নমস্কার,,
শ্রাবণের কোন এক দুপুর বেলা। পুরো নগরী মুগ্ধ হয়ে শুনছে টিনের চালে প্রকৃতির নূপুরধ্বনি। তার সাথে প্রচন্ড ঝড় বাতাস। আর আমি? ঘরের ভেতর বিছানায় বসে। অফকফ এনেছি একটু বেশি ঘুমাবো বলে। মন ভালো নেই আজ আমার। কারণ আজ চুমকির বিয়ে।
এর আগেও অফকফ খেয়েছি আমি। ডাক্তার বলেছিল দিনে তিনবার খেতে হবে এবং দুই চামচের বেশি খাওয়া যাবেনা। কারণ বেশি খেলে ঘুম ঘুম ভাব হয় এবং শরীরটাও দুর্বল হয়ে পড়ে। নিজেকে যাচাই করার জন্য একবার অর্ধেক বোতল সাবার করে দিয়েছিলাম। ফলাফলে বিছানায় শুয়ে ছিলাম সকাল দশটায় আর ঘুম থেকে উঠেছি বিকাল ৪:০০ টায়। উঠি উঠি করেও বিছানা থেকে উঠতে পারছিলাম না। সেদিন আমার মন খারাপ ছিল না , শুধুমাত্র পরীক্ষা করার জন্য খেয়েছিলাম অর্ধেক বোতল। কিন্তু আজ আমার মন খারাপ । তাই আজ পুরোটাই সাবার করব।
ঢক ঢক করে গিলে ফেললাম অফকফ সিরাপের পুরো এক বোতল। মিনিট দশকের মত বিছানায় বসে থাকার পর নেতিয়ে গেলাম বিছানায়। সুইচ বোর্ডটা বিছানা থেকে একটু দূরে। তাই বিছানার কাছে একটি লাঠি সব সময় দেয়ালে ঠেস দিয়ে রাখি। লাঠিটার সাহায্যে প্রয়োজন মাফিক সুইচ অন অফ করি। আজ লাঠি দিয়েই দরজা বন্ধ করে দিলাম।
কিছুক্ষণ পর চোখটা যখন সবে ঘুমে আঁটোসাঁটো হয়ে আসতে নিয়েছে দেখি মেঝেতে বিরাট একটি সাপ। মরার মত পড়ে রইলাম কারণ পা নাড়ালেই হয়তো সাতটা ছোবল মারতে পারে। ডান হাত দিয়ে লাঠিটা ধরার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। কয়েক মিনিটের মধ্যে সাপটা বিছানার নিচে গর্তে ঢুকে গেল। নাহ্, এ ঘরে শুয়ে থাকা আর ঠিক হবে না। অনেকটা কষ্ট করে উঠে দাঁড়ালাম। আশ্চর্য ব্যাপার! বৃষ্টি পড়ছে অবিরাম উঠানে দাঁড়িয়ে আছি অথচ শরীর ভিজছে না। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম বাম হাত দিয়ে বড় একটা ছাতা ধরে আছি মাথার উপরে। কি ব্যাপার, ছাতা এলো কোথা থেকে! ফেলে দিলাম নিচে। এখন আমি বৃষ্টিতে ভিজছি। বাহ্, বেশ ভাল লাগছে।
চলে এলাম চুমকির বাড়িতে। কি ব্যাপার! এ বাড়িতে বৃষ্টি হয়নি কেন? কোথাও বৃষ্টির জলের কোন চিহ্ন নেই। ঢুকে পড়লাম চুমকির ঘরে। ঘরে ঢুকে দেখি চুমকি একা একা বসে কাঁদছে। চুমকিকে বললাম ,,কি ব্যাপার চুমকি, আমাকে কাঁদিয়ে এখন নিজেই কাঁদছো! এক ঝলক, শুধুমাত্র এক ঝলক তোমাকে দেখার জন্য তুমি যে বাড়িতে সেলাই শিখতে যেতে সে বাড়ির পাশের মাঠে বসে থেকেছি ঘন্টার পর ঘন্টা। তোমার কথা ভেবে চোখের জলে ভিজিয়েছি বালিশ। তবে কেন এখন আমার কথা ভেবে ভেবে কাঁদছো? কেন , চুমকি কেন! কেন তুমি আমার সাথে এমন ছলনা করলে?
আমার কথা শুনে চুমকি যেন আকাশ থেকে পড়লো। ভ্রুজোড়া কুচকে আমাকে বলল ,, হরিদা আপনি এসব কি বলছেন? আমি আবার কবে আপনাকে কথা দিলাম? আপনি যে আমাকে পছন্দ করেন সেটা তো আমি জানতামই না। আমি মোটেও আপনার কথা ভেবে কাদছি না। মা বাবাকে ছেড়ে যেতে হবে তাই তাদের কথা মনে পড়ে কান্না পাচ্ছে।
চুমকির কথা শুনে আমার মাথায় যেন রক্ত চড়ে বসলো। বড় বড় চোখ করে বললাম, এত বড় শয়তানি আমার সাথে! তুই আমাকে চিনিস! আমার এই ছেঁড়া জামা দিয়ে তোকে পিটিয়ে তক্তা বানাবো। এই কথা বলেই যেই না আমি আমার হাফহাতা জামার বোতাম খুলতে নিয়েছি অমনি দু তিনজন ছেলে এসে আমাকে চ্যাংদোলা করে বাড়ির বাইরে এনে নিচে ফেলে দিল।
এমন সময় বর এসেছে বর এসেছে বলে চারদিকে রব উঠে গেল। মনে মনে ভাবলাম বরের মাথায় ছিট আছে নাকি! দুপুরবেলা কেউ বিয়ে করতে আসে তাই! ছুটে গেলাম বরের গাড়ির কাছে। ড্রাইভার দরজা খুলতেই আমি ড্রাইভার এর পাশের সিটে গিয়ে বসলাম। জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখলাম আশেপাশে কেউ নেই। পকেট থেকে পিস্তলটা বের করে ড্রাইভার এর পেটে ধরলাম, আর বললাম, ড্রাইভার গাড়ি ঘোরাও।
বাড়ি ফিরলাম রাত এগারোটায়। চুমকির বাড়ি একদম নিস্তব্ধ। একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি হয়েছে ভাই? জবাবে বলল জামাই পালিয়ে গেছে। সেটা শুনে আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। পুরোহিত আমার দিকে রক্ত চক্ষু ভরে তাকিয়ে বললেন ,,বড় যে হাসছো, হাতে তো আর বেশি সময় নেই। লগ্নভ্রষ্ট হয়ে গেলে এই মেয়ের তো আর বিয়ে হবে না। লাজুক ভাবে কিছুটা ক্ষীন স্বরে বললাম, আপনাদের কারো আপত্তি না থাকলে আমি চুমকিকে বিয়ে করতে রাজি আছি।
হঠাৎ করে কই থেকে যেন থলথলে ভুঁড়িওয়ালা এক ছেলে দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল আপনাদের কারো আপত্তি না থাকলে আমি চুমকিকে বিয়ে করতে রাজি আছি। কথাটা কানে আসতেই আমার পুরো গায়ে যেন আগুন জ্বলে উঠলো। মুষ্টি পাকিয়ে চিৎকার করে পাঁঠাটার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,, এত বড় সাহস তোর !তুই আমার চুমকিকে বিয়ে করতে চাস! এক ঘুষিতে তোর বদনখানা উল্টে দেবো। এই বলে যেই না থাকে ঘুসি মারতে গেছি অমনি হুড়মুড় করে পড়ে গেলাম বিছানা থেকে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সময় তখন রাত্রি দশটা। টিনের চালে বৃষ্টির নৃত্য থেমে গেছে। তবে নগরীর নিস্তব্ধতা কাটেনি। একটু পরে কানে ভেসে এলো ব্যান্ড পার্টির বাজনা।
মনে মনে বললাম,, ও তাহলে এতক্ষণ অফকফের কারণে .........!!
চিৎকার করে উঠলাম। ভালই তো ছিলাম এতক্ষন। কেন আমাকে জাগালে, অফকফ???
এত সুন্দর গল্প লেখেন আপনি....? আমি পুরো গল্পটা অতি মনোযোগ সহকারে পড়েছি। তবে আমি ঠিক বুঝলাম না সব সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু কি চুমকি নাকি এক বোতল অফকফ নাকি দুঃস্বপ্ন। ভালো রকমের নেশা হয়েছিল মনে হয়। হা হা হা...
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হাহাহাহা,, ভাই আসল খেল খেলেছে অফকফ,, অফকফ আসলে কাশির ওষুধের নাম,,আর নরমালি কাশির সিরাপ খেলে একটু ঘুম ঘুম ভাবটা বেশি হয়, অনেকে এই কাশির ওষুধ পুরো বোতল খেয়ে নেশা করে😅,, গল্পের প্রধান চরিত্র হরির এই ওষুধ টা খেয়েই নেশা ধরে গেছে ,, এই ব্যাটা চুমকির ছ্যাঁকা খেয়েই খেয়েছে এই অফকফ 🤪🤪,, আর তারপর নেশার ঘোরে আবোল তাবোল স্বপ্ন দেখেছে,, হিহিহিহি।
আসলে ভাই এটা একটা রম্য রচনা,, অনেকটা মজার ছলেই লেখা। আমি সত্যিই অনেক খুশি হয়েছি যে আপনি এত ধৈর্য নিয়ে পুরো লেখাটা পড়েছেন। অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক ভালো লেখেন আপনি। আমি তো রীতিমতো কনফিউশনে পড়ে গেছিলাম, যে আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে কি।😂
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
লেখাটা বেশ বড় হয়ে গিয়েছিল ,, এর পর থেকে দুই পর্বে লিখতে হবে এমন গল্প। লিখতে গিয়ে আমার নিজের অবস্থাই টাইট হয়ে যায় পুরো 😅
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit