আমার বোনের বিয়ে।

in hive-129948 •  7 days ago 


কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


1000031467.jpg



আমি প্রতিদিন যেমন ঘুম থেকে উঠে রোজকার কাজবাজ শুরু করি তেমনি একদিন ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের মতো কাজ করতে শুরু করেছিলাম। তবে এই দিনটা যে একটা ভালো খবর পাবো সেটা হয়তো আগে আশা করিনি বা জানতাম না। সবে কাজ শুরু করব এমন সময় সকাল সকাল আমার মাসির ছেলে ফোন করে আমাকে বলল যে তার ছোট বোনের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। অর্থাৎ সে আমারও বোন হয়, আমার মাসির মেয়ে সেই মতে আমার বোনের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আর বেশি দিন নেই অনেক কাছেই বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে। আমি বিয়ের দিনটি জেনে অনেক বেশি খুশি হয়ে গেছিলাম কারণ দীর্ঘ বছর পর আবার ভাই-বোনেদের মধ্যে একজন বোনের বিয়ে হতে চলেছে। যদিও আমাদের মধ্যে আর বোন অবশিষ্ট নেই অবিবাহিত। সব বোনেরই বিয়ে হয়ে গেছে অবশ্য কিছু দাদা আছে যাদের এখনো বিয়ে হয়নি। বিয়ের দিন জানার পর এতটাই আনন্দ হচ্ছিল আর আবার সবার সঙ্গে দেখা হবে ভেবে যেন মনটা অস্থির হয়ে পড়েছিল। তবে দিনগুলো কোনরকমে বোনের বিয়েতে কি পড়বো এবং কেমন ভাবে সাজবো এছাড়াও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কেনাকাটার এবং বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যেতে লাগলো আর চলে আসলো সেই দিনটি যেদিনের অপেক্ষায় এতদিন অস্থির হয়েছিলাম।

1000031356.jpg


বোনের বিয়ের ঠিক আগের দিন সকাল থেকেই সবাই ফোন করে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করে দিল যে আমি কখন আসবো? তারা যেন আর অপেক্ষাই করতে পারছে না। তাড়াতাড়ি বাড়ির সব কাজ করে সবকিছু গুছিয়ে রেখে দুপুর হতে হতে বেরিয়ে পড়লাম মাসি বাড়ি যাবার উদ্দেশ্যে। প্রায় এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যেই মাসি বাড়ির এলাকাতে পৌঁছে গেলাম। কিন্তু আমার যেহেতু দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে মাসি বাড়িতে যাওয়া হয়নি তাই মাসী বাড়ি ঢোকার রাস্তা আমি ভুলে গেছি। যদিও খুঁজতে খুঁজতে একটা গলিতে ঢুকে দেখতে পেলাম যে মাসি বাড়ি অনেক আলো জ্বলছে এবং গান চলছে অনেক জোরে। সেটা দেখেই বুঝতে পারলাম যে পাশের গলিতেই মাসির বাড়ি। আবার যখন পাশের গলিতে গেলাম তখন দেখতে পেলাম সেই গলির পাশের গলিতে মাসির বাড়ি রয়েছে, একে তো বাড়িতে ঢুকতে দেরি হয়ে যাচ্ছে ভাই বোনদের সাথে দেখা করার জন্য একটা আবেগ কাজ করছে তার মধ্যে বাড়িটা দেখতে পারছি অথচ বাড়ির রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না সব মিলিয়ে এমন একটা আবেগ কাজ করছে যে আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝেই পাচ্ছি না। একদিকে রাগও হচ্ছে আবার অন্যদিকে হাসিও পাচ্ছে। অবশেষে মাসি বাড়িতে ঢুকেই দেখতে পেলাম অনেক মানুষ আমার জন্য অপেক্ষা করছিল।

1000031387.jpg


আমাকে দেখেই আমার মাসি সহ দাদারা এবং বোনেরা এবং বাকি যত আত্মীয় স্বজন এসেছিল তারা অনেক বেশি খুশি হয়ে গেল। কারন আমাকে তারা আমার বিয়ের পরে প্রথম দেখলো। অনেক গল্প যেন জমে ছিল সবার মনের মধ্যে। সবার সাথে অনেক গল্প গুজব করে আমি চলে গেলাম আমার বোনের সাথে মেহেন্দি পড়তে। বোনের যেহেতু বিয়ে তাই বোনকে আগে মেহেন্দি পরিয়ে দিল পুরো হাত ভর্তি করে তারপর আমি একটু হালকা নকশা দেখে মেহেন্দি করে নিলাম। আমার মেহেন্দি করতে করতে প্রায় রাত এগারোটা বেজে গেছিল। অনেক রাত হয়ে গেছে দেখে আমাকে আনতে আমার একটা দাদা চলে গেল আমার কাছে। আমার যেহেতু দুই হাতেই মেহেন্দি পড়া ছিল তাই দাদা সব জিনিসপত্র নিয়ে আমাকে বাড়িতে আসতে সাহায্য করল। বাড়ি এসে দেখি মোটামুটি সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে শুধু আমার মাসি, দাদারা আর বোনেরা জেগেছিল। আমি যেহেতু দুই হাতেই মেহেন্দি পড়েছিলাম তাই মাসি আমাকে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিল, একইসঙ্গে ভাই বোনেরা সবাই খেয়ে নিলাম এবং যে যার যার মত সেই রাতে প্রায় দেড়টা নাগাদ ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমাতে না ঘুমাতেই শুনতে পারছি সবাই আবার জেগে গেছে ভোরবেলার দধিমঙ্গলার আয়োজন করতে। মাসির কাছে সময়ের কথা জিজ্ঞাসা করতেই মাসি বললো তখন আড়াইটে মত বাজে।

1000031385.jpg


বিয়ে বাড়ি যেহেতু অনেক কাজ থাকে তাই বেশি দেরি না করে আমিও উঠে পড়লাম ঘুম থেকে। তারপর হাতে হাতে সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে বোনকে সাজগোজ করিয়ে দিলাম দধি মঙ্গলার জন্য। মাসি দধিমঙ্গলার নিয়ম সম্পন্ন করে আবার আমাদের সবাইকে ডাকতে শুরু করলো। আসলে এত ভোরবেলা খালি পেটে বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া কষ্টকর হয়ে ওঠে। আর দধি মঙ্গলা মানে তো দই, চিরে, মিষ্টি, খই এসবই মাখিয়ে খেতে হবে। তাই আমরা বোনের সাহায্য করে সবাই একটু একটু করে ভাগ করে দই চিড়ে খেয়ে নিলাম। এইসব নিয়ম করতে করতে প্রায় পাঁচটা বেজে গেছিল অর্থাৎ আরেকটু পরেই সকাল হয়ে যাবে। সেই কারণে আমরা আর না ঘুমিয়ে ভাই বোন সবাই মিলে গল্প আড্ডা ইয়ার্কিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। এমন সময় আমি আমার বড় দাদাকে বললাম একটু চা বানাতে, যেহেতু রাতে একটুও ঘুম হয়নি তাই মাথাটা খুব যন্ত্রণা করছিল। আমি ভেবেছিলাম দাদা হয়তো চা বানাবে না তাও ইয়ার্কি মেরে বললাম যদি বানায়, নাহলে আমি চা বানিয়ে আনবো। কিন্তু আমার কপালটা এত ভালো যে বাড়িতে একটু জল অব্দি ঢেলে খায় না সে আমাদের জন্য একবার বলাতেই চা বানিয়ে নিয়ে এসেছে। দাদার বানানো চা খেতে খেতে আমরা সবাই মিলে আবার গল্প আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম।।


1000032722.jpg


1000031394.jpg


ক্যামেরা পরিচিতি : Realme
ক্যামেরা মডেল : realme narzo 60 pro
ক্যামেরা লেংথ : 26 mm



আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

প্রথমে জানাই আপনার বোনের বিয়েতে আপনার বোনের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা। সারারাত না ঘুমিয়ে ভোরবেলায় বোনের দধি মঙ্গলের জন্য উঠে পড়েন। এরপর খুব সুন্দর করে নিয়ম শেষ করে আপনারাও কিছু দই চিড়ে খেয়ে নেন। তবে চায়ের বিষয়টা আমার কাছে বেশ ভালো লাগলো। আপনার দাদা খুব সুন্দর করে আপনাদের জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এসেছেন। সব মিলিয়ে খুবই ভালো লাগলো আপু আপনার পোস্ট। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

1000032725.jpg

1000032724.jpg

1000032723.jpg

বোনের বিয়ে উপলক্ষে তড়িঘড়ি করে মাসির বাড়িতে গিয়েছেন তাও আবার মাসির বাড়ি দেখে ও রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না বিষয়টা শুনে হাসি পাচ্ছে দিদি। যাইহোক মেহেদী পড়তে পড়তে অনেক রাত হয়ে গেল। ঘুমাতে না ঘুমাতেই আবার উঠে গিয়েছেন সবাই দধিমঙ্গলার জন্য। আসলে এই বিয়ের মুহূর্তগুলো ঘুম না হলেও আড্ডা দিতে ভালো লাগে।

নিজেদের ভাই বোনেদের মধ্যে কারও বিয়ের ঠিক হলে খুবই মজা হয়৷ আপনিও দেখছি দারুণ মজা করেছেন। হাতের মেহেন্দিটাও বেশ সুন্দর হয়েছে। দধিমঙ্গল থেকেই বিবাহের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়৷ আপনার পোস্ট পড়ে খুব ভালো লাগল। ছবিগুলো দেখে মনে হল সকলেই বিয়ে উপলক্ষ্যে বেশ ব্যস্ত। আশাকরি দারুণ মজা করেছেন।

আপনার বোনের বিয়েতে সবকিছু খুব সুন্দর ভাবেই সাজানো গুছানো হয়েছে। সাধারণত যে কোন বিয়েতে অনেক ধরনের কাজ থাকে। পরিবারের মানুষের কয়েক দিন ঠিক ভাবে ঘুম খাওয়া দেওয়া হয় না। যাই হোক আপনার বোনের দাম্পত্য জীবনের জন্য শুভকামনা রইল।

নিজের লোকের কারোর বিয়ে থাকলে আনন্দের শেষ থাকেনা। কখন বিয়েতে যাবো,কি পড়বো, কিভাবে সাজুগুজু করব এসব নিয়ে ভাবতেই দিনগুলো নিমেষে কেটে যায়। মাসির মেয়ের বিয়েতে গিয়ে বেশ ভালো সময় কাটিয়েছেন দেখছি। এটাতো অনেক ভালো ব্যাপার যে দাদা জল ভরে খায় না সে এক কাপ চা বানিয়ে দিলে খেতে কিন্তু দারুন লাগে। আসলেই আপনি ভাগ্যবান না হলে এমন মানুষের হাতে চাওয়া পাওয়া কঠিন ব্যাপার। যাই হোক দিদি সুন্দর একটি মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করে নিলেন।ধন্যবাদ দিদি।

আপনার বোনের বিয়ে জেনে অনেক অনেক ভালো লাগলো আমার কাছে। তার দাম্পত্য জীবন যেন অনেক সুখের হয় সেই দোয়া করি। সুন্দর এ মুহূর্তটা সবার মাঝে যেন হাসি আনন্দ লেগে থাকে তাই দোয়া রইলো।

বোনের বিয়ে, এক আনন্দময় আর ব্যস্ত সময়।মাসির বাড়ি খুঁজে না পাওয়া, মেহেদী পড়তে পড়তে রাত হয়ে যাওয়া সব কিছু যেন এক সুন্দর কোলাহলের মধ্যে মিশে থাকে। ঘুম না হলেও, আড্ডার আনন্দ তো কোনো কম নয়! বিয়ের মুহূর্তগুলো সত্যিই অসাধারণ হয়, যেগুলো একসাথে কাটানো স্মৃতিগুলো চিরকাল মনে থাকে।