ছাত্র জীবনে ম্যাচ খোজার অভিঙ্গতা. || ম্যাচ খুজতে যাওয়া একটা দিনের আলোচনা...

in hive-129948 •  3 years ago 


আসসালামু আলাইকুম,


সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সকলে খুব ভালো আছেন? শুনতাম ছাত্র জীবন সুখের এবং কষ্টের দুইটারই হয়। গত বৃহস্পতিবার সেটা পূরপুরি বুঝতে পারলাম। আজকে আমি আমার ছাত্র জীবনের ম্যাচ খোজার কষ্ট কর কিছু বিষয় এবং আমার নিজের অভিঙ্গতা শেয়ার করব। আশা করি আমার পোষ্টটা পড়লে আপনারা একজন ছাত্র একটা ভালো ম্যাচ খুজতে কতটা কষ্ট করে সেটা বুঝতে পারবেন।চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করি-


শিক্ষাবোর্ডের হাল চাল দেখতে দেখতে জীবনটা অতিষ্ট হয়ে গেল। কয়েক দিন পর পর তারাত তাদের সিদ্ধান্তটা পাল্টায়। কয়েক দিন আগেই কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের নিদের্শে সকল পলিটেকনিকে সকল পর্বের অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। আমি যেহেতু পলিটেকনিকের ছাত্র তাই আমাকেও অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে হয়। আবার এরই মাঝে বোর্ড জানিয়ে দিলেন পরিক্ষার তারিখ। অনলাইন ক্লাস করেই দেওয়া লাগবে পরিক্ষা। এতো কিছু এক সাথে শোনার পর যেন পাথরে মূর্তির মতো দাড়িয়ে গেছিলাম। যাক তিন দিন বাসায় অনলাইন ক্লাস করলাম। এরপর দেখলাম, বাসায় থাকলে পড়াশুনাটা ভালো ভাবে হবে নানে। এজন্য ম্যাচে যাওয়া লাগবে। কিন্তু আমি আগে যে ম্যাচে থাকতাম, সেটা ছেড়ে দিছি। এখন ম্যাচে যেতে হলে আবার আমাকে নতুন ম্যাচ খুজতে হবে।


ম্যাচ খোজার উদ্দেশ্যে আমি গত বুধবার রাতে আমার কিছু বন্ধুদের সাথে কথা বললাম। এরপর আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, বৃহস্পতিবার সকলে এক সাথে মিলে ম্যাচ খুজবো। এই সিদ্ধান্তের পরিপেক্ষিতে, আমি বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে রেডি হলাম। তারপর আমি সকালের খাওয়া দাওয়া করে ৯টার দিকে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। আমরা সবাই কুষ্টিয়া আমাদের পুরাতন ম্যাচের সামনে দেখা করব। এবার আমি ১ ঘন্টার বেশি জার্নি করে কুষ্টিয়া কলেজ মোড়ে গেলাম। গিয়ে কিছু ক্ষণ দাড়ানোর পর আমার বন্ধুরা আসলো। ওরা পাচঁ জন ছিল। দুইজন একটা রিকসাই চলে গেল। এখন আর তিন জন একটা রিকসায় উঠলেন। আর আমার দিয়ে হয়ে গেল চারজন। আমিও ওদের রিকসাই উঠে পড়লাম। চারজন এক রিকসায় যাত্রা শুরু করলাম, পুরাতন ম্যাচের সামনের উদ্দেশ্যে।


IMG_20210813_204015_084.jpg

আমরা চার বন্ধু এক রিকসাই
Device : Itel vision 1.
w3w link


এরপর আমরা একটা জায়গায় গিয়ে আগে সিদ্ধান্ত নিলাম, কি করা যায়। আমরা মোট আট জন ছিলাম। আমরা প্রথমে সিদ্ধান্ত নিলাম, একটা ফ্লাট বাসা নিয়ে আমরা নতুন ম্যাচ শুরু করব। এই উদ্দেশ্যে আমরা ১১:৩০ এর দিকে বেরিয়ে পরলাম। আমরা কয়েকটা বিল্ডিং দেখলাম। কিন্তু কোনোটায় পছন্দ হলে না। পছন্দ হলেও আমাদের সার্ধের বাইরে। ১/২ ঘন্টা হাটার পর আমাদের সবার অবস্থা করুন কেউ আর ম্যাচ খুজতে চাই না। বলে এতো কষ্ট করে এগলি ওগলি ঘুরে ফ্লাট খুজে ম্যাচে আসা যাবে না।


IMG_20210813_204041_860.jpg

IMG_20210813_204033_506.jpg

ম্যাচ দেখার অপেক্ষা সবাই দাড়িয়ে আছে
Device : Itel vision 1.
w3w link


এমনিতেই হাটতেঁ হাটতেঁ পায়ে ব্যথা হয়ে গেল। তার মধ্যে থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি। কখনও জোরে তো কখনও আস্তে। দৌড়ে দৌড়ে একটা জায়গায় গিয়ে আমরা সবার দারিয়ে থাকতাম। তারপর বৃষ্টি থামলে আবার ম্যাচ খোজা শুরু। করোনার কারণে বেশির ভাগ ম্যাচই বন্ধ আছে। যার কারণে খুজতে অসুবিধা হচ্ছে। যাও বা পাওয়া যাচ্ছে ভাড়া অনেক বেশি।


IMG_20210813_204024_931.jpg

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে
Device : Itel vision 1.
w3w link


এদিকে ৩ টা বেজে গেছে। খিদের জ্বালায় সবার পেট চু চু করছে। সবাই কেউ আর হাটতে পারছে না। এবার আমরা সবাই মিলে একটা হোটেলে গিয়ে কিছু খাবার খেয়ে নিলাম। খাওয়া দাওয়া পরে আমরা সবাই একটু দম নিলাম। তারপর সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম এভাবে, ফ্লাট খুজে ম্যাচে থাকা যাবে না। যে যার মতো চলমান ম্যাচ খুজে নিয়ে সেখানে উঠতে হবে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমি আমার এক বড় ভাইয়ের ম্যাচে গেলাম। কিন্তু সেই ম্যাচটা আমার পছন্দ হলো না। ম্যাচের পরিবেশটা ভালো না।


এবার আমি আমার আরেক বড় ভাইয়ের ম্যাচ দেখতে গেলাম। তবে সেখানে আমরা সবাই এক সাথেই গিয়েছিলাম। কারণ সেখানে সিট বেশি ফাকা ছিল।এরপর সেখানে গিয়ে ম্যাচটা দেখে আমার বেশ পছন্দ হলো। তখন বিকাল ৫ টা বাজে। সারাটা দিন হেটে হেটে ম্যাচ খোজার পর একটা ম্যাচ পেলাম যেখানে ভালো ভাবে থাকা যাবে। ম্যাচটা দুই তালা বিল্ডিং এর। নিচ তালাই বাড়ীর মালিকরা থাকে আর উপর তলা ম্যাচ ভাড়া দেওয়া।


IMG_20210813_204055_928.jpg

অবশেষে খুজে পাওয়া ম্যাচের রুমে আমি
Device : Itel vision 1.
w3w link


মোট চারটা রুম। একটা রুমে তিনজন করে থাকা যায় এবং আর একটাই দুই জন করে। এবার আমার বন্ধুরা সব অন্য ম্যাচ থেকে তাদের জিনিস পত্র গুলো ভ্যানে করে নতুন ম্যাচে আনলেন।আমিও তাদের কাজে সাহায্য করলাম। সকল কিছু ঠিক করতে করতে মাগরিবের আজান হয়ে গেল। তবে ম্যাচটা আমার কলেজ থেকে একটু দূরে। এরপর আমরা সবাই সন্ধার পর ম্যাচ থেকে বেরিয়ে পরলাম। সবাই বাসায় চলে যাবে। কিন্তু আমি কুষ্টিয়া আমার বোনের বাসায় যাব। রাত হয়ে গেছে তাই আর বাসায় যাব না। তবে আমার বন্ধুরা সবাই বাসায় চলে যাবে। যাওয়ার আগে আমরা সবাই এক সাথে বসে চপ খেলাম। সারাটা দিন কষ্ট করে সবাই মিলে একটু সস্তি খুজলাম। বেশ ভালোই লাগছিল, এক সাথে বসে চপ খেতে।


IMG_20210813_204108_582.jpg

সবাই একসাথে চপ খাওয়ার সময়
Device : Itel vision 1.
w3w link


এরপর ওরা সবাই বাসায় চলে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পরলো।আমিও একটা রিকসা নিয়ে আমার বোনের বাসায় গেলাম। সেই ছোট বেলা থেকে আজ পর্যন্ত লেখাপড়া করতে গিয়ে হয়ত এতটা কষ্ট কখনও করি নাই। আজকে ম্যাচ খুজতে গিয়ে যতটা করেছি। যারা বাইরে থেকে পড়াশুনা করে তাদের জন্য ভালো ম্যাচ খুজে পাওয়া সব চেয়ে কষ্ট কর।এটা আমি গত কাল বুঝতে পারলাম। আশা করি এই অভিঙ্গতাটা সারাটা জীবন মনে থাকবে আমার। ছাত্র জীবনে ম্যাচ পাল্টানোটা সব চেয়ে বেশি কষ্ট কর। এভাবেই অনেক কষ্ট করার পর ম্যাচ খুজে পেলাম।


আজকে আমার নিজের অভিঙ্গতা থেকে ছাত্র জীবনে ম্যাচ খোজার একটা দিন আপনাদেরকে জানালাম। আশা করি ছাত্র জীবন কতটা সুখে এবং কতটা কষ্টের তা বুঝতে পেরেছেন। আশা করি লেখাটা আপনাদের সবার কাছে ভালো লেগেছে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। অবশ্যই সকল স্বাস্থ্য বিধিগুলো মেনে চলবেন।



সবাইকে অনেক ধন্যবাদ আমার আজকের পোষ্টটা পড়ার জন্য।


logo.gif


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

বাহ, কী দারুণ পোস্ট, একত্রিত হওয়া

ধন্যবাদ।

সর্বদা টিকে থাকুক আপনাদের বন্ধুত্ব ও সুন্দর মুহূর্তগুলি।শুভকামনা রইলো ভাইয়া।

ধন্যবাদ বোন। শুভ কামনা।

বন্ধুত্ব হোক চির অম্লান। শুভ কামনা।।

ধন্যবাদ আপু।

You have been upvoted by @sm-shagor A Country Representative, we are voting with the Steemit Community Curator @steemcurator07 account to support the newcomers coming into steemit.


Follow @steemitblog for the latest update. You can also check out this link which provides the name of the existing community according to specialized subject

There are also various contest is going on in steemit, You just have to enter in this link and then you will find all the contest link, I hope you will also get some interest,

For general information about what is happening on Steem follow @steemitblog.

Thank you.

আসলেই এই লকডাউনে ভালো মেস খুজে বের করা খুবই কষ্টের কাজ। যাইহোক এরা কারা। এদের তো আগে দেখিনি।

এরা আমার বন্ধু আর বড় ভাই। আমরা এক সাথেই ম্যাচে থাকতাম। আশা করি এক সাথেই থাকবো এবারও ম্যাচে।

ঢাকা শহরের মতো জায়গায় ম্যাচ খোঁজার মুখের কথা নয়। এখানে টাকা দিলেও ভালো মানের ম্যাচ পাওয়া যায় না। আমি ছয় বছর এই ম্যাচে জীবন যাপন করেছি তাই বিষয়টি অনেক ভালো ভাবেই বুঝতে পারি অনুধাবন করতে পারি।

ম্যাচ জীবনই কষ্টের।

মনের মত ম্যাচ না পেলে জীবনটাই বেদনা। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ।

আপনাদের বন্ধুত্ব আগামী ভবিসসত জীবন অটুট থাকুক এই দয়া করি😍😍

ধন্যবাদ আপনাকে।

মনের মত ম্যাচ খুজে বের করা অনেক কষ্টের।

জি ভাই একদম ঠিক কথা।

দারুন লেগেছে আপনার পোস্ট টা। শুভেচ্ছা রইলো ভাইয়া

ধন্যবাদ।