নমষ্কার,,
জীবনে প্রথম পাওয়া যে কোন কিছুই একটু বেশিই স্পেশাল হয় আমাদের সবার কাছে। হতে পারে সেটা প্রথম চাকরি, প্রথম প্রেম, প্রথম কোন বিষয়ে সাফল্য অথবা প্রথম উপার্জিত টাকা। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও ঐ একটা দিনের ঐ বিশেষ মুহূর্তটুকু বোধ হয় কখনোই ভোলা যায় না। স্মৃতির পাতায় সুন্দর মুহূর্ত গুলোর অংশ হয়ে যায় সারা জীবনের জন্য।
সত্যি বলতে আমি কখনোই বিশ্বাস করতাম না যে ঘরে বসে বসে অনলাইন থেকে কাজ করে টাকা উপার্জন করা যায়। আমার কাছে এটা রূপকথার গল্পের মতোই কাল্পনিক লাগতো সব সময়। তবে হ্যাঁ অবশেষে আমিও ভুল প্রমাণিত হয়েছি। আর আজ সেই গল্পই ভাগাভাগি করে নেব সবার সাথে। আমার বাংলা ব্লগের প্রতি আমি চিরো কৃতজ্ঞ এতো চমৎকার একটা প্রতিযোগিতা আয়োজন করার জন্য। এমন সুন্দর প্রতিযোগিতার আয়োজন না হলে পিছু ফেলে আসা সেই মধুর স্মৃতি গুলোকে হয়তো মনে করার সুযোগ খুব একটা পাওয়া হতো না আর।
ও হ্যাঁ,, প্রথমেই জানিয়ে রাখি, আমার প্রথম অনলাইন থেকে উপার্জন টা কিন্তু এই স্টিমিট প্ল্যাটফর্ম থেকেই হয়েছে। এটা এক কথায় বেশ গর্বের ব্যাপার আমার জন্য। আর সব থেকে মজার ব্যাপার হলো, আমার সেই প্রথম উপার্জনের গল্পটা আমি আবার স্টিমিট প্লাটফর্মেই আমার প্রিয় কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগে পোস্ট করছি। এর থেকে ভালো আর কিছু কখনোই হয়তো হতে পারে না।
স্টিমিট নামটা প্রথম কানে আসে ইউনিভার্সিটি লাইফে আমার রুমমেট তর্পণ এর কাছ থেকে। সারা দিন দেখতাম ল্যাপটপ নিয়ে ধ্যান করছে বসে বসে। আর মাঝে মধ্যে ভোট নিয়ে গল্প করতো আরেক জুনিয়রের সাথে। আমি একদিন আগ্রহ নিয়ে ব্যাপারটা জানার জন্য ওদের আড্ডায় সামিল হই। একটা পর্যায়ে গিয়ে একটা একাউন্ট খুলেই বসি। মোটামুটি সাত দিন এর পিছনে একটু সময় দেই। কিন্তু আলাদিনের চেরাগ সেই ভোটের দেখা একদিনও আর পেলাম না। বন্ধু তর্পণকে বললাম, "দ্যাখ ভাই, এসব আমার জন্য না। ফ্রী টাইমে আমি আড্ডা দেই, গান বাজনা করি, ক্রিকেট খেলি, এগুলোই আমার সাথে যায়। তোর ডলার কোন দিন যদি ক্যাশ হয়, আমাকে জানাস। আমি নিজেই তোকে মিষ্টি খাওয়াবো 😉।" আমি ভাবতাম এসবই ভুয়া। এসব করে কখনো কি আর ডলার আসে!! তর্পণ অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেও আমি আর ঐ দিকে কান দেই নি একদিনও।
সময়টা ২০২০ সালের মাঝামাঝি, লক্ ডাউন চলছে সারা দেশে। অফিস বন্ধ, তাই আমিও বাড়িতে। তর্পণ ফোন করলো একদিন। একথা সেকথা হতে হতে আমাকে বলছে, "সজীব আমি তো এখন সি আর হয়ে গেছি স্টিমিটের।" আমি বললাম তুই এখনো এটার সাথে আছিস! তখন তর্পণ আমাকে জানালো যে আগের মত আর নেই এই প্ল্যাটফর্ম টা। ব্লক চেইন সিস্টেমটা আগের থেকে এখন অনেক উন্নত হয়েছে। আর ব্যবস্থাপনাও বেশ ভালো। আমাকে আবার একটা একাউন্ট খুলতে বললো এখানে। আমার তো কোন ইচ্ছেই নেই। শেষমেষ বন্ধু বললো, "তোর এবার যদি পকেটে টাকা না ঢোকে তাহলে আমার কাছ থেকে তুই টাকা নিবি", তোর গ্যারান্টি আমি"। আমি বললাম, আমার অত টাকার লোভ নেই, মাসে ফোনের নেট বিল টা আসলেই আমি খুশি। আর তখন থেকেই আমার আবার নতুন করে স্টিমিট যাত্রা শুরু।
সপ্তাহে তিন থেকে চার টা পোস্ট করতাম। গান নিয়েই বেশি পোস্ট করতাম। আর তখন ডায়রী গেম টাও বেশ জনপ্রিয় ছিল সব কমিউনিটিতে। দেখা গেল মোটামুটি সব পোস্টেই ছোট খাটো ভোট পেতাম। আবার কখনো কখনো স্টিম কিউরেটর ০১ এর কাছ থেকে বড় ভোটও পেতাম। কাজের প্রতি ভালোবাসাটাও বেশ বেড়ে গেল ধীরে ধীরে। তখন আবার স্টিমের সাথে সাথে এসবিডি পাওয়া যেত রিওয়ার্ডস হিসেবে।
একমাসের একটু বেশি সময় পর দেখলাম ১৭ এস বি ডি জমা হয়েছে ওয়ালেটে, সাথে কিছু স্টিমও আছে। তর্পণ কে বললাম আমি বিক্রি করে দেব সব। তর্পণ জানালো যে এখন মার্কেটের অবস্থা খুব একটা ভালো না। বেশি টাকা পাওয়া যাবে না। আমি আসলে ওর কোন কথাই সেদিন শুনিনি। কারণ আমি দেখতে চাইছিলাম যে সত্যি সত্যিই টাকা টা ওঠানো সম্ভব কিনা। অনেক বোঝানোর পর আমি স্টিম গুলো রেখে এসবিডি গুলো সব বিক্রি করে দেই।
আমার বিকাশে যখন ১৩২৬ টাকা আসলো, আমি রীতিমত বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এখনো মনে আছে আমি তর্পণ কে ফোন করে বলেছিলাম, "টাকা তো সত্যি সত্যি আসলো রে! চাইছিলাম এক মাসের ফোন খরচা, এরা তো আরেক মাসের টা বোনাস দিয়ে দিয়েছে 😉!"। এক কথায় ভীষন আনন্দ হচ্ছিলো। পরদিন টাকা উঠিয়ে যখন বাড়ি আসছিলাম, এক গরীব মানুষকে ১০০ টাকা দান করেছিলাম ওখান থেকে। করোনার জন্য খোলা জিনিস তখন খেতাম না। তাই কিছু ফল কিনেছিলাম বাড়ির সবার জন্য এবং আর এক হালি ডাব। বাকি টাকা ফোনে ফ্লেক্সিলোড দিয়েছিলাম। আমার এক মাসের নিশ্চিন্ত পাক্যাজ 😅।
সত্যি বলতে আমি চাকরী করে প্রথম মাসের স্যালারি পেয়েও বোধ হয় এতোটা খুশি হয়েছিলাম না। কারণ আমি কখনো ভাবতেই পারি নি যে এমন কিছু করে অনলাইন থেকে টাকা উপার্জন করা সম্ভব। সেই দিনের পর থেকে স্টিমিটের প্রতি ভালোবাসা টা একটা অন্য মাত্রায় পৌঁছে যায়। আর যেটা এখন অবধি ধারাবাহিক ভাবে চলছে। তবে এই প্ল্যাটফর্ম কে আমি কখনোই পেশা হিসেবে নেওয়ার চেষ্টা করি নি। ব্লগিং এখনো আমার একটা প্যাশন। একটা অদ্ভূত তৃপ্তি পাই আমি এই জায়গা টা থেকে।
এটাই ছিল আমার অনলাইন থেকে প্রথম উপার্জনের অনুভূতি। যে কথাটা না বললেই নয়, সব অনুভূতি হয়তো লিখে প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। কোথাও কিছু একটা কমতি যেন থেকেই যায়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তবে আজ পুরোনো সেই দিনটার কথা ভেবে একা একাই বেশ হাসছিলাম। সত্যি বলতে এক গাল হাসি নিয়েই পুরো লেখাটা শেষ করলাম। হয়তো এটাই এই প্রতিযোগিতার সেরা উপহার আমার জন্য। ❤️❤️❤️
সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুক 🙏।
শুভেচ্ছান্তে
@roy.sajib
অনলাইন থেকে ইনকামের অভিজ্ঞতার গল্পটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো।অনলাইন থেকে আয় করা যায় এটা বিশ্বাস না হওয়ারই কথা আসলে।তাইতো টাকা তুলে বিশ্বাসের জায়গাটা সুদৃঢ় হলো।খুব বেশী ভালো লাগা সেদিন নিজের মাঝে অনুভব করলেন।করোনা তাই বাইরের খোলা খাবার না খেয়ে ফল আর ডাব কিনলেন।এটা বেশ ভালোই হলো।বাইরের খাবার না খাওয়াই ভালো। গরীব লোকটিকে ১০০ টাকা দিলেন খুব খুশী হয়ে গিয়েছিল তাই না। ধন্যবাদ ভাইয়া অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক ধন্যবাদ আপু সব সময় সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য। অনেক ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমি যখন প্রথম এসেছিলাম তখন তর্পন ভাই আমাকে অনেক সাহায্য করেছিল। আজ আপনার পোস্টের মাধ্যমে ভাইয়ের নামটা সামনে চলে আসলো। আপনার পোস্টে এসবিডির ব্যাপারটা দেখে বুকটা যেন হু হু করে উঠলো দাদা। কতদিন হলো তাকে ছাড়া আছি। স্টিমিট থেকেই যে আপনার অনলাইন ইনকাম শুরু জেনে অনেক ভালো লাগল। ধন্যবাদ আপনার অনলাইন ইনকাম এর বিষয়টি আমাদের সময় শেয়ার করে নেওয়ার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বাহ্ অনেকদিন পর ভাইয়ের দেখা পেলাম । ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পেয়ে। আর এস বি ডির জন্য বুকটা সত্যিই কাপে রে ভাই। অনেক ধন্যবাদ ভাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রথমেই আপনাকে কনটেস্ট ৪৩ এর জন্য শুভকামনা জানাই।প্রথম অনলাইন থেকে ইনকাম,সেটা সবার জীবনেই ভিন্ন এক অনুভূতি।আর সবার এই অনুভূতি জানতে পারলাম এই কনটেস্টটির মাধ্যমে।অনেক ভালো লেগেছে পোস্টটি।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক ধন্যবাদ আপু আপনার মন্তব্যের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার মতো এমন অনেকেই ভাবতো যে অনলাইনে কাজ করে ইনকাম করা যায় না। আমার বন্ধুরাও বিশ্বাস করতো না। কয়েক মাস আগে তাদের ধারণা পাল্টে দেই উইথড্র করে। যাইহোক আপনার অনলাইন ইনকামের অভিজ্ঞতা পড়ে দারুণ লাগলো ভাই। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সবার মুখে একদম ঝামা ঘষে দেওয়া হয়ে গেছে তাহলে ভাই। হিহিহিহি। অনেক ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন সবসময়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনলাইন থেকে টাকা যে পাওয়া যায় আমিও বিশ্বাস করতাম না দাদা। কারণটা হলো অনেক কাজ করেছিলাম কিন্তু টাকা আর হাতে আসেনি। তবে আপনার বন্ধু তর্পন দাদা আপনাকে যথেষ্ট হেল্প করেছে। এমন বন্ধুও পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আমার ইনকামের শুরুটাও আমার বন্ধুর হাত ধরেই 🌼
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এটা ঠিক ভাই, তর্পণ এর মত বন্ধু পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। অনেক ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পেয়ে ভাই। ভালোবাসা রইলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit