গত কয়েক বছর ধরে আমাদের বন্ধু-বান্ধবের ভেতর একটি রেওয়াজ চালু হয়েছে। সেটা হচ্ছে রোজার শেষের দিকে কিছু বন্ধুবান্ধব এক জায়গায় একত্রিত হয়ে একসাথে ইফতার করা। গত দুই তিন বছর আমরা শেষের দিকে যে কোন একটা রোজায় একসাথে ইফতার করেছি। এবারও আগে থেকেই আমি পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম বন্ধুরা সবাই এলাকায় ফিরলে তখন সবাই মিলে একদিন ইফতার করবো। এবার সবাই ছুটি একটু আগে পাওয়ায় বন্ধুবান্ধবদের ভিতর বেশিরভাগই ফরিদপুরে চলে এসেছে। বন্ধুবান্ধবের আসার খবর পাওয়ার পর থেকে আমি চিন্তা করতে লাগলাম দু-একদিনের ভেতরে সবাই মিলে এক জায়গায় ইফতার করতে হবে। তারপর দু চার জনের সাথে কথাবার্তা বলে ঠিক করলাম ২৮শে রমজান আমরা একসাথে ইফতার করব।
সে হিসাবে আরো কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবের সাথে যোগাযোগ করলাম। প্রস্তাবটি শুনে সবাই সানন্দে রাজি হয়ে গেল। তারপরে ঠিক হলো আমরা সবাই প্রথমে রাফ্সানের এলাকায় যাব। তারপর সেখান থেকে সবাই মিলে একসাথে হাজিগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেবো। হাজ হাজিগঞ্জ বাজারটি একদম পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। সেই বাজারের ঘাটে বিকালের দিকে বেশ কিছু বড় আকারের ট্রলার ভেড়ানো থাকে। আমরা সাধারণত সেই ট্রলারের ছাদে বসে ইফতার করি। যাই হোক সবাই মিলে বিকাল পাঁচটার ভেতরে রাফসানের এলাকায় মিলিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর ভেতর বন্ধু ফেরদৌস সাথে রাসেলকে নিয়ে চলে গিয়েছিল ওদের গ্রামের বাড়িতে। অবশ্য যাওয়ার আগে জানিয়েছিল ইফতারের আগেই ফিরবে। তখন ওদের সাথে কথা হয়েছিল যে ওরা সরাসরি রাফসানের এলাকায় আসবে।
এদিকে বিকালে যখন আমি সাথে আরো দুজন বন্ধুকে নিয়ে শহর থেকে রাফসানের এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। তখন জানতে পারলাম ফেরদৌস এবং রাসেল তখনও রাফসানের এলাকাতে ফিরেনি। তখন ফোনে ওদের সাথে কথা বলে ঠিক করলাম ওরা সরাসরি হাজীগঞ্জ চলে যাবে। আর আমরা বাকি কয়েকজন রাফসানের এলাকা থেকে হাজীগঞ্জের দিকে যাব। শেষ পর্যন্ত রাফসানের এলাকায় পৌঁছতে পৌঁছাতে আমাদের প্রায় সাড়ে পাঁচটা বেজে গিয়েছিল। যার ফলে আমি গিয়ে রাফসানকে বললাম তাড়াতাড়ি চল। হাতে খুব বেশি সময় নেই। কারণ এর আগে একবার আমরা দেরি করে রওনা দিয়েছিলাম। তখন খুব তাড়াহুড়ো করে সবকিছুর আয়োজন করতে হয়েছিল। যার ফলে বেশ সমস্যা হয়েছিল।
এই কারণে এবার আমি চাচ্ছিলাম হাতে কিছুটা সময় নিয়ে হাজিগঞ্জ পৌঁছতে। কারণ আমরা কোন কিছুই আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখিনি। আমরা ঠিক করেছি আমরা হাজীগঞ্জ বাজারে পৌঁছে সেখান থেকে ইফতার সামগ্রী কিনে তারপর ট্রলারের ছাদে গিয়ে বসবো। অবশ্য রওনা দেয়ার সময় খেয়াল করলাম রাফসান একটি প্যাকেটে কিছু ফল নিয়ে এসেছে। যাইহোক আমরা ধীরেসুস্থে হাজীগঞ্জের দিকে আগাতে লাগলাম। বিকাল বেলায় গ্রামের এদিকটা দিয়ে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেশ ভালই লাগে। আমরা দুই মোটরসাইকেলে চারজন ছিলাম। আমি ছিলাম রাফসানের সাথে মোটরসাইকেলে। অবশ্য আমি খুব একটা কথা বলতে পারছিলাম না। কারণ ঠান্ডায় রাখসানের গলা বসে গিয়েছে। সেজন্য ওর কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। যার ফলে ও আমার কথার উত্তর গুলো দু-এক কথার ভেতর দেয়ার চেষ্টা করছিল।
যাই হোক এভাবে আমরা ধীরে ধীরে হাজীগঞ্জের দিকে আগাচ্ছিলাম। এর ভেতরে হঠাৎ করে আমাদের পাশ দিয়ে দ্রুতগতিতে বেশ কিছু মোটরসাইকেল বেরিয়ে গেল। খেয়াল করে দেখি সেই মোটরসাইকেলে বসা ছেলেগুলোর হাতে প্যাকেট করা খাবার। আমি গুনে দেখলাম প্রায় ২০/২২ টা মত মোটরসাইকেল রয়েছে তাদের বহরে। তাদের হাতে বিভিন্ন খাবার সামগ্রী দেখে আমার মনে হতে লাগলো আমাদের আর তাদের গন্তব্য একই। শেষ পর্যন্ত হাজীগঞ্জ পৌঁছে গিয়ে দেখি আসলেই তাই। ঘাটে প্রায় চারটি ট্রলার ভেড়ানো ছিলো। তারাই তার ভিতরে তিনটি ট্রলার দখল করে নিয়েছিল। যাই হোক আমরা হাজীগঞ্জ বাজার পৌঁছে সেখান থেকে প্রথমে ঠান্ডা পানি স্যালাইন এবং পাউডার ড্রিঙ্ক কিনলাম। তারপর কিছু ভাজাপোড়া কিনলাম। সবকিছু কেনাকাটা শেষ হলে আমরা সবাই গিয়ে একটি ট্রলারের ছাদে বসলাম।
তারপর আমাদের ভেতর দুজন ইফতার প্রস্তুত করতে লাগলাম। সেই সাথে সাথে সবাই মিলে নানা বিষয় নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম। গল্প করতে করতে একসময় আজান শুনতে পেলাম। তারপর সকলে ইফতার করতে শুরু করলাম। প্রথমে আমি মনে করেছিলাম ইফতার যা কেনা হয়েছে সেগুলো আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে না। কিন্তু পরে খেতে গিয়ে বুঝতে পারলাম ইফতার যতটুকু কেনা হয়েছিল সেগুলো আমাদের জন্য যথেষ্টর থেকে বেশি হয়েছিল। তবে সবার কাছে সবচাইতে বেশি ভালো লেগেছিল ফ্রুট স্যালাইন আর পাউডার ড্রিংক দিয়ে তৈরি করা ড্রিংকটা। সারাদিন রোজা থাকার পর ঠান্ডা এই ড্রিংসটা খেয়ে সবাই বেশ মজা পেয়েছিল। যাইহোক আমরা গল্প করতে করতে ইফতার করতে লাগলাম। ইফতার করা শেষ হলে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আরো কিছুক্ষণ সেখানে বসে গল্প করব। কারণ নদীর পাড়ে খোলা হাওয়ায় ট্রলারের ছাদে বসে থাকতে সবারই বেশ ভালো লাগছিল। কারোরই সেখান থেকে যেতে ইচ্ছা করছিল না। তাই আমরা সেখানে বসে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়ার পর আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | হাজীগঞ্জ বাজার |

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |


Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness

OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
রমজান শেষের দিকে। এই সময় সবাই ঈদ করতে বাড়িতে এসেছে।আর আপনারা বন্ধুরা মিলে একসাথে ইফতার করলেন নদীর খোলা হাওয়ায়। খুব ভাল লাগলো পড়ে। আরো তিনটা ট্রলারেও লোকজন ইফতার করেছে।সত্যি কথা বলতে বন্ধুদের সাথে একসাথে ইফতার করার মজাই অন্য রকম। আপনি আপনার অনুভূতি গুলো খুব সুন্দর ভাবে শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
দেখেই বোঝা যাচ্ছে নদীর পাড়ে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করার মুহূর্তে খুবই সুন্দর একটি মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন। বিশেষ করে আপনার বন্ধু রাশনের এলাকায় গিয়ে নদীর পাড়ে এরকম মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন জেনে ভালো লাগলো। আসলে নদীর পারে ইফতার করার মাঝে কোনো রকম ভালোভাবে কাজ করে যেটা আমি জানি এবং বুঝি কারণ গতকালই এরকম সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করলাম। আপনার কাটানো সুন্দর মুহূর্তটা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাইয়া রাফসানের মত আমারও ঠান্ডা লেগে গলা বসে গেছে। আর গলা বসে গেলে কথা বলাটা সত্যিই অনেক কষ্টের হয়। যাহোক নদীর পাড়ে ট্রলারের ছাদে বসে বন্ধুদের সাথে ইফতার করার মজাটাই অন্যরকম। বন্ধুদের সাথে এরকম ইফতার করতে পারলে বেশ ভালই লাগে। ভাইয়া আপনার এই পোস্টটি পড়ে সত্যিই আমার অনেক ভালো লেগেছে। বন্ধুদের সাথে ইফতার করার দারুন একটি মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সব বন্ধুদেরকে নিয়ে একসাথে ইফতার করার মজাই আলাদা। এবার অবশ্য আমার কপালে এই সৌভাগ্যটা জোটে নি। ভীষণ মিস করেছি এ ব্যাপারটা। তবে ভাইয়া আপনাদের পুরো অভিযান টা দারুন লেগেছে। ট্রলারে করে পদ্মার পাড়ে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা এবং ইফতার ,, এর থেকে বড় তৃপ্তি এবং শান্তি আর কোথায় আছে! ! বন্ধুত্বগুলো এভাবে ভালো থাকুক সারা জীবন। শুভেচ্ছা রইল ভাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বন্ধুরা মিলে কোথাও আড্ডা দেওয়ার মজাটাই আলাদা।সবাই আপনার প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ২৮ রমজানের দিন একত্রিত হয়েছিলেন ইফতারি তে।হাজীগঞ্জে যাওয়ার সময় ২০/২২ টা মোটরসাইকেল ও একই গন্তব্যে গিয়েছিলেন।আপনার অনুমান সঠিক হয়েছিল।তারা চারটি টি ট্রলারের তিনটি দখল করেছিলেন।তারপর আপনারা ইফতার করলেন এবং আড্ডা দিলেন।এর মধ্যে আপনাদের খাবার যথেষ্ট থেকে বেশি হয়েছিল এবং ড্রিংকস টা সবার বেশি ভালো লেগেছিলো।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit