জীবনে প্রথম আলুর চপে কামড় দেওয়ার অনুভূতিsteemCreated with Sketch.

in hive-129948 •  2 years ago 

1200px-Aloo_Fritters_-_Howrah_2015-04-26_8541.jpg

Image Source : Copyright Free wikimedia Creative Commons


ছেলেবেলা থেকেই আমার তেলেভাজা খাবারের প্রতি অসম্ভব টান । এখনো সেই টান আছে পূর্ণ মাত্রায় । কিন্তু, বর্তমানে রোড সাইড ভেন্ডরস থেকে আর খাওয়া হয় না । তবুও সুযোগ পেলে ছাড়ি না । খাই এখনো । তেলেভাজা খাবারের মধ্যে আমার সব চাইতে প্রিয় হলো "আলুর চপ" । জীবনে তো আর কম তেলেভাজা খাবারের স্বাদ গ্রহণ করিনি !

আলুর চপ, মোচার চপ, চিংড়ির চপ, ডিমের চপ, মাংসের চপ, ভেজিটেবল চপ, কড়াইশুঁটির চপ, এঁচোড়ের চপ, টমেটো চপ, বেগুনি, পেঁয়াজি, সিঙ্গাড়া, কচুরি, হিঙের কচুরি, মাংসের কচুরি, ডালপুরি, ফুলকপির সিঙ্গাড়া, মাংসের সিঙ্গাড়া, নারিকেল সিঙ্গাড়া, ডাল বড়া, ফুলুরি, সামুচা, ফিশ কাটলেট, চিকেন কাটলেট, মাটন কাটলেট, ডালের পকোড়া, চিংড়ির পকোড়া, চিকেন পকোড়া, ফুলকপির পকোড়া, চিকেন ফ্রাই, চিকেন ললিপপ, মোগলাই ইত্যাদি ইত্যাদি ।

এদের মধ্যে আমার সব চাইতে বেশি ভালো লাগে আলুর চপ । কামড় দিলে মনে হয় স্বর্গে আছি । তবে, মজার ব্যাপার কি জানেন জীবনে প্রথম আলুর চপ খেয়েছি একদম ছেলেবেলায় কিন্তু নয় । বরং বেশ বড়বেলায় ।

গ্রামে থাকতে কোনোদিনও আলুর চপ খাওয়ার সুযোগ হয়নি । একদম অজ পাড়াগাঁ যাকে বলে তাই ছিল আমার গ্রামের বাড়ি । কিচ্ছু পাওয়া যেত না । পুজোর সময় যখন মেলা বসতো তখন এসব উঠতো মেলায় । কিন্তু, পাঁপড়, ঘুগনি আর নানান মিষ্টি খেতাম আমরা । তেলেভাজা খাওয়ার উপরে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল । তাই গ্রামে থাকতে এসব কোনোদিন খাওয়া হয়নি ।

ক্লাস ফোরে উঠে চিরদিনের জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসি আমরা । ব্যাস, আর পায় কে আমাকে । এই শহরে এসেই জীবনে প্রথম স্বাদ পেলাম সেই স্বর্গীয় খাবারের । মনে আছে তখন নতুন ক্লাসে উঠেছি । ক্লাস সিক্স । নিজেকে খুব বড় ভাবা শুরু করে দিয়েছি তখন আমি ।

জানুয়ারি মাসের এক শীতার্ত সন্ধ্যা । বেড়াতে বেরিয়েছে । সান্ধ্য ভ্রমণ যাকে বলে । আমরা তখন থাকতুম ভাড়া বাড়িতে । তো আমাদের পাশেই থাকতো একটা ছেলে । গ্রাম থেকে শহরে এসেছে চাকরির খোঁজে । চাকরি যদ্দিন না পাওয়া যায় তদ্দিন প্রাইভেট টিউশানি করে বেড়াতো সে । শুধু সপ্তাহে একদিন পড়াতে যেত না ।

তার সাথে আমার ভীষণ ভাব ছিল । ছেলেটির নাম ছিল ধর্মদাস । তো আমার বাবার অনুমতি নিয়ে প্রত্যেক সপ্তাহের ৩-৪ দিন বিকেল বেলায় আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হতো । আমরা টো টো করে শহরময় হেঁটে বেড়াতাম । ছোট্ট শহর । দেখার আর তেমন কিছু ছিল না । তবুও ছোটবেলায় আমার কাছে সেটা বিরাট বড় একটা শহর মনে হতো ।

তো সারাটা বিকেল বেড়িয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতাম । একদিন বাবা কিছু টাকা দিলো আমার হাতে বেড়াতে বেরোনোর আগে । বললো কিছু কিনে খেতে । এর আগে কোনোদিনও আমার হাতে পয়সা-কড়ি কিচ্ছু দেয়নি । সেদিন কি মনে করে জানি দিলো ।

