"আমার জীবনে প্রথম পথচারী মানুষের সাথে কিছু আনন্দের মুহূর্ত"

in hive-129948 •  last year 

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি,আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-nachelle-nocom-2467906.jpg
সোর্স


অনেকদিন আগের কথা আমার এখনো মনে পড়ে সেই পথচারী সেই ব্যক্তির কথা। আমি সবসময় চেষ্টা করি যারা পথে পথে মানুষের কাছে হাত পেতে কিছু খাবার খায় তাদের জীবন যাপনে জন্য। যারা ডাস্টবিনের ময়লা খাবার খেয়ে জীবনের বাকিটা সময় পার করে।আমি তাদেরকে সাহায্য করতে খুবই পছন্দ করি এটা আজ থেকে নয় আমার ছোটবেলা থেকেই তাদের প্রতি মায়াটা সব সময় কাজ করতো। এখনো পর্যন্ত এসব মানুষের সাথে আমার দেখা হলে আমি তাদেরকে টাকা না দিয়ে তাদেরকে ভালো খাবার খাইয়ে থাকি। কারণ টাকা দেওয়ার থেকে যদি আপনি তাদেরকে একটু খাবার কিনে খাওয়ান দেখবেন তাদের সেই হাসিটা আপনার মনটাকে জুড়িয়ে দেবে।


একদিন হঠাৎ আমার ব্যক্তিগত কাজের জন্য আমি আমার পুরাতন স্কুলে গিয়েছিলাম। আমার কাছে তেমন একটা টাকাও ছিল না তাই বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে আমি স্কুলে গিয়েছিলাম। স্কুলে যাওয়ার পর আমার ক্লাস শিক্ষকের সাথে কিছু কথা বলে আবার স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়লাম। স্কুল থেকে বেরিয়ে বাস কাউন্টারে আসতে অনেকটা সময় লাগে। তাই আমি একটি ব্যাটারি চালিত গাড়িতে উঠে পড়লাম বাস কাউন্টারে আসার জন্য। ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে আমি গাড়ি থেকে নেমে ভাবলাম কিছু খেয়ে নেওয়া যাক। কারণ আমি সকালে বাড়ি থেকে কিছু খেয়ে আসি নাই ।দুপুর গড়িয়ে গিয়েছিল এই কারণে আমার খোদার মাত্রাটাও একটু বেড়ে গিয়েছিল। তাই ভাবলাম কিছু একটা খেতেই হবে তা না হলে বাড়িতে আমি যেতেই পারবোনা। রাস্তার পাশে একটি চায়ের দোকান দেখতে পেলাম সেখানে যে চায়ের দোকানদার দাদাকে বললাম আমাকে একটি চা দিতে এবং সাথে একটি কলা, বিস্কিট আর রুটি দিতে। একটু পরে দোকানদার সেই দাদা আমাকে কলা, রুটি, দিল আর বলল এইগুলা খেতে লাগেন খাওয়ার শেষ হলে আমি আপনাকে চা দিচ্ছি আমিও বললাম ঠিক আছে।


খেতে খেতে হঠাৎ সামনেই দেখতে পেলাম একটি ব্যক্তি একজন বয়স্ক মহিলাকে ধমক দিয়ে কথা বলছে। আমার বিষয়টি খুবই খারাপ লাগছে কিন্তু আমি দেখছিলাম যে কেন তাকে ধমক দিয়ে কথা বলছে। আমি আমার খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমি সেই বয়স্ক ব্যক্তিটির কাছে গেলাম আর বললাম কি হয়েছে আপনার? উনি আপনাকে কেন বকা দিল? আমার দিকে তাকিয়ে (কাঁপাকাঁপা কন্ঠে) বলল আমি উনার কাছে খেতে চেয়েছিলাম কিন্তু উনি আমাকে ধমক দিল। আমি তাকে আমি যেখানে চা খাচ্ছিলাম সেই দোকানে তাকে নিয়ে এলাম। তারপর তাকে বললাম আপনার পরিবার কোথায় আপনি পরিবারকে ছেড়ে কেন মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করছেন। উনি কোন কথা না বলে মাথাটা নিচু করে কান্না করছিল। আমি তাকে বললাম আপনি কান্না করবেন না ঠিক আছে আমি আপনাকে আর কোন কথাই বলছি না। তখন সেই ব্যক্তিটি আমাকে বলল বাবা আমার সবাই ছিল।আমার সুন্দর একটি পরিবার ছিল ছেলে-মেয়ে সবাইকে নিয়ে আমি খুব আনন্দে দিন কাটাতাম। হঠাৎ একদিন আমার স্ত্রী মারা যায়। আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আমি খুব একাকীত্ব বোধ করি। আমার ছেলের বিয়ে হয়েছে অনেকদিন হয়ে গেল তারা আমাকে খুবই যত্ন করত। কিন্তু হঠাৎ একদিন আমার বৌমার সাথে কথা কাটাকাটি হয় আমার ছেলে চাকরি থেকে এসে সব কথা শুনতে পেলে সে আমাকে বকা দেয়। সেদিন আমার ছেলে আমার গায়ে হাত তুলেছিল। কিন্তু আমি কিছুই মনে করিনি কারণ ও আমার ছেলে আমি খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম খুব ভেঙ্গে পড়েছিলাম। সেদিনের পর থেকে আমাকে তারা ঠিক মতন খেতে দিত না।


কিছুদিন এমন করতে করতে আমি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমি ডাক্তার দেখানোর কথা বললে আমার ছেলে বৌমা আমাকে শুধু সময়ের অজুহাত দেখায়। একদিন আমার বউমা আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় জানিনা ডাক্তার আমাকে কি ওষুধ দিয়েছিল। ডাক্তারের সেই ওষুধ খাওয়ার পর আমার শরীরের ছোট ছোট ঘা হতে শুরু করে আমার শরীর থেকে প্রচন্ড গন্ধ বের হতো এটি আমার ছেলে বৌমা সহ্য করতে পারত না। তাদের ভেতর খুবই ঝামেলা হতো আমাকে নিয়ে। সেদিন তো এতটা মাত্রাই হয়েছিল বৌমা আমার রাগ করে তার বাবার বাড়িতে চলে যায় ।সে বলে যায় আমাকে এই বাসা থেকে না বের করলে সে নাকি আর এই বাড়িতেই ফিরবে না। আমি আমার রুম থেকে সব শুনতে পাচ্ছিলাম কিন্তু আমার কিছুই করার ছিল না।


বৌমা তার বাবার বাড়ি যাওয়ার কিছুদিন পর আমার ছেলে আমার কাছে এসে আমাকে হাত জোড় করে বলল। তোমার জন্য আজ আমার সাজানো সংসার ভাঙতে বসেছে। তুমি মরতে পারো না এত কিছু শুনেছো তারপরেও তুমি এ বাড়িতে থাকো কি করে। আমি হলে তো মরে যেতাম না হয় সবকিছু ছেড়ে চলে যেতাম। আমি কথাগুলো শোনার পর আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল। জানো বাবা আমার ছেলের উপর বিশ্বাস ছিল যে যাই হয়ে যাক আমার ছেলে আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না। কিন্তু যখন আমার ছেলে এসব কথা বলল আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। ছেলে কথাগুলো বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমি সেই রাতে কোন কিছুই যেন ভাবতে পারছিলাম না নিজেকে তখন অপরাধী মনে হচ্ছিল। আমার জন্য হয়তো তাদের সাজানো সংসার ভাঙতে বসেছে। তাই সেদিন কোনো কথা না ভেবেই রাতে আমি বাসা থেকে বেরিয়ে আসি আর বাড়িতে যাইনি।পথে পথে মানুষের কাছে হাত পেতে যা পাই তাই দিয়েই আমার দিন যে চলে যায়। কোনদিন না খেয়ে দিন কাটে কোনদিন শুকনো একটি রুটি খেয়ে চলে যায়।


তার এই জীবনের গল্পটি শোনার পর আমার চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসে। মনে মনে তার সেই ছেলের কথা চিন্তা করতে থাকি মানুষ এমন হতে পারে। যাই হোক আমি তাকে বললাম কিছু খাওয়ার কথা সে আমাকে বলল আমি কিছু খাব না। আমি তাকে জোর করে সেখানে বসিয়ে রেখে দোকানে যত রকম খাবার ছিল সব তাকে দিলাম। আমার খুব ইচ্ছে ছিল তাকে মাংস ভাত খাওয়াবো কিন্তু আমার কপাল এতটাই খারাপ যে ওখানে কোন খাবারের দোকান ছিল না। এজন্য তাকে আর মাংস ভাত খাওয়াতে পারলাম না। বয়স্ক ব্যক্তিটি খেতে খেতে আমি তার জন্য কিছু ফল কিনে আনলাম। তার হাতে দিয়ে বললাম যে এগুলো আপনি খাবেন। সে প্রথমেই নিতে চাচ্ছিল না আমাকে বলল তুমি আমাকে খেতে দিয়েছো আমি খুশি তারপরও তুমি এগুলো কেন করলে। আমি তাকে কোন কথাই উত্তর দিতে পারলাম না শুধু একটি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম আমি আপনার ছেলের মত আপনার ছেলেই আপনাকে খেতে দিল। আমার কথাটি শোনার পর ওনার দুচোখ দিয়ে জল পরছিল উনি আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেই আমি ওনার হাতটি ধরে বসলাম। বললাম আপনি একি করছেন আমাকে অপরাধী করবেন না। আমি তার সাথে আরো কিছু সময় থাকার পর বিদায় জানিয়ে রওনা হলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।

আমি তার সাথে যেটুকু সময় ছিলাম সেই বয়স্ক ব্যক্তিটিকে মুখে একটু হাসি ফোটাতে পেরেছিলাম এটাই আমার জীবনের বড় পাওয়া। সেই হাসিটা আমার আজও মনে পড়ে। আমার কাছে তাদের এই হাসিটা সবথেক বেশি সুন্দর লাগে। শেষে একটা কথাই বলতে চাই আমাদের যে যার অবস্থার মধ্যে থেকে আমরা এই মানুষগুলোকে একটু যদি সাহায্য করতে পারি তাহলে তাদের জীবনটাও একটু হলেও সুন্দর হতে পারে।


আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!