একজন সৎ, জেদি চোরের সততার গল্প।। মার্চ -১৫/০৩/২০২৩।।

in hive-129948 •  2 years ago 

☬নমস্কার সবাইকে☬

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই আপনারা... ? আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন সুস্থ আছেন। প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। আজকের নতুন একটা ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।

এটা আসলে কোন গল্প না, আমার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া একটা বাস্তব ঘটনা। সত্যি কথা বলতে গল্পটা লিখতে আমার প্রচন্ড পরিমাণে খারাপ লাগছিল, আবার হাসিও পাচ্ছিল,তারপরও লিখছি আর কি। গল্পটা আমার চোখের সামনেই ঘটা এবং এটা ঘটেছিল আমি যখন কলকাতা ছিলাম তখন। মোটামুটি দুপুর তিন টা কিংবা চারটা নাগাদ আমি একটা কাজে গিয়েছিলাম বারাসাত স্টেশনে। হঠাৎ করেই দেখি স্টেশনের তিন নম্বর প্লাটফর্মে বেশ হৈ হুল্লোড় এবং জনসাধারণের ভিড়। ভিড়ের ভিতরে যেতেই দেখি যে মাঝখানে একজন লোক বিধ্বস্ত অবস্থায় বসে আছে, দেখে মনে হচ্ছিল তাকে গণধোলাই দেয়া হয়েছে।



যদিও চোর পেটানোতে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই, তারপরও মোটামুটি একটু কৌতুহল হচ্ছিল যে কি করেছে সেটা জানার জন্য। প্রথমে দুই একজনের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম তবে তারা কোন উত্তর দিতে পারল না। তারাও আমার মত ভিড় দেখে এখানে এসেছে। যাইহোক পরবর্তীতে সেখানে দুই এক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর বুঝতে পারলাম যে লোকটা একজনের পকেট থেকে মোবাইল চুরি করেছে, এজন্য তাকে এখানে ধরে আনা হয়েছে। আর যার কাছ থেকে মোবাইল চুরি করেছে সে একজন স্কুলের ছাত্র মাত্র। ওই ছেলে নাকি তাকে হাতেনাতে ধরেছে ফোন চুরি করা অবস্থায়। কিন্তু যখন তাকে সার্চ করা হলো তখন তার কাছে নাকি ফোন পাওয়া যায়নি।

burglar-294485_1280.png
সোর্স

যাইহোক ব্যাপারটা আমার কাছে বেশি ইন্টারেস্টিং লাগলো। তাহলে এক মিনিটের ভিতর ফোন কোথায় চলে গেল, যদি সে ফোন চুরি করেই না থাকে। আচ্ছা এবার বলি আসলে ঘটনা কি ঘটেছিল। যখন ওই লোকটা ফোন চুরি করে তখন তার পাশে আরো একজন লোক ছিল। চুরি করার পর এই চোর ওই লোকটার কাছে সাথে সাথে ফোন দিয়ে দিয়েছিল, এই জন্য আর ফোন পরবর্তীতে খুঁজে পাওয়া যায়নি কিন্তু ওই স্কুলের ছেলেটা যেহেতু হাতেনাতে ধরেছিল এজন্য চোরটা কে আর ছেড়ে দেয়নি। কলার পাকড়ে ধরে স্টেশনের উপর নিয়ে এসেছিল। তারপর সব লোকজনকে চুরির ঘটনা বলায় তাকে গণধোলাই দিয়েছে। কিন্তু লোকটা মোটেই স্বীকার করবে না যে সে ফোন চুরি করেছে। তবে ওই চোরটা বারবার সেখানকার মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, সে একজন ভালো মানুষ, স্টেশনে কুলির কাজ করে। কিন্তু লোকজন তো সেটা বিশ্বাস করবে না কারণ তাকে হাতেনাতে ফোন চুরি করতে দেখেছে। হঠাৎ করেই দেখলাম একজন ইয়াং বয়সীর ছেলে সেখানে আসলো এবং চোরটাকে উদোম্বার মেরে নাক মুখ ফাটিয়ে দিল।



নাক দিয়ে গল গল করে রক্ত বের হতে লাগল তারপরও সে স্বীকার করবে না। পরবর্তীতে সে বলল আমাকে পুলিশের কাছে তুলে দাও তোমার যদি এতই সন্দেহ হয় আমাকে অথবা আমার সাথে আমাদের গ্রামে চলো। সেখানে গেলে বুঝতে পারবে আমি মানুষ হিসেবে কেমন। কিন্তু কেউ সেটা মানতে রাজি না। শেষ মেষ সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো তাকে পুলিশ এ ধরিয়ে দেবে। এই কথা শোনার পর সে কিছুটা ঘাবড়ে গেল। আমি একটা জিনিস দেখে বেশ অবাক হচ্ছিলাম এত গণধোলাই খাওয়ার পরেও লোকটা সামান্য দুই তিন হাজার টাকা ফোনের জন্য জেদ ধরে বসে ছিল। ফোন দিয়ে দিলে হয়তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত অথবা তাকে পুলিশে দিয়ে দিত। তার বদলে সে একের পর এক মার খেয়ে যাচ্ছে।

stealing-294489_1280.png
সোর্স

সবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে তাকে পুলিশে দেওয়া হবে না কারণ পুলিশে দিলে সেখান থেকে বেরিয়ে যাবে তার বদলে তাকে সেই লোকটার কাছে ছেড়ে দেয়া হলো যে তার নাক ফাটিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে দেখলাম লোকটা বেশি ঘাবড়ে গেল এবং আস্তে আস্তে সব স্বীকার করতে লাগলো। সে ওই ছেলেটার কাছ থেকে ফোন নিয়েছে এবং সেটা একজনের কাছে পাস করে দিয়েছে আর সেই লোকটা আবার সেখান থেকে ফোন নিয়ে দমদম স্টেশনে চলে গেছে। সৎ বললাম চোরটাকে এর পিছনে কারণ হলো প্রথম দিকে এমন ভান করছিল যেন সে একজন ধোয়া তুলসী পাতা, চুরি করতে পারে সেটা কল্পনার বাইরে। আর জেদি বলার কারণ হলো, সে এত মার খাওয়ার পরেও স্বীকার করতে চাইনি। কিন্তু নরমাল চোর এই মার খেলে বাপ বাপ বলে সব স্বীকার করে দিত। তবে লোকটাকে দেখে আমার বেশ কষ্ট হচ্ছিল কারণ তাকে যে পরিমাণে মেরেছিল একজন সুস্থ মানুষ বা আমার মত ব্যক্তি হলে হয়তো হসপিটালে ভর্তি হতে হত। পেটের দায় এবং পরিবারের জন্য মানুষ কত কিছু করে সেটাই চিন্তা করছিলাম এই অবস্থাটা দেখে।

thief-4173477_1280.jpg
সোর্স

পোস্ট বিবরণ


শ্রেণীগল্প
যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।

🎯ধন্যবাদ সবাইকে🎯

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

প্রথমে তো আমিও বুঝতে পারছিলাম না যদি চোরটাকে হাতেনাতে ধরা হয়, তাহলে মোবাইল কোথায় গেল। আসলে এটা হচ্ছে এখনকার টেকনিক, একজনে চুরি করে অন্য জনের হাতে দিয়ে দেওয়া। তবে লোকটাকে এত মারার পরেও লোকটা স্বীকার করতে চাইছিল না এই বিষয়টা অবাক হলাম। কিন্তু শেষমেশ তো বলেই দিল। এর আগে বলে দিলে এতগুলো মার খেতে হতো না। আসলেই চোরের মধ্যে সততা আর জেদ দুইটাই ছিল। গল্পটা পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো।

এখনকার চোর গুলো খুবই চালাক হয়ে গেছে, তারা এমন এমন টেকনিক অ্যাপ্লাই করে যে ধরা মুশকিল হয়ে যায়। ধন্যবাদ আপু পোস্ট পড়ে মন্তব্য করার জন্য।

ওদের চুরি করার টেকনিকটা বেশ গভীর। আমি তো অবাকই হলাম প্রথমে যে যেহেতু হাত নাতে ধরেছে চুরি করতে কিন্তু তারপর মোবাইলটা কোথায় গেল!! পরে বুঝলাম আসলে কাহিনী কি। ঠিক বলেছেন ভাইয়া চোরের ভিতর সততা এবং যে দুটোই আছে। আমি চুরি করলে মার তো দূরে থাক এক ধমকে বলে দিতাম যে আমি নিয়েছি 😁।

চোরেদের আসলে প্রচুর ট্রেনিং দেওয়া থাকে, এজন্য তারা অত সহজে স্বীকার করতে চায় না।🤭 ধন্যবাদ আপু আপনার মন্তব্যের জন্য।

দৈনিক $2 থেকে $3 ভাই করতে আমার কি করতে হবে

নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য কষ্ট করেন। এর কোনো বিকল্প নেই।(work hard)

চোরের চুরি করে অন্য কারো হাতে দিয়ে দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তারা খুব টেকনিক খাটিয়ে বুদ্ধিসহকারে কাজ করে। আপনার গল্পটি পড়ে আমার কাছে ভালই লেগেছে। ঠিকই বলেছেন আপনি। চোরের মধ্যে জেদ এবং সততা দুটোই আছে। আপনার গল্পটি পড়ে আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে । এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

এখন বাজারে চোরদের নতুন নতুন টেকনিক বেরিয়েছে। আপনি আর আমি যদি বুঝতে পারতাম তাহলে তো চোর ধরা সহজ হয়ে যেত আপু। হা হা হা...

ভাইয়া প্রতিদিন বিভিন্ন স্টেশনে এমন ঘটনা ঘটে থাকে। যারা এমন কাজ করে তারা মার খেতে খেতে অভ্যাস হয়ে গেছে। আপনি তো এমন মার খেলে হাসপাতালে যেতেন আর আমি হলে কবরে চলে যেতাম। যায়হোক ঘটনাটি পড়ে অনেক ভাল লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া।

ওই রকম মার যদি আমি খেতাম তাহলে মরে ভূত হয়ে যেতাম রে ভাই। এরা এত মার সহ্য করে কি করে কে জানে। 😂

এই ধরনের চোর অনেক আছে। হাতেনাতে ধরা খেলো তারা স্বীকার করে না। স্কুল ছাত্রটি যখন তাকে হাতে নাতে ধরল এক মিনিটের মধ্যে মোবাইলটি উধাও শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। চোরগুলো অনেক কৌশল করে চুরি করে। আর সব জায়গাতে চোর ধরা খেলে গণধোলাই দিয়ে থাকে বেশিরভাগ চোরকে। যাক চোরটি লাস্ট পর্যন্ত স্বীকার করল এটাই বড় কথা। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর করে পোস্টে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

আসলে চোরদের এমন ট্রেনিং দেওয়া হয় যে সামান্য মার বা ধমকে তাদের কিছুই হয় না। পেটের দায়ে মানুষ কত কিছুই না করে। ধন্যবাদ আপু পোস্ট পড়ে এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য।