মানুষ প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

in hive-129948 •  15 days ago 


কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


17403032307586401825080951679192.jpg


সোর্স



একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন তার পর্যাপ্ত জ্ঞানবোধ এবং অভিজ্ঞতা না থাকলেও তারা এইটুকু বুঝতে পারে বা বলা যায় বোঝার ক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে যে সে কার কাছে নিরাপদ এবং কার কাছে নিরাপদ নয়। কারণ দেখা যায় বাচ্চারা সবার কোলে যেতে চায়না বা সবার সঙ্গ পছন্দ করে না। মানুষ বুঝেই বাচ্চারা তাদের কাছে যায়। তারপরে ধীরে ধীরে যখন সে বাচ্চাটি বড় হতে শুরু করে তখন একপর্যায়ে তারা একটু নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। কারণ সে যখন দুষ্টুমি করে তখন তার বাবা-মা তাদের খুব বকাবকি করে। যে কারণে বাচ্চারা মনে করে যে কোন কিছু করলেই বাবা-মা হয়তো তাকে বকা দেবে। এমনকি অনেক সময় এটাও তাদের মনে ধারণা হয় যে তার বাবা-মা মনে হয় তার আসল বাবা মা নয়, তাকে মনে হয় কোন জায়গা থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিল সেই জন্য তাকে সব সময় বকাবকি করে। কিন্তু এইসব নিরাপত্তাহীনতা কিছু সময় পর যখন তারা আরো একটু বড় হয় সেই সময় কেটে গেলেও আসল নিরাপত্তাহীনতা শুরু হয় যখন সে যৌবনে পা রাখে অর্থাৎ বলা যায় ১৬-১৭ বছর বয়সের পর থেকে। কারণ এই সময় প্রত্যেকটি ছেলে মেয়েরই মনে হয় যে তার মা-বাবা তাদেরকে মোটেও বোঝেনা। এমনকি তাদের এটাও মনে হতে থাকে যে তাদের খুশি তার বাবা-মা সহ্য করতে পারে না।


যে কারণে তারা এতটাই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে যে তারা কোন কথাই তার বাবা-মার কাছে শেয়ার করে না কিন্তু তাদের বন্ধু বান্ধবের কাছে তাদের সব মনের কথা বলে থাকে। আর এইসব মনের কথা বাইরের মানুষকে বলার কারণে অনেক সময় তাদের জীবনে অনেক বিপদ হয়ে বসে তবুও তারা বাবা-মার কাছে সে সমস্যার কথা বলতে পারেনা। আরো একটু বয়স বাড়লে যখন একটি ছেলে পড়াশোনা সম্পূর্ণ করে কোন একটি ভালো কাজের সন্ধান করতে থাকে নিজে অর্থ উপার্জন করার জন্য, এবং সেই অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ খুঁজতে যদি অনেক বেশি সময় ব্যয় হতে থাকে তাহলে তারা চারপাশে মানুষদের কাছে এত বেশি কটু কথা শুনতে থাকে যে তারা আরো বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে। তারা অনেক সময় মনে করে যে তাদের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন কারণই নেই। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেক সময় এই একই রকম কারণে একই মনের অবস্থা হয়ে থাকে। আবার অনেক সময় মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় পড়াশোনা সম্পন্ন করার পরই বাবা-মা চেষ্টা করেন সুপাত্রের সঙ্গে তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। আর সেই সময় প্রত্যেকটি মেয়েরই জীবনে এমন একটি নিরাপত্তাহীনতা শুরু হয়ে যায় যে তারা মনে করে তাদের বাপের বাড়ি এখন পর হয়ে যাবে। আর নতুন যে পরিবারে সে যেতে চলেছে শেখানে তাকে নিজের করে নিতে পারবে কিনা?


