বাংলাদেশ ভ্রমণ। পর্ব : ০৫

in hive-129948 •  2 years ago 

কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ" পরিবারের সবাই। আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। আপনাদের আশীর্বাদে আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার বাংলাদেশ ভ্রমণের পঞ্চম পর্ব শেয়ার করব। এই পর্বে আবার আমার গাছ লাগানোর এক্সপেরিয়েন্স হল। তো আজকে আমি আমার এই এক্সপেরিয়েন্সের কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করব।


IMG_20221101_152325_edited.jpg



তো আগের দিন বাজারে গিয়ে টমেটো বিক্রি করে আমি খুব টায়ার্ড হয়ে গেছিলাম। সারাদিন রোদের নিচে এত কাজ আমি আগে কখনোই করিনি। আর গ্রামের রাস্তা ইটের তৈরী হওয়ায় আমাদের ভ্যানে যেতে খুব অসুবিধা হয়েছিল। মাঝে মাঝে তো আমি ভ্যান থেকে নেমে ভ্যানে ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে দিতে হয়েছিল।



IMG_20221101_152334_edited.jpg



গ্রামের একটা মজার বিষয় হল তারা সারাদিন কাজ করে রাতে দোকানের সামনে কেউবা তাশ কেউবা লুডু খেলতে ব্যস্ত থাকে। সাথে চা তো রয়েছেই। তো কিছুক্ষণ পর জ্যেঠুর ডাক আসলো রাতের খাবার জন্য। রাতের খাবার খেয়ে আমার খুব দ্রুত ঘুম পেয়ে গেল।


বাংলাদেশে আসার পর থেকেই আমার খুব দ্রুতই ঘুম পেয়ে যাচ্ছিল। ইন্ডিয়া থাকা অবস্থায় আমি প্রায় প্রতিদিনই রাত দুটো তিনটে অবদি জেগে থাকি। কিন্তু বাংলাদেশে এসে আমার রুটিন পুরোটাই চেঞ্জ হয়ে গেছে।


IMG_20221101_154100_edited.jpg


পরের দিন সকালে খেয়ে একটু বারান্দায় বসে আরাম করছিলাম। আরেকটা কথা আমার জ্যেঠুরা কিন্তু খুব সকালেই তাদের সকালের খাবার শেষ করে অর্থাৎ তাদের সকালের খাওয়া আটটা থেকে সাড়ে আটটার ভিতর শেষ করে। গ্রামের মানুষ কিন্তু তাদের খাওয়া দাওয়া ঠিক টাইমেই করে।

IMG_20221101_154147_edited.jpg



সারাদিন গ্রামে একটু ঘুরাঘুরি করে বিকালের দিকে আমার এক ঠাকুর মা আমাকে বলল চল ফুলকপি গাছের চারা লাগিয়ে আসি। আমি বললাম চলো কিন্তু আরেকটা সমস্যা হল এই বাংলাদেশে আসার পর থেকেই আমার বউ কখনো আমার পিছু ছাড়ছে না। কোথাও একটু একা গিয়ে শান্তিতে আড্ডা দেবো তার উপায় নেই। সারাক্ষণ শুধু ফেবিকুইকের মত সবসময় চিপকে থাকে।

IMG_20221101_154928_edited.jpg



তো যাই হোক আমার সাথে আমার গিন্নিও গাছের চারা লাগাতে গেল। অবশ্য আমার একটা সুবিধা হল। সে আমার ছবি তুলে দিতে পারবে।


যাইহোক আমি একটা কোটা নিয়ে মাটি খুঁড়তে শুরু করলাম। এই কোটা হল এমন একটা যন্ত্র যার সাহায্যে মাটি খুঁড়তে খুব সুবিধা হয়। আমি ছোট ছোট গর্ত করে দিচ্ছিলাম আর ঠাকুরমা সেই গর্তে গাছের চারা গুলো রোপন করছিল। এতে আমাদের কাজটি অনেক দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছিল।

IMG_20221101_154936_edited.jpg



কিছুক্ষণ পর একটা গাছ লাগাতে গিয়ে তার পাশে এক টুকরো পেপার দেখতে পেলাম। পেপারে দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তির ছবি ছিল। একজন হলেন বিল গেটস আরেকজন হলেন জেফ বেজোস। এই পেপারটি তে শিরোনাম ছিল বেজোসকে হাটিয়ে শীর্ষ ধনী গেটস। অর্থাৎ পুনরায় বিল গেটস বেজোসকে হারিয়ে আবার শীর্ষে উঠে এসেছেন এবং বেজোস তার বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকা হতে তার নাম হারিয়েছেন।

