নমস্কার,,
"বন্ধু" খুব ছোট একটা শব্দ। কিন্তু গভীরতা মাপতে গেলে সাগরের চাইতেও বিশাল। বন্ধুত্বের মানে এক এক জনের কাছে এক এক রকম। শুধুমাত্র পাশে থেকে একসাথে হাসিখুশি ভাবে চললেই ভালো বন্ধু হয়ে যায় বুঝি!!! আমার কাছে এমন মনেই হয় না। পাশে থেকে হাসার জন্য অনেক মানুষ জীবনে পাওয়া যায়। কিন্তু বিপদে কয়জন এসে পাশে দাঁড়ায় সেটাই হচ্ছে দেখার বিষয়। দুঃসময়ে যে পাশে থাকে সেই তো প্রকৃত বন্ধু। বিপদের দিনে যে হাত ছেড়ে না দিয়ে শক্ত করে আকড়ে ধরে সেই তো সত্যিকারের বন্ধুত্বের পরিচয় দেয়।
তবে বর্তমানে বন্ধুত্ব গুলো একটু অন্য রকম। ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিট ছাড়া হয়তো কখনো বন্ধুত্ব টিকেই থাকেনা। পাতি বাংলা ভাষায় যদি বলতে হয় তাহলে হবে দেওয়া এবং নেওয়ার সম্পর্ক। তাই বলে সব ক্ষেত্রেই যে এমন হয় এমনটাও না। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে।
ছোট এই জীবনে চলার পথে অনেক মানুষের সাথে মিশেছি। আর ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলের কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। এক কথায় যদি বলি মোটামুটি সবার সাথেই বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে যায় আমার। তবে হ্যাঁ এর মাঝেও কিছু কিছু মানুষের সাথে সম্পর্কটা হয়তো একটু বেশি গভীরে চলে গিয়েছে। আত্মার একটা বন্ধন গড়ে উঠেছে তাদের সাথে। সবাইকে হয়তো সেই জায়গাটায় স্থান দেওয়া সম্ভব হয় না। হাতেগোনা এমন কয়েকজন মানুষ আমাদের জীবনে আসে।
ঠিক সেরকম একটা ছেলের সাথে আজকে পরিচয় করিয়ে দেই। ওর নাম অর্ক। পুরো নাম সৌভিক কুন্ডু অর্ক। আমাদের বাড়ি একই পাড়াতে। কিন্তু স্কুল এবং কলেজ দুজনারই আলাদা। ক্লাস ফাইভ অথবা সিক্স থেকে দুজনের পরিচয়। একসাথে খেলাধুলা করতাম। যেকোনো উৎসব বা পুজোর দিনগুলোতে একসাথেই ঘোরাফেরা আর আড্ডাবাজি করতাম। আমাদের সম্পর্কটা আরো বেশি গভীর হতে শুরু করে ক্লাস টেন থেকে। দুজন ভালো বন্ধু হলেও একসাথে কখনো প্রাইভেট পড়িনি। একদম ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ফিজিক্স পড়তে শুরু করি একসাথে। আর সেই থেকেই আমাদের দুষ্টুমির বন্ধনটা আরো দৃঢ় হতে শুরু করে।
পড়াশোনাতে আমি যা ফাঁকিবাজ ছিলাম তার থেকেও দুই গুণ বেশি ফাঁকিবাজ ছিল অর্ক। দুজনের গোপন কথা দুজনকেই শেয়ার করতাম। পাড়ার অন্য ছেলেদের সাথে কখনোই এত গভীরভাবে কেউ মিশতাম না। আর পাড়াতে অনেক উশৃংখল ছেলেপেলে ছিল কিন্তু আমরা দুজন ছিলাম ভিন্ন স্বভাবের। ভেতরে ভেতরে যত শয়তানি করি না কেন এলাকার মানুষের সামনে ভদ্র সাজতে আমাদের থেকে ভালো আর কেউ পারতো না। এক কথায় আমার বাড়িতে অর্কের নাম বললে সাত খুন মাফ হয়ে যেত আবার অর্কের বাড়িতে সজীবের নাম বললে সাত খুন মাপ। 😉😉😉 । আর আমরা দুজনে ঠিক এই জিনিসটারই সুযোগ নিতাম।
অর্ক ছিল আরেক প্রেমিক পুরুষ। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার থেকেই একের পর এক প্রেম শুরু হয়ে যায় ওর। তাও আবার ফেসবুক থেকে হতো সেই প্রেমগুলো। সেই মেয়েগুলোর সাথে দেখা করতে কত দূর দূরান্তে যে চলে গিয়েছি স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে, এসব শুধু আমরাই জানি। একবার রংপুরে গিয়ে বড়োসড় কেস খেতে নিয়েছিলাম দুজন মিলেই। অনেক কায়দা করে পালিয়ে এসেছিলাম সে বারে 😀।
এইচ এস সি পাশ করার পর দুজন কোচিং করতে চলে আসি ঢাকায়। এখানে এসেও দুই বন্ধু ভীষণ শয়তানি করে বেরিয়েছি। তারপর অর্ক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে শুরু করে দেয় আর আমি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। দুজনের ভার্সিটি আলাদা হয়ে গেল। আমাদের দেখা হতো শুধুমাত্র ছুটির দিনগুলোতে। যখন বাড়ি যেতাম সবাই। আর পুজোর সময়। ওই অল্প কয়েকদিনে এত এত গল্প হতে থাকত আমাদের!
একটা সময় জবে ঢুকে যায় অর্ক। প্রেম করে ফেসে গিয়ে বিয়েও করতে হয় সাথে সাথেই 😅। আমাদের যোগাযোগটা তারপর থেকে আরো অনেক কমে যায়। হয়তোবা মাসে একবার বা তার থেকেও বেশি দিন পর পর একটু কথা হতো। সত্যি বলতে অর্ক অনেক টাইট সিডিউলে থাকে। তারপরেও মাঝে মাঝে সময় বের করে ফাজলামো করার জন্য হলেও ফোন দিত। আমি কখনো ফোন দিলে অনেক সময় ব্যস্ত থাকায় ঠিক করে কথা বলতে পারতো না। পরে ফোন ব্যাক করবে সেটাও খেয়াল থাকতো না। আমার ভীষণ রাগ হতো। পরে আর ফোনই দিতাম না। অর্ক অবশ্য সব মানিয়ে নিত ভালো করেই।
এবার আসি বর্তমানে। যেই অর্ক তার নিজের সংসার নিয়ে এখন ভীষণ ব্যস্ত, ফোন দিয়ে পাঁচ মিনিট সময় পর্যন্ত বের করতে পারেনা সেই ছেলেটা আজ থেকে চার পাচ মাস আগে যখন শুনেছিল আমি আমার জীবনের অনেক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, ঠিক তার পরদিন থেকে প্রতিদিন গুনে গুনে দুইবার করে ফোন করতো। সকালে কি করছি আর রাতে কি করছি এসব শুনতো। ওর নিজের জীবনের অনেক কাহিনী আমার সাথে ভাগ করে নিত। আমাকে সাহস দিত। সামনে কি করে এগিয়ে যেতে হবে কান ধরে যেন নিয়ে যেত আমাকে। ইভেন এখনও কয় দিন পর পর ফোন দেয় আমাকে অর্ক। আমার ক্যারিয়ার টা অন্যদিকে অন্যভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমার থেকে অর্ক নিজেই যেন বেশি উঠে পরে লেগেছে।
জানিনা আমি কতখানি সফল হব। তবে যেই স্বপ্ন টাকে আজ থেকে চার বছর আগে মাটি চাপা দিয়েছিলাম, অর্ক চাইছে সেই দিকেই আবার যেন আমি এগিয়ে যাই। তার জন্য যত ধরনের সহযোগিতা করার প্রয়োজন সবটা দিয়ে ছেলেটা চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সত্যি বলতে জীবনে খুব বেশি বন্ধুর প্রয়োজন নেই আমার মতে। বন্ধুর মত বন্ধু একটা হলেই যথেষ্ট। যে ঠিক কে ঠিক বলবে এবং ভুলকে ভুল বলবে জোর গলায়। আর দিনশেষে সঠিক রাস্তার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে পাশে থেকে। আমি জানিনা আমার স্বপ্নকে আমি ছুতে পারবো কি পারবো না। তবে এমন একটা বন্ধু আমার জীবনে পেয়েছি তার জন্য ঈশ্বরের কাছে আমি সর্বদা কৃতজ্ঞ। এই বন্ধুত্বগুলো সম্পর্কের চাইতেও উর্ধ্বে থাকুক সারা জীবন।
বন্ধুর আসল পরিচয় পাওয়া যায় বিপদে। বিপদে যে পাশে থাকে সেইতো প্রকৃত বন্ধু। আপনার বন্ধু আপনার সুখের দিনে খোঁজ না নিলেও দুঃখের সময় ঠিকই এসে হাজির হয়েছে। এমন বন্ধু বর্তমানে পাওয়া খুবই দুস্কর। আপনি এই দিক থেকে খুবই ভাগ্যবান বলতে গেলে। এখন আপনার বন্ধুকে আপনি সাহায্য করেন যাতে সে আপনাকে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। শুভকামনা রইলো আপনাদের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু আমি সবসময় ভালো মানুষদেরই আমার পাশে পেয়েছি। এদিক থেকে আমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান। দোয়া করবেন আপু ভালো কিছুই যেন হয় 🙏
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সত্যিকারে প্রকৃত বন্ধু কখনও হারিয়ে যায় না।সময়ে ব্যস্তটা কারণে হয়তো খবর নিতে পারেনি। আপনার কস্ট কথা শুনে ঠিক মত খবর নিচ্ছে।
একদম ঠিক বলছেন দাদা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক ধন্যবাদ দিদি আপনার মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন সবসময় 🙏
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি দাদা অনেক গুছিয়ে কথা বলেছেন ৷কিছু বন্ধুত্ব সম্পর্কের থেকেও উর্ধ্বে থাকে ৷যদিও বর্তমান সময়ে বন্ধু হলো চাওয়া পাওয়া ৷তাই বলে সবাই নয় কিছু কিছু বন্ধুত্ব এক বন্ধনের মধ্যে আবদ্ধ আছে ৷
আর এটা ঠিক শুধু হাসাহাসি দুজনে পাশে থাকা কোথাও বেড়াতে যাওয়া ৷এটাই আসল বন্ধুত্ব নয় ৷যে মানুষটা সবসময় সুখে দুঃখে সবসময় ছায়ার মতো তোমার পাশে থাকবে সেই প্রকৃত বন্ধু ৷আর বাকি গুলো হলো সময় কাটানো বন্ধু ৷
যাই হোক দাদা আপনার আর অর্ক দাদার সাথে আপনার বন্ধুত্বের গল্পটা পড়ে বেশ ভালোই লাগছিল ৷এভাবেই সারা জীবন একে ওপরের সাথে পাশে থাকবে ৷এমনটাই কামনা করি ৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলেই ভাই,, প্রকৃত বন্ধু গুলোই সারা জীবন পাশে থাকুক এমন টাই চাই। অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো। অনেক ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সত্যি ভাইয়া আপনাদের বন্ধুত্বের গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো। বিপদের সময়েই প্রকৃত বন্ধুকে চেনা যায় ।আপনার এই দুঃসময়ে আপনার বন্ধুটি আপনার পাশে থেকেছে শত ব্যস্ততার মাঝেও জেনে বেশ ভালো লাগলো। সত্যিকারের বন্ধুত্ব এরকমই হয়।সত্যিই এরকম বন্ধু একটি হলে আর দ্বিতীয়টি লাগে না ।ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ আপু একদম মনের কথা গুলোই বলেছেন গুছিয়ে। অনেক ভালো লাগলো এত সুন্দর একটা মন্তব্য পেয়ে। ভালো থাকবেন আপু সব সময়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাদের বন্ধুত্বের গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। তবে বন্ধুত্ব নামক জিনিসটি অনেক বড়। একজন প্রকৃত বন্ধু সবসময় অপর একজন প্রকৃত বন্ধুর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। একজন বন্ধু চাই তার অপর বন্ধুগুলো যেন ভাল থাকে। সেজন্য তার সামর্থ্যটুকু দিয়ে অপর বন্ধুগুলোকে ভালো রাখার চেষ্টা করে। ঠিক তেমনিভাবে আপনাদের বন্ধুদের সম্পর্কটি অনেক মধুর।
আপনার ও আপনার বন্ধুর জন্য শুভকামনা রইল
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একদম আসল ব্যাপারটা ধরতে পেরেছেন ভাই। এই মধুর সম্পর্ক গুলোর জন্যই আমাদের জীবন বেচেঁ আছে,, আর আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। অনেক ভালো থাকবেন ভাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মনের মিল আর স্বভাবের মিল থাকলে এক স্কুল বা কলেজে পড়তে হয় না।সংস্পর্শে আসলেই হল।দুজনকে একসাথে দেখে বেশ ভালো লাগছে।আর প্রকৃত বন্ধু হাজার ব্যস্ততার মধ্যে, হাজার প্রতিকূলতার মধ্যেও যোগাযোগ করবেই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একদম ঠিক বলেছেন,,, দিন শেষে এই মানুষ গুলোর জন্যই আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারি। আমাদের ভালো থাকার কারণ হয়তো এই বন্ধু গুলোই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit