[ফোটোগ্রাফি পোস্ট] বাগবাজারের গঙ্গার কাছে কুমোরটুলিতে একদিন - পর্ব ০৪ [অন্তিম পর্ব]steemCreated with Sketch.

in hive-129948 •  last year  (edited)

"কুমোরটুলি" পরিদর্শনের আজ চতুর্থ ও অন্তিম পর্ব । আশা করছি বিগত তিনটি পর্ব আপনাদের কাছে উপভোগ্য হয়েছিল । গত তিনটি পর্বে আমি মৃৎশিল্প নিয়ে কিছু অল্প স্বল্প ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম আপনাদেরকে । প্রথম পর্বে মৃৎশিল্পের জন্য মাটি সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ এবং সংরক্ষণ নিয়ে আলোকপাত করেছিলাম । দ্বিতীয় পর্বে শিল্পের উপযোগী মাটি প্রস্তুত প্রণালী ব্যাখ্যা করেছিলাম । তৃতীয় পর্বে মৃৎশিল্পের মূর্তি নির্মাণের জন্য কাঠামো তৈরী প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনাদেরকে জ্ঞাত করেছিলাম ।

আজকের পর্বে জানাবো মাটির মূর্তি তৈরীর শেষ ধাপ সম্পর্কে । কাঠামো তৈরী শেষ হলে আগের থেকে প্রস্তুত করে রাখা মাটির সাথে পরিমাণমতো জল মিশিয়ে সেই মাটি খড়ের কাঠামোর ওপর চাপানো হয় । প্রথমে অর্ধ তরল মাটি ভালো করে খড়ের কাঠামোর ওপর লেপে রোদে শুকানো হয় ৩-৪ দিন ধরে । এর ফলে শুকনো খড়ের ওপর মাটির একটা স্থায়ী পাতলা আস্তরণ তৈরী হয়ে যায় ।

এরপরে তুলি দিয়ে অল্প অল্প জল লেপে দেওয়া হয় সেই শুকনো মাটির আস্তরণের ওপর । এতে শুকনো মাটির স্তরের ওপর একটা চটচটে আস্তরণ তৈরী হয় । ফলে তার ওপর মাটি ধরে ভালো । এবার তাল তাল মাটি চাপানোর কাজ শুরু হয় কাঠামোতে । মাটি চাপানো শেষে বাঁশের তৈরী বিভিন্ন টুলস দিয়ে মাটির সেই কাঠামোকে ধীরে ধীরে একটি মানুষ বা প্রাণীর আকৃতি দেওয়া শুরু হয় ।

বেশ কিছুদিন ধরে চলে এই প্রক্রিয়া । মাথা, হাত, বুক, পেট, কাঁধ, কোমর, পা সকল স্থানেরই শেপ একদম নিখুঁত করার পরে রোদে শুকানোর পালা । অনেক ক্ষেত্রে অক্সি-আসিটিলিন শিখা ব্যবহার করে কাঁচা মাটির মূর্তি শুকানো হয় । রোদে শুকালে ১৪-১৫ দিন একটানা লাগে রোদে দেওয়া ।

কাঁচা মাটির মূর্তি শুকিয়ে গেলে শুরু হয় রং করার পালা । প্রথমে সাদা খড়ি রং ব্যবহার করা হয় । এটা হলো বেজ কালার । এই কালারের তিন পোঁচ দেওয়ার পরে যে কোনো রং দিলে সেটা ফুটবে। না হলে রং ফুটবেও না, ঔজ্বল্যও বাড়বে না । বেজ কালারের ওপর যেখানে যে রং দেওয়ার দরকার সেই রং দিয়ে রঙের কাজ সম্পূর্ণ করা হয় । এ কাজটাও খুব সময়সাপেক্ষ । ৮-১০ দিন লেগে যায় সম্পন্ন হতে ।

সব শেষে মূর্তির অলঙ্করণের কাজ । এটি সম্পন্ন হলেই মূর্তি একদম রেডি ।

তো এই ছিল আমার চারটি পর্ব জুড়ে সম্পূর্ণ একটি মাটির মূর্তি তৈরির প্রক্রিয়া গুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা । ফটোগ্রাফির সাথে সাথে এগুলো শেয়ার করতে পেরে আমার বেশ ভালো লাগছে । আশা করছি আপনাদের কাছেও ভালো লেগেছে ।


Image 2023-07-30 at 00.36.47.jpg

Image 2023-07-30 at 00.36.55.jpg

মাতৃ মূর্তির পাশাপাশি অসুর এবং সিংহের মূর্তি নির্মাণও চলছে পুরোদ্যমে ।

তারিখ : ২৭ জুলাই ২০২৩
সময় : বিকাল ৬ টা ৩৫ মিনিট
স্থান : কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


ক্যামেরা পরিচিতি : NIKON
ক্যামেরা মডেল : D5600
ফোকাল লেংথ : ৮৬ মিমিঃ


Image 2023-07-30 at 00.36.19.jpg

এই দূর্গা মূর্তিটির কাঠামোর কাজ শেষ । এখন মাটির কাজ চলছে ।

তারিখ : ২৭ জুলাই ২০২৩
সময় : বিকাল ৬ টা ৩৫ মিনিট
স্থান : কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


Image 2023-07-30 at 00.37.06.jpg

হুল বিদ্রোহ (সাঁওতাল বিদ্রোহ) কে স্মরণ করে মূর্তি । ১৯ শতকে বৃটিশ সরকার ও তাদের পা চাটা জমিদারশ্রেণীর বিরুদ্ধে সাঁওতালদের এই বিদ্রোহ চির স্মরণীয় হয়ে আছে ।

তারিখ : ২৭ জুলাই ২০২৩
সময় : বিকাল ৬ টা ৩৫ মিনিট
স্থান : কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


Image 2023-07-30 at 00.36.48.jpg

Image 2023-07-30 at 00.36.23.jpg

প্রথম ফোটোতে মূর্তির মাটির কাজ সমাপ্ত, খড়ি রঙের কাজ চলছে । আর দ্বিতীয় ফোটোতে খড়ি রঙের কাজ শেষ, এখন মূল পর্বের রঙের কাজ শুরু হয়েছে ।

তারিখ : ২৭ জুলাই ২০২৩
সময় : বিকাল ৬ টা ৩৫ মিনিট
স্থান : কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


Image 2023-07-30 at 00.37.07.jpg

Image 2023-07-30 at 00.37.08.jpg

কুমোরটুলির পুরোনো কলকাতার ঘরবাড়ি । শতাব্দী প্রাচীন এসব ঘরদোর ।

তারিখ : ২৭ জুলাই ২০২৩
সময় : বিকাল ৬ টা ৩৫ মিনিট
স্থান : কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


Image 2023-07-30 at 00.37.09.jpg

Image 2023-07-30 at 00.37.10.jpg

Image 2023-07-30 at 00.37.12.jpg

কুমোরটুলি থেকে এখন আমরা বিদায় নিচ্ছি । পুরোনো কলকাতার স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানটি ছেড়ে যেতে মন যেন কেমন একটু করছে ।

তারিখ : ২৭ জুলাই ২০২৩
সময় : বিকাল ৬ টা ৩৫ মিনিট
স্থান : কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


ক্যামেরা পরিচিতি : NIKON
ক্যামেরা মডেল : D5600
ফোকাল লেংথ : ৮৬ মিমিঃ


------- ধন্যবাদ -------


পরিশিষ্ট


আজকের টার্গেট : ৫২৫ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 525 trx)


তারিখ : ০২ আগস্ট ২০২৩

টাস্ক ৩৪৩ : ৫২৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

৫২৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : 7ecf37db4d495228425c4e9361d7ef54295408ef9d7ab3754d1b3d062c85917e

টাস্ক ৩৪৩ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png


steempro....gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

দাদা এই সিরিজের প্রতিটি পর্ব দারুণ উপভোগ করেছি। আপনি প্রতিটি পর্বে ধাপে ধাপে মূর্তি তৈরির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আমি নিশ্চিত এই ব্যাপারগুলো অনেকেরই জানা ছিলো না। আপনার শেয়ার করা চারটি পর্বের মাধ্যমে সুস্পষ্ট ধারণা পেলাম দাদা। যাইহোক এতো সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি এবং মূর্তি তৈরির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

মূর্তি নির্মানের প্রসেসগুলো জেনে ভীষণ ভালো লাগলো।অনেক বেশি মেহনত করতে হয়।আপনার করা ফটোগ্রাফি গুলো দেখে ভীষণ ভালো লেগেছে দাদা।আপনার মন আসতে চায়নি ফিরে।।আর ফটোগ্রাফি গুলোতে পুরোনো ঘরবাড়ি গুলো দেখে আমারই তো মন কেমন কেমন লাগছে। অনেক সুন্দর ভাবে আপনি কুমোরটুলির মৃৎশিল্প আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। এজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

দাদা মূর্তি নির্মাণের এই প্রসেস গুলো আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে। কারণ ছোটবেলায় আমাদের পাড়ার মন্দিরে ঠিক এভাবেই স্টেপ বাই স্টেপ মূর্তি তৈরি করা হতো এবং কমপক্ষে তারা একমাস সময় নিতো পুরো মূর্তি তৈরি কমপ্লিট করতে। যদিও আগের বছর কুমোর টুলিতে গেছিলাম তবে এই বছর এখনো পর্যন্ত যাওয়া হয়নি। কিন্তু তোমার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে অনেকটা সেই ইচ্ছা পূরণ হয়ে গেল।

দাদা আপনার কুমোরটুলিতে মূতি বানানোর প্রসেস গুলো দেখে সত্যি অনেক ভালো লাগল।আসলে কুমোরটুলির পুরানো ঘরবাড়ি গুলো অনেক চমৎকার ছিল। আপনি অনেক সুন্দর কিছু মৃৎশিল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। সত্যি দাদা এমন জায়গায় গেলে ফিরে আসতে কার মন চায়। ধন্যবাদ দাদা সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

Increíble! Gracias por compartir.

দাদা মূর্তি নির্মাণের এই প্রসেস গুলো আমার কাছে একদমই নতুন। কারণ এরকম প্রসেসগুলো এভাবে এত কাছে থেকে দেখা হয়নি আগে।আজকে আপনার ফটোগ্রাফির মাধ্যমে এবং পূর্বের পোষ্ট এর মাধ্যমে যেগুলো দেখতে পেলাম সেটা সচরাচর কখনো দেখা হয়নি। ধন্যবাদ দাদা ভালো থাকবেন।

কুমোরটুলি পরিদর্শনের চতুর্থ ও অন্তিম পর্ব আমাদের সাথে শেয়ার করলেন দাদা। আজও আপনি প্রায় এগারটি ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন। সেই সাথে মূর্তি বানানোর সমস্ত প্রসেসও সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। ভাবছি একটা মূর্তি শুকোতে 14 থেকে 15 দিন লেগে যায়। মূর্তি বানানোর বিস্তারিত আপনি আমাদের মাঝে এত সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন যে এখন তো মনে হচ্ছে মূর্তি বানানো সহজই। ধন্যবাদ দাদা এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

boss kotha thake i am from kolkata besh valo chilo blog ta ..lots of love form me

দাদা "বাগবাজারের গঙ্গার ঘাটে কুমোরটুলিতে একদিন" প্রথম পর্ব থেকে শুরু করে অন্তিম পর্ব পর্যন্ত ফটোগ্রাফি দেখতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। আপনার এই ফটোগ্রাফি পোস্টে করতে কি পরবর্তী কিছু না কিছু শিখতেও জানতে পেরেছি। দাদা আপনার প্রতিটি ফটোগ্রাফি অনবদ্য ছিলো। কুমোরটুলির সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্য সবকিছুই অপরূপ সুন্দর ছিলো। সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।

আর বাকি রইলো শুধু মায়ের প্রাণ প্রতিষ্ঠা। কয়েকদিনে তোমার পোস্ট গুলো দাদা থেকে মা আসার ঢাকে যেন বাদ্যি বেজেই গেলো। কদিন পরে তো মায়ের পুজো তার আগেই ছবিতে ছবিতে কুমোরটুলি ভ্রমণ করে ফেললাম। আহা! ♥️

আজকে নিয়ে একদম চারটা পর্বই পড়া শেষ করে ফেললাম। মোটামুটি একটা ধারণা চলে এসেছে কুমোরটুলির মানুষরা আসলে কিভাবে মূর্তি বানায়, সেটা সম্পর্কে।

ধন্যবাদ ভাই।

প্রতিমাশীল্পের অনেক খুটিনাটি দিক জানতে পারলাম আপনার এই সিরিজটি থেকে। সত্যই আপনার জ্ঞানের কোন তুলনা নেই,সব দিকেই তা বিস্তৃত হয়েছে।ধন্যবাদ দাদা সিরিজটি শেয়ার করে আমাদের জ্ঞানবৃদ্ধি করার জন্য।

দাদা শতাব্দী প্রাচীন কোন কিছু দেখলে তার তথ্য সম্পর্কে জানতে খুবই ইচ্ছা জাগে। যে কোন পুরাতন জিনিষের প্রতি আমার খুব আগ্রহ। এই কলকাতা শহরের ইতিহাস সম্পর্কেও অনেক তথ্য পড়েছি। ধন্যবাদ দাদা।

বিগত কিছুদিন যাবত পরীক্ষা চলাকালীন আপনার পোস্টগুলো পড়তে পারিনি দাদা। তাই গত তিনটি পর্ব আমার পড়া নেই। তবে এই পর্বটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ,মূর্তি তৈরীর শেষ ধাপ সম্পর্কে বেশ অনেক কিছুই জানতে পারলাম ।তারপর আবার কিভাবে রংয়ের উজ্জ্বলতা বেশি বাড়ে? কিভাবে সেগুলো তাড়াতাড়ি শুকনো যায়? বেশ অনেক বিষয়ই জানা গেল আপনার এই পোষ্টের মধ্যে দিয়ে।