মহাসড়কে কি কখনোই শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না !!!!!

in hive-129948 •  2 years ago 

নমস্কার,,

প্রতিদিন সকালবেলা খবরের কাগজটা খুললে অথবা টিভিতে নিউজ দেখতে নিলে সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে যাওয়ার তাজা প্রাণ এবং হতাহতের সংখ্যা আমাকে ভীষণ পরিমাণে ব্যথিত করে। কি করলে একটা নিরাপদ সড়ক পাব কেউ কি বলে দিতে পারে!! কোন ডাক্তারের ওষুধ কাজ করবে এই সমস্যার সমাধান করতে?! বাড়ি থেকে যখন বিশ্বরোডে চলাচল করি মোটামুটি রোজ ভাবি হয়তো আজই আমার জীবনের শেষ দিন হতে পারে। কারণ আমাদের দেশে যে পরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে সেটা বোধ হয় কল্পনারও বাইরে।

accident-151668_1280.png

Source

হঠাৎ করেই আজকে এই বিষয়টা মাথায় কেন কাজ করছে জানেন! ঠিক আছে আমি বলছি পুরোটা। গতকাল বাইরে বন্ধুদের সাথে ঘোরাফেরা করে যখন বাড়িতে ঢুকতে নিয়েছি ঠিক সেই মুহূর্তে মা কেমন একটা গলার স্বরে বলছে পাশের বাড়ির অঙ্কুশদের তো ভীষন খারাপ অবস্থা। আমি বললাম, হঠাৎ করে কি হলো! একটু আগেই তো ঠিক দেখে গেলাম। মা তখন বলল সিএনজিতে করে বড় ছেলের শ্বশুর বাড়িতে যেতে নিয়েছিল তিনজন মিলে। রাস্তার মাঝে নসিমনের সাথে সিএনজির সামনাসামনি সংঘর্ষ হয়। আর এতে করে অঙ্কুশের কপালে একটা নাট ঢুকে যায়, অঙ্কুশের মা অর্থাৎ কাকিমার চোখের পাশে চশমাটা ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়, আর অংকুশের বড় ভাই দূর্জয়ের মাথা ফেটে যায়, পা কেটে যায়। হসপিটাল থেকে সবেমাত্র বাড়িতে এসেছে। অঙ্কুশের অবস্থা খুব একটা ভালো না। মেডিকেলে রেফার করেছে। মায়ের মুখে কথাগুলো শুনতেই আমি পুরো আতকে উঠলাম। সাথে সাথে দৌড়ে গেলাম পাশের বাড়িতে।

বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখি করুন অবস্থা পুরো। একটা বাড়ির পাঁচ জন মানুষের মাঝে তিনজন মানুষের পুরো করুন অবস্থা। দুর্জয়ের মাথায় বারোটা সেলাই পড়েছে। কাকিমার চোখের পাশে দেখলাম তিন চারটের মত সেলাই দিয়েছে। আর অঙ্কুশের মাথায় সিটি স্ক্যান না করা পর্যন্ত কিছুই করেনি। ও হ্যাঁ অঙ্কুশ হচ্ছে সবার ছোট ছেলে, বয়সটা খুব বেশি হলে ৮ কিংবা ৯ হবে। ওদেরকে দেখে এবং সবকিছু শুনে আমার ভেতরে রীতিমতো কাঁপতে শুরু করল। আমি আর থাকতেই পারলাম না, দৌড়ে বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তায় বসে ছিলাম, একটু পরেই দেখি অঙ্কুশ কে বের করে নিয়ে যাচ্ছে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আজ সারা দিনে খবর পেয়েছি, ওর কপালে এখনো কোন কিছু করেনি, কপালের হাড়ে চির ধরেছে। ডাক্তার কালকে যা করার করবেন হয়তো।

crash-1308575_1920.jpg

Source

দুর্ঘটনার এই খবরগুলো টেলিভিশনে কিংবা খবরের পাতায় দেখতে হয়তো বা একরকম লাগে কিন্তু চোখের সামনাসামনি যখন দেখা হয় তখন এর নিষ্ঠুরতা খুব ভালোভাবে অনুভব করা যায়। গতকাল রাত থেকে যেটা হয়তো আমি খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছি।
আচ্ছা সড়কের শৃঙ্খলা কি কোন ভাবেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়!! এভাবে আর কত মানুষ অকালে নিজের জীবন দিয়ে দেবে! কত মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে থাকবে!! কাকে বলব আর কেই বা শুনবে!!

মহাসড়কে সব সময় সিএনজি থেকে শুরু করে অটো রিক্সা এবং দূরপাল্লার সব বাসের যেন প্রতিযোগিতা লেগেই থাকে। কার থেকে আগে কে যেতে পারে। একটু সাবধানতা এবং সচেতনতা বোধ নিয়ে চললেই তো এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার হাত থেকে আমরা সবাই মুক্তি পাই। বিশেষ করে বর্তমানে সিএনজি অটোরিকশা গুলো যেন সব থেকে বেশি বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। যে দ্রুতগতি আমাকে আমার গন্তব্যে না পৌঁছে দিয়ে পরপারে পৌঁছে দেবে সেই গতি দিয়ে সত্যিই কি কোন লাভ আছে আমাদের!!

মাঝে মাঝে মনে হয় সমাজের সকল ড্রাইভারদেরকে কাউন্সিলিং করানো প্রয়োজন। বিশেষ ট্রেনিং করানো দরকার। এটা সত্যি আমাদের মহাসড়ক অন্যান্য অনেক দেশের থেকে ভীষণ ব্যস্ত থাকে সবসময়। কিন্তু তাতে কি হয়েছে একটু সময় নিয়ে এবং সচেতন হবে চলাচল করলেই তো আমরা এই অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলোর হাত থেকে রেহাই পেতে পারি। আমার মনে হয় না শুধুমাত্র প্রশাসন একা এই ব্যাপার গুলো সামলাতে পারবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা নিজেরা নিজেদেরকে সচেতন করতে পারবো।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

দাদা সত্যি খবরটি শুনেই শরীরের লোম গুলো খাড়া হচ্ছে ৷ আসলে একটি দূর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না ৷ একই পরিবারের তিন জন্য ৷ আসলে আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি ঝকিপূর্ন হলো যাতায়াত ব্যবস্থা ৷ প্রতিনিয়ত এসব দূর্ঘটনা লেগেই থাকে ৷ আর যার জন্য একটি পরিবারের জন্য বড় হুমকি মুখে পড়ে ৷ কারন যাকে ছাড়া পরিবার চলতে পারে না ৷ এমন মানুষও এমন দূর্ঘটনা শিকার হয় ৷
যা হোক সর্বোপরি এসব থেকে বাঁচতে হলে জনসাধারণ কে অতি নিয়ম অনুযায়ী চলাচল করতে হবে ৷

এই ব্যাপারগুলো সত্যিই মর্মান্তিক ভাই। ঈশ্বর যেন আমাদের সব সময় সুস্থ রাখেন এবং ভালো রাখেন এটাই প্রার্থনা করি 🙏🙏।

আমার খবর দেখতে এজন্য একদম ইচ্ছে করেনা।টিভি কিংবা খবরের কাগজ যেখানেই দেখেন না কেন দুর্ঘটনা ছাড়া কিছুই নেই।আর সামনা সামনি দেখলে আমার কি হবে আমি তা নিজেই জানিনা।আসলে এমনিতে দুর্ঘটনা হলেও বিশেষ বিশেষ দিনগুলো যেমন ঈদে আমার মনে হয় বেশি ই হয়।এর থেকে পরিত্রানের কি উপায় আমার জানা নেই।অদক্ষ ড্রাইভার,প্রতিযোগিতা কে কার আগে যাবে এসব ই চলছে।সুন্দর বিষয় নিয়ে পোস্ট শেয়ার করলেন এজন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।

বর্তমান সময়ে খুব সেনসিটিভ একটা ইস্যু হয়ে গেছে এই সড়ক দুর্ঘটনা। এটা নিয়ে যতই কথা বলা হোক না কেন সমাধান নেই যেন। অনেক ধন্যবাদ আপু আপনার মন্তব্যের জন্য।

এমন মর্মান্তিক ঘটনা দাদা প্রতিনিয়ত ঘটে! এর দ্বায়ভার কার আসলে!! আসলে ড্রাইভারদের বেপরোয়া ড্রাইভিং এবং সঠিক কাউন্সিলিং এর অভাবের কারণে এই অবস্থা! না হয় সড়ক বা মহাসড়কে দূর্ঘটনা কম ঘটতো। বেচেঁ যেত তাজা প্রাণ! দূর্জয়ের জন্য খারাপ লাগছে। সিএনজি তে উঠলে আমারি অনেক ভয় করে। যেভাবে প্রতিযোগিতা করে!

ভাই বিশ্বাস করেন আমিও যতটা পারি এই সিএনজি কে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। বড় বড় কোচের চেয়ে এরাই যেন নিজেকে রাস্তার রাজা মনে করে । আর সব থেকে বেশি দুর্ঘটনার কবলেও পরে এই সিএনজি। কি আর বলার,,, অনেক ধন্যবাদ ভাই।