কিছুই রাজস্থান কে কেন্দ্র করে অপূর্ব সুন্দর ডিজাইন করেছেন। সিনেমাটা দেখতে দেখতে বারবারই কথা মনে পড়ছিল। যোধপুর জয়সালমীরের সেই অপূর্ব দৃশ্য আর মুকুলের খুঁজে পাওয়ার সোনার কেল্লার গল্প।
আমার তো বেশ ভালই লেগেছে। রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান আমার চোখে যেন রুদ্ধশ্বাসের শেষ হলো। নিচে আমি ট্রেইলারের লিংকটা দিয়ে দিচ্ছি আপনারা দেখুন। ভালো লাগলে অবশ্যই অ্যামাজন প্রাইম বা হইচইতে দেখতে পারেন।

বন্ধুরা আবার আগামীকাল আসব অন্য কোন পোস্ট নিয়ে, আপাতত এখানেই বিদায় নিচ্ছি।

টাটা।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণমুভি রিভিউ
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপইনশট


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

file-zRxFXiC7QH38U7F8KN0bisD2_1.webp

Untitled_design-1.png

1000205505.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

1000315451.png

কত সুন্দর করে মুভি রিভিউটি পোস্ট করলি। শুধু একদম প্রথম দিকে পদ্মনাভ দাশগুপ্তের জায়গায় পদনাভু হয়ে গেছে। ঠিক করে দে। একেন বাবু হল সুজন দাশগুপ্তের একটি কাল জয়ী সৃষ্টি। আর সেটি সিনেমায় এসে সকল মানুষের কাছে পৌঁছতে পেরেছে। দারুন সুন্দর ব্যাখ্যার মাধ্যমে মুভি রিভিউটি করলি।

ঠিক করে নিয়েছি৷

হ্যাঁ একেবাবু সিরিজটাই অসাধারণ। কখনও সুযোগ হলে কিনে পড়ব।