ইফতার পাঠানো যেনো মৌলিক চাহিদা!

আজকে আবারো চলে আসলাম নতুন আরো একটি লেখা নিয়ে। আশা করি আজকের লেখাটি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।

আমি আজকের যে বিষয়ে লেখালেখি করবো কিংবা যে বিষয়ে আপনাদের সকলের সাথে লেখা শেয়ার করবো তা আমাদের সমাজের সকলেই আমরা খুব বেশি পরিচিত তার সাথে। অর্থাৎ এমন একটা বিষয় যে বিষয়টা আমরা জানি না এমন কেউ নেই।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমরা সব কিছু জানলেও সব কিছু সেভাবে মানতে আমরা চাই না। কিংবা আমরা আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটাকেই এমন করে রেখেছি। যেনো সেসব বিষয় না মানতে হয়।

আর কিছুই নয়, আমি কথা বলবো রোজায় মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে ইফতারি দেওয়া নিয়ে! এই চলটা আসলে আমাদের সমাজের বেশিরভাগ অঞ্চলে রয়েছে। আর যে অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হল চট্টগ্রামে। আমি চট্টগ্রামের মেয়ে কিন্তু সত্যি কথা বলতে এই দিকটাতে আমি ভীষণ লজ্জিত বোধ করি। কারণ চট্টগ্রামের যৌতুক প্রথা অসম্ভব রকমের বেশি।

আসলে আমি চট্টগ্রামের বলে যে চট্টগ্রামের এই অন্যায়টাকে ধামাচাপা দেব তার কোনো উপায় নেই। কারণ এতো খারাপ একটা বিষয় আমার নিজের অঞ্চলে হয় জেনেই আমার লজ্জা লাগে।আর সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে যখন দেখি এসব আমার নিজের পরিবারেই হয়।তা কি আর অস্বাভাবিক!

সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, আমি আমার রুমে বসে এই পোস্টটি লিখছি। আর আমাদের কিচেনে ব্যবস্থা চলছে এক কাজিনের শ্বশুরবাড়িতে ইফতারি দেওয়া নিয়ে,কারণ যেহেতু কাজিন টি বাবা মারা গিয়েছে।তাই সব আম্মু আব্বু ই করে। যেখানে আমার আম্মু নিজেই অসুস্থ। আসলে আমি একটু কথা বলতেও গিয়েছিলাম ও এসব নিয়ে। কিন্তু আসলে আপনারা সকলেই জানেন যে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলে খুব একটা লাভ হয় না। কারণ সকলের কাছে শ্বশুরবাড়ি তে ইফতার দেওয়াটা একটা এতো বেশি প্রয়োজনীয় মনে হয় যেনো এটা মৌলিক কোনো চাহিদা।

এইতো একটু পরেই এত কষ্ট করা ইফতারি গুলো চলে যাবে অন্যের বাড়িতে। আর তার কষ্টটা করছে মেয়ের পরিবার। কিন্তু কেনো?কেনো এতো বেশি অযথা নিয়ম কানুন? কারণ মেয়েদের পরিবারে সবসময় এটাই মনে হয় যে, মেয়েকে যত বেশি দেবে মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে ততটাই সুখী থাকবে। কিন্তু এটা ওনারা কিছুতেই বুঝে না যে যাদের দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে, তাদের জন্য কষ্ট করে গরিবরা।আর এটাও কিন্তু ভুল না যে,যে মেয়ের বাবার বাড়ি যেতে জিনিষপত্র বেশি যায় তাকে তার শ্বশুরবাড়িতে একটু আলাদাই দেখতে পারে!ঠিক বললাম তো?

এই যেমন ধরি, আমার ফ্যামিলিতে মোটামুটি যারা রয়েছে তাদের হয়তো ইফতারি গুলো দিতে গায়ে লাগছে না। কিংবা শারীরিক কষ্ট হলেও আর্থিক কোনো কষ্ট হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা ধার দেনা করে হলেও মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে ইফতারি পাঠায়। তার একমাত্র কারণ হলো মেয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে অবশ্যই মেয়েকে অনেক বেশি কথা শোনানো হয়। কিংবা এই নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বলা হয় যে এর শ্বশুর বাড়ি থেকে কিংবা তার শ্বশুরবাড়ি থেকে অনেক ইফতারি এসেছে। অর্থাৎ সরাসরি বলা না হলেও ঠিকই আড়ালে আবড়ালে এই কথাটা বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে, তোমার শ্বশুর বাড়ি থেকেও ইফতার পাঠানো উচিত।

আর এই কথাগুলা মেয়ে নিজের পরিবারে না বললেও মেয়ের পরিবারের লোকেরা খুব ভালোভাবেই বুঝে নেয়। আর বুঝে নেয় বলেই কিন্তু মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে এতো কষ্ট করেও ইফতার গুলো পাঠায়।

এই রোজার মাস শুধুমাত্র খাবারের জন্য আল্লাহ আমাদের দেননি। এই রোজার মাস আমাদের দিয়েছেন আমরা যেনো স্পেশালি ইবাদত করতে পারি।কিন্তু এই রোজার মাসে এসব খারাপ কিংবা অহেতুক কাজ করে সময় নষ্ট করার কোনো মানে আছে কিনা অন্তত আমার জানা নেই।

আমি জানিনা আমাদের এই সমাজের চিত্র কখনো বদলাবে কিনা। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে অসম্ভব অপছন্দ করি এ বিষয়টাকে। কিন্তু কি করার পরিবারের মানুষ কিংবা সমাজের মানুষ এই বিষয়টাকে যেনো একটু বেশিই পছন্দ করে!

আর মধ্যবিত্ত কিংবা বড়লোকদের এই পছন্দের কাজটা সবচেয়ে বড় কাল হয়ে দাঁড়ায় যারা নিম্নবিত্ত মানুষ অথবা যারা খেটে খাওয়া মানুষ তাদের জন্য।