সেই টাকা দিয়ে জীবনে প্রথম খেলাম আলুর চপ । সঙ্গী আমার ধর্মদাস । সেই আমাকে নিয়ে গিয়েছিলো শহরের একটা জমজমাট মোড়ে । সেখানে প্রচুর তেলেভাজার দোকান । সুগন্ধে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় । ধর্মদাস আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কিনে ফেললো প্রকান্ড একটা ঠোঙায় আলুর চপ আর বেগুনি । অনেকগুলি ।

ভীষণ গরম সেই আলুর চপ একটু দাঁতে কেটে কিছুটা চিবোতেই তার স্বাদ টের পেলাম । এ যে স্বর্গীয় খাবার । আহ কি আস্বাদ তার ! অসম্ভব টেস্টি গরামগরম আলুর চপ । খুব গরম তাই পুরোটা একবারে খেয়ে নিতে চাইলেও পারছি না । অল্প অল্প করে ভেঙে মুখে দিতে লাগলাম, আর নরম নরম ঝাল ঝাল গরম আলুর পুরটা মুখের ভেতর মিলিয়ে যেতে লাগলো । জাস্ট অসাধারণ !

মনে আছে সেদিন আমি আটটা আলুর চপ খেয়েছিলাম । এত ছোট ছেলে এতগুলো আলুর চপ খেয়ে ফেলাতে ধর্মদাস একটু চিন্তিত হয়ে পড়লো । যদি আমার শরীর খারাপ করে তাহলে আমার বাবার বকুনি আছে তার কপালে । যাই হোক কিছুই হয়নি সেদিন আমার অতগুলো আলুর চপ খেয়েও । তবে রাতে আর সেদিন ভাত খেতে পারিনি ।

সেই যে আলুর চপের প্রেমে পড়ে গেলাম, সেই প্রেম এখনো পূর্ণমাত্রায় "টিকিয়া" আছে 😂😂😂


✡ ধন্যবাদ ✡



পরিশিষ্ট


আজকের টার্গেট : ৫১০ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 510 trx)


তারিখ : ২৩ মার্চ ২০২৩

টাস্ক ২১৩ : ৫১০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

৫১০ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : bb4ceab67dafa51782375920cc66cae1cafb713afe16cc4134a60967e40dcbde

টাস্ক ২১৩ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

কবির মাঝে আলুর চপের প্রেম পূর্ণ মাত্রায় টিকিয়া থাকুক সেই প্রত্যাশা আমরাও সব সময় করি। তবে আলুর চপ খাওয়ার কাহিনী শুনে বেশ ভালো লাগলো।

very intresting

You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

দাদা কি আর বলবো, আজ অন্য রকম পোস্ট পেলাম।আর খুব ভাল লাগলো। সত্যি কথা এটাই যত চপের কথাই বলেন না কেন, বেসনে চুবানো আলুর চপের তুলনা হয় না। 😋 অনেক ভাল লাগলো আজ এই অন্য রকম অনুভূতির গল্প পড়ে। অনেক ধন্যবাদ দাদা।

প্রথম কোন কিছু খাওয়ার আনন্দ কিংবা অনুভূতি সত্যি আলাদা রকমের। প্রথমবারেই আটটা আলুর চপ খেয়ে ফেলেছেন দাদা😱। জেনে সত্যি অবাক হলাম। তবে যাই বলুন না কেন এই চপ জাতীয় খাবার গুলো আমাদের সবার অনেক প্রিয়। আপনার অভিজ্ঞতার কথা জেনে সত্যিই ভালো লেগেছে।

ওয়াও দাদা তো দেখি যত রকম চপ আইটেম সব উল্লেখ করেছেন ৷ আমার কাছেও অনেক ভালো লাগে আলুর চপ কারন কামড় দিলে অন্যরকম অনুভুতি কাজ করে ৷

মচমচে ভাজি চপ গুলো খেতে যে এতো টেষ্টি লাগে ৷ তবে বাড়ির চেয়ে মেলা বাজারে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় ৷ আপনার প্রথম আলুর চপ খাওয়ার অনুভুতি পোষ্ট টি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ৷

দাদা যত গুলো তেলে ভাজা খাবার বা চপের নাম বললেন এত গুলো খাবার আমি এখনোও খায়নি। আর ক্লাস সিক্সে পড়া অবস্থায় আপনি আটটি আলুর চপ খেয়ে ফেললেন,শুনে একটু অবাকই হলাম। দাদা পরে কি আর ঐ মোড়ে গিয়েছিলেন,আলুর চপ খাওয়ার জন্য..?

দাদা, জীবনে প্রথম আলুর চপে কামড় দেওয়ার অনুভূতিটুকু যেভাবে তুলে ধরেছেন তা আর কি বলবো। শেষ অব্দি এসে নরম নরম ঝাল ঝাল গরম আলুর পুরটা মুখের ভিতর মিলিয়ে যেতে লাগলো, কথাটি যেভাবে বললেন আহা!! কি বলবো দাদা আমার তো মনে হচ্ছে এখনই আলুর চপ খেয়ে নিতে। ক্লাস সিক্সে উঠার পরে জীবনে প্রথমবার আটটা আলুর চপ খেয়ে আপনি তো রেকর্ড করে ফেলেছেন দাদা। এজন্যই তো ধর্মদাস চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। যাক বাবা বড্ড বাচা বেঁচে গেছেন আপনার কিছুই হয়নি, এতগুলো চপ খেয়ে 🤪।

Your post has been rewarded by the Seven Team.

Support partner witnesses

@seven.wit
@cotina
@bangla.witness
@xpilar.witness

We are the hope!

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

একসাথে আটটা আলুর চপ।আসলেই বেশি পছন্দ করলে যা হয় আরকি।ভাগ্যিস ঐদিন আঙ্কেল টাকাটা দিয়েছিলো তা না হলে কেমনে আলুর চপ খেতেন।আমার কাছেও আলুর চপ টমেটোর সস দিয়ে খেতে বেশ ভালো লাগে।মজা পেলাম আলুর চপের কাহিনী পড়ে।ধন্যবাদ

দাদা, আপনার জীবনে প্রথমবার আলুর চপ খাওয়ার কথাগুলো পড়তে পড়তে জিভে যেন জল চলে এলো। ধর্মদাসের সঙ্গে নিয়ে আপনি একাই আটটি আলুর চপ খেয়েছেন এই বিষয়টি জানতে পেরে আশ্চর্য হয়ে গেলাম। দারুন একটি অনুভূতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

দাদা তেলে ভাজা খাবারের যে উদাহরণগুলো দিয়েছেন তাহলে তো জীবনে অনেকবারই স্বর্গীয় খাবারের স্বাদ পেয়েছেন। আমার কাছে আলুর চপ খুবই মজা লাগে বাজারে গেলেই প্রিয় একটি দোকানে এই আলুর চপ খুব সুন্দর করে ভাজি করে মাঝে মাঝে বাদ যায় মাসের বেশিরভাগ সময়ই এই আলুর চপ মজা করে খেয়ে থাকি। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আপনার জীবনের স্বর্গীয় খাবার আলুর চপ এর গল্প জানতে পারলাম দাদা সত্যি সুন্দর ছিল মুহূর্তটা।

একসাথে আটটা আলুর চপ খেয়ে নিয়েছিলেন দাদা, ধর্মদাস কেন যে কেউ চিন্তায় পরে যেত আপনার বাবার কাছ থেকে বকুনি খাওয়ার ভয়ে। আমার কাছেও আলুর চপ খেতে বেশ ভালো লাগে দাদা। তবে আপনি জীবনে অনেক ধরনের চপ খেয়েছেন দাদা।

আলুর চপ, মোচার চপ, চিংড়ির চপ, ডিমের চপ, মাংসের চপ, ভেজিটেবল চপ, কড়াইশুঁটির চপ, এঁচোড়ের চপ, টমেটো চপ, বেগুনি, পেঁয়াজি, সিঙ্গাড়া, কচুরি, হিঙের কচুরি, মাংসের কচুরি, ডালপুরি, ফুলকপির সিঙ্গাড়া, মাংসের সিঙ্গাড়া, নারিকেল সিঙ্গাড়া, ডাল বড়া, ফুলুরি, সামুচা, ফিশ কাটলেট, চিকেন কাটলেট, মাটন কাটলেট, ডালের পকোড়া, চিংড়ির পকোড়া, চিকেন পকোড়া, ফুলকপির পকোড়া, চিকেন ফ্রাই, চিকেন ললিপপ, মোগলাই ইত্যাদি ইত্যাদি ।

এই পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম আপনার কাছে আলুর চপ সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। যাইহোক জীবনে প্রথম আলুর চপে কামড় দেওয়ার অনুভূতি পড়ে খুব ভালো লাগলো দাদা। শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার পুরো পরিবারের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

Loading...

এই খাবারটা আমার নিজেরও অসম্ভব পছন্দের। তবে পোস্টটা আপনি এত চমৎকার করে লিখেছেন। পড়ার পরে এখন মনে হচ্ছে দুটো আলুর চপ খেতে পারলে মন্দ হতো না। এমনিতে রোজা রয়েছি। পেটে বেশ খিদে। তার ভেতর এমন রসালো আলুর চপ এর গল্প। আমার অবস্থা একেবারে বেগতিক।

গত বছর ইফতার আয়োজনের মধ্যে আলুর চপ পর্বে এসে অমৃত বলেছিলেন। আসলেই এর স্বাদ অতুলনীয়। ধন্যবাদ।