সুতরাং মেয়েদের এই সময়টাতে অনেক বেশি চিন্তা হতে থাকে যে তার জীবনে কি হতে চলেছে এবং তার এই পৃথিবীতে অস্তিত্ব কি? আসলে আমাদের প্রত্যেকেরই একটা সময় চিন্তা আসে যে আমাদের জীবনের তো কোন অস্তিত্বই নেই কোন মূল্যই নেই। আর সেটা যদি হয়ে থাকে অর্থ উপার্জনের দিক থেকে তবে তো মানুষ অনেক বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে। আসলে যেসব মানুষ সেটা হোক ছেলে অথবা মেয়ে একটা বয়সের পরে মনে করে যে আমিও নিজে অর্থ উপার্জন করবো এবং নিজের একটা অস্তিত্ব গড়ে তুলবো। কিন্তু যেসব মানুষ অর্থ উপার্জনে অক্ষম হতে থাকে এবং অনেক চেষ্টা করার পরেও সফলতা আসে না তারা জীবনে অনেক বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে। আর যেসব মেয়েরা বিয়ের পরেও পর্যাপ্ত সম্মান পায় না, এবং শ্বশুর বাড়ির থেকে সর্বদাই অবহেলিত হতে থাকে আর নিজের বাড়ি অর্থাৎ বাবার বাড়ি থেকে তাদের বলা হয় যে এখন তোমার শ্বশুর বাড়ি নিজের বাড়ি আর বিয়ের পরে বাপের বাড়ি পর হয়ে যায় তখন সেই সব মেয়েদের মনের অবস্থা অনেক বেশি খারাপ থাকে। আর এইসব মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে এবং নিজের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ হতে থাকে। এইসব জীবন পেরিয়ে যখন প্রতিটা মানুষ বার্ধক্যের গণ্ডির ভেতর পৌঁছে যায়, তখন শুরু হয়ে যায় তাদের অন্য ধরনের নিরাপত্তাহীনতার মানসিকতা।


কারণ তখন প্রতিনিয়ত মানুষ মনে করে যে তারা এখন তাদের সন্তান বা পরিবারের প্রতি বোঝা হয়ে গেছে। কারন সে এখন বার্ধক্য তার এখন শরীরে সেই ক্ষমতা নেই যা কম বয়সে ছিল। তাই সে কর্মের মাধ্যমে কোন সাহায্যই সংসারের মানুষের জন্য করতে পারে না বরং তাকে সবসময় সেবা যত্নের উপর রাখতে হয়। আর বয়স হয়ে গেলে মানুষ ছোট শিশুর সমতুল্য হয়ে ওঠে। তাই তার প্রত্যেকটি কাজকর্ম অন্যদেরই করে দিতে হয়। তাই বাড়ির এই বয়স্ক মানুষেরা প্রতিনিয়ত অনেক বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে। এমনকি তারা এটাও মনে করে যে তাদেরকে দিয়ে যেহেতু আর কোন কাজে লাগবে না অর্থাৎ না তারা অর্থ উপার্জন করে সাহায্য করতে পারবে আর না তারা শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে কোন কাজ করতে পারবে তাই তারা এই সংসারের জন্য একটি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি এই বয়সে এসে তাদের মুখে বলতে শোনা যায় যে তারা এখন এই পৃথিবী ত্যাগ করতে পারলেই বাঁচে। আমরা যতই তাদের সাহায্য করি না কেন বা তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করি না কেন তারা কখনোই বুঝতে পারে না যে তারা আমাদের জন্য কখনোই বোঝা হয় না। তবে আমাদের প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে হবে প্রতিটা বয়সে মানুষের মনের যে নিরাপত্তাহীনতার কষ্ট সেটা যেন আমরা একটু হলেও কম করতে পারি। তাদের মনের কথা এবং মনের কষ্ট বোঝার চেষ্টা করতে হবে আর চেষ্টা করলে সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে সেটাও প্রতিনিয়ত তাদের বোঝাতে থাকতে হবে।


আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

1000031252.jpg

1000031251.jpg

1000031250.jpg