আমার বাংলা ব্লগ। উত্তপ্ত লোহা দিয়ে আধুনিক যুগে আধুনিক রান্নার সাথে আনন্দের খুনসুটি।

in hive-129948 •  2 years ago 
আমার বাংলা ব্লগের সকল সহযোগী এবং সহযোদ্ধাদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আমিও শত ব্যস্ততার মাঝে আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। তাই তো আজকে আপনাদের মাঝে নিয়ে এলাম "উত্তপ্ত লোহা দিয়ে আধুনিক যুগে আধুনিক রান্নার সাথে আনন্দের খুনসুটি" আশা করি সকলেরই ভালো লাগবে।

উত্তপ্ত লোহা দিয়ে আধুনিক যুগে আধুনিক রান্নার সাথে আনন্দের খুনসুটি।

received_1244316043136392.jpeg

দিনটি ছিল গত বৃহস্পতিবার নাইট ডিউটি চলবে, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সব পোলাপান একসাথে ৪৫০০ হাজার টাকা দিয়ে বলতেছে যে আমরা বিরানি খাব। আমাদেরকে ব্যবস্থা করে দেন। বাজার করার রান্নাবান্না করা এটা অনেক বড় ঝামেলার কাজ। আর যেখানে ৩৫ জন মানুষের রান্না করতে হবে, অনেকগুলো বাজার করতে হবে আমাকে। কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে গেল। এই সময় এতগুলো বাজার করা রান্নাবান্না করা অনেক সময়ের ব্যাপার। তবুও সবার মন রক্ষার্থে রাজি হয়ে গেলাম।

এমনিতে নাইট ডিউটি করলে মন শরীর সবকিছুই খারাপ থাকে। আবার সবাইকে একটু আনন্দ দিতে হলে একটু কষ্ট তো করতেই হবে। এমনিতেই সবাই ডিউটি করতে করতে অনেকটা একঘেয়েমি হয়ে পড়েছিলাম। তাই আর কোন কিছু না ভেবে দুজনকে ডেকে বাজারে পাঠালাম। বাজারের মেনু লিখে দিলাম কি কি লাগবে। সবার মনে দেখলাম যে আনন্দের শেষ নেই। আজকের মধ্যরাতে বিরানী রান্না খাওয়া হবে, সেই একটা আনন্দ সবার মনে বিরাজ করছে। কিন্তু যারা রান্না করে তারা জানে রান্না করাটা কতটা বিরক্তিকর কাজ।

বাজার করে আনতে আনতে প্রায় সময় হয়ে গেছে রাত দশটা। এত কিছু পরিষ্কার করে রান্না বসানো কি যে করব দিপাকে পড়ে গেলাম। তখন পোলাপাইন সবাইকে ডেকে এক একজনকে এক একটা কাজে লাগিয়ে দিলাম। রেডি হওয়ার পর দেখলাম যে রান্না করি কিভাবে। গ্যাসের ব্যবস্থা করলে একটু সময় লাগবে, আবার লাড়কির ব্যবস্থা করল আরো বেশি সময় লাগবে। এতে করে সবার মনে একটা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে গেল কি করবে। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো, তখন সবাইকে বললাম এত টেনশন করার দরকার নেই, কোথাও যেতে হবে না। কিছু করতে হবে না। যা করার এখানেই করবো, মিলের ভিতরেই রান্নার ব্যবস্থা করে ফেললাম ১০ মিনিটের ভিতরে, অবাক লাগার বিষয় তাই না।

আমার রিহিডিং ফার্নেস এর ভেতর যেই সেপ্ট গুলো থেকে তা নিয়ে রান্না শুরু করে দিলাম। কারণ এখানে ভাবনার কিছুই নেই, রোলিং মেইলের সবাই জানে উত্তপ্ত লোহা দিয়ে রান্না করা যায়। আর সেই উত্তপ্ত লোহার সেপ্ট গুলো দিয়ে রান্নার কাজ সম্পন্ন করে ফেললাম। আধুনিক যুগে আধুনিক রান্নার সাথে আনন্দের খুনসুটি গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। চলুন এক পলক দেখে আসি আমাদের রাত্রের আনন্দের খুনসুটির খন্ড চিত্রগুলো।

received_834107007697521.jpeg

এখানে আমি একে একে সবগুলো মসলার উপকরণ দিয়ে রান্নার শুরু করে দিলাম। রান্না করার জন্য লোকের অভাব নেই, একেক জন আসছে এক এক জন নাড়ছে সে কি আনন্দ।

received_1345554599513123.jpeg

কাজের এতটাই চাপে ছিলাম যে আমি সব কিছু সুন্দর করে পরিপাটি করে গুছিয়ে ছবি তুলব সেই সুযোগ ছিল না। ছবিগুলো সহকারীদের থেকে ধার করে নেওয়া, আমি কয়েকটা তুলেছিলাম কিন্তু পরিকল্পনা ছাড়া। অপরিকল্পিতভাবে ছবিগুলো তোলা হয়েছিল না হলে সম্পূর্ণ ব্লগ খুব সুন্দর করে একটা রেসিপি পোস্ট করতে পারতাম। সবকিছু নিজেকে একা সামাল দিতে হয়েছে যার কারণে নিজে থেকে মনেই ছিল না যে আমি একটা ব্লক তৈরি করতে পারব।

received_3430637517219719.jpeg

এখানে মূলত দেখানো হয়েছে উত্তপ্ত লোহা দিয়ে রান্নার সিস্টেম। কিছু রড দিয়ে একটা চুলার স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে। আর সেই স্ট্যান্ডের নিচে দেওয়া হয়েছে উত্তপ্ত লোহার সেপ্ট গুলো।

received_981271356165649.jpeg

এটা অনেকটা যেমন খুশি তেমন মজা এরকম হয়ে গেছে। যে যেভাবে পেরেছে এভাবেই সেলফি নিচ্ছে। অবশ্য আমার মনোযোগ ছিল না কে কেমন করে সেলফি তুলছে।

received_891427928680148.jpeg

এখানে আরেকটা রাধুনি এসে হাজির হয়ে গেল, নাড়ার জন্য ফোজ দিয়েছে ছবি নেওয়ার জন্য। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে আসলেই বাবুর্চি। সহকারীদের সাথে এরকম আনন্দ হঠাৎ করে করতে পারবে এটা কখনো ভাবি নি।

received_1244316043136392.jpeg

আমার রান্না করার একটা বিশেষ হচ্ছে আমি যাই কিছু পাক করি লবণ একবার দিলে দ্বিতীয়বার দেখা লাগে না। আর এখানে ৭ কেজি চাউলের বিরানি করলাম লবণ একবারে দিয়েছি। খুব আশ্চর্যজনক বিষয় হয়েছে এত মজা হয়েছিল যা বাসা প্রকাশ করার মত নয়। পুরো মিলে হৈইচৈই পড়ে গেছে। কাকার বয়সী মানুষজন আমাকে বলছে তোমার বাবা কি বাবুর্চি ছিল হাহাহা, আমি তো অবাক।

20221223_012505.jpg

আমার পাশে আমাদের ফায়ারম্যান, তার কাজ হচ্ছে উত্তপ্ত লহাগুলো রিহিডিং ফার্মেস থেকে বের করে দেওয়া। এবং সেও রান্নার কাজে অনেক সহযোগিতা করেছে।

20221223_012452.jpg

এই ছবি দেখে অনেকেই বাজছে আমি ছবি দেওয়ার জন্য ফোজ নিয়েছি, আসলে তা নয় রান্নার কাজটা আমার হাতেই চলছে।

20221223_012430.jpg

আবারও যুক্ত হয়ে গেল দুজন রাঁধুনি একজন ফায়ারম্যান আরেকজন চার্জ ম্যান।

20221223_004348.jpg

প্রায় রান্না সম্পূর্ণ হয়ে গেল, একটা ছবি নিলাম যখন বিরানি গুলো দমে দিয়েছিলাম। আর সেই উত্তপ্ত লোহাগুলো ভালো করে দেখানোর জন্য আমি ছবিটা নিয়েছিলাম।

20221223_004338.jpg

মধ্যরাতে হঠাৎ করে এত বড় একটা আয়োজন একটা সেলফি না দিলে কেমন হয়। মোটামুটি রান্নাবান্না শেষ হয়ে গেছে। দমে দিয়ে রাখার সময় তখন একটা সেলফি নিলাম। ভাবনায় ছিল এই আনন্দের মুহূর্তটা আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুদের মাঝে, এই আনন্দের মুহূর্তটা শেয়ার করার, একটু সময় পেয়ে আর দেরি করলাম না।

বন্ধুরা কেমন লেগেছে, শত ব্যস্ততার মাঝে লোহা দিয়ে আধুনিক যুগে আধুনিক রান্নার খন্ড চিত্রগুলো। আশা করি সকলেরই ভালো লাগবে। ভালো মন্দ কমেন্টে জানাবেন। সাপোর্ট দিয়ে সাথে থাকবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

বাহ আপনারা সবাই মিলে বেশ ইনজয় করে রান্নাবান্না করেছেন। লোহা দিয়ে এভাবে কখনো রান্না করতে দেখা যায়নি কাউকে। এত বুদ্ধি কোথায় রাখেন বলেন তো!!আমাদের সাথে একটু শেয়ার করতে পারতেন।আপনার রান্না😋।

সবগুলো রান্না করে তো আপনাদের মাঝেই দিয়ে দিলাম, একটু নিয়ে খেয়ে ফেলেন। আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে সত্যি খুবই আনন্দ পেয়েছি। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

এটাকেই বলে আধুনিক যুগ ভাই। মানুষের চিন্তা ভাবনা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে তার একটি প্রমাণ এই উত্তপ্ত লোহা দিয়ে রান্না করার বিষয়টি। অনেক ভালো লাগলো আপনাদের এই উত্তপ্ত লোহা দিয়ে রান্নার আয়োজনটি। ধন্যবাদ সবার মাঝে তুলে ধরার জন্য।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মূল্যবান মন্তব্য দিয়ে সাথে থাকার জন্য।

ভাইয়া আপনার বুদ্ধি দেখে আমি সত্যিই অবাক। আগুন ছাড়া রান্না কেমনে সম্ভব করলেন। আপনার মাথার বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারছি না। উত্তপ্ত লোহার সেপ্ট গুলো কাজে লাগিয়ে দিলেন। সুন্দর একটি মুহূর্ত শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ ভাইয়া।

চিন্তা করলাম লোহার জগতে যখন কাজ করি, লোহা দিয়ে আমরা কত কিছুই না করি। তার একটা না দেখা কাজ আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম, সত্যিই আমি আনন্দিত। আপনার প্রশংসায় আমাকে উৎসাহিত করার জন্য আপনার প্রতি রইল আন্তরিক অভিনন্দন।