আমার বাংলা ব্লগ। জীবনের অনুগল্প, ছোটবেলার স্মৃতি। পর্ব-১

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)
আমার বাংলা ব্লগের সহযোগী এবং সহযোদ্ধাদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আমি আজকে আপনাদের মাঝে নিয়ে এলাম "জীবনের অনুগল্প' "ছোটবেলার স্মৃতি"। আশা করি সকলেরই ভালো লাগবে।

জীবনের অনুগল্প, ছোটবেলার স্মৃতি। পর্ব-১।

20220715_182826.jpg

FUkUE5bzkAZT3HzV5tJDiU2ik81PCd4JCyhWnRcDN8XJsVFY3UNB8DCRWUhECrBewyvr56XLHQLFtR3iJUgyYXhoNnQzaPV4fGATT2PmXhFCBxcFCr2kEHS2obaiYPVBvHXcZ5NDLfrZh4qAU4CWzpqmK5XnDexEGztE.png


জীবনের অনুগল্প বলতে আমরা যা বুঝি এই জীবনে ঘটে যাওয়া স্মৃতির পাতায় ছোট ছোট গল্পগুলো কথা বলছিলাম, আশা করি সকলেই বুঝতে পেরেছেন। আমিও চিন্তা করলাম জীবনের এতোটুকু পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি হাজার গল্প নিয়ে। প্রতিদিনই তৈরি হয় নতুন নতুন গল্প। যে চিন্তা, সেই কাজ, তাই ভাবলাম প্রতি সপ্তাহে আমার জীবনের অনুগল্প গুলো অন্তত একটা করে শেয়ার করার জন্য। আশা করি আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুদের ভালো লাগবে।

চলুন যাওয়া যাক মূল পর্বে।


FUkUE5bzkAZT3HzV5tJDiU2ik81PCd4JCyhWnRcDN8XJsVFY3UNB8DCRWUhECrBewyvr56XLHQLFtR3iJUgyYXhoNnQzaPV4fGATT2PmXhFCBxcFCr2kEHS2obaiYPVBvHXcZ5NDLfrZh4qAU4CWzpqmK5XnDexEGztE.png


জীবনের অনুগল্প, ছোটবেলার স্মৃতি। পর্ব-১।

20220715_182821.jpg

সময়টা ছিল ৯০ দশকের। আর নব্বই দশকের সময় মানেই রঙিন স্বপ্ন রঙিন দিন রঙিন ভাবনা। ৯০ দশকের মানুষেরা একটু বেশি আনন্দ উপভোগ করেছে। আমাদের সেই সময়টা ছিল সীমাহীন আনন্দের। যেখানে থাকত বিনোদন খেলাধুলা যাত্রা পালা মেলা আর ইত্যাদি। ৯০ দশকের কথা মনে পড়লে ইচ্ছে করে এখনো আবার ফিরে যায় সেই দিনগুলোতে। জানি সেটা কখনো সম্ভব না। ৯০ দশকের মানুষের ভিতরে যতটুকু আন্তরিকতা ভালোবাসা ছিল এখন তার দশ ভাগের এক ভাগও নেই। সত্যিই সময় মানুষকে অনেক পরিবর্তন করে দিয়েছে।

আমি সেই সময় প্রাইমারিতে পড়াশোনা করি ক্লাস থ্রিতে। জীবনটা ছিল বর্তমানে চাইতে অনেক ভিন্ন। প্রতিদিনের রুটিন ছিল পাঁচটায় অথবা ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে মক্তবে যেতে হবে। মক্তবের পড়াশোনা শেষ করে এক দুই ঘন্টা পর ঘরে ফেরা। ঘরে ফেরার পর হালকা কিছু খেয়ে আবার পড়তে বসা পড়ার টেবিলে। কিছুক্ষণ পড়াশোনা করার পর দৈনন্দিনের কাজে জড়িয়ে পড়তো। হয়তো তখন আমাদের কাজ একটাই ছিল খেলাধুলা দৌড়াদৌড়ি এদিক থেকে অধিক ছোটাছুটি। আমি একদিন মোক্তভ থেকে এসে পড়তে বসেছিলাম। সময়টা ছিল শীতের সৃজন কুয়াশা ঢাকা থাকতো প্রায় বেলা দুপুর পর্যন্ত। কখনো কখনো সকালটা দেখা যেত দশটায় আবার কখনো আটটায়, কনকনে শীত অনুভূতি ছিল অন্যরকম।

ঘন্টাখানেক পড়াশোনা করে উঠে বেরিয়ে পড়লাম দৌড়াদৌড়ির কাজে। তখন বাড়ির পাশে একটা ভিটে ছিল সেখানে মিষ্টি আলু করেছিল কাকা। আর ছোট্ট একটা কোদাল নিয়ে আমি মিষ্টি আলো তুলতে গিয়েছিলাম। এর আগের দিন হঠাৎ করে বৃষ্টি হয়েছিল অঝোরে। বৃষ্টির পানি শুকিয়ে গেছে, ঘাস তরুলতার মাঝে শিশির ভেজা জায়গাটা সুন্দর লাগছিল। তবে যোপ ঝাড়ে বড় বড় সাপ থাকার কারণে বেশি ভয় পেতাম। সব জায়গাতে এমন দেখা একটা যেতাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল আলু তোলা, মিষ্টি আলু তুলে আগুনে পুড়ে খেতে সেই মজা। ছোটবেলায় দেখতাম যখন আলু তুলে পুরো ভিটে সাদা হয়ে যেত, তখন আবার ওই মাটি থেকে আলুর গাছ উঠতো। আর ওই আলুর গাছের সন্ধান করতে করতে দেখা মিলতো বড় বড় মিষ্টি আলু মাটির অনেক গভীরে।

মিষ্টি আলু তুলতে গিয়ে হঠাৎ নজেরও পরলো গাস তরুলতার মাঝে কিছু একটা নড়াচড়া করছে। প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তার থেকে একটু দূরে সরে আসছি এবং কি দেখার চেষ্টা করছি সেখানে কি নড়াচড়া করছে। কিছুই দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু মনে হচ্ছে কিছু একটা আছে। মাঝে মাঝে একটু লাফালাফি করার চেষ্টা করছিল। ভয়-ভীতি কাটিয়ে দিরগতিতে ছোট্ট পায়ে সামনে এগোতে লাগলাম। আমার মনে হয় বিশ ফুট জায়গা যেতে আমার প্রায় দশ মিনিটের মতো সময় লেগেছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন কতটা ভয়ের মধ্যে ছিলাম। এভাবে ধীর গতির পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে দেখলাম বিশাল বড় একটা শোল মাছ, যা ছিল একেবারেই অকল্পনীয়। মাছটাকে দেখার পর ভয়টা অনেকটা কেটে গিয়েছে। তবে এত বড় মাছ আমার চেয়েও বড় এই মাছ আমার পক্ষে নেওয়ার সম্ভব নয়।

লাফ দিয়ে মাছটাকে ঝাপটে ধরলাম। মাছে ঝাড়া মেরে আমাকে ফেলে দেয়, মাছও পড়ে যায়। এভাবে যুদ্ধ চলল অনবরত পাঁচ ছয় মিনিট। আর ওই শোল মাছটা লম্বা ছিল প্রায় দুই ফুট থেকে আড়াই ফুট লাম্বা। ওজন আনুমানিক ৩/৪ কেজি তো হবেই। কোন রকমেই মাছটাকে টেনে ওই জায়গা থেকে আনতে পারছিনা। যখনই ধরছি তখনই ঝাড় মেরে ফেলে দিচ্ছে। তখন শুরু করলাম হাউ মাউ করে চিৎকার। শিক্ষার শুনে বাড়ি থেকে মা আর বোনেরা ছুটে আসলো কি হইছে কি হইছে। মা চিন্তা করছে আমার কোন বিপদ হলো না তো। আমি আবার হাত পা কেটে ফেলি নাই তো। মা দেখেছিলো আমি ছোট্ট একটা কোদাল নিয়ে ওই বিটার উপরে যেতে। এসে দেখে অনেক বড় একটা শোল মাছ, সবাই তো অবাক। তখন চিৎকারের মাত্রাটা আরো বেড়ে গেল। সবাই হাউমাউ করে চিৎকার করছে, কি যে আনন্দ কি যে ফুর্তি আর আমার লাফানি কে দেখে।

অবশেষে মা বোন আমি এতগুলো মানুষ ওই মাছটাকে ধরে নেওয়ার জন্য সক্ষম হতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে একটা টুকরি এনে টুকরিতে ভরে তারপরে মাছ টাকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম। আজ হঠাৎ করে ছোটবেলার সেই স্মৃতিটা মনেপড়াতে একা একা মিটি মিটি হাসছি। তাই চিন্তা করলাম আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করব, হয়তো তাদেরও ভালো লাগতে পারে। আজ এ পর্যন্তই ছিল আবার দেখা হবে জীবনের অনুগল্প স্মৃতি নিয়ে আগামী সপ্তাহে।


FUkUE5bzkAZT3HzV5tJDiU2ik81PCd4JCyhWnRcDN8XJsVFY3UNB8DCRWUhECrBewyvr56XLHQLFtR3iJUgyYXhoNnQzaPV4fGATT2PmXhFCBxcFCr2kEHS2obaiYPVBvHXcZ5NDLfrZh4qAU4CWzpqmK5XnDexEGztE.png


বন্ধুরা কেমন লেগেছে "জীবনের অনুগল্প' "ছোটবেলার স্মৃতি"। আশা করি সকলের কাছেই ভালো লাগভে। ভালো মন্দ কমেন্টে জানাবেন। সাপোর্ট দিয়ে পাশে থাকবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

ছোটবেলার গল্পগুলো অনেক মধুর হয়। ছোটবেলায যারা গ্রামে কাটিয়েছে তাদের আনন্দ শহরের তুলনায় অনেক বেশি ছিল বলে আমি মনে করি। আপনার রুটিনের সাথে আমার কিছু রুটিন মিলে গিয়েছে। বিশেষ করে মক্তবে যাওয়া নিয়ে কিছু স্মৃতি মনে পরে গেল। ধন্যবাদ ভাইয়া।

আপনার সাথে মিলে যাওয়াটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। কারণ আমার ছোট্ট জীবনের সঙ্গী হয়ে গেলেন। সুন্দর মন্তব্য করার জন্য শুভেচ্ছা রইল।

ছোটবেলার গল্প সত্যি ই অনেক আনন্দের হয়। যদিও আপনার মত আমার বেড়ে ওঠাটা গ্রামে নয় তাও আমাদের জীবন কিছুটা আলাদা হলেও কোথাও গিয়ে যেন এক।আমিও সকালে উঠে পড়তে বসে যেতাম মক্তবে যাওয়া হত না বাড়িতে খালা আসতো দুপুরে আরবী পড়াতে।মাঠ ছিল না তবে বাড়ির সামনে বেশকিছু জায়গা ছিল যেখানটাতে বাড়ির সব ছেলেমেয়েরা একসাথে খেলতাম।আপনার ছেলেবেলার অনুগল্প পড়ে সেই দিন গুলির কথা মনে পরে গেল। আপ্নার আনন্দটা আমার চাইতেও বেশি এটা ঠিক।ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য। অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

আসলে একটু ভালো করে চিন্তা করলে আমরা যা দেখি, ছোট্টবেলার রুটিনটা সবার একই রকম থাকে। প্রত্যেকটা মা-বাবাই চায় তার সন্তানকে গড়ে তোলার জন্য। হয়তো আমাদের দুষ্টামি আমাদের অনাকাঙ্খিত কাজগুলো আমাদেরকে বিভিন্ন রাস্তায় চলতে বাধ্য করে। আপনার মন্তব্য সত্যিই খুবই ভালো লেগেছে। আপনার জন্য রইল ভালোবাসা অবিরাম।

আপনার এই গল্পটি পড়ে ছোটবেলার অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল। সত্যি আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে ছোটবেলার। যেগুলো কিছু কিছু সুখের আবার কিছু কিছু দুঃখের। সকালবেলায় সবাই একসাথে উঠে বেশ মজা করতাম। আমি তো প্রথমেই ভেবেছিলাম যে এই জায়গাটিতে কিছু একটা লড়ছে অন্য কোন জিনিস হবে তা। পরে ভালো করে পড়ে দেখার পর বুঝতে পারলাম সেখানে ছিল একটি বড় শোল মাছ। মনে হচ্ছে এই শোল মাছ দেখে আপনার একটু বেশি আনন্দ হয়েছিল। তাইতো না ধরতে পেরে জোরে জোরে চিৎকার করেছিলেন। ওই মাছটির ওজন এবং লম্বা কথা শুনে একটু অবাকই হলাম। যাই হোক খুবই ভালো লিখেছেন। পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো।

একদম ঠিকই বলেছেন, কথা বললেই কথা মনে পড়ে। ঠিক তেমনি আপনার মনে পড়ে গেল ছোটবেলার স্মৃতি। আর আপনার ছোটবেলার স্মৃতি মনে করি দিতে পেরে সত্যিই আনন্দিত। আপনার প্রতি রইল আন্তরিক অভিনন্দন এবং ভালোবাসা অবিরাম।

আপনার গল্পটি পড়ে ছোট্ট বেলায় হারিয়ে যাচ্ছিলাম কিছু সময়ের জন্য। এত্তো বড় শোল মাছ ধরেছেন, ভাবা যায়। আমিও বেশ মাছ ধরেছি ছোট বেলায় কিন্তু এতো বড় মাছ কখনো ধরিনি। যাক সবমিলিয়ে ভালো লেগেছে গল্পটা।

আপনি এত বড় শোল মাছ কখনো ধরেননি এতে দুঃখের কিছু নেই। কিন্তু দেখেছেন কিনা সেটা জানিনা। তবে আমার বাড়ির পাশে অনেক বড় একটা দিঘি আছে, সেখানে আমরা প্রতিবছরই দেখতে পাই অনেক বড় বড় শোল মাছ। আপনার ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়ার কথা শুনে অনেকটাই ভালো লেগেছে। মন্তব্য করে সাথে থাকার জন্য আপনার প্রতি রইল আন্তরিক অভিনন্দন।