IMG_20221101_154941_edited.jpg



কিন্তু কথাটা হলো এই সবজি খেতে উনারা কি করে এলেন। আমার মনে মনে একটু দুষ্টুমি চিন্তা হল। মনে হল ওরা ওনাদের চাকরি হারিয়ে এই সবজি খেতে এসেছেন চাষাবাদ করতে। আসলে আমার আবারও মনে হল আমি এই জমিতে বিল গেটস ও বেজোস এই দুজনের সাথে জমি চাষাবাদ করতে এসেছি।


আমরা প্রায় দুজন মিলে অনেকগুলো চারা গাছ রোপন করলাম। আমার অবশ্য একটু বেশিই কষ্ট হচ্ছিল কারণ এই কাজ করার অভ্যাস আমার আগে কখনো ছিল না। আর আগের দিনের গায়ের ব্যথাটা এখনো রয়েছে। এদিকে আমার গিন্নি চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং নিজের সেলফি তুলছেন। তা দেখে আমার খুব রাগ হচ্ছিল। কারণ আমি এদিকে কষ্ট করছি আর ও ওদিকে আরাম করে বেড়াচ্ছে।

IMG_20221101_155506_edited.jpg

ক্যামেরা পরিচিতি : Xiaomi
ক্যামেরা মডেল : M2007J20CI
ক্যামেরা লেংথ : 3 mm
তারিখ : 21/12/2022



আমি কিন্তু আমার ওই ঠাকুর মার সাথে কাজ করে পেড়ে উঠছিলাম না। উনারা কাজের টেকনিক জানেন। আর টেকনিক অনুযায়ী কাজ করলে কাজ অনেক সহজ হয়। আমি না জেনে না বুঝে কাজ করায় আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল।


তো সেদিন আমরা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ টি গাছ রোপন করলাম। গাছ রোপন করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছিল। গ্রামের মানুষ সন্ধ্যায় বেশি বাইরে বের হয় না। কারণ বাইরে সাপের ভয় আছে। তো আমরা সেদিন রাতে খেয়ে-দেয়ে কিছুক্ষণ টিভি দেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।


আরেকটা কথা বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি মানুষই এই ইন্ডিয়ান সিরিয়াল বেশি দেখে। বিশেষ করে স্টার জলসার সিরিয়াল। যা আমার দু চোখের বিষ।


আজ এই পর্যন্তই। আশা করি আজকের এই পর্বটি আপনাদের কাছে খুব ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করতে ভুলবেন না। আপনারা সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন।



সবাইকে ধন্যবাদ।


IMG_20210107_075142 (2).jpg

আমার নাম নিলয় মজুমদার। আমি একজন কম্পিউটার সাইন্সের ছাত্র। আমার মাতৃভাষা হলো বাংলা। কিন্তু আমার রাষ্ট্রীয় ভাষা হলো হিন্দী। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি। আমি একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার। নতুন নতুন জিনিস তৈরী করতে আমি খুব ভালোবাসি। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে আমার খুব ভালো লাগে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

বাহ বাংলাদেশে বেড়াতে এসে অনেক কাজ করছেন। ইন্ডিয়া যখন ফিরে যাবেন তখন এ ঘটনাগুলো বেশ মনে পড়বে। আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে বেশ ভালই সময় কাটছে আমাদের বাংলাদেশে। অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।

ধন্যবাদ আপু।

বাংলাদেশ এসেও কাজ থামছে না তোমার। হা হা হা... তবে এটা ঠিক কথা বাংলাদেশ এসে আমার নিজেরও পুরো রুটিন চেঞ্জ হয়ে গেছে। যেখানে রাত দুটোর পরে ঘুমাতে যেতাম,সেখানে এখন দশটার ভিতরে ঘুমিয়ে পড়ছি। আবার সকাল ছয়টা থেকে সাতটার ভিতর উঠে পড়ছি। ভালো লাগলো তোমার পোস্ট পড়ে নিলয় বাবু।

আসলে ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান বাধে। আপনার অবস্থা তো দেখছি সে রকম। আপনার বাংলাদেশ ভ্রমনের আগের পর্ব গুলো আমার পড়া হয়নি। তবে আজকের পর্বটি পড়ে বুঝলাম বাংদেশে বেড়াতে এসেও আমি কাজের মাঝে ডুবে গেছেন। তবে যাই নাই হোক এগুলো আপনার জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকবে।