ছোটবেলার স্মৃতিচারণ।। আগস্ট -১১/০৮/২০২৩।।

in hive-129948 •  last year 

☬নমস্কার সবাইকে☬

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই আপনারা... ? আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন সুস্থ আছেন। প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। আজকের নতুন একটা ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।


অনেকদিন পর আসলে একটা ছোটবেলার গল্প মনে পড়ে গেল। সেটাই আসলে আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে গল্প লেখা হয় না। আসলে গল্প লিখতে গেলে মাথা যথেষ্ট ঠান্ডা রাখা লাগে এবং দীর্ঘস্থায়ী চিন্তা থাকা লাগে। কারণ গল্প শুধু শুরু করলেই তো হবে না, সেটাকে খুব সুন্দর করে টেনে সমাপ্তি ঘটানোটাও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর গল্পের শেষটা যদি অনেক মজার না হয় তাহলে পুরো গল্পটাই আমার কাছে মনে হয় বৃথা। তবে আজকে আমার নিজের লেখা কোন গল্প নয় আজকে বাস্তব জীবনে আমার নিজের সাথে ঘটে যাওয়া একটা ছোটবেলার গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। গল্পটা আজ থেকে কমপক্ষে কুড়ি বছর আগের, যখন আমার বয়স চার থেকে পাঁচ বছর ছিল। আমি আসলে এমন একটা দুরন্ত ছেলে ছিলাম ছোটবেলায় যে আমাকে কন্ট্রোল করাই অনেক মুশকিল হয়ে যেত। আমার মা-বাবা তো পারতোই না তবে আমার ঠাকুর দাদা আবার আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসতো এজন্য তার কথা আমি অনেক বেশি শুনতাম।

fantasy-3880613_1280.jpg

সোর্স


খুব সম্ভবত আমার যখন তিন বছর বয়স ওই সময়টা থেকে রথের মেলায় যেতাম আমার ঠাকুর দাদার সাথে। আমাদের গ্রাম থেকে রথের মেলা অনেক দূরে হতো। কমপক্ষে ১০-১৫ কিলোমিটার তো হবেই। তবে সেই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা উন্নত ছিল না আর মাটির রাস্তা ছিল প্রচন্ড পরিমাণে কাঁদাযুক্ত। আর আপনারা তো অনেকেই জানেন যে রথের সময় কি পরিমাণে বৃষ্টি হয় আর ওই সময় পুরো রাস্তা কাদা কাদা হয়ে যেত। এমন সময় গেছে যখন আমার ঠাকুর দাদাকে রীতিমতো আমাকে কাঁধে করে নিয়ে বাড়ি আসতে হয়েছে ওই হাটু পর্যন্ত কাদা মাড়িয়ে। যাইহোক একবার রথের দিন প্রচন্ড বৃষ্টি হয়েছিল এই কারণে আসলে আমাদের বাড়ি থেকে রথে যেতে দেওয়া হচ্ছিল না। তবে আমি এত পরিমাণে কান্নাকাটি করছিলাম যে আমার ঠাকুর দাদা শেষ পর্যন্ত আমাকে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যদিও উনি অনেকবার বলেছিল যে রথ সাত দিন ধরে হয়। আমরা অন্য একদিন যাবো তবে আমি আসলে ঠাকুর দাদার কথা না শুনেই কান্নাকাটি শুরু করে দেই এবং শেষ পর্যন্ত আমাকে পায়ে হেঁটে আবার ঠাকুর দাদা তখন রথের মেলায় ঘুরতে নিয়ে গেছিল। যদিও ওই সময় অনেক ছোট ছিলাম এজন্য আমার ঠাকুর দাদার কাছে বায়না ধরে ছিলাম রথের মেলায় একটা টিয়া পাখি কিনে দেওয়ার জন্য। অনেক কান্নাকাটি করার পর শেষ পর্যন্ত রাজিও হয়েছিল এবং একটা টিয়া পাখি কিনে দিয়েছিল। খাঁচা সহ কত নিয়েছিল সেটা মনে নেই। সম্ভবত ওই সময় ৫০ টাকা নিয়েছিল।

mandala-5970032_1280.jpg

সোর্স


যাইহোক টিয়া পাখি গুলো যখন দেখছিলাম তখন অনেক বেশি ভালো লাগছিল। হঠাৎ করে দেখলাম আমার ঠাকুর দাদা আমাকে বলল যে তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকো, কোথাও যেও না। আমি একটু পাশ থেকে বাথরুম করে আসছি। যদিও যে লোকটার কাছে থেকে টিয়া পাখি কিনেছিল ওনাকেও বলে গেছিল যে আমার নাতিটাকে একটু দেখে রেখো, আমি পাঁচ মিনিটের ভিতর আসছি। তবে আমার ঠাকুর দাদা পাঁচ মিনিট পেরিয়ে যায় দশ মিনিট পেরিয়ে যায় তাও দেখি আসছে না। বেশ চিন্তা হচ্ছিল এবং যথেষ্ট ভয় লাগছিল এই জন্য অনেকটা কান্নাকাটি করতে করতেই। ঠাকুর দাদা যেদিক দিয়ে গেছিল ওই দিক দিয়ে হাঁটা শুরু করে দিলাম। তবে যাকে আমাকে দেখে রাখতে বলেছিল উনি তো বিক্রি করতে ব্যস্ত হয়ে গেছিল এজন্য আমার দিকে খেয়াল রাখতে পারেনি। তারপর আমি হাঁটতে হাঁটতে কোথায় যে চলে গেছিলাম মেলার ভেতর বুঝতে পারিনি। এত পরিমাণে ভিড় ছিল আর এত লম্বা লম্বা মানুষ ছিল সেই সময় দেখে খুব ভয় লাগছিল। এইভাবে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলাম নদীর পাড়ে এরপর তো আর যাওয়া জায়গা নেই। এবার আর কি করবো একটা জায়গায় বসে বসে জোরে জোরে কান্নাকাটি শুরু করতে লাগলাম। হারিয়ে গেছি হারিয়ে গেছি বলে চিৎকার করতে লাগলাম। আমার কান্নাকাটি দেখে তো রীতিমতো ৪-৫ জন লোক আমাকে ধরে নিয়ে চলে গেল এনাউন্সমেন্ট কক্ষে।

church-painting-1207018_1280.jpg

সোর্স


এদিকে আমার ঠাকুর দাদা দেখলাম আমাকে খুজে না পেয়ে উনিও অনেক আগে থেকেই এনাউন্সমেন্ট কক্ষে গিয়ে বসে রয়েছে। প্রথমেই আমাকে দেখে গালে একটা ঠাস করে চড় দিল। এরপর বুকে নিয়েই কান্নাকাটি শুরু করে দিল। আমি আসলে ঠাকুর দাদাকে দেখে অনেক বেশি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলাম। তবে এত পরিমাণে ভয় পেয়েছিলাম আমি ভেবেছিলাম হয়তো আমি আর কোনদিন বাড়ি ফিরতে পারবো না, আমি হারিয়ে গেছি। এরপর থেকে আমার ঠাকুর দাদা কখনোই আমাকে আর হাতছাড়া করেনি। তবে ঐদিন আবার কিছু সময়ের ভেতরে সব কষ্ট ভুলে গেছিলাম যখন দেখলাম আমার ঠাকুর দাদা টিয়া পাখি নিয়ে আমার সামনে এসে হাজির হলো এবং বলল যে এখন চলো আমরা বাড়ি যাই তোমার টিয়া পাখিকে খেতে দিতে হবে বাড়ি গিয়ে। আসলে আমার ঠাকুর দাদা আমাকে রেখে টুকটাক আম এবং মিষ্টি কিনতে গেছিল এজন্য উনার দেরি হয়েছিল। তবে আমি তো প্রচন্ড পরিমাণে ভয় পেয়েছিলাম ওই সময়টাতে। এরপর আমি যতবারই ঠাকুর দাদার সাথে রথের মেলায় গেছি, আমাকে কখনো হাতছাড়া করেনি।

পোস্ট বিবরণ


শ্রেণীগল্প।
যাইহোক আজকের গল্প এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং আরো ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।

🎯ধন্যবাদ সবাইকে🎯

Posted using SteemPro Mobile

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

আপনার গল্পটা পড়ে আমার অনেক ভালো লাগল। আসলে ঠাকুর দাদারা এমনি হয়। মা বাবা অনেক সময় বাচ্চাদের কথা শোনে না কিন্তু ঠাকুর দাদারা নাতিনদের কথা সব সময় শোনে।আপনার বয়স অল্প ছিল কিন্তু আপনি তো বেশ ভালোই বুঝতেন হা হা হা।যাক অবশেষে সব কিছু ঠিক হয়েছে জেনে ভালো লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে।

আসলে ওই সময় বুঝতাম কিনা জানিনা, তবে প্রচুর পরিমাণে জেদি ছিলাম। এই জন্যই সমস্যাটা হয়েছিল, তবে এরপর থেকে আসলে এরকম দুঃসাহস আর কখনো দেখাইনি আপু। যাইহোক আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পোস্ট পড়ে মন্তব্য করার জন্য।

দাদারা এমনই হয় নাতি নাতনির সকল আবদার পুরণ করেন। আর সেই সুযোগ নাতি নাতনিরাও রাজ্যের যত আবদার করে বসে তাদের দাদা দাদীর কাছে। আপনার ঠাকুর দাদাও বেশ আদর করতো আপনাকে তা আপনার লেখা পড়েই বোঝা যাচ্ছে । অবশেষে আপনার ঠাকুর দাদা আপনাকে খুঁজে পেয়েছে সেটাই স্বস্থি। বেশ ভালো লাগলো আপনার গল্পটা পড়ে।

আমার ঠাকুর দাদা আসলে ওই দিন কান্না করে দিয়েছিল আমাকে হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে আর কখনোই আসলে এরকম দুঃসাহস দেখাইনি আপু। পোস্ট পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।

আসলে মা-বাবা একটু বকাবকি করলেও দাদু -দিদা সবসময় নাতি-নাতনির আবদার পূরণ করতেই থাকে। সেই জন্যই তোমাকে সেদিন মেলায় নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল তোমার ঠাকুর দাদা আবার টিয়া পাখিও কিনে দিয়েছিল। তবে একটু ধৈর্য্য ধরে দাঁড়িয়ে থাকলে হয়তো একটু সময়ের জন্য হারিয়ে যেতে না তুমি । যাই হোক গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো।

আমার ঠাকুর দাদা আসলে অন্যরকম ভালো মানুষ ছিল। এজন্য নাতি-পুতিদের আবদার সবসময় পূরণ করার চেষ্টা করতো। আর আমার আবদার তো সব সময় পূরণ করতো যেহেতু বড় নাতি ছিলাম তাই।

আপনি রথ যাত্রায় যাওয়ার জন্য বায়না ধরলেন অবশেষে শেষমেষ আপনি কান্নাকাটি করে গেলেন। আপনি তো দেখছি ছোট বেলা থেকেই ছাড় দিতেন না নিয়ে যেতেই হলো। কিন্তু অবশেষে হারিয়ে গেলেন এবং বড় একটা থাপ্পর খেলেন বেশ হাসি পেয়েছে আমার😂😛🤣। কিন্তু উচিত শিক্ষা হলো সেটা থাপ্পর খাওয়া। আসলে ছোটবেলার স্মৃতি গুলো খুব বেশি মনে পড়ে যায়। ভাল লাগলো পড়ে।

ছোটবেলা থেকেই আসলে আমি অনেক জেদী ছিলাম আপু। তবে আস্তে আস্তে সেই জেদ অনেকটাই কমে গেছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।