গল্প হলেও সত্যি।। এপ্রিল -২৬/০৪/২০২৩।।

in hive-129948 •  2 years ago 

☬নমস্কার সবাইকে☬

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই আপনারা... ? আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন সুস্থ আছেন। প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। আজকের নতুন একটা ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।

এতদিন ভয়াবহ গরম থাকার পর গত পরশুদিন বেশ সুন্দর একটা বৃষ্টি হয়ে গেল আমাদের এদিকে। তবে তাতে কি আদৌ বিশেষ লাভ হয়েছে আমার সেটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। পরশুদিন সকালে বেশ ভালই লাগছিল যখন বৃষ্টিটা হচ্ছিল, তবে হঠাৎ করেই ঠান্ডা গরম একসাথে হওয়ার জন্য শরীরটা বেশ খারাপ হয়ে গেলো আমার। গায়ে হাত পায়ে প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা এবং মাথাও সামান্য পরিমাণে ব্যথা করছে। জানিনা জ্বর আসবে কিনা। যাই হোক আজকের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আসলে আজকের গল্পটা খুব বেশি একটা বড় না এবং এটা আমার নিজের সাথে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা। অনেকদিন পর কোন একটা বিশেষ ব্যাপার মনে পড়ার কারণে গল্পটাও মনে পড়ে গেল। আসলে এই ব্যাপারটা আমার সাথে যখন ঘটেছিল তখন আমার বয়স ছিল খুব সম্ভবত চার বছর এবং ঘটনাটা এতটাই মেমোরেবল যে আমি এখনো পর্যন্ত ভুলতে পারিনি। তাহলে চলুন দেখি গল্পে ফিরে যাওয়া যাক।



গল্পটা তখনকার যখন আমি গ্রামেই থাকতাম। হঠাৎ করে একদিন দুপুরবেলা শুনলাম যে আমাদের পাশের বাড়ির দাদুটা মারা গেছে। আসলে তিনি আচমকাই মারা গেছিলেন। কারণ ওনার যে বয়স হয়েছিল বা শরীরের যে অবস্থা ছিল তাতে মরে যাওয়ার কথা নয়। উনি নাকি তেঁতুল গাছের তলায় বসে থাকার কারণে কি যেন একটা দেখে হার্টফেল করে মারা যান। আর এই ঘটনা দেখেছিল তার পাশের বাড়ির এক মহিলা। যাই হোক বাড়িতে তো কান্নাকাটির ধুম লেগে গেল, যদিও আমি তখন এসব বিষয় এ তেমন কিছু বুঝতাম না। শেষমেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যে, যত দ্রুত সম্ভব তাকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে এবং সৎকার এর ব্যবস্থা করা হবে। আসলে গ্রামে যখন কেউ মারা যায় তখন তাকে পোড়াতে বা শ্মশানে রেখে আসতে তার সাথে অনেক মানুষই যায়। যেহেতু আমার মামা সেখানে যাচ্ছিল তাই আমিও জেদ ধরলাম যে আমাকেও নিয়ে যেতে হবে শ্মশানে। কারণ এর আগে কখনো আমি শ্মশানে যাইনি।

magic-book-7455996_1280.jpg
সোর্স

যাই হোক প্রথম দিকে তো নিতে রাজি হচ্ছিল না পরে কান্নাকাটি জুড়ে দেওয়ার কারণে আমাকে নিয়ে যেতে বাধ্য হলো। তাছাড়া এদিকে সময় ও ছিল না এজন্য আমরা সবাই মিলে একসাথে রওনা দিলাম সাথে সেই দাদুর মৃত লাশ নিয়ে। হঠাৎ করেই কেন জানিনা কিছুদূর যেতে না যেতেই বিলের ভিতরে বেশ ভালো রকমের মেঘ ঘনিয়ে আসলো। আমরা ঠিক বুঝতে পারলাম না, কারণ ৫ মিনিট আগেও আকাশে সূর্য টলমল করছিল তাহলে হঠাৎ করে এরকম চারিদিক কালো হয়ে মেঘ আসার কারণ কি ছিল। অনেকে তো বলতে লাগলো যে কিছু একটা সমস্যা হয়তো হয়েছে এই জন্য এরকম হচ্ছে। তবে আমি কিছু বুঝতে না পারলেও সেখানকার লোক অনেকটা সাহসী ছিল এবং কি যেন একটা নাম জপ করতে করতে সামনের দিকে এগোতে লাগলো। কিন্তু তাতেও আদৌ কোন লাভ হলো না, যত সামনের দিকে এগোতে লাগলাম মেঘ কেন জানি না আরো বেশি কালো এবং ঘন হয়ে সবকিছু অন্ধকার করে দিচ্ছিল। কিছু সময় পরেই দেখলাম হালকা বৃষ্টি সহ প্রচন্ড ঝড়ো বাতাস শুরু হয়ে গেল।

