গল্প - মতির ঢাকা ভ্রমণ - দ্বিতীয় পর্ব।

in hive-129948 •  last month 

আসসালামুআলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন। আজ আপনাদের সাথে একটি গল্প শেয়ার করবো। গল্পের মূল চরিত্রগুলো বাস্তবিক। যদিও নামগুলো আমি ইচ্ছামত দিয়েছি। তবে লেখা বড় করার স্বার্থে কিছুটা কল্পনার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। লেখাটি বড় হয়ে গিয়েছে বিধায় পর্ব আকারে প্রকাশ করত হলো। প্রথম পর্বে লিখেছিলাম মতি কে, তার ঢাকা ভ্রমণের হেতু এবং সদরঘাট পর্যন্ত আসা নিয়ে। এখন দিলাম দ্বিতীয় পর্ব।


pexels-jubayer-wh-22811730.jpg

Photo by Jubayer Hossain

কিছু দূর সামনে গিয়ে মতি দেখল অনেকগুলো রাস্তা একসাথে মিশেছে। মতি অবাক হয়ে যায়। সে এর আগে তিন রাস্তার মোড় দেখেছে, চৌরাস্তা দেখেছে কিন্তু এতগুলো রাস্তা একসাথে এসে মিশেছে এটা সে কখনো দেখেনি। রাজ্যের মানুষ এখানে। ভিড় ঠেলে এগুনো দায়। রাস্তার পাশে হকাররা দোকান দিয়ে বসেছে। কত বিচিত্র রকমের জিনিস যে মানুষ বিক্রি করছে! দেখে সে অবাক হয়ে যায়। গাড়ির শব্দে কানে তালা লাগার দশা। ক্রমাগত প্যাঁ-পোঁ শব্দ চলছেই। থামার কোন নাম-গন্ধ নেই।

সে গ্রামের মানুষ। গ্রামে এত শব্দ নেই। বসন্ত কালে কোকিল ডাকে। অন্য সময় ঘুঘু ডাকে, শালিক ডাকে, দোয়েল ডাকে। রাত হলে ব্যাঙ ডাকে, শেয়াল ডাকে। সকালবেলা হাঁস ডাকে, মোরগ ডাকে। কিন্তু গাড়ির এমন বিকট শব্দ সে কখনো এর আগে শুনেনি। এক সময় তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত বাস পেয়ে যায়। মফিজের ইচ্ছা ছিলো যেহেতু তাদের হাতে সময় আছে তাই তারা বাসে করে যাবে। এতে করে মতিরও বাস ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে। তারা বাসে উঠে বসে, একদম সরাসরি এয়ারপোর্টের সামনে দিয়ে যে বাস যাবে সেই বাসে।

মফিজ আগেও ঢাকায় এসেছিল। তাই সে বুদ্ধি করে বাসের সামনের দিকে দুটি সিটে বসে মতিকে নিয়ে। মতি ভাবে এখনই বুঝি বাস ছেড়ে দেবে। কিন্তু সময় কেটে যায় বাস ছাড়ার কোন নাম নেই। একপর্যায়ে যাত্রীরা বিরক্ত হয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। কিন্তু তাতেও বাস ছাড়ার কোন চিহ্ন দেখা যায়নি। বাসে যখন পা ফেলার জায়গা নেই, তখনই বাস ছাড়ে। ইতিমধ্যে গরমে সিদ্ধ হয়ে গেছে মতি। সে প্রাকৃতিক বাতাসে বড় হওয়া মানুষ। গ্রামে কখনও বাতাসের কমতি থাকে না। কিন্তু এখানে বাতাসের কোন চিহ্ন পর্যন্ত নেই। গাছের পাতা নড়ে কিনা তা যে পরীক্ষা করবে, এখানে গাছই তো নেই!

কিছুক্ষণ চলার পর বাস থেমে যায়। মফিজ জানায় বাস জ্যামে পড়েছে। জ্যাম জিনিসটার সাথে মতির পরিচয় নেই। অনেকক্ষণ বাস দাড়িয়ে থাকার পর আবার চলতে শুরু করে। আবার থামে, আবার চলতে শুরু করে। মতি অবাক হয়, রাস্তায় চারদিকে মানুষ আর মানুষ! উঁচু উঁচু দালানকোঠা! এত উঁচু, এত লম্বা দালান সে আগে কখনও দেখেনি। মনে হচ্ছে যেন এগুলা আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে। মানুষে গিজগিজ করছে পুরো এলাকাটা। কোথাও কোথাও হকাররা দাঁড়িয়ে বেচা-বিক্রি করছে। কোথাও আবার ভেতরে সুন্দর সুন্দর দোকান দেখা যাচ্ছে। তাদের বাস টুকটুক করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। বাসেও যেন পুরো এক গ্রামের মানুষ উঠে বসেছে। কোথাও মানুষ নামে, কোথাও আবার আরো বেশি ওঠে। কোথাও আবার নামে, আবার ওঠে, এভাবেই তাদের বাস সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।

এরমধ্যে ক্ষুধায় পেটে ইঁদুর দৌড়ানোর অবস্থা মতির। সেই সকালে ঘর থেকে খেয়ে বেরিয়েছে। লঞ্চে চায়ের দাম দেখে সে আর কিছু খেতে চায়নি। সদরঘাটে নেমে তাদের মনেই ছিল না খাওয়ার কথা। ক্ষুধায় ক্লান্ত হয়ে একপর্যায়ে ঘুমিয়ে যায় মতি। মফিজের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে তার। মফিজ জানায় কিছুক্ষণ পরে এয়ারপোর্ট চলে আসবে এবং তারা সেখানে নেমে যাবে। মতি চারদিকে তাকিয়ে বিমোহিত হয়ে যায়। এই জায়গাটা সুন্দর! রাস্তার পাশের দালানকোঠা গুলো খুব সুন্দর দেখা যাচ্ছে। সে দেখে রাস্তার একপাশ দিয়ে ট্রেন যাচ্ছে। এর আগে সে ট্রেন দেখেনি। তাদের ওই অঞ্চলে ট্রেন নেই। ট্রেন এগিয়ে যাচ্ছে ট্রেনের গতিতে।

বাস থেকে নামার সময় এক বিভ্রাট ঘটে। মতি ভেবেছিল সবাই জায়গা ফাঁকা করে তাদেরকে নামতে দেবে। কিন্তু এখানে তো এরকম ঘটনা ঘটে না। সে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বাস ছেড়ে দেয়। মফিজের চিল্লাফাল্লায় কিছুদূর সামনে আবার বাস থামে এবং তারা নেমে যায়। মফিজেরও ততক্ষণে মনে হয় ক্ষুধা পেয়ে গিয়েছে। তারা দুজনে হোটেলে যায় খাওয়ার জন্য।


2gsjgna1uruv8X2R8t7XDv5HGXyHWCCu4rKmbB5pmEzjYSfQKFP87GjNCaLdCLKkYFWdxRmYuKurkfDpnYWoUUypXiwgziwKKNP24nNC65i32Am8Fp.png


PUSSFi_NFT22.png

আমার সম্পর্কে
আমি মুহাম্মদ সাব্বির আকিব। জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি। জেলাঃ চাঁদপুর, থানাঃ ফরিদগঞ্জ। থাকি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানাধীন দক্ষিণ গাজীরচট নামক স্থানে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রসায়নে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে একটি ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট হিসাবে কর্মরত রয়েছি। বিবাহিত এবং আল্লাহ একটি পুত্র সন্তানের জনক করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!