আমার সোনালী শৈশব

in hive-129948 •  5 days ago 

আসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার শৈশবকাল নিয়ে কথা বলবো।


pexels-shuvrasankha-2616865.jpg

Photo by Shuvrasankha Paul


আমার শৈশব এবং বাল্যকাল কেটেছে গ্রামে। গ্রাম বলতে একদম খাঁটি গ্রাম বলতে যা বুঝায় এমন একটি গ্রামে আমার শৈশব এবং বাল্যকাল কেটেছে। এটা সে সময় যখন ইলেকট্রিসিটি বলতে কিছু একটা আছে তা আমরা কেবল শুনেছি। যারা ঢাকা শহর থেকে গ্রামে যেত তাদের মুখে শুনেছি ইলেকট্রিসিটি বলতে কিছু একটা আছে। যার মাধ্যমে আলো জ্বলে, কিছু একটা আছে যা ঘুরে এবং বাতাস দেয়। টিউবলাইট কিংবা এনার্জি লাইট অথবা ফ্যান; এসব সম্পর্কে আমাদের কোন ধারনা ছিল না। আমাদের জীবন আটকে ছিল হাতপাখায়, হ্যারিকেনে এবং কুপিতে।

যার কারণে মোস্তফা গেমস কিংবা অন্য অনেক কিছু যা আমার অন্য এলাকার সমবয়সীরা উপভোগ করেছে তা আমি উপভোগ করতে পারেনি। অবশ্যই এতে আমার কোন আফসোস নেই। কারণ আমার বাল্যকাল কেটেছে আরো সুন্দর। আমরা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতাম। শীতকালে জলপাই গাছের নিচে যেতাম। রাতের বেলা পাঁকা পাঁকা জলপাইগুলা যা গাছ থেকে পড়েছে সেগুলো খুজতাম। বর্ষাকালে তালতলায় বসে পাহারা দিতাম কখন একটি পাকা তাল পড়লো। সবার আগে যে তাল খুঁজে পেত পাঁকা তালটি তার হয়ে যেত।

আমাদের মধ্যে যারা গাছে উঠতে পারতো আমরা তাদেরকে এটা সেটা খাওয়াতাম যাতে করে বর্ষার শুরুতে যখন কদম গাছে ফুল ফোটে আমাদেরকেও যেন সেখান থেকে কিছু ফুল পেড়ে দেয়। আমাদের শৈশব কেটেছে মার্বেল খেলে, ঘুড়ি উড়িয়ে। ঘন্টার পর ঘন্টা পুকুরে সাঁতার কেটে, ডুবিয়ে। আমাদের সময় কেটেছে নদীতে শামুক কুঁড়িয়ে, শাপলা ফুল তুলে। আমাদের সময় কেটেছে ধান ক্ষেতে, যখন ধানের পাতা সোনালী রং ধারণ করত। আমাদের সময় কেটেছে যখন শীতে স্কিমের পানি আসতো তখন ডুবুডুবু পানি থেকে নতুন আলু কুঁড়িয়ে।

আমার শৈশব কেটেছে উদ্যম মুক্ত বাতাসে। আমি ঘুড়ি উড়িয়েছি, বালি দিয়ে দালান কোঠা বানিয়েছি। কলা গাছের বাকল দিয়ে বানিয়েছি খেলনার জাহাজ। নারিকেলের পাতা দিয়ে বানিয়েছি বাঁশি, হাত ঘড়ি, পাখা। আমাদের সময় মোবাইল ছিল না। যোগাযোগের উপায় ছিল চিঠি। পোস্টম্যান বাড়ির উঠানে এসে যার যার চিঠি এসেছিল বিদেশ থেকে তাদের নাম ধরে ডাকতো। আমরা অপেক্ষা করতাম কখন আমার মায়ের নাম ডাকবে। উঠোনে আসতো ফেরিওয়ালা। হরেক রকম খেলনা নিয়ে, খাবার নিয়ে। আমরা সে খেলনা কেনার বায়না ধরতাম। অকেজো জিনিসপত্র বিক্রি করে কটকটি কিনে খেতাম।

এমন শৈশবের সাথে কি অন্য কোন শৈশবের তুলনা হয়? আমার মনে হয় না এর চেয়ে ভালো শৈশবকাল কেউ কাটাতে পারে। তাই আমি অনেক কিছুই জানিনা, পারিনা, কিন্তু তাতে আমার দুঃখ নেই, আফসোস নেই, হতাশা নেই। কারণ আমি যা পেয়েছি হয়তো তারা তা পায়নি। এই কারণেই তারা যেসব পেয়েছে তা আমি পাইনি। এতে তো দুঃখ করার কিছু নেই। বরং আমি গর্বিত আমার শৈশব নিয়ে।


PUSS_gif.gif

gif.gif

নিজের সম্পর্কে
আমি মুহাম্মদ সাব্বির আকিব। জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি। জেলাঃ চাঁদপুর, থানাঃ ফরিদগঞ্জ। থাকি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানাধীন দক্ষিণ গাজীরচট নামক স্থানে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রসায়নে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে একটি ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট হিসাবে কর্মরত রয়েছি। বিবাহিত এবং আল্লাহ একটি পুত্র সন্তানের জনক করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  


Screenshot_20241218-012234.png

Tweet from own a/c


Screenshot_20241218-012430.png

CoinMarketCap Post


Screenshot_20241218-012522.png

Screenshot_20241218-012456.png

DEX + Others Vote Screenshot

সত্যিই এসব সোনার দিন। আমার শৈশবে কিন্তু ইলেকট্রিক ছিল। তবে আপনি যা উপভোগ করেছিলেন সেগুলোও ছিল। অনেকটা না হলেও বেশ কিছুটাই ছিল। আপনার লেখাটা পড়তে পড়তে আমি আমার শৈশবে ফিরে যাচ্ছিলাম। সত্যি বলতে কি এখন বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে ঠিক কথাই মোবাইলের ফলে আমরা খুব সহজেই সবার সাথে যোগাযোগ করে উঠতে পারছি। কিন্তু অনেক প্রাকৃতিক জিনিস হারিয়ে গেছে। সরলতা হারিয়ে গেছে মনের সহজ আনন্দগুলো হারিয়ে গেছে।

এখনকার কিশোরদের দেখলে আমার বেশ আফসোস হয়। সময় আমরা পার করেছি আর কি সময় তারা পার করছে! যাইহোক, খুবই সুন্দর মন্তব্য করেছেন, দিদি। ধন্যবাদ আপনাকে।

আমার ছোটবেলা টাও গ্রামে কেটেছে। এইজন্যই আপনার লেখা পোস্ট টা আমি যেন পুরোপুরি অনূভব করতে পারলাম। আমার ছোটবেলা টাও এভাবেই কেটেছে ভাই। বাদল দিনের প্রথম কদম ফুলের সেই অপরুপ দৃশ্য সেই সুবাস এখনও মিস করি। চমৎকার লিখেছেন আপনি।

ধন্যবাদ ভাই। আপনার মন্তব্য পড়ে বেশ ভালো লাগলো।

এমন শৈশবের স্মৃতিচারণ দেখলে আমারও শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়। আপনার পোস্ট পড়ে ঠিক তাই হচ্ছে ভাই। কত সুন্দর করে আপনি শৈশবের স্মৃতিচারণ গুলো করলেন। আসলে আমাদের শৈশবে তো কম্পিউটার আর মোবাইল ছিল না। তাই সেই শৈশব গুলো অনেক অন্যরকম ছিল। আজকের শিশুদের কাছে শৈশব অন্য রকমের। সেখানে শুধুই একটি ডিজিটাল পৃথিবী।

খুব চমৎকার মন্তব্য করেছেন দাদা। ধন্যবাদ আপনাকে। আসলেই, আমাদের শৈশব বেশ অন্যরকম ছিল।