খাবার নষ্ট করা কখনোই উচিত নয়।

in hive-129948 •  13 days ago 


কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


17406419482752904333964966202825.jpg


সোর্স


খাবার অর্থাৎ অন্ন যা খেয়ে আমরা বেঁচে থাকি এবং দীর্ঘ বছর সুস্থ ভাবে কর্ম করতে পারি। কিন্তু এই খাবার আমরা সবাই কমবেশি নষ্ট করতে থাকি। যা আমাদের করা কখনই উচিত নয় কারণ আমরা হয়তো চাল, ডাল, মাছ-মাংস ইত্যাদি বিভিন্ন খাবার ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছি যা দিয়ে আমরা রান্না করে আমাদের খিদে মেটাতে পারছি। কিন্তু আমরা হয়তো কখনো ভেবেও দেখি না যে এই খাবার তৈরি করতে এবং আমাদের পর্যন্ত প্রস্তুত করতে মানুষের কত বেশি কষ্ট হয়ে থাকে। যারা এই চাল, ডাল, ছোলা, আলু, পেঁয়াজ ইত্যাদি সহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী চাষ করে থাকে, তারা এই খাদ্য সামগ্রী বীজ থেকে গাছ এবং সেই গাছ যখন ফলন দেয় সমগ্র সময়ে অতি যত্নে তাদেরকে বড় করে থাকে। সময় মতো জল দেওয়া সার দেওয়া এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পরিশ্রম তারা করে থাকে। তারপর যখন এই ফল পেকে যায় অর্থাৎ খাদ্য উপযুক্ত হয়ে পড়ে তখন সেগুলো সংগ্রহ করে ভালোভাবে প্রক্রিয়াকরণ করে। আর এই কাজেও প্রচুর পরিমাণে পরিশ্রম করতে হয়, আর এইসব পরিশ্রমের সঠিক পারিশ্রমিক অনেক সময় তারা পায় না। তারপরও তারা কখনো হাল ছাড়েনা এবং প্রতিবছর তারা ফসল ফলাতে থাকে। এবং তারপর আরো কিছু মানুষের পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের পর্যন্ত সে খাবার পৌঁছায়।


আর আমরা যে সেসব খাবার একদমই ফ্রিতে বিনা পারিশ্রমিকে পেয়ে যাই এমনটা কিন্তু নয়। আমাদের বাড়ির গুরুজন অর্থাৎ যারা সংসারে নিয়মিত অর্থ উপার্জন করে আমাদের সংসার পরিচালনা করেন, তারা প্রতিনিয়ত কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা অর্থ উপার্জন করে সেই প্রয়োজনীয় খাবার কিনে আনেন। এবং বাড়িতে আনার পরেও বাড়ির গৃহিণী অর্থাৎ মা বা বাড়ির বউ যারা বাড়িতে রান্নার কাজ করে থাকে তারা অনেক কষ্ট করে আমাদের জন্য সেই খাবার রান্না করে আমাদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য আমাদের সামনে প্রস্তুত করে থাকে। আর আমরা যদি মনে করি এই রান্নার কাজটি অনেক বেশি সহজ তেমন কোন কষ্টের কাজ নয় তাহলে আমরা অনেক বেশি ভুল জানি। প্রত্যেকটি কাজই অনেক বেশি কষ্টের হয়ে থাকে। তাই আমাদের সর্বদাই খাবার নষ্ট করার আগে এতগুলো মানুষের কষ্টের কথা মনে রাখা উচিত। আসলে আমরা যদি প্রতিনিয়ত খাবার নষ্ট করতে থাকি তাহলে আমাদের জন্য যারা খাদ্য প্রস্তুত করে তাদের কষ্ট আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়। আর তারা আমাদের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করার জন্য যে কষ্ট করে সেই কষ্ট আর তাদের করার ইচ্ছা থাকে না। সাধারণভাবে বলা যায় বাড়ির গৃহিণী প্রতিদিন রান্না করে সুন্দর সুন্দর খাবার বাড়ির সবাইকে খাওয়াতে থাকে কিন্তু তারা যদি খাবার না খেয়ে নষ্ট করে এবং তার পরিশ্রমকে মূল্যায়ন না করে তাহলে বাড়ির সেই গৃহিনীর তাদের জন্য বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত করার ইচ্ছাটা নষ্ট হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে তার সেই সব মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাও কমে যেতে থাকবে।


আর যে সব ব্যক্তি এই খাদ্য প্রস্তুত করার জন্য সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে চলেছে তারাও এই খাদ্যের অপচয় কখনো সহ্য করতে পারে না। তবে কখনো যদি খাবার খেতে বসে কিছুটা খাবার খাওয়ার পরে কোন কারনে আর খেতে ইচ্ছা না হয় তবে সেই খাবারটা অবশ্যই রাস্তার অবলা প্রাণী অর্থাৎ কুকুর-বিড়ালকে দিয়ে দেওয়া উচিত। যেহেতু তারা আমাদের পরিবেশের একটি অংশ এবং তারা কখনোই নিজের খাবার নিজে তৈরি করতে পারে না, আর বিভিন্নভাবে তারাও আমাদের ওপরেই নির্ভরশীল তাই আমাদের উচিত কখনো যদি কোন খাবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত থেকে যায় তবে নষ্ট না করে সেইসব পশুপাখি, বিড়াল, কুকুরদের খেতে দেওয়া। এর ফলে খাবার নষ্ট হয় না এবং ক্ষুধার্ত প্রাণীর খিদেটাও মিটে যায়। এছাড়া অনেক সময় আমরা বিভিন্ন দোকানে বা রেস্টুরেন্টে ভালো ভালো দামি খাবার খেতে গিয়ে সম্পূর্ণ না খেয়ে নষ্ট করি। সেই খাবারটাও নষ্ট না করে পথের পাশে থাকা অনেক অসহায় ব্যক্তি থাকে যারা ভালো খাবার তো দূরের কথা দুবেলা হয়তো ঠিকমতো খেতেই পারেনা, তাদেরকে দিলে তারা অনেক আনন্দের সাথে খেয়ে থাকে এবং অনেক বেশি খুশি হয়।


এর ফলে আমরা খাবার নষ্ট করার হাত থেকেও বেঁচে যাব এবং অনেক ক্ষুধার্ত পেটের খিদে নিবারণ হয়ে যাবে। আসলে আমাদের উচিত প্রত্যেকটা মানুষের কষ্ট নিজের চোখে গিয়ে একটু দেখে আসা। আমরা যদি নিজের চোখে দেখতে পারি বা নিজে হাতে একটু সে কাজগুলো করতে পারি তাহলে আমরা বুঝতে পারবো যে আমাদের চারপাশে মানুষগুলো কত বেশি কঠোর পরিশ্রম করে। আর একটু খাদ্যের জন্য মানুষ কতটা অসহায় বোধ করে এবং খিদের জ্বালায় মানুষ কতটা কষ্টে থাকে। আসলে আমরা যতক্ষণ না নিজের চোখে দেখি ততক্ষণ কোন জিনিসই আমরা বুঝতে পারি না বা আমাদের মনে ধরে না। তাই আমরা যদি এসব মানুষের খিদের কষ্ট এবং অর্থের কষ্ট সহ বিভিন্ন কষ্ট নিজের চোখে দেখতে পারি এবং সাথে একটু বুঝতে পারি তাহলেই আমরা আর ভবিষ্যতে কখনোই খাবার নষ্ট করতে পারবো না। আসলে আমাদের প্রতিনিয়ত মনে রাখা উচিত যে পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা খাদ্যের কষ্টে রাত কাটায় এবং অনাহারে মৃত্যুবরণ করে। সেদিক বিবেচনা করলে আমরা অনেক ভাগ্যবান তাই আমাদের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য আছে এবং আমরা খাবার খেয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করতে পারি এবং সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারছি। সেজন্য আমাদের কখনোই খাবার নষ্ট করা উচিত নয়।



আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

1000031786.jpg

1000031785.jpg

1000031784.jpg

যারা সারাদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে দুমুঠো খাবার নিয়ে আসে ঘরে তারা কখনোই নিজের খাবার বাইরে ফেলে দিতে পারে না। আসলে মানুষ নিজের উপার্জনের পরিশ্রম বুঝতে পারলে তার পক্ষে খাবার ফেলে দেওয়া সম্ভব নয়। পৃথিবীতে বহু মানুষ দুবেলা দুমুঠো খেতে পায় না। সেখানে আমরা যদি খেতে না পারা আবার বাইরে ফেলে দিই তবে সে ক্ষেত্রে তা একেবারেই নষ্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই খাবার পরিমান মত করা উচিত এবং অবশেষে না পারলে কোন গরীব দুঃখী মানুষকে দিয়ে যাওয়াই উচিত।