শীতের মিষ্টি খেজুর রস ।। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁকের জন্য

in hive-129948 •  3 years ago  (edited)

◾️ ২৭ জানুয়ারি
▪️ বৃহস্পতিবার


বছরের ৬ ঋতুর মধ্যে শীতকাল আমার খুব পছন্দের। বাকী ঋতুগুলো যে একবারেই অপছন্দ এমনটি নয়। শীতের সময় গরম জামা গায়ে দিয়ে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করা আমার নেশা। খুবই ভালো লাগা কাজ করে মনের মধ্যে এইসময়। শীতকালে প্রকৃতি যেন কুয়াশার চাদর গায়ে দিয়ে এক নতুন সাজে হাজির হয় আমাদের সামনে।

1.jpg

শীতকাল আমার প্রিয় হওয়ার আরও কারন হচ্ছে এইসময় অনেক ধরনের শীতকালীন পিঠা তৈরি হয় আমাদের দেশে। ভাপা পিঠা, দুধ পুলি, দুধ চিতই সহ আরোও অনেক ধরনের মুখরোচক পিঠা এই সময়টায় খাওয়া হয়। আমাদের গ্রামে এই শীতের সময়ে প্রায় সকল পরিবারই তাদের আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে পিঠার আয়োজন করে। পরিবারের সবাই একসাথে জড়ো হয়ে খুবই বিনোদনময় সময় কাটায়।

আজকে আমি যে বিষয় এ লিখতে বসেছি তা এখন আপনাদের সাথে শেয়ার করি চলুন। আমার বাসা টাংগাইলের ধনবাড়ি উপজেলায়। নভেম্বরের শেষের দিকে ভার্সিটি বন্ধ দিয়ে দেয় তখন আর দেরি না করে বাসায় চলে যাই। ডিসেম্বর মাস পুরোটাই বাসায় ছিলাম। এই সময় অনেক ঘুরাফেরা করেছি এলাকায়। অনেক মজায় দিনগুলো কেটেছে বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের সাথে। রাত ৯ টা ১০ টা পর্যন্ত বাইরে দিয়ে ঘুরেছি বাইক নিয়ে। তো একদিন এমন করেই বাসায় ফিরি রাতে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে কম্বলের নিচে শুয়ে মেসেঞ্জার এ ঢুকেছি এমন সময় আমার এক বন্ধু নাম তন্ময় তার মেসেজ আসে। বলতেছে--
তন্ময় - আছোস?
আমি - হুম। বল
তন্ময় - খেজুর রস খাইতে যাবি?
আমি - খেজুর রস?😋
তন্ময় - হুম। যাবি কিনা বল?
আমি - কোন যায়গায়? আমাদের এলাকায় তো নাই। রসের সন্ধান পাইলি কই?
তন্ময় - আছে। সরিষাবাড়ি যাওয়া লাগবো।
আমি - 😋🤩 সরিষাবাড়ি কেন আরো দূরে যাওয়া লাগলে যাবো প্লবেম নাই। তুই প্লেন কর। আর কে কে যাবে বলে দেখ
তন্ময় - ওকে

যেমন কথা তেমন কাজ। সব প্লেন করে আমাকে জানায় আমাদের আরো কয়েকজন বন্ধু এবং কয়েকজন বড় ভাইও যাবে আমাদের সাথে রস পান করতে। তার আগে বলে নেই সরিষাবাড়ি আমাদের একালা থেকে বেশি দূরে নয়। ২৫/৩০ কিলোর মতো রাস্তা। এলাকার রানিং এম পি হচ্ছেন সমালোচিত ব্যক্তি ডা. মোরাদ । তার এলাকায় খেজুর গাছে অনেক রস হয়েছে 😊। তো প্লেন মতো আমরা খুব ভোরে বের হয়ে যাই বাসা থেকে। রস খেতে হলে খুব ভোরে রওনা দিতে হবেই তা না হলে ওইদিন আর রস জুটবে না কপালে। অনেক কেন্ডিডেট গিয়ে নাকি ভীড় জমায়। আমার বাসার সামনে তন্ময় ভোর ৫.৩০ টায় এসে হাজির। আমিও রেডি হয়ে ছিলাম। চারদিকে আলো পরিস্কার ভাবে ফুটেনি। কি শীত বাপ রে বাপ। তার মধ্যে বাইকে যেতে হবে। আমি শীতের কাপড় পড়েছি ৩ টা। মুখে গলায় মাফলার পেচিয়ে নিয়েছি। শীত আমায় আর পাবে কোত্থেকে 🙃।

2.jpg

যাত্রা শুরুর আগের পিক

বিসমিল্লাহ্‌ বলে বের হয়ে পড়লাম। আমাদের বাকি বন্ধুরা কেন্দুয়া বাজারে থাকবে ঐখান থেকে আমাদের সাথে এড হবে। ৬ টার দিকে বাজারে গিয়ে দেখি কোন বান্দা এখন পর্যন্ত আসে নাই। বাইক থেকে নেমে বাজারের এক পাশে দেখলাম এক চাচী ভাপা পিঠা সবে বানানো শুরু করেছে। খাইলাম ২ টা গরম গরম পিঠা। সবাইকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম সবাই আসতেছে। অলরেডি আধা ঘন্টা লেট। তো একে একে সবাই আসলো। ৬ টা বাইকে আমরা মোট ৯ জন হলাম। আর বিলম্ব না করে আমরা রস খাওয়ার উদেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম।

3.jpg

কেন্দুয়া বাজারে আমি আর আমার বন্ধু তন্ময়

4.jpg

সবার উপস্থিতিতে একটা ছবি


আমরা আর কোন জায়গায় লেট না করে দ্রুত আমাদের ডেস্টিনেশনে পৌঁছে যাই সকাল ৭ টা ৪০ নাগাত। গিয়ে দেখি আমাদের মতো অনেকে এসে দাড়িয়ে আছে রস খাবে বলে। কিন্তু যে রস পেরে দিবে সেই চাচা এখনও আসেনি। সবার মতো আমরাও ওয়েট করতে লাগলাম চাচার জন্য।

5.jpg

6.jpg

7.jpg

8.jpg

কলসি বাধা খেজুর গাছ

অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পরে দেখলাম এক চাচা মুখে কাচাপাকা দাঁড়ী, শুকনা শরীর । উনি সাইকেল চালিয়ে আসতেছে। সাইকেলের পিছনে বড় বড় বোতলে পানির মতো কি যেন। পড়ে জানতে পারলাম সেগুলো তাড়ি। তাড়ি কখনও খাইনি। সবাই মিলে ২ লিটার বোতলের এক বোতল নিলাম। ৭০ টাকা লিটার। খেয়ে দেখলাম তাড়ী অতটা মিষ্টি না। কেমন যেন কসটে একটা স্বাদ। খেতে একবারে যে বাজে তা না। ভালই। বেশি খেলে নাকি একটু ঘুম ঘুম ভাব আসে শরীর এ।

9.jpg

তাড়ী

তাড়ী খেয়ে আমরা অপেক্ষা করলাম কিছুক্ষন খেজুর গাছ থেকে কলসি ভর্তি রসগুলো পেড়ে আনার জন্য। খেজুর গাছ অনেকগুলো ছিল। প্রায় ১০/১২ টার মতো। যারা যারা গিয়েছিলো প্রায় সবাই খেতে পেরেছিলো মন ভরে। আমরা এক কলসি নিয়েছিলাম। প্রায় ৪ লিটার এর মতো ছিলো কলসিতে।

10.jpg

কলস ভর্তি খেজুর রস

রস খাইতে যে কি মিষ্টি ছিলো তা বলে বুঝাতে পারবো না। শীতের সকালে খেজুর রস খেতে মনটা ভরে গিয়েছিলো সেইদিন। সবাই মন ভরে রস খেয়ে চাচাকে দাম পরিশোধ করে আমরা আবার ব্যাক করি।


এই ছিলো আমার খেজুর রস খাওয়ার কাহিনি। আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। এতক্ষন ধরে যারা আমার লিখাটি পড়েছেন তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকবনে। দেখা হবে আগামিকাল। টাইপ করবো নতুন কোন বিষয়।

বিভাগ তথ্য
ডিভাইস রেডমি নোট ৪
লোকেশন সরিষাবাড়ি, জামালপুর

শুভেচ্ছান্তে
@rokibulsanto

Adnewd a heading (1).png


blogPng.gif










Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

খুব সুন্দর খেজুর রস খাওয়ার বর্ণনা করেছেন ভাইয়া। আসলেই ভাই ফ্রেন্ডরা থাকলে হুটহাট করে অনেক কিছুই করে ফেলা সম্ভব। আপনারা অনেক বন্ধু মিলে খেজুর রস খাওয়ার বর্ণনা করেছেন। যা আমার কাছে সত্যি অনেক ভালো লেগেছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো ভাইয়া।

ধন্যবাদ সিহাব ভাই। আপনার জন্য ভালোবাসা রইলো। ভালো থাকবেন।

আপনার পোস্টের টাইটেল দেখে পুরাতন স্মৃতি মনে পড়ে গেল। শীতকালে খেজুরের রস খাওয়ার মজাটাই আলাদা। আমরা বন্ধুরা মিলে রাতের বেলায় অন্য লোকের গাছ থেকে খেজুর রস নিয়ে এনে অনেক আনন্দ ও মজা করে খেতাম। এখন টাকা দিলেও গাছের রস পাওয়া যায় না। আমাদের এইদিকে খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমার এক বন্ধুকে বলেছি খেজুর রস নিয়ে আসার জন্য। এই বছর এখনো খেজুর রস খাইনি তার জন্য অপেক্ষা করতেছি। আপনারা তো সবাই মিলে অনেক আনন্দ করে খেজুর রস খাওয়া হইছে। যাইহোক এত সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

শীত তো চলে যাচ্ছে । জলদি রসের সন্ধান করেন ভাই। আর অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য। ভালোবাসা রইলো আপনার প্রতি। ভালো থাকবেন