family-7199714_1280.png
সোর্স

এই ঘটনা দেখে তো সবাই রীতিমতো ভয় পেয়ে গেল, তবে লাশ এখানে ফেলে রেখে তো আর চলে যাওয়া যাবে না। তাই যাই হোক না কেন সবাই ভগবানের নাম জপ করতে করতে শ্মশানের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। এর মধ্যে ঘটে গেল আর একটা বড় ঘটনা, যেটা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। আসলে ঐদিন বাতাসের গতি এতই বেশি ছিল যে আমাকে টেনে ধরে রাখতে পারছিল না আমার মামা। এক হাত দিয়ে আমার মামা অনেক শক্ত করে আমাকে ধরে রেখেছিল তারপরেও কেন জানিনা মনে হচ্ছিল আমাকে কে জানো পেছনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই মামার হাত থেকে আমার হাতটা কি করে যেন ছেড়ে গেল এবং আমি ওই বাতাসের গতিতে উড়ে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাত দূরে গিয়ে পড়লাম। আসলে ওই সময়টা আমার কাছে যে কতটা ভয়ঙ্কর ছিল সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। আমি যেভাবে পড়েছিলাম তাতে হাত-পা ভেঙে যাওয়ার কথা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিল আমার কিছু না হওয়াটা। যদিও ওই সময়টাতে আমি প্রচুর পরিমাণে পাতলা ছিলাম।

women-5548024_1280.jpg
সোর্স

যাই হোক আমি তো প্রচন্ড কান্নাকাটি শুরু করে দিলাম পরবর্তীতে দেখলাম কয়েকজন লোক আমাকে তুলে নিয়ে কি একটা মন্ত্র জপ করল। এরপর আবার পুনরায় শ্মশানের দিকে এগোতে লাগলাম। তবে শ্মশানের ভেতরে ঢোকার পরপরই কি করে আচমকাই যেন সব ঝড় থেমে গেল। এরপর আবার সেই আগের মতো ওয়েদার। অর্থাৎ আলো ঝলমলে দিন। শুধুমাত্র বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিলের মাঝখানে যে জায়গাটুকু ওই জায়গাটায় এই সমস্যাটা আমাদের হয়েছিল। এটা একদম সত্য ঘটনা এবং আমার নিজের সাথে ঘটে যাওয়া কাহিনী, যেটা আমার সারা জীবন মনে থাকবে।

পোস্ট বিবরণ


শ্রেণীStory Writing
লোকেশনকলকাতা,ইন্ডিয়া।
যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।

🎯ধন্যবাদ সবাইকে🎯

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

খুবই সুন্দর একটা গল্প ছিল এটি। আপনার নিজের জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা ছিল এটি। শুরু থেকে পড়তে যদিও এমনিতে ঠিকঠাক লাগছিল। কিন্তু যখন পড়লাম আপনারা যত এগোচ্ছিলেন তত মেঘ জমছিল এবং আকাশের অবস্থা একেবারে খারাপ হতে লাগছিল। এবং কি আপনার মামা আপনাকে সামনের দিকে টান ছিল কিন্তু আপনি এগোতে পারছিলেন না। আপনার কাছে মনে হয়েছিল কেউ যেন আপনাকে পিছন থেকে ধরে রেখেছে। পরে হাত ছুটে যাওয়ার পরে আপনি ২০ থেকে ৩০ হাত দূরে গিয়ে পড়েছিলেন কিন্তু আপনার কিছুই হলো না এই বিষয়টা পড়ে আমি একটু বেশি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। যাইহোক খুবই সুন্দর লিখেছেন আপনি। ভালোই ছিল।

প্রথমে মনে করেছিলাম হয়তো এটা গল্প হতে পারে কিন্তু বাস্তবে এটা আসলেই খুব ভয় পাইয়ে দিল। তাহলে আপনি বেশ ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন সেদিন। আর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আকাশে মেঘ টলোমলো করে পুরো পরিবেশটা বদলে যাওয়া আমার কাছে বেশ ভয়ঙ্কর মনে হয়েছে।

আপনার এই গল্পটা পড়ে কিন্তু আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বিশেষ করে যখন পড়লাম আপনাকে টানতে টানতেও আপনি সামনের দিকে এগোচ্ছিলেন না। আপনার মনে হয়েছিল তখন আপনাকে পিছন থেকে কেউ টেনে ধরে রাখছিল। আসলেই ছোটবেলায় আমাদের সবার সাথে এরকম কিছু ঘটনা ঘটেছে যেগুলো বড় হলে একেবারে গল্পের মত মনে হয়। কিন্তু সেগুলো একেবারেই বাস্তবিক ঘটনা। আপনার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখে ভালো লাগলো।

গরমের তীব্রটা একটু কমলেও কেমন যেন বাজে ওয়েদার হয়ে গিয়েছে। অনেক মানুষেরই এরকম শরীর খারাপ হতে শুরু করেছে। ঘটনাটা একটু আশ্চর্য টাইপের ভয়ংকর আবার অনেক মজারও। ছোটো মানুষ হলে যা হয় ছোটবেলায় আমরা কি কি না করেছি যা ভাবলে এখন অনেক হাসি পায়। যেমন শ্মশানে যাওয়ার জন্য ছোট ছেলে বলেই খুব কান্না করেছিলে ভাবছিল কি নাকি হবে হাহাহা। তবে ঝড়ে উড়ে যাওয়ার ব্যাপারটা শুনে আমার তো খুব হাসি পেল। এই প্রথম তোমাকেই দেখলাম ঝড়ে উড়ে যেতে 😁😁😁।

আপনার প্রতিবেশী দাদুর সাথে হয়তো তেঁতুল গাছের ওখানে কোনো ভৌতিক ব্যপারই ঘটেছিল।যেহেতু অন্য একজন মহিলা দেখেছিলেন।নইলে হঠাৎ এতো ঝড় কেন আসবে আবহাওয়া তো ঠিক ছিল। সৎকার করতে নিয়ে যাওয়ায় সময় আপনি ঝড়ে অনেকটা দূরে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন।আপনার কোনো ক্ষতি হয়নি জেনে ভালো লাগলো।গ্রামে এসকল ভৌতিক ব্যপারগুলো বেশি হয়।আমার বাসায়ও এরকম ঘটনা ঘটেছিল তাই জানি।ভালো লেগেছে গল্পটি ।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

ওয়েদার পরিবর্তন হলে অনেক সময় জ্বর ঠান্ডা হয়। তাই আগে থেকেই আপনাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনার পাশের বাসার দাদু হয়তোবা তেঁতুল গাছে কোন ভয়ানক কিছু দেখে হার্টফেল করে মারা গেছে। আর মৃত লাশ নিয়ে শ্মশানে যাওয়ার সময় সেই ভয়ানক কিছুটাই এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আপনি সেই ঝড়ে ২০/৩০ হাত দূরে গিয়ে পরেছেন। ভাগ্যিস আপনার হাত পা ভাঙেনি। যাইহোক ছোটবেলার এমন একটি ঘটনা আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

আসলে তেঁতুল গাছের ওই ব্যাপারটা আমিও জানি না। হয়তোবা অন্য কোন ঘটনাও হতে পারে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই পোস্ট পড়ার জন্য।

আবহাওয়ায় পরিবর্তন হলে তখন অনেকের শরীর খারাপ হয়ে যায়। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন। তবে আজকে আপনার গল্পটি পড়ে আমি নিজেও ভয় পেয়ে গেলাম। আপনার বয়স সেই সময় মাত্র চার বছর হবে। তারপরও ঘটনাটি আপনার এখনো মনে আছে। আসলে এরকম বাতাসের কথা শুনলে নিজের মনে ভয় লাগে। আপনার মামার হাত থেকে ছুটে আপনি অনেক দূর ২০ থেকে ৩০ হাত দূরে চলে গেলে। আপনার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি অনেক সুন্দর করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।

আসলে এখন ওয়েদারটা এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে, শরীর একটু হলেই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তবে ভাই গল্পটা এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল আমার কাছে যে সেটা এখনো পর্যন্ত ভুলতে পারিনি। আপনাকে ধন্যবাদ ভাই পোস্ট পড়ার জন্য।

আপনার গল্পটি পড়ে সত্যি আমি নিজেও ভয় পেয়ে গেলাম। আপনার সাথে ছোট অবস্থায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আমাদের মাঝে শেয়ার করলেন। পাশের বাড়ির লোক মারা যাওয়ার কারণে। আসলে আপনার মামার হাত এত শক্ত করে ধরার পরও আপনি ২০ থেকে ত্রিশ হাত পিছে চলে গেলেন। প্রচন্ড বাতাস এবং অন্ধকার লাগার কারণে হয়তো আপনার কাছে আরো বেশি ভালো লাগলো। তবে ছোট কালের ঘটে যাওয়া গল্পটি আমাদের অনেক সুন্দর করে শেয়ার করেছেন।

আসলে ব্যাপারটা এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল ওই সময় আমার কাছে যে এখন পর্যন্ত ভুলতে পারিনি ঘটনাটা। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু পোস্ট পড়ে মন্তব্য করার জন্য।