অভিশপ্ত কুয়ো( প্রথম পর্ব)।। নভেম্বর-১৩/১১/২০২২।।

গল্প লেখার আগে যে কথাটা বলে দিতে চাই, সেটা হচ্ছে পুরো গল্পটাই কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে আমার লেখা গল্পের কোন মিল নেই। যেহেতু গল্পটা আমি নিজে লিখছি সুতরাং গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রে আমি আমার নিজেকে রাখলাম। এতে করে আমার লিখতেও সুবিধা হবে এবং আপনাদের বুঝতেও বেশ কিছুটা সুবিধা হবে। হঠাৎ করেই এই গল্পের উদ্ভব হয়েছিল আমার মাথায় পুরুলিয়া ঘুরতে গিয়ে। সেখানে প্রায় 100 থেকে দেড়শ বছর আগের একটা পুরনো কুয়ো দেখে আমার ভিতরে বেশ কিছুটা কৌতুহল হয় এবং নিজে নিজেই কল্পনা করি যে, এরকম একটা গল্প হয়তো বানানো যেতে পারে। সেটার উপর ভিত্তি করেই আমার আজকের গল্প লেখা। আশাকরছি আপনাদের অবশ্যই ভালো লাগবে এবং পারলে পুরো গল্পটা মন দিয়ে পড়বেন। চলুন তাহলে গল্প শুরু করা যাক।

বেশ কিছু বছর ধরে সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার ফলেও আমার তেমন কোনো আশানুরূপ ফল হচ্ছিল না। এদিকে আমার সরকারি চাকরির বয়স প্রায় শেষের কোঠায় চলে গেছে। সুতরাং গত বছরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এবার যে করেই হোক একটা সরকারি চাকরি আমাকে পেতেই হবে। যাইহোক মোটামুটি চাকরি পরীক্ষার জন্য নিজেকে ভালোই প্রস্তুত করেছিলাম। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সরকারি চাকরির যে অবস্থা তাতে আশা করাটাই অনেকটা বেকার। তারপরেও পোস্ট অফিসে, পোস্টমাস্টার পদে একটা সার্কুলার বেরিয়েছিল। সেটার জন্য এপ্লাই করি এবং পরীক্ষায় বসে পড়ি। গত পরশুদিন আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার এসেছে। আমার চাকরিটা হয়ে গেছে। আমি অনেকটাই খুশি হলাম তবে পোস্টিং হয়েছে বনগাঁয়ের প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে। গ্রামে থাকার অভ্যাস আমার একেবারেই নেই সুতরাং বেশ কিছুটা দুশ্চিন্তার ভিতরে পড়ে গেলাম। কোথায় থাকবো কি করে সব কিছু ম্যানেজ করব। যাইহোক কি আর করা যাবে ইচ্ছা না থাকলেও যেতে তো হবেই।

আমার খুব কাছের একজন বন্ধু ছিল যার বাড়ি ছিল বনগাঁতে। তাকে ফোন করে সব বিস্তারিত বললাম এবং সে আমাকে বলল, চিন্তা করার কিছু নেই। সে যে করেই হোক সেখানে থাকার জন্য একটা ব্যবস্থা করে দেবে আমার। কিন্তু আমি ভাবতে লাগলাম, সে বিগত ৫ বছর ধরে কলকাতার বাইরে সেটেল হয়েছে। সে কি আমার থাকার ব্যবস্থা করতে পারবে। যাই হোক এত কথা চিন্তা করে কি হবে। মোটামুটি প্রথমে একটা মাথা গোঁজার জায়গা হলেই হল। পরের দিন সকাল বেলা দেখলাম আমার বন্ধু ফোন করেছে এবং বললো আমি যে পোস্ট অফিসে জয়েন করব তার পাশেই একটা রাজবাড়ী রয়েছে। সেখানে সাধারণত কেউ থাকেনা তবে ওই বাড়ির কেয়ারটেকার একটা রুমে থাকে এবং পুরো বাড়ি দেখাশোনা করে। যাইহোক অনেকটাই আশ্বস্ত হলাম বন্ধুর এই সাহায্য পেয়ে। মোটামুটি আমার শিয়ালদা স্টেশনে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে বনগাঁ লোকাল ধরে বনগাঁ স্টেশনে পৌঁছাতে আমার প্রায় আড়াই ঘন্টা মত সময় লাগে। স্টেশনে নামতেই চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যায়।

বনগাঁ স্টেশন থেকে একটা টোটো রিজার্ভ করে রওনা দিলাম গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। তবে একটা জিনিস বেশ আশ্চর্য লাগলো আমার কাছে, এমন একটা জায়গায় চাকরি পেয়েছি, এই জায়গা নাকি কেউ চেনেই না। আমি যতগুলো টোটো চালক এর কাছে জিজ্ঞাসা করেছি যে এইখানে যাবে নাকি, তারা প্রত্যেকেই বলেছে এই জায়গাটা আবার কোথায়। শেষ পর্যন্ত একজন বয়স্ক টোটো চালক আমাকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে রাজি হয়। আসলে সে অনেক সময় ধরেই আমাকে লক্ষ্য করছিল। যেহেতু জায়গাটা একটু ভিতরে এবং অনেকটাই জঙ্গলের দিকটাতে তাই অনেকেরই জায়গাটা অচেনা।

যাইহোক ১৫ মিনিটের ভিতরে শহরের ব্যস্ততা কাটিয়ে আমরা গ্রামের ভিতর ঢুকে গেলাম। হঠাৎ করেই টোটো ওয়ালা আমাকে জিজ্ঞাসা করল, ওইখানে আমার কি কাজ এবং কার বাড়ি যাবো। তখন আমি তাকে সবকিছু খুলে বললাম, যে ওখানকার একটা পোস্ট অফিসে আমার চাকরি হয়েছে এবং যে বাড়ি থাকবো সেই রাজবাড়ীর নাম বললাম। হঠাৎ করেই দেখি টোটো ওয়ালা কাকু গাড়ি থামিয়ে আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল। আর আমাকে বলল বাবু এত জায়গা থাকতে আপনি ওখানে কেনো। এই প্রশ্নে আমি অনেকটাই হতভম্ব হয়ে তাকে আবার উল্টে জিজ্ঞাসা করলাম, কেন কি সমস্যা সেখানে...? তবে সে আমাকে বিস্তারিত কিছু না বলে,বললো ওই বাড়ি সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছি। লোকে ওখানে যেতে ভয় পায়। তবে আমি এই ব্যাপারটা হেসে উড়িয়ে দিলাম, কারণ ভূতের ভয় আমি কখনোই পাইনা। আর লোকের এসব গুজব আমি খুব বেশি একটা কানও দেই না। এতে করে দেখলাম টোটো ওয়ালা আর বেশি কথা বাড়ালো না। আমাকে একটা চায়ের দোকানের সামনে নামিয়ে দিয়ে সে আবার অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।