জেনারেল রাইটিং || শৈশবের স্মৃতিচারণ : সাপে কাটার গল্প

in hive-129948 •  9 months ago 

নমস্কার,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই ভালো আছো। আমিও ভালো আছি।

snake-6773959_1280.jpg

ইমেজ সোর্স

বন্ধুরা, আজকের নতুন একটি ব্লগে তোমাদের সবাইকে স্বাগতম। আজকের এই ব্লগে তোমাদের সাথে শৈশবের একটি স্মৃতিচারণ শেয়ার করবো। আমাদের প্রত্যেকেরই শৈশবের অনেক স্মৃতি থাকে। সেই স্মৃতিগুলোর মধ্যে কিছু স্মৃতি মধুর হয় আবার কিছু স্মৃতি হয় ভয়ানক। সবকিছু মিলে মিশে থাকে আমাদের শৈশবে। আজ তোমাদের সাথে যে ঘটনাটা আমি শেয়ার করবো, তখন আমার বয়স সাত বছর হবে। তখন আমি গ্রামেই বসবাস করতাম। আমাদের বাড়ি থেকে চার-পাঁচটা বাড়ি পরেই ছিল শিবানীদের বাড়ি। শিবানী আমার প্রতিবেশীই ছিল। তার বয়স আমার থেকে একটু কম ছিল। যেহেতু সে প্রতিবেশী ছিল তাই আমরা বন্ধুর মতই সবসময় ঘুরে বেড়াতাম। বিভিন্ন ধরনের গ্রাম্য খেলা খেলতাম।

আমি যেই সময়টার কথা বলছি, সেই সময়টাতে আমাদের গ্রামে কারেন্ট ছিল কিন্তু কারেন্ট থাকলেও গরমের সময়টাতে লোডশেডিং বেশি দেখা যেত। গরমকালে সন্ধ্যার পর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত আমরা কারেন্টের দেখা পেতাম না। এই সময়টাতে আমরা সব বন্ধুরা মিলে বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলতাম। যেমন- লুকোচুরি, ছোঁয়াছুঁয়ি, তারপর অনেক সময় হারিকেন জ্বালিয়ে লুডো খেলতাম, একসাথে বসে গল্প করতাম, এভাবেই আমাদের সময়টা যেত। একবার গরমের সময়ে কারেন্ট না থাকায় শিবানী তার বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে আসছিল লুকোচুরি খেলার জন্য। তাদের বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ি আসার সময় ছোট্ট একটি বাঁশ ঝাড় পড়ে। সেটা অতিক্রম করেই আমাদের বাড়িতে তাকে আসতে হতো।

সে অন্ধকারের মধ্যেই হেঁটে আমাদের বাড়ি আসছিল সেদিন। যেহেতু একটু রাত হয়ে গেছিল আর তার কাছে কোন লাইট ছিল না, তাই তখন সে ভুল করে একটা সাপের বডির উপর পা দিয়ে দেয় রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসার সময়। তৎক্ষণাৎ ভাবে তার পায়ে সেই কামড়ে দেয়। সাপের কামড় খেয়ে সে চিৎকার শুরু করে দেয়। এই সময়টাতে সবাই লাইট নিয়ে ছোটাছুটি করে তার কাছে যায়। সেই সময় আমি যথেষ্ট ছোট ছিলাম। এইজন্য সাপে কামড়ালে কি করতে হয় বা পরবর্তী করণীয় কি, সেই সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না। তাই সবাই যা করছিল সেই গুলোই দেখছিলাম। তখন দেখি, সবাই মিলে আমাদের গ্রামের একটি লোকের কাছে নিয়ে তাকে যায়।

সাধারণত গ্রামের কাউকে সাপে কাটলে, ওই লোকের কাছেই নিয়ে যেত। সেই লোক নাকি ঝাড়ফুঁক দিয়ে সাপের বিষ নামিয়ে দিতে পারে। যাইহোক, আমি সামনাসামনি দেখতে পারছিলাম, শিবানী প্রচন্ডভাবে কান্না করছে আর চারপাশের লোকজন বেশ ভয়ে আছে। যাইহোক, সেই লোকটার কাছে নিয়ে যাওয়ার পরে তার চিকিৎসা করা হয় গ্রাম্য পদ্ধতিতে। তবে কি চিকিৎসা করেছিল, সেই সম্পর্কে আমি জানি না। প্রায় দুই ঘন্টা পরেই দেখি শিবানী পুনরায় সুস্থ হয়েছে বাড়িতে ফিরে আসে। সাপের কামড় খাওয়ার পর থেকে তিন থেকে চার দিন শিবানী কারো সাথে কোনো কথা বলে নি।

আমার যতদূর মনে হয়, সে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছিল এই ঘটনাটিতে। আর তারপর থেকে সে কোনদিন রাতের বেলা আমাদের বাড়ির এই দিকে আসতো না। শুধু আমাদের বাড়ি না অন্য কোথাও সে যেত না রাত হলেই, এই সাপের কামড়ের ভয়ে । তবে এখন যতদূর বুঝতে পারি, সেই সময় তাকে যেই সাপে কামড়ে ছিল, সেটা কোন বিষাক্ত সাপ ছিল না। বিষাক্ত সাপ হলে হয়তো ঝাড়ফুঁকে তাকে বাঁচানোই সম্ভব হতো না। হঠাৎ করে আজ ইউটিউবে সাপের কামড়ের উপর কিছু ভিডিও নজরে আসে। সেই গুলো দেখেই শৈশবের এই স্মৃতিটি মনে পড়ে যায় তাই তোমাদের সাথে এখানে শেয়ার করলাম এই ঘটনা টি।


পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
লোকেশনবারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল।
বন্ধুরা, আজকের এই ব্লগটি তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও । সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে






আমার পরিচয়

IMG_20220728_164437.jpg

আমি সুবীর বিশ্বাস( রঙিন)। কলকাতার বারাসাতে আমি বসবাস করি। আমি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস এন্ড ফিসারিস সাবজেক্ট নিয়ে। বর্তমানে আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যানরত আছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু শান্ত স্বভাবের । চুপচাপ থাকতেই বেশি ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা, রেসিপি করা , গল্প লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি স্টিমিটকে অনেক ভালোবাসি এবং সব সময় স্টিমিটে কাজ করতে চাই।

🌷🌷 সমাপ্ত 🌷🌷

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

ভাগিস্য বিষাক্ত সাপ ছিলো না নইলে তো ছোট্ট শিবানীর মৃত্যু নিশ্চিত ছিলো ঝাড় ফুঁকের কারণে। কি ভয়ংকর বিপদ ঘটেছিলো আপনাদর বান্ধবীর সাথে।শৈশবের স্মৃতিচারণ করে পোস্ট টি করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

হ্যাঁ দিদি, বিষাক্ত সাপ হলে সেদিন শিবানীর মৃত্যু নিশ্চিত ছিল। কারণ ঝাড় ফুঁকের মাধ্যমে বিষাক্ত সাপের কামড় থেকে কাউকে বাঁচানো সম্ভব না।

আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। অবশেষে সাপের বিষ নামাতে পেরেছে জেনে অনেক ভালো লাগলো। আসলে বিষাক্ত সাপ হলে সত্যি কাউকে বাঁচানো সম্বব হয় না।আমাদের সবার সাবধানে থাকা উচিত।

আসলে বিষাক্ত সাপ হলে সত্যি কাউকে বাঁচানো সম্বব হয় না।আমাদের সবার সাবধানে থাকা উচিত।

হ্যাঁ আপু, আমাদের সবারই এই বিষয়ে সাবধান থাকা উচিত, এটা আপনি ঠিক বলেছেন।

হ্যাঁ এই কথাটা ঠিক বলেছেন যদি কোন বিষাক্ত সাপে কামড় দেয় তাহলে ঝাড়ফুঁকে কোন কাজ হয় না। সাপের কথা যেহেতু উঠলো তাহলে আমাদের এলাকার বর্তমান পরিস্থিতির কথা বলি, এই এলাকায় বর্তমানে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম রাসেলই ভাইপার। নদী এলাকার দরিদ্র মানুষ গুলো খুব আতঙ্কে আছে ভাই।

আমাদের এলাকার বর্তমান পরিস্থিতির কথা বলি, এই এলাকায় বর্তমানে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম রাসেলই ভাইপার।

বলেন কি ভাই! এই সাপের বিষ হলো হেমোটক্সিন। এই সাপে কামড় দিলে সময়মতো চিকিৎসা না হলে মৃত্যু নিশ্চিত । তাছাড়া চিকিৎসা হলেও অঙ্গহানি ঘটার সম্ভাবনা থাকে ।

আমারও মনে হযচ্ছে শিবানীকে বিষাক্ত কোনো সাপ কামড়ায়নি। কারণ বিষাক্ত সাপ কামড়ালে তার আরো অনেক ক্ষতি হতে পারতো। আর বিষাক্ত সাপের বিষ কখনোই ঝাঁড়ফুক দিয়ে নামানো সম্ভব বলে আমার মনে হয় না। আসলে সাপ আমি অনেক বেশি ভয় পাই। সাপের নাম শুনলেই শরীর একেবারে শিউরে উঠে। সাপ দেখলে তো আমি মনে হয় এক সপ্তাহ পর্যন্ত সাপটিকে ভুলতে পারিনা। যেন মনে হয় চোখের সামনে ভাসে। যাই হোক আপনার গল্পটা পড়ার সময় অনেক ভয় পেয়েছিলাম। শুধু এটা ভাবছিলাম শিবানী ভালো হয়েছে কিনা। যাই হোক সে পরবর্তীতে সুস্থ হয়েছে শুনে ভালো লাগলো।

আপু, সাপ আমিও অনেক ভয় পাই। আর এটা ঠিক যে , ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে কখনো সাপের বিষ নামানো সম্ভব না। সেদিন শিবানীকে বিষহীন সাপে কামড়ে ছিল, এই জন্যই সে সুস্থ হয়ে গেছিল সহজে।

ইদানিং দেখছি সাপের উপদ্রব বেড়েছে মোবাইলে বিভিন্ন ভিডিও তে দেখছি যাই হোক আপনার বন্ধুকে হয়তো কোন বিষাক্ত সাপ কামড় দেয়নি তাই হয়তো অল্পতেই ভালো হয়ে গিয়েছে। ভয় তো পাওয়ার কথাই।আপনার শৈশব স্মৃতি পরে বেশ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ

আপু, সামনে বর্ষাকাল আসছে না, সেইজন্যই সাপের উপদ্রব বেড়েছে। যাইহোক, আমার এই শৈশবের স্মৃতিচারণটি পড়ে যে আপনার ভালো লাগলো, সেটা জেনে অনেক খুশি হলাম আমি।

শৈশবে আপনার প্রতিবেশী শিবানীকে সাপে কামড়েছে শুনে অনেক খারাপ লেগেছে। তবে তার সুস্থতার কথা শুনে অনেক বেশি ভালো লাগলো। আমার তো মনে হচ্ছে ওই সাপটা কোন বিষাক্ত সাপ ছিল না। বিষাক্ত সাপের বিষ অনেক বেশি হয়ে থাকে। বিষাক্ত সাপগুলো কামড়ালে বাঁচানো মুশকিল হয় মানুষকে। তাকে যেহেতু এত সহজেই ভালো করা গিয়েছে, তাই মনে হচ্ছে এটি সাধারণ সাপ হবে। আসলে মানুষ এরকম কোন কিছুর সম্মুখীন হলে ওইটা ভুলতে পারে না।

হ্যাঁ ভাই, শিবানীকে যে সাপে কামড়ে ছিল সেটা একটা সাধারন সাপ ছিল । এজন্য তেমন কোন সমস্যা হয়নি তার।

ঠিক বলেছেন ভাইয়া শৈশবের স্মৃতি কখনও মধুর হয় আবার কখনও ভয়ানক হয়ে থাকে। আপনার গল্প পড়ে আমার চাচাতো ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল। শিবানীকে হয়তো সাধারণ কোনো সাপে কামড় দিয়েছে যার জন্য ওঝা বিষ নামাতে পেরেছে। বিষাক্ত সাপে কামড় দিলে তা কখনোই সম্ভব হতো না। আমার চাচাতো ভাই রাতে মাছ ধরতে গিয়ে সাপের কামড় খায় আর এভাবেই ওঝার কাছে নিয়ে যায়। সেই সময় ওঝা বলেছিলো বিষ নেমে গিয়েছে কিন্তু বাড়িতে আনার সাথে সাথে আবার ছটপট শুরু করে দেয়। অবশেষে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে বলে অর্ধেক রাস্তায় গেলেই মারা যায়। এখনও গ্ৰামের কিছু কিছু মানুষ মনে করে সাপে কামড় দিলে ওঝার কাছে নিতে হবে। কিন্তু তখন যদি আমার ভাইকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যেতো তাহলে হয়তো বেঁচে যেতো। যাই হোক শিবানী সুস্থ আছে জেনে ভালো লাগলো। এভাবে রাতের অন্ধকারে বের না হওয়াই ভালো।

আমার চাচাতো ভাই রাতে মাছ ধরতে গিয়ে সাপের কামড় খায় আর এভাবেই ওঝার কাছে নিয়ে যায়। সেই সময় ওঝা বলেছিলো বিষ নেমে গিয়েছে কিন্তু বাড়িতে আনার সাথে সাথে আবার ছটপট শুরু করে দেয়।

অনেক কষ্ট পেলাম আপু, এই ঘটনাটি শুনে। সাপে কামড়ালে গ্রামের মানুষ প্রথমে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার মত বড় ভুলটা করে থাকে। যার ফলে অনেক মানুষের মৃত্যু চিকিৎসার অভাবেই হয়ে যায় সাপে কামড়ানোর ফলে।

বিষাক্ত সাপ হলে হয়তো ঝাড়ফুঁকে তাকে বাঁচানোই সম্ভব হতো না।

কথাটা ঠিকই বলেছেন ভাই। কিন্তু এটা আমাদের দেশের গ্রামের লোকগুলো বুঝতে চাই না। গরমের সময় অন্ধকারে একটা সময় আমরাও লুকোচুরি খেলেছি। একবার তো আমার এক বন্ধু অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিল একটা গোখরো এর কামড় থেকে। বেশ ভালো লাগল আপনার পোস্ট টা পড়ে।

কিন্তু এটা আমাদের দেশের গ্রামের লোকগুলো বুঝতে চাই না।

না বুঝতে চাইলে কি আর করা যাবে ভাই! তাদের না বোঝার কারণেই অনেক জীবন হারিয়ে যায় সাপের কামড়ের ফলে, এটা বেশ দুঃখজনক বিষয়।