বরশি দিয়ে মাছ ধরা দেখার অনুভূতি

আসসালামুয়ালাইকুম, এবং হিন্দু ভাইদের কে আদাব।আমার বাংলা ব্লগ এর সবাই কেমন আছেন, আশা করি প্রত্যেকে অনেক বেশি ভালো আছেন। আমি ও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। প্রতিদিনের ন্যায় আজকে আপনাদের সাথে বরশি দিয়ে মাছ ধরা দেখার অনুভূতি শেয়ার করবো । আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক বেশি ভালো লাগবে।তো চলুন এবার শুরু করা যাক।

কথায় আছে "আমরা মাছে ভাতে বাঙালি " । তবে, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের মধ্যে এই প্রবাদ বাক্য টি পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমরা আলু ভাতে বাঙালি। প্রাচীন কালের কিছু মানুষ শখের বশে বরশি দিয়ে মাছ ধরছিল, আবার কিছু মানুষ মানুষ বাণিজ্যিক ভাবে মাছ ধরছিল। এখন ও গ্ৰাম এলাকার নদী নালা ও খাল বিল গুলোর মধ্যে মাঝে মাঝে বরশি দিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায়।তবে, আগের কার দিনের থেকে বর্তমান অনেক টা কম। অনেকেই আছে অবসর সময়ে বরশি নিয়ে পুকুর পাড়ে চলে যায়, এটা মূলত নেশা কিংবা শখের বশে করে থাকে।

গত কয়েকদিন ধরে আমাদের এলাকায় বেশ ভালোই বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। বৃষ্টির মধ্যেই ইরি ধান ঘরে তোলার জন্য আমেজ উঠেছে।গতকাল আমি আমাদের ধান ক্ষেতের ধান আনার জন্য আমাদের মাঠের মধ্যে গিয়েছিলাম। মাঠে গিয়ে দেখতে পারলাম মাঠের সব জমির মধ্যে বেশ ভালোই পানি জমাট বেঁধেছে। আমি পানির জন্য জমির আইল দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিলাম। কেননা পানির মধ্যে জোক রয়েছে, আর এই জোক পায়ের মধ্যে ধরলে অনেক গুলো রক্ত খেয়ে ফেলবে। এজন্য মূলত আমি আইল দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম।

আর আইল দিয়ে হাঁটতে বেশ ভালোই লাগে আমার কাছে।যারা জমির আইল দিয়ে হেঁটেছেন শুধু তারাই আইল দিয়ে হাটার মজা সম্পর্কে অবগত আছেন। তবে, বর্তমান সময়ে আইল দিয়ে হাটা কিছু টা কষ্টকর। কেননা বর্তমান সময়ে আইল গুলো বৃষ্টির জন্য অনেক টা পিচ্ছিল হয়ে আছে।পা পিছলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। বেশ কয়েক মিনিট আইল দিয়ে হাটার পর আমি আমাদের ধান ক্ষেতের মধ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। এরপর আমি আমাদের ধান গুলো বস্তার মধ্যে ভরিয়ে নিলাম। এখন আমি একটু দুরে তাকিয়ে দেখতে পারলাম, বেশ কয়েকজন মানুষ বরশি দিয়ে মাছ ধরছে। তাদের বরশি দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য দেখে আমি আর আটকে থাকতে পারলাম না। আমি সাথে সাথে তাদের দুজনের কাছে চলে গেলাম।

সেখানে গিয়ে দেখতে পারলাম, একটি ছোট বিলের মধ্যে একটু পানি ভরাট হয়েছে। বেশ কয়েকদিন আগে এই বিলের পানি তেমন কোন পানি ছিল না, একদম শুকনো অবস্থায় ছিল।তবে, দুই থেকে তিন দিনের বৃষ্টিতে পানি ভরাট হয়ে গিয়েছে।আর এই পানি ভরাট হওয়ার কারণে চারদিক থেকে বিভিন্ন ধরনের মাছ বিলের মধ্যে প্রবেশ করেছিল। এরপর আমি বরশি দিয়ে মাছ ধরা লোক গুলোর কাছে চলে গেলাম মাছ ধরা দেখার জন্য। তাদের কাছে গিয়ে দেখতে পারলাম তারা দুজন দুটি বরশি দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছিল।

তারা বরশির মধ্যে কি জানি এক গুলো খাবার লাগিয়ে দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করেছিল। আমি খাবার গুলো দেখে চিনতে পারিনি। এরপর আমি তাদের বাটির মধ্যে গিয়ে দেখতে পারলাম তারা বড় বড় তিনটি সিলভার কার্প মাছ ধরতে পেরেছে।মাছ গুলো দেখে আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগছিলো। আমি বেশ কিছুক্ষণ সময় তাদের মাছ ধরা দেখছিলাম। কিছুক্ষণ পর পর তাদের বরশির মধ্যে ছোট ছোট পুটি মাছ গুলো ধরছিল।পুটি মাছ গুলো দেখতে বেশ সুন্দর।

এক সময় বাংলাদেশের প্রতিটি খাল বিলের মধ্যে বরশি দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য দেখা যেত। কিন্তু বর্তমান সময়ে আর তেমন মাছ ধরার দৃশ্য দেখা যায় না। এখন মানুষ অনেক টা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। এখন মানুষ ধৈর্য ধারণ করে মাছ ধরতে চায় না। প্রাচীন কালের ঐতিহ্য গুলো ক্রমে ক্রমে বিলুপ্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।এটা আমাদের বাঙালির জন্য মোটেও কাম্য নয়। কেননা এক সময় বাঙালিদের বরশি দিয়ে মাছ ধরা ঐতিহ্য ছিল। আমরা এখন এই ঐতিহ্য কে ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি। আমি মনে করি আবার আমরা এই ঐতিহ্য কে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।

সবাই কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আমি একজন বাংলাদেশের নাগরিক। আমি বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি এবং আমার মাতৃভাষা বাংলা। আমি একজন ছাত্র, আমি আসন্ন এইচএসসি সমমান পরীক্ষা শেষ করে রংপুর সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি। আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করি। আমি গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই। এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের তিন নং ওয়ার্ড।আমি ফটোগ্রাফী ও ভ্রমণ করতে অনেক ভালোবাসি।