গল্প:এ কেমন চোর....?

in hive-129948 •  7 months ago 

নমস্কার বন্ধুরা


আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সকলেই খুব ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করেই আমার আজকের ব্লগটি শুরু করতে চলেছি।

বাংলাতে একটা প্রবাদ আছে না "চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা, যদি না পড়ো ধরা"। আসলে চুরি তো জীবনে অনেক প্রকার দেখেছি, তবে এইরকম চুরি আপনারা কেউ কখনো দেখেছেন কিনা আমার জানা নেই। সেটা নিয়েই আসলে আমার আজকের গল্প। যাই হোক চলুন বেশি কথা না বলে গল্পটা আপনাদের সাথে শেয়ার করি, যেটা আমার নিজের সাথে ঘটেছে। গতবছর শীতকালে আমি, মা, বাবা এবং দাদা গিয়েছিলাম দীঘা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। সাধারণত দীঘা ভ্রমণের সব থেকে ভালো সময় হলো শীত এবং গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়টা। আমরা সেরকমই একটা সময় করে সবাই গিয়েছিলাম। তবে বাবার যে সমস্যা ছিল সেটা হল যে বাইরের হোটেলের খাবার বাবা খুব বেশি একটা খেতে পারে না। এজন্য অনেক সময় ওখানে অনেক হোটেল থাকে যেখানে খুব সুন্দর করে ওরা ঘরোয়াভাবে রান্না করে দেয়। যাই হোক আমরা দীঘা গিয়ে প্রথমে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করলাম। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম যে নিজেরা ঘুরাঘুরি করে তারপর বাজার করে দিয়ে আসবো কোন একটা রেস্টুরেন্টে। তারপর সেখান থেকে রান্না করে নিয়ে আসব।

kermit-2687975_1280.jpg
সোর্স

আসলে বাজার করে দিয়ে আসলে দুটো ব্যাপার খুব ভালো হয় সেটা হল, এরা সবসময় চেষ্টা করে একটু ভালো করে গুছিয়ে রান্না করে দেওয়ার জন্য এবং অন্যদিকে অল্প টাকার ভিতরে অনেক ভালো কোয়ান্টিটির খাবার পাওয়া যায়। যেহেতু আমরা চারজন গিয়েছিলাম এজন্য চারটে পমফ্রেট মাছ এবং এক কেজি দেশি মুরগির মাংস কিনে দিয়ে আসলাম রান্না করার জন্য। এরপর আমরা চলে গেলাম সন্ধ্যার দিকে সমুদ্র সৈকত ঘুরতে। এবং সেখান থেকে ঘুরাঘুরি শেষ করে বাড়ি এসে রাতের খাওয়া দাওয়ার সময় হয়ে গেল। তাই চলে গেলাম সেই হোটেলে যেখানে আমরা খাবার তৈরি করতে দিয়েছিলাম। সাধারণত এই হোটেল গুলোতে একটা সুবিধা থাকে যে এক কেজির উপরে মাংস রান্না করতে দিলে কিংবা অন্যান্য অনেকগুলো আইটেম একসাথে করতে দিলে এর সাথে ভাত ফ্রি দেয়। অথবা নামে মাত্র কিছু দাম রাখে। তবে আমরা মাংস এবং মাছ আনার সময় দেখলাম যে আমাদের ফ্রিতে ভাত দিয়ে দিল। প্রথম দিকে তো বেশ ভালই লাগছিল যে ফ্রিতে দিয়েছে। পরবর্তীতে একটা খটকা লাগলো যে কিছু একটা ব্যাপার আছে, না হলে আমাদের ফ্রিতে ভাত দেবে কেন।

মোটামুটি সেটা চিন্তা করতে করতে ঘরে এসে মাংসের বাটি খুলে তো অবাক। আমরা যতটুকু মাংস রান্না করতে দিয়েছিলাম তার প্রায় অর্ধেক আমাদের রান্না করে দিয়েছে। প্রথমত একটা লেগ পিস গায়েব হয়ে গেছে, তারপর গলার মাংস গায়েব হয়ে গেছে, তারপরে মেটে এগুলো সব গায়েব হয়ে গেছে। ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম যে মুরগির বুকের একটা সাইডের কিছু মাংসও গায়েব হয়ে গেছে। এইবার বুঝতে পারলাম যে আসল ব্যাপারটা কি। তবে কি আর করা যাবে আমরা তৎক্ষণাৎ যা ছিল ওগুলো খেয়ে দেয়ে চলে গেলাম সেই দোকানে আসল রহস্য জানার জন্য। আমি তো তেমন কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারেনি। তবে আমার দাদা জিজ্ঞাসা করল যে কাহিনীটা কি। আপনাদের এক কেজি মাংস রান্না করতে দিলাম আপনারা রান্নাও করে দিলেন, তবে মুরগির একটা লেগ পিস গায়েব হয়ে গেছে। তাছাড়া অন্যান্য জিনিসও গায়েব হয়ে গেছে। এগুলো গেল কোথায়। উত্তরে তারা বলল যে যিনি হয়তো রান্না করেছে তিনি দু এক পিস মাংস খেয়ে টেস্ট করে দেখেছে যে সব ঠিক আছে কিনা। তখন দাদা বললো সামান্য নুন মসলার টেস্ট করতে কি সাড়ে চারশ গ্রাম মাংস গায়েব হয়ে যায়।

এর উত্তরে যদিও তারা কিছু বলতে পারেনি, আর আমরাও তেমন বিশেষ কোন তর্ক করিনি যেহেতু নতুন জায়গায় ঘুরতে এসেছিলাম। আমরা শুধু এটাই চিন্তা করছিলাম যে আসলে চোর কত প্রকার হয়। আসল ঘটনা হলো ওরা ওই মাংসটুকু রেখে দেয় এবং অন্য জায়গায় বিক্রি করে চড়া দামে। অর্থাৎ আমরা যে লাভের জন্য মাংস ওদের কাছে রান্না করতে দিয়ে আসি,তাতে আদৌ খুব বেশি একটা লাভ হয় না। হয়তো আমরা ব্যাপারটা ধরতে পেরেছিলাম, কিন্তু যারা অনেক বেশি মাংস রান্না করতে দেয়া তারা তো এগুলো কখনো বুঝতেই পারেনা। এটাই ছিল আসলে ঘটনা, আশা করছি ঘটনাটা আপনাদের ভালো লেগেছে।


পোস্ট বিবরণগল্প

আজ আর নয়। আজ এই পর্যন্তই শেষ করছি। ভালো থাকবেন সকলে আর সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তীতে আবারও নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব।





🪔আমার পরিচয়🪔

InShot_20240217_224020693.jpg

আমি পূজা ঘোষ(রাজশ্রী)। বনগাঁতে বসবাস করি। আমি বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয় থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, বিজ্ঞান বিভাগে ।পাশাপাশি কম্পিউটার এবং স্পোকেন ইংলিশের কোর্স করেছি। বর্তমানে আমি ফার্মাসিতে অধ্যায়নরত । ভবিষ্যতে এইগুলো নিয়ে ভালো কিছু করার আশায় এগোচ্ছি। কবিতা আবৃত্তি করতে আমি খুবই ভালোবাসি। ছোটো বয়েস থেকেই কবিতা আবৃত্তি শিখছি। এছাড়া ছবি আঁকতে,ঘুরতে যেতে,নতুন নতুন খাবার খেতে,গান শুনতে,ফোটোগ্রাফি করতে আর মানুষের সাথে মিশতে ভালোবাসি।

🎯 সমাপ্ত🎯

Posted using SteemPro Mobile

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

একে বলে ঠান্ডা মাথায় চুরি। মুরগির মাংস তাদের কাছে রান্না করতে দিয়েও আরেক বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন। ১ কেজি মাংসের কিছুটা তারা চুরি করেছিল, লেগ পিস একটা থাকায় সহজেই বুঝতে পেরেছিলেন মাংস কিছুটা তারা রেখে দিয়েছে। যেহেতু তারা কিছু মাংস রেখে দিয়েছে তাই তাদেরও বলার কোন কথা ছিল না।

Posted using SteemPro Mobile

হ্যাঁ ভাই, লেগ পিস একটা থাকায় আমরা বিষয়টি ধরতে পেরেছিলাম।

আসলে এরকম চুরিকে বলে বুদ্ধিমত্তার চুরি। তারা এমনভাবে এটিকে রেখে দিয়েছে যাতে করে আপনি বুঝতে না পারেন৷ তবে তারা এতটা সাবধানতা অবলম্বন করার পরেও আপনি বুঝে ফেলেছেন৷ একটি লেগ পিস ছিল যখন এটি আর দেখতে পেলেন না তখন আপনি বুঝে গিয়েছিলেন যে আসলে মুরগির মাংস এখান থেকে সরে গিয়েছে৷ আসলে এরকম মানুষ অনেক জায়গায় রয়েছে এবং এদের এই কাণ্ডকারখানা কখনো ঠিক হবে না৷

ঠিক বলেছেন ভাই,এরকম মানুষ প্রায় সব জায়গাতেই রয়েছে আর এরা কখনো শোধরানোর নয়।

এরকম ভাবে চুরি করা হয় এটা আমি আজকে প্রথমবারের মতো জানলাম। ভেবেচিন্তে ঠান্ডা মাথায় চুরি করা হয়েছে বুঝতেই পারছি। আমি তো এটা ভাবতেছি লবণ দেখতে গিয়ে এত মাংস খাওয়া লাগে নাকি। তারা আপনাদের প্রশ্নের এ রকম উত্তর দিয়েছে দেখেই তো আমার হাসি পাচ্ছে। তাদের এই চালাকি কেউই বুঝতে পারে না। আপনারা কম মাংস দেওয়াতে হয়তো বুঝতে পেরেছেন বিষয়টা। ফ্রিতে ভাত দেওয়ার বিষয়টা তো এটাই ছিল। যাই হোক এরকম চুরির কথা আপনার মাধ্যমে জানলাম দিদি। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

পোস্টটি পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে আপু ।

কি আর বলব দিদি, এই ঘটনা আমাদের সাথেও হয়েছিল। আমরাও দীঘা গিয়ে মাংস রান্না করতে দিয়েছিলাম। যখন রান্না করে রুমে এনেছি তখন দেখি অনেকটাই নেই সেখানে। তবে ওখানে যারা রয়েছে তারা কিন্তু সবাই এরকম নয়, কিছু কিছু মানুষ এরকম। যদিও তোমরা মুখের উপর গিয়ে প্রতিবাদ করেছিলে, আমরা সেটা আর করিনি যেহেতু নতুন জায়গা ছিল তার জন্য। গল্পটা পড়ে সত্যিই হাসি পেলো এটা জেনে যে, এই ঘটনা শুধু আমাদের সাথে হয়নি, অনেকের সাথেই হয়। হা হা হা...🤭

তোমাদের সাথেও দেখছি একই ঘটনা হয়েছিল , হি হি হি। মনে হয় প্রায় সকলের সাথেই হয় এসব।

আপনার পোস্ট পড়ে চোরের সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা হল। আসলে এটি চিন্তার বিষয়। বাজার করে দেওয়ার পর রান্না করে ভাত ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে বাসায় এনে দেখতেছেন আপনাদের বাজার করা মাংস অনেকটাই নেই। আসলে এরকম হোটেল গুলোতে মানুষের হক মেরে খায়। তবে আবার মাঝে মধ্যে তারা সাধু সাজে ফ্রিতে অনেক কিছু দিতেছে। আসলে এদেরকে বলা হয় চোরের উপর বড় বাটপারি। এবং আপনার পোস্টটি পড়ে নতুন একটা চোরের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা হলো। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি চোরের গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

হ্যাঁ ভাই ঠিকই বলেছেন, অনেকটা চোরের উপর বাটপারির মতো বিষয়টা।

সত্যি আপু অনেক চুরির কথা শুনেছি তবে এরকম মহা চুরির কথা কখনো শুনি নাই। তবে এইসব জায়গা রেস্টুরেন্ট গুলো নামে মাত্র মানুষের কাছে ভালো সাজার চেষ্টা করে। আপনারা বাজার করে দিয়েছেন এবং কতটুকু করে দিয়েছেন তা আপনারা জানেন। তারপরও রান্না করার সময় আপনাদের অর্ধেক মাংস রেখে দিল। তবে এরা ভদ্রভাবে চুরি করে। যদিও এদের কে কিছু বলতেন তাহলে তারা হয়তোবা অন্যরকম ভালো সাজার চেষ্টা করত। আর এইসব লোক গুলো হয়তো সামান্য কিছু ফ্রি দিয়ে বড় আকারের কিছু সুবিধা গ্রহণ করে। যাইহোক সুন্দর করে পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন তাই ধন্যবাদ আপনাকে।

পোস্টটি পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু আপনাকে।

তারা যেভাবে এই কাজটা করছে এটা তো কেউ কখনো ধরতেও পারবেনা। তবে এটা করাও তাদের জন্য একেবারে উচিত হচ্ছে না। আপনারা যেহেতু শুধুমাত্র এক কেজি মাংস রান্না করতে দিয়েছিলেন, তাই হয়তো আপনারা এটা বুঝতে পেরেছেন। তারা সুযোগে সৎ ব্যবহার করে। চোর কয় রকমের এবং কত প্রকার হতে পারে এটা আন্দাজ করে নিলাম আপনার পোষ্ট পড়ে। এরকম চোরও যে হয়, এটা আমি একেবারেই জানতাম না। আপনাদের সাথে বাস্তবিকভাবেই এটা ঘটেছে তাহলে। অন্যদের জন্য কিন্তু এটা সচেতন মূলক একটা পোস্ট হয়েছে।

হয় ভাই আরো অনেক ধরনের চোরই হয়। তবে আমরা আসলে বুঝতে পারি না সঠিক সময়ে সেটা।

আসলে পৃথিবীতে কতো প্রকার চোর রয়েছে তা না শুনলে বোঝা যায় না।যেমন আজকে আপনার চোরের ঘটনাটি শুনে সতর্ক হতে পারবো এরকম যদি রান্না করতে দেই কখনো।আপনারা এক কেজি মুরগির মাংস রান্না করতে দিয়েছেন জন্য ধরতে পেরেছেন। যারা অনেক মাংস রান্না করতে দেয় তাদের তো অবস্থা খারাপ করেন।আর নুন চাখতে লেগ পিস, কলিজা,গলারও বুকের মাং খেয়ে ফেলেছে হাস্যকর কথা।সত্যি ঠিক চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ো ধরা।গল্পটি পড়ে কতো প্রকার চোর হতে পারে তা বুঝতে পেলাম।

ঠিকই বলেছেন দিদি, আসলে না দেখলে আমরাও এই চোরগুলোর সম্পর্কে কখনো বুঝতেই পারতাম না। যাইহোক,ধন্যবাদ আপনাকে।