আজ আমি আমার বাংলা ব্লগ আয়োজিত কনটেস্ট-শেয়ার করো তোমার জীবনের গ্রীষ্মকালীন ফলের কোন মজার গল্প প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। এই প্রতিযোগিতার কনসেপ্ট আমার কাছে খুবই পছন্দ হয়েছে। কারণ আমাদের সবারই ছেলেবেলায় নানা রকম বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে গ্রীষ্মকালীন ফল নিয়ে। কমিউনিটি থেকে আয়োজিত এ কনটেস্ট এর ফলে কমিউনিটির আমরা সবাই নিজেদের জীবনের চমৎকার সব মজার ঘটনা এখানে তুলে ধরতে পারেন পারবো।
আমাদের বেশিরভাগ লোকেরই ছেলেবেলা কেটেছে গ্রামে। যদিও আমি খুব অল্প বয়সেই শহরে চলে এসেছিলাম। মানে যে বয়সে সাধারণত এই ধরনের অভিজ্ঞতার শুরু হয় তার আগেই আমি শহরে চলে এসেছিলাম। তবে শহরে চলে আসলেও তখন মফস্বল শহরের সাথে গ্রামের খুব বেশি পার্থক্য ছিলো না। এখন যেমন শহরে ইটের দালান কোঠা ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না। তখন এমনটা ছিল না। তখন আমাদের শহরে প্রচুর খোলা জায়গা, গাছপালা, পুকুর এগুলি ছিলো। যার ফলে আমরা শহরে থেকেও কিছুটা গ্রামের স্বাদ পেতাম। যদিও গ্রামে যখন ঘুরতে যেতাম সেসময়টার সাথে আর কোন কিছুরই তুলনা হয় না। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া একটি মজার ঘটনা শেয়ার করবো। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করি আমার গল্প।
৪/৫ বছর বয়সে আমি স্থায়ীভাবে শহরে চলে আসি। শহরে চলে আসার পরে প্রথমে আমি যে সমস্যায় পড়লাম সেটা হচ্ছে এখানে আমার কোন বন্ধু ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে অতি অল্প সময়ের ভিতর বেশ কিছু বন্ধু জুটে গেলো। বন্ধু জুটলেও একটা সমস্যা ছিলো। তারা কেউই প্রায় আমার সমবয়সী ছিল না। সবাই আমার থেকে দু-এক বছরের ছোট ছিলো। যাই হোক যেহেতু সমবয়সী কাউকে পাইনি তাই তাদেরকেই আমার বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে হয়েছিলো।
আমার বাসার আশেপাশে যে সমস্ত ছেলেপেলে ছিল তারা ছিলো হয় আমার থেকে বয়সে ছোট না হয় আমার থেকে বয়সে বড়। আমি এই দুই গ্রুপের সাথেই মেশা শুরু করলাম। আমি এলাকার তিনটি বড় ভাইয়ের সাথে মিশতাম। তারা আমার থেকে বয়সে দু-এক বছরের বড়। আমি কখনো তাদের সাথে খেলতাম আবার কখনো ছোটদের সাথে খেলতাম। আবার কখনও আমরা দুই গ্রুপ মিলে একসাথে খেলাধুলা করতাম।
মফস্বল শহর হওয়ার কারণে আমাদের বাসার আশেপাশে বেশ কিছু ফলের গাছ ছিলো। তবে এর ভিতরে একটি ফলের গাছের প্রতি আমাদের সকলের একটি দুর্বলতা ছিলো। সেই ফলের গাছ ছিল একটি জামরুল গাছ। এই গাছের জামরুল গুলি আকারে অনেক বড় হতো। খেতেও বেশ মজার ছিলো। আর গাছে ধরতও প্রচুর জামরুল। সমস্যা হচ্ছে এই গাছটির যে মালিক সে কিছুটা বদরাগী ধরনের মানুষ ছিলো। যার ফলে ছেলেপেলের দল কখনো জামরুল গাছে উঠে জামরুল খেতে গেলে সে রাগারাগি করতো। মূলত সে জামরুল খাওয়ার জন্য রাগ করত না। রাগের কারণ ছিল আমাদের দলের হৈচৈ করা।
আমরা সব সময় খোঁজ খবর রাখতাম সে বাড়ি থেকে কখন বাইরে যায়। যদি কখনো বুঝতে পারতাম সে বাড়িতে নেই তখনই আমরা জামরুল গাছে হামলা চালাতাম। একদিন আমরা এলাকার ছেলেপেলে মিলে মাঠে খেলা করছিলাম। খেলাধুলা শেষে সবাই বসে চিন্তা করছিলাম কি করা যায়। এক বড় ভাই বলল চল আমরা সবাই গিয়ে জামরুল খাই। আমরা বললাম কিন্তু আঙ্কেল বাসায় থাকলে তো আমাদের জামরুল খাওয়া হবে না। আমাদের বড় ভাই তখন বলল এই সময়ে উনি বাসায় থাকে না। এখনই জামরুল খাওয়ার ভালো সময়। তার কথামত আমরা সবাই তার সঙ্গে রওনা দিলাম জামরুল গাছের দিকে।
অল্প সময়ের ভেতরে আমরা জামরুল গাছের নিচে পৌঁছে গেলাম। এর ভেতর আমাদের মধ্যে যারা গাছে উঠতে পারত তারা গাছে উঠে গিয়েছে জামরুল পারতে। আমি যেহেতু গাছে উঠতে পারি না তাই নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর আমাদের সেই বড় ভাই সেও গাছে উঠেছে জামরুল পড়ার জন্য। যারা জামরুল পারার জন্য গাছে উঠে ছিল তারা দেখি গাছ থেকে বড় বড় জামরুল ছিড়ে টপাটপ মুখে দিচ্ছে। এর ভেতর আমাদের সেই বড় ভাই গাছের ডালে ঝাঁকি দিলো। তার ফলে বেশকিছু জামরুল নিচে পড়লো। আমরা সেই জামরুল কুড়াতে ব্যস্ত ছিলাম।
এর ভিতর দেখি সেই বড় ভাই উপর থেকে আমাদের সকলের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছে। সে বলছে পোলাপান আজ থেকে যখন তোদের ইচ্ছা হবে এই গাছের জামরুল খাবে। আর কেউ নিষেধ করবে না। আজ থেকে এই জামরুল গাছের মালিক আমি। আমি তোদেরকে অনুমতি দিয়ে দিলাম। আমরা তার কথা শুনছিলাম আর হাসছিলাম। এর ভেতর আমরা কেউ খেয়াল করিনি যে সেই বদরাগী আঙ্কেল কখন সেখানে এসে দাঁড়িয়েছে। সে আমাদের বড় ভাইয়ের কথা শুনে হুংকার দিয়ে উঠলো বদমাইশ তোর কত বড় সাহস? তুই আমার গাছকে নিজের বলে দাবি করিস? আবার সবাইকে শিখিয়েছিস গাছ থেকে জামরুল চুরি করতে। আজ তোর একদিন কি আমার একদিন। আমরা যারা নিচেছিলাম তারা তো সবাই ঝেড়ে দিলাম দৌড়। কিন্তু সেই বড় ভাই পরলো বিপদে। সে গাছ থেকে নামতেও পারছে না কিছু করতে পারছে না। পরে শুনেছিলাম সেই বড় ভাই গাছ থেকে নেমে সেই আঙ্কেলকে সরি বলে তারপর বাড়ি ফিরে ছিলো। এই ঘটনা এখনো মনে পড়লে হেসে ওঠি। শৈশবের দিনগুলি কি চমৎকার ছিলো। সেই চমৎকার দিনগুলি আর কখনো ফিরে পাবোনা জানি। তাইতো শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করে মাঝে মাঝে হেসে উঠি।
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
ভাই আপনাদের জামরুল চুরি করার গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লাগলো। বিশেষ করে আপনার বড় ভাই যখন গাছে উঠে ভাষণ দিয়েছিল যে এই জামরুল গাছ আমার। তোমাদের যখন ইচ্ছা খেয়ে যাবে, কিন্তু পেছনে আসল মালিক ছিল সত্যি বিষয়টি অনেক ভয় ছিল। আপনারা হয়তো তখন অনেক ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু বেচারা বড় ভাই বিপদে পড়েছিল। খুবই ভালো লাগলো এরকম ঘটনা আমাদের সাথে ঘটেছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঘটনাটি মনে পড়লে এখনও হেসে উঠি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাইয়া জামরুল চুরি করে খাওয়ার গল্প খুবই ভালো লাগলো। বিশেষ করে আপনার বড় ভাইয়ের সেই কথাটি আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে। আসলে আমরা বাজার থেকে যতই ফল কিনে খাইনা কেন চুরি করে ফল খাওয়ার মজাই আলাদা। আপনি অনেক সুন্দর করে আপনার সেই গল্প আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আপনার লেখা গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লেগেছে ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে দারুন ভাবে এই গল্পটি উপস্থাপন করার জন্য। সেই সাথে আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। 💖💖💖
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একটা জিনিস বুঝতে পারলাম না। আর তা হচ্ছে ফল খাবার প্রত্যেকটি মজার ঘটনার সঙ্গে চুরি জড়িত।যাইহোক ঘটনাটি আসলেই বেশ মজার ছিল। বড় ভাই ভাষণ দিতে গিয়ে ধরা খেয়েছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আর এই ধরনের চুরি ছোটবেলায় আমরা সবাই কোন না কোন ভাবে করেছি। তখন এই চুরি করার মূল উদ্দেশ্য ছিল মজা পাওয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হাহা সেই বড় ভাইটির ভাষন সেই লেগেছে আমার কাছে। বেচারা ভাষন দিয়েও ফেঁসে গেলো। সুন্দর লিখেছেন ভাই। ভালো লাগলো অনেক। শুভেচ্ছা রইলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধরা পড়ার পর বড় ভাইয়ের চেহারা হয়েছিল দেখার মত। বেচারা ভীষণ ভয় পেয়েছিল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার জামরুল চুরি করে খাওয়ার গল্পটি পড়ে খুব মজা লাগলো। আসলে ভাইয়া আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই ছোটবেলায় অনেক মজার গল্প থাকে। যেগুলো আমরা প্রকাশ করার সুযোগ পাই না কিংবা ইচ্ছা থাকলেও বলা হয়ে ওঠেনা। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমাদের অনেকেরই জীবনে ঘটে যাওয়া এসব মজার গল্প গুলো পড়তে পারছি। আপনার ছোট বেলার জামরুল চুরি করে খাওয়ার গল্পটি আমার খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ গল্পটি শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে আমাদের সকলের ছেলেবেলার সাথেই এই ধরনের ঘটনা কমবেশি জড়িত আছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ছোটবেলায় সবাই দেখি চোর ছিলো😝। হাহাহা। আসলে চুরি করে কিছু খাওয়ার মজাই আলাদা।
দারুণ লাগলো আপনার গল্পটি পড়ে। শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ছোটবেলায় মজা করার জন্য এরকম চুরি সবাই কমবেশি করে থাকে। আপনিও মনে করে দেখুন কখন কিভাবে এরকম চুরি করেছেন। হা হা হা।ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
শৈশবে শহরে চলে আসা এবং বন্ধু না পাওয়ার যে ঘটনাটি বলেছেন সেটা আমার ক্ষেত্রেও কিছুটা হয়েছিল। জামরুল চুরি করার জন্য বড় ভাইয়ের উৎসাহ প্রদান এবং বদমেজাজি আঙ্কেলের ঘটনাটি খুবই ভালো লেগেছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit