হ্যালো বন্ধুরা।
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই অনেক ভালো আছেন। আজ আমি একটা বিশেষ পোস্ট শেয়ার করতে চলেছি। যে পোস্টের পর্ব প্রত্যেক বছর একটি করে আসে। এটি হচ্ছে কালবৈশাখী শপিং। গত দুই বছর আগে কালবৈশাখী শপিং নামের একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলাম। গত বছর সেটির দ্বিতীয় পর্ব শেয়ার করেছিলাম। আজ শেয়ার করতে চলেছি তৃতীয় পর্ব। কালবৈশাখী শপিং এর প্রথম পর্ব টা ছিলো আমাদের সার্কেলের কাছে খুবই স্মরণীয় এবং ভালো লাগার একটি রাতের গল্প।
প্রতি ঈদুল ফিতরের দু-তিন দিন আগে আমরা রাত্রি বেলায় শপিং করতে যাই। রোজা থেকে দিনের বেলা শপিংয়ে যাওয়াটা কষ্টকর। এজন্য রাত সাড়ে নটার দিকে আমরা বেরিয়েছিলাম এবার। আমাদের প্ল্যান থাকে রাত তিনটার দিকে বাসায় ফেরার। ওই সময় সবাই জেগে থাকে সেহরির প্রস্তুতির জন্য। যাইহোক যথারীতি গত বছরগুলোর মতই এবারও আমরা রাত সাড়ে নটার দিকে বেরিয়েছিলাম। সৌভাগ্যবশত সেদিনের রাতটা ছিল নাতিশীতোষ্ণ। আরামদায়ক পরিবেশ থাকায় খুব ভালোভাবেই আমরা সময়টা উপভোগ করতে পেরেছি।
গত দুবছরই যাওয়ার সময় আমরা কাঁচা আমের স্বাদ নিয়েছি কিন্তু এবার সেটা সম্ভব হয়নি। আম এখনো খাওয়ার মত উপযুক্ত হয়নি তাই আমের স্বাদটা এবার নেয়া হলো না। এবার আমরা ১১ জন ছিলাম মোট। একজন অবশ্য আসতে পারেনি ঈদের ছুটি দেরিতে হওয়ার কারণে। যাইহোক দশটা সাড়ে দশটার দিকে আমরা শহরে পৌঁছে গিয়েছিলাম। মার্কেটে গিয়ে দেখলাম পা ফেলানোর জায়গা নেই। রোজা থেকে দিনে হয়তো কম মানুষই শপিং করে। সবাই রাত্রে এই ঠান্ডা পরিবেশে শপিং করতে চলে এসেছে।
আমরা চিন্তা করলাম একটু ঘুরাঘুরি করি। ততক্ষণে লোকজন কমে গেলে আমরা শপিং করতে শুরু করব। আমাদের শহরের একটি খুবই পপুলার ফাস্টফুড আইটেম হলো টিকিয়া। খাসির মাংস দিয়ে বানানো এই টিকিয়া যখন কলেজে পড়তাম তখন প্রচুর খেতাম। এখনো শহরে আসলে এই টিকিয়ার লোভ সামলাতে পারি না। মজার ব্যাপার হলো এগুলোর দাম মাত্র দুই টাকা। সবাই অনেকগুলো করে খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বাইকটা নিয়ে আবার অন্যত্র ঘুরতে চলে গেলাম। মার্কেটের এই প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে বেড়ানো শেষ। রাত অনেক হয়েছে তখন আমরা শপিং করতে শুরু করলাম।
আমরা সবাই একসাথে ঘুরলে একজন একজন করে শপিং করা হবে, তার থেকে ভালো সবাই আলাদা আলাদা হয়ে যদি শপিং করা যায় তাহলে সবারটাই দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। এজন্য আমরা দু তিনজন করে আলাদা আলাদা হয়ে শপিং করতে শুরু করলাম। পাঞ্জাবি যা কেনার সব আমি একটি দোকান থেকেই কিনেছি। মেয়েদের আইটেম যা প্রয়োজন তাও আর একটা আলাদা দোকান থেকেই কিনে নিয়েছি। বেশি দোকানে ঘুরাঘুরি করি নাই আমি।
আমি এবং আমার সাথে আর যে দু'একজন ছিলো তাদের সবার কেনাকাটা করতে করতে রাত বেজে গেল বারোটা- সাড়ে বারোটা। শহর তখন অনেকটাই ফাঁকা। অল্প ছোটখাটো কিছু কেনাকাটা ছিলো তখন সবাই একসাথে ঘুরাঘুরি করে সেগুলোও কিনে ফেললাম। রাত বাজে তখন এক'টা। আমাদের সবারই কেনাকাটা সম্পন্ন হয়েছে।
এমন সময় দেখলাম রাত একটার ট্রেন শহরের বুক চিরে ছুটে চলেছে। খেয়াল করলাম ট্রেন একদম ফাঁকা। আর ফাঁকা থাকবেই না কেন? ঢাকার দিকে যে ট্রেন যাচ্ছে সেখানে তো লোক থাকার কথা না। ঢাকা থেকে যে ট্রেনগুলো ছেড়ে আসছে সেগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। যাইহোক এরপর আমরা সবাই কিছু খাওয়া দাওয়া করার উদ্দেশ্যে একটি হোটেলে গেলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বেশিক্ষণ অপেক্ষা না করে এবার আমরা বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
আমরা যখন শহর থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি তখন ঘড়িতে বাজে রাত ২ টা। গভির রাতে হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর মধ্যে ভীষণ মজা। আমরা আস্তে ধীরে রিলাক্সে গাড়ি ড্রাইভ করছিলাম। ওয়েদারটা হালকা ঠান্ডা ঠান্ডা থাকায় খুবই ভালো লাগছিল। প্রথম বছরে তো ঝড় বৃষ্টি ছিলো, সেটা অন্যরকম একটা অ্যাডভেঞ্চার ছিলো। দ্বিতীয় বছরে প্রচন্ড গরম ছিলো কিন্তু এবারের ওয়েদারটা অনেকটাই ঠান্ডা।
রাত বাজে আড়াইটা। গত দুবারের মতো এবারও আমরা সেইম একটি টং দোকানে দাঁড়াইলাম চা খেতে। দোকানটা হাইওয়ের সাথে হওয়ার কারণে প্রায় সারা রাতই খোলা থাকে। সবাই একটুখানি বসে লাল চায়ে চুমুক দিয়ে প্রশান্তি খুঁজে নিলাম। ঠান্ডা ওয়েদারে রংচা টা খুব ভালো লাগছিলো। চা খাওয়া শেষ করে আরো একটুখানি বসে এরপর আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আস্তে ধীরে গাড়ি চালিয়ে এসেছি যেন বাড়িতে এসে সাড়ে তিনটার দিকেই পৌঁছাই। প্ল্যান মত সাড়ে তিনটার দিকেই বাড়িতে এসেছিলাম।
এটাই ছিলো কালবৈশাখী শপিং এর তৃতীয় পর্ব। প্রথম পর্বের মতো অতটা আনন্দ সত্যিই আর হয়তো সম্ভব নয়। ভীষণ ঝড় বৃষ্টি, আম কুড়ানো, এরপর নদীর পাড়ে আবার আচমকা ঝড়ের কবলে পড়া সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ ছিলো। প্রত্যেক বছরে সবাই একসাথে শপিংয়ে যাই এটাও কিন্তু অনেক আনন্দের একটি বিষয়। যেটা আমাদের প্রত্যেক ঈদের আগেই ভালোলাগার একটি অনুভূতি জায়গায়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ইনশা আল্লাহ নেক্সট ইয়ারেও আমরা এভাবেই ঈদ শপিংয়ে যাব এবং কালবৈশাখী শপিং চতুর্থ পর্ব শেয়ার করবো। আল্লাহ হাফেজ।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

মজা লাগলো টাইটেল পড়ে,ভাবলাম এটা আবার কেমন কথা,হাহাহা।যাইহোক সবাই মিলে একসাথে রাতের বেলায় শপিং করেছেন জেনে ভালো লাগলো। আমরাও এবার বেশিরভাগ শপিং করেছি রাতের বেলা। কারণ দিনের বেলা রোজা রেখে গরমের মধ্যে শপিং করা সম্ভব হয় না। যাই হোক ভাইয়া রাত আড়াইটা বাজে রং চা খেয়ে সাড়ে তিনটার বাড়ি পৌছালেন। অবশেষে সব কিছু ভালোভাবে হয়ে গেল। আগামী বছরেও এই পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গত বছরের কালবৈশাখী শপিং দ্বিতীয় পার্ট সম্ভবত দেখেছিলাম ৷ একই ভাবে সবাই মিলে রাতের দিকে শপিং করতে গিয়েছেন আম খেয়েছেন এবং আরো অনেক ভাবে সময়টা উপভোগ করেছেন ৷ এবারও সেভাবেই সময়টা উপভোগ করার চেষ্টা করেছেন দেখে বেশ ভালো লাগলো ৷ তবে যে সময়টা যায় সেটা আসলেই অনেক বেশি আনন্দময় হয় ৷ পরবর্তীতে সেই আনন্দ সুখ আর পাওয়া যায় না ৷ যাই হোক , সব মিলিয়ে দারুণ কিছু মুহূর্ত কাটিয়েছেন ৷ ধন্যবাদ দাদা
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কালবৈশাখী শপিং এর স্মৃতি এখনো আমার মনে আছে। আপনার পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম। সত্যি ভাইয়া সেই স্মৃতি কখনোই ভোলার মত নয়। প্রত্যেক বছরই আপনাদের এই মধুর মধুর স্মৃতিগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগে। সবাই মিলে একসাথে শপিং করার আনন্দটাই অনেক বেশি। তবে এবার আমের দেখা একদমই নেই। কেবল ছোট ছোট আম গাছে দেখা যায়। আবারও অপেক্ষায় রইলাম নতুন বছরের ও নতুন কোন পর্বের। শুভকামনা রইলো ভাইয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
রাজু ভাইয়ের থেকে শুনেছিলাম আপনাদের কালবৈশাখী শপিং এর ব্যাপারে। ব্যাপার টা বেশ দারুণ এবং ইন্টারেস্টিং। আপনারা ধারাবাহিক ভাবে এটা ধরে রেখেছেন দেখে ভালো লাগছে। যদিও এবার কাঁচা আমের স্বাদ নেওয়া হয়নি। শহরের মধ্যে ঘুরে বেশ সুন্দর একটা সময় কাটিয়েছেন। তারপর সবাই মিলে শপিং। এই কথাটা একেবারে ঠিই সবাই একসঙ্গে থাকলে শপিং করা যায় না। এক্ষেত্রে আপনারা ভাগ হয়ে গিয়ে বেশ ভালো করেছিলেন। অনেক রাত করে বাড়ি ফিরেছিলেন ঐদিন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার সার্কেলের কয়েকজনের কাছেই শুনেছিলাম ১১ জন একসাথে শপিংয়ে গিয়েছিলেন। একসাথে এতজন শপিংয়ে গেলে আসলেই খুব ভালো লাগে। রাতের বেলা ঠান্ডা ওয়েদারে শপিং করেছেন এবার। রোজা রেখে দিনের বেলা শপিংয়ে যেতে চান না অনেকেই। বেশ ভালোই কেনাকাটা করেছেন ভাই। সবমিলিয়ে দারুণ সময় কাটিয়েছেন। আশা করি আগামী বছর পার্ট - ফোর দেখতে পাবো। সেই অপেক্ষায় রইলাম ভাই। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit