আমার ক্যাম্পাস কেনো রক্তাক্ত?

🌼 হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম।সবাই কেমন আছেন? আশাকরছি সকলে ভালো আছেন,আমিও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি ।

শেষ কয়েকদিন আমাদের দেশের উপরে কি যাচ্ছে। আমাদের দেশের পরিস্থিতি কি। তা নিয়ে আসলে কিছুই বলার নেই। কারণ এটা আমরা সকলেই দেখছি। হয়তো টিভি নিউজগুলো একেবারে ব্যাপারটাকে বাতাবি লেবুর বাম্পার ফলনের মতোন করেই স্বাভাবিকভাবে দেখাচ্ছে। কিন্তু ফেসবুকের কল্যাণে আমরা কম বেশি অনেকেই বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানি।

তবে আমার কখনো এই ধরনের লেখা লিখতে হবে ভাবতে পারিনি। অর্থাৎ আমার ক্যাম্পাস যে রক্তে রক্তাক্ত হয়ে যাবে। এটা কখনোই ভাবতে পারিনি। কারণ বারবার মনে হয়েছে আমরা তো কারো সঙ্গেই মারামারি করতে যাচ্ছি না। সুতরাং কেউ নিশ্চয়ই আমাদের সাথে মারামারি করতে আসবেনা।

যাই হোক, আসলে গতকালকে ছিলো আমাদের জন্য আমাদের ইউনিভার্সিটির লাইফের কালো একটি অধ্যায়। গতকাল সবাই মিলে আমাদের ক্যাম্পাসের মধ্যেই protest করছিলাম এবং ছেলেরা protest করছিলো ঢাকা-চট্টগ্রামের রেল লাইন আটকে এবং ঢাকা চট্টগ্রামের মহাসড়ক আটকে। যেহেতু আমাদের ক্যাম্পাসটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাঝখানে।

আমরা আসলে খুব শান্তিপূর্ণভাবে প্রোটেস্ট করছিলাম। কারণ আমরা শুধুমাত্র চেয়েছি আমার সহপাঠীরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের ভাই-বোনেরা যেনো জানে যে, আমরা তাদের পাশে আছি। আমরা খুব শান্তিপূর্ণভাবেই বসে বসে আসলে protest করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই কয়েকজন সন্ত্রাস। অর্থাৎ কর্মী আমাদের ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে দা এবং লাঠি নিয়ে। তাই মেয়েরা অনেক বেশি ভয় পেয়ে যায়। এবং আমরা সকলেই দৌড়ে বিভিন্ন বিল্ডিং এর ঢুকতে থাকি। কারণ টিচাররা বারবার বলছিলো যে, বিল্ডিং এ ঢুকে যেনো আমরা দরজা বন্ধ করে দেই।

শত শত মেয়েরা, ছেলেরা একসাথে যখন দৌড়াচ্ছে। তখন পরিস্থিতি টা কেমন হয়েছে। সেটা আসলে এখানে আর বলার প্রয়োজন নেই। হঠাৎ করে আমার জুতা খুলে যায় এবং আমি জুতা নেওয়ার জন্য হঠাৎ করেই আসলে অনেকগুলো মানুষের ভিড়ের মাঝখানে পরে যাই এবং তখন দেখি যে একটা মেয়ে সিঁড়িতে পরে গিয়েছে এবং মোটামুটি সকলেই নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে আপুটার গায়ের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছিলো। তাই আমি আসলে তখন আর নিজের পরোয়া না করে সেই আপুটিকে অনেক কষ্টে উঠালাম। কারণ আমার মনে হচ্ছিলো যে, আমার চোখের সামনে একটা মেয়ে পদদলিত হয়ে মারা যাবে। এটা আমি কখনোই মানতে পারবো না।

যাইহোক, এরপরে ক্যাম্পাসের ছেলেরা ক্যাম্পাসে আসলো তখন ও আসলে সম্পূর্ণ ঘটনা জানিনা। এরপরে আমাদেরকে বাসে তুলে দেওয়া হলো এবং যথেষ্ট নিরাপত্তার সাথে বাসে তুলে দেওয়া হলো এবং এক একটা মেয়েদের বাসের সামনে এক একটা ছেলেদের বাস রাখা হলো নিরাপত্তার জন্য এবং আমরা ভালোভাবে বাসায় পৌছালাম।

কিন্তু বাসায় পৌছে যা দেখলাম ফেসবুকে। তার জন্য সত্যিই আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। আমাদের বেশ কয়েকজন স্টুডেন্ট ইতিমধ্যেই আহত হয়েছে সেই কর্মী কিংবা টোকাইদের হাতে। এমনকি আমাদের বাসগুলো যে যে রুটে যাচ্ছিলো। ওরা সেখানে ছেলেদের বাসগুলো থামিয়ে থামিয়ে বাসে হামলা করা হয়েছে। কিছু কিছু স্টুডেন্ট বিভিন্ন বিল্ডিং এ গিয়ে লুকিয়ে ছিলো বাস থেকে নেমে। তাদেরকে ধরে ধরে মারা হয়েছে এবং অনেক স্টুডেন্ট বাসা ছাদে চলে গিয়েছিলো অনেক। এবং সেখানেও যখন আসলে ওই কর্মীরা পৌঁছে যায়। তখন ছাত্ররা আর কোনো কিছু করতে না পেরে। ছাদ থেকে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এতে করে অনেকেই ইনজুর্ড হয়েছে এবং আমার ইউনিভার্সিটির নাম মোটামুটি আপনারা অনেকেই জানেন। আর আরো যদি কিছু দেখতে চান। তাহলে ফেসবুকে সার্চ করলেই আসলে সবকিছু পেয়ে যাবেন। কারণ এতোটা ভয়াবহ একটা দিন ছিল গতকাল আমাদের জন্য। এটা সত্যিই প্রকাশ করার মতো নয়।ভেবেছিলাম গতকাল বুঝি জীবনের শেষ দিন।শহীদ হয়েই বুঝি জীবন ত্যাগ করবো!

যখন বাসে করে ক্যাম্পাস থেকে বের হচ্ছিলাম। তখন দুজন ছাত্রকে ধরাধরি করে ক্যাম্পাসে ঢুকানো হচ্ছিলো রক্তাক্ত অবস্থায়। তখন আসলে বুকটা যেনো দুমড়ে-মুচড়ে উঠছিলো। কারণ আমাদের দাবি খুব একটা বেশি কিছু ছিলো না। আমাদের দাবি শুধুমাত্র ছিলো, কোটা মুক্ত বাংলাদেশ চাই। যাতে সবাই তাদের মেধার পরিচয় দিতে পারে।কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্রে কিছু চাইতে গেলে যে এভাবে মার খেতে হবে। এটা সত্যিই জানা ছিলো না!

হয়তো এভাবেই এর শেষ হবে। হাজার হাজার স্টুডেন্টদের প্রাণ নিয়ে এভাবেই শেষ হবে আন্দোলনটি। কিন্তু এর ফায়সালা অবশ্যই হবে। এখন না হলেও হাশরের ময়দানে তো হবেই। আসলে গতকাল মাঝে একবার মনে হয়েছিলো যে হয়তো আর বেঁচে ফিরতে পারবো না।কারণ যখন দেখলাম অনেকে চাপাতি, দা এসব নিয়ে চোখের সামনে আমাদেরকে মারার জন্য আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তখন আসলে বেঁচে বাড়ি ফিরতে পারবো, এটা মনে হয়নি। তাও সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত। তবে আমার অনেক সহপাঠী ভাইদের অবস্থা অনেক বেশি খারাপ।প্রতি মিনিটে মিনিটে একেকজনের আহত হবার খবর দেখছি, ছবি দেখছি, যেগুলো অসম্ভব ভয়াবহ । তাদের জন্য দোয়া করবেন।

আশা করছি লেখাটি আপনাদের ভালো লাগবে।এই প্লাটফর্ম এর এই লেখাগুলো থেকে যাবে চিরকাল সে সাথে থেকে যাবে আপনাদের সুন্দর সুন্দর মন্তব্যগুলোও।তাই আশা করছি আপনাদের সুন্দর সুন্দর মন্তব্য দেখতে পাবো।