সাজেক ভ্রমণে আমার ভাললাগা মন্দ লাগা এবং খরচ সমূহ (প্রথম পর্ব)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।

in hive-129948 •  3 years ago  (edited)

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


গত তিন পর্বে আপনাদের সাথে আমি সাজেক ভ্রমণের বেশ কিছু ছবি এবং বর্ণনা শেয়ার করেছি যদিও সাজেকের সৌন্দর্যের বর্ণনা মাত্র একটি বা দুটি পর্বে করা সম্ভব নয় তার পরেও আমি অনেক ব্যস্ততার মাঝেও চেষ্টা করেছি আপনাদের মাঝে সাজেক ভ্রমণের কিছু মুহূর্ত তুলে ধরার আজ আমি আপনাদের সাথে সাজেক ভ্রমণের ভালোলাগা মন্দলাগা এবং খুঁটিনাটি বিষয় সমূহ শেয়ার করবো। আমার এই পোস্টটি যারা পড়বেন। তারা যদি সাজেক ঘুরতে যেতে চান। তাহলে এই পোষ্টটি থেকে অনেক কিছু জানতে পারবেন। এই পোস্টটিকে আপনারা সাজেক ভ্রমণের ট্রাভেল গাইড হিসেবে দেখতে পারেন। এই পোস্টে আমি সাজেক ভ্রমণের যাবতীয় সমস্ত বিষয় গুলো খরচসহ তুলে ধরবো। চলুন শুরু করা যাক।

IMG_20211223_064708.jpg

আমার সাজেক ভ্রমণের যাত্রা শুরু হল ঢাকা থেকে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে বাস এর মাধ্যমে খাগড়াছড়ি পৌঁছতে পারেন। কারণ সাজেক যেতে হলে আপনাকে প্রথমে খাগড়াছড়ি যেতে হবে। পরে সেখান থেকে স্থানীয়দের ভাষায় চাঁদের গাড়ি(জিপ গাড়ি) বা থ্রি হুইলারে করে সাজেক যেতে হবে। তবে আপনি ইচ্ছা করলেই গাড়ি ভাড়া করে সাজেক যেতে পারবেন না। কারণ খাগড়াছড়ি শহর থেকে গাড়ি প্রথমে আপনাকে নিয়ে যাবে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্পে। এখান থেকে আর্মি এসকর্টের সাহায্যে আপনি সাজেক পৌঁছাতে পারবেন। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক পৌঁছনোর এই রাস্তাটা খুবই রোমাঞ্চকর। বিশেষ করে আমরা যারা সমতলের মানুষ আছি। তাদের জন্য এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। এই যাত্রাটা সাজেক ভ্রমণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যেতে আপনার খরচ পড়বে আপনি কতজন যাবেন এবং কী ধরনের গাড়ি নেবেন তার উপরে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেকের ভাড়া ৭৫০০ থেকে শুরু করে ১৩৫০০ টাকা পর্যন্ত বা তারও বেশি হতে পারে। এটা নির্ভর করে আপনি সাজেকে ক'রাত থাকবেন তার ওপরে। আপনি যদি সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসেন তাহলে আপনাকে জিপ প্রতি দিতে হবে ৭৫০০ টাকা। যদি এক রাত থাকেন তাহলে দিতে হবে ১০৫০০ টাকা। আর যদি দু'রাত থাকেন তাহলে ১১৫০০ থেকে ১৩৫০০ টাকা আপনার খরচ হবে। গাড়িগুলোতে আপনি ১০ থেকে ১৫ জন পর্যন্ত যেতে পারবেন। জীপ ছাড়াও থ্রি হুইলার এবং মোটরসাইকেলেও সাজেক যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। যদিও সেগুলো আমার কাছে খুব একটা নিরাপদ মনে হয়নি।

IMG_20211222_115651.jpg

আপনি যদি আগে থেকে রিসোর্ট বুকিং না করে থাকেন। তাহলে সাজেক নেমে আপনার প্রথম কাজ হবে ভালো ভিউ পাওয়া যায় এমন রুম খুজে বের করা। কারণ আপনার সাজেক ভ্রমণে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। যদি আপনার থাকার জায়গাটা ভাল হয় এবং সেখান থেকে সাজেকের পাহাড়গুলোর সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। তাহলে সেটা আপনার সাজেক ভ্রমণকে আরো অনেক বেশি উপভোগ্য করে তুলবে।

IMG_20211223_090933.jpg

অবশ্য যদি আপনি কোন ট্যুর অপারেটর এর মাধ্যমে সাজেক ঘুরতে যান। তাহলে আপনি এই ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকবেন। তারাই আপনার খাওয়া থাকা যাতায়াতের সমস্ত ব্যবস্থা করবে। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চেষ্টা করবেন ভালো কোন ট্যুর অপারেটর খুঁজে বের করার।তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে ট্যুর অপারেটর এর সাথে ঘুরতে যাওয়া পছন্দ করি না। কারণ তাদের মাধ্যমে ঘুরতে গেলে তাদের বেঁধে দেয়া সময়ে আপনাকে সবকিছু করতে হবে। আপনি আপনার মন মত ঘুরতে পারবেন না।

IMG_20211223_091307.jpg

আপনি যদি ট্যুর অপারেটর এর মাধ্যমে ঘুরতে না যান। তাহলে আপনি চেষ্টা করবেন সরকারি ছুটির দিন গুলো এড়িয়ে যাওয়ার। তাহলে আপনি নানা রকম ঝামেলা থেকে বেঁচে যাবেন। কারণ সরকারি লম্বা ছুটি গুলিতে পর্যটন স্পটে প্রচন্ড ভিড় হয়। এই ভিড়ের কারণে সবকিছুর দাম স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দেয়। যদি আপনি রবিবার থেকে বুধবারের ভেতরে সাজেক ঘুরতে যান। তাহলে সেটা হবে সবচাইতে ভালো। তখন আর আপনাকে আগে থেকেই রিসোর্ট বুকিং করে যাওয়ার দরকার নেই। আপনি সাজেকে পৌঁছে ধীরেসুস্থে নিজে সুন্দর একটি রিসোর্ট খুঁজে নিতে পারবেন।

IMG_20211223_081815.jpg

সাজেকে অবস্থানভেদে এবং সুযোগ-সুবিধা অনুসারে রিসোর্ট এর ভাড়া হয়ে থাকে। তবে সরকারি টানা ছুটিতে তাদের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। সাজেকে ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রুমের ভাড়া হয়ে থাকে। আর্মিদের পরিচালিত যে রিসোর্টটি আছে সেটার ভাড়া ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা প্রতিদিন।

IMG_20211223_073926.jpg

সাজেকে শতাধিক রিসোর্ট আছে। সেই রিসোর্টে রুম ভাড়া সাধারণত পনেরশো টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকার ভিতরে। সেখানে কাপল রুমে দুজন এবং ডাবল বেডে চারজন থাকতে পারবেন। নিজে খুঁজে নিলে তিন থেকে চার হাজার টাকার ভিতরে সুন্দর একটি রুম পেয়ে যাবেন। তবে প্রথমেই যে কথাটি বলেছি সেটা মাথায় রাখার চেষ্টা করবেন। এমন একটি রুম নেয়ার চেষ্টা করবেন যেখান থেকে সাজেকের পাহাড় গুলো পরিষ্কার দেখা যায়। সাজেকের বেশিরভাগ রিসোর্টে এমন রুম আছে যেখানে রুমের সাথে সুন্দর বারান্দা আছে। সেই বারান্দায় বসে আপনি সাজেকের পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।

IMG_20211222_143226.jpg

আর যদি আপনার ভাগ্য ভাল হয় তাহলে দেখবেন মেঘ এসে আপনার জানালা দিয়ে ঢুকে পড়েছে। মেঘের ছোঁয়ায় আপনার ঘুম ভেঙে যাবে। তখন এক অপার্থিব দৃশ্যের অবতারণা হয়। তবে এই দৃশ্য দেখতে হলে আপনাকে অন্য সময়ে সাজেক যেতে হবে কারণ এখন সব ছবিতে যে সাদা অংশ গুলো দেখা যাচ্ছে। সেগুলো মেঘ নয় কুয়াশা।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা ২আই
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানলিংক

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif

🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok


Polish_20211012_184119287.jpg

আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

চান্দের গাড়ির ভাড়ার রেট কিছুটা বেড়ে গেছে আগের চেয়ে। অনেক ভাল লিখেছেন ভাই। ভাগ্য ভাল হলে মেঘ এসে জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকে যাবে। মেঘ ছুয়ে দেয়ার সৌভাগ্য হয়ে যায় সময়মত সাজেক গেলে। ধন্যবাদ

ধন্যবাদ ভাই।

ছবিতে কেন যেন সাজেকের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা যায় না। আমি প্রায় কয়েক শত ছবি তুলেছি কিন্তু কোনো ছবিতেই চোখে দেখা সৌন্দর্য তুলে ধরতে পারিনি। তোমার ছবিগুলো আমার গুলোর চাইতে অনেকটাই ভালো হয়েছে।

আসলেই ঠিক বলেছ। ওইরকম অসম্ভব সৌন্দর্য ক্যামেরায় ফুটিয়ে তোলা কঠিন।