শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো' গল্পের দশম পর্ব

in hive-129948 •  12 days ago 

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে 'শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো' গল্পের দশম পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-visoesdomundo-2494701 (1).jpg
সোর্স


সুলতানা, রাতুল, সুইটি তারা সবাই একসঙ্গে রাতের খাবার খাচ্ছিল। হঠাৎ খাবার খেতে খেতে সুলতানা বলে তার শরীর খারাপ লাগছে। সে খাবার টেবিল থেকে উঠে সোজা তার রুমে দিকে যেতে থাকে। তখনই হঠাৎ করে সুলতানা মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে যায়। রাতুল ও সুইটি তারা দৌড়ে এসে সুলতানা কে দ্রুত বেডে শুইয়ে দেয়। জলের সেটা সুলতানার মুখে দিতে থাকে কিন্তু তারপরেও সুলতানার জ্ঞান ফেরে না। তাই তারা দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডাক্তার সুলতানা কে দেখে তেমন একটা কিছুই বুঝতে পারে না। তাই তাকে কিছু টেস্ট দেয় ডাক্তার। ফাতেমা খুবই কান্নাকাটি করতে থাকে কারণ এই দুনিয়াতে তার মা ছাড়া আর কেউ নেই। হঠাৎ করে মায়ের এমন অবস্থা দেখে সে নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। সুইটি ফাতেমা কে সামলানোর চেষ্টা করে কিন্তু ফাতেমা অবুঝ শুধু মায়ের কথা বলতে থাকে। ডাক্তার সুলতানা কে জ্ঞান ফিরায়। সুলতানা জ্ঞান ফেরার সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পায় সে হাসপাতালে বেডের উপর শুয়ে আছে। সুলতানা রাতুলের কাছে জিজ্ঞাসা করে সে এখানে কেনো? রাতুল তাকে সবটাই খুলে বলে। সুলতানা বলে আমি একদম ঠিক আছি আমি বাড়িতে যেতে চাই। তখন রাতুল বলে ডাক্তার কিছু পরীক্ষা দিয়েছে সেগুলো করতে হবে আর দুদিন এখানে থাকতে হবে। সুলতানা বলে আমার কিছুই হয়নি সামান্য মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছি এর জন্য দুইদিন কেন থাকতে হবে? তুমি ডাক্তারকে বলো আমাকে ছেড়ে দিতে। রাতুল বলে তুমি চিন্তা করো না আমি সবটাই সামলে নেব তুমি এখন বিশ্রাম নাও।


পরের দিন ডাক্তার সুলতানার পরীক্ষা করে আশ্চর্য কিছু বিষয় দেখতে পায়। পরবর্তীতে রাতুলকে ডাক্তার বলে তার অনেক বড় রোগ হয়েছে। শুনে রাতুল ঘাবড়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার কে বলে কি হয়েছে সুলতানা?ডাক্তার অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর রাতুলকে জানায় তার ক্যান্সার হয়েছে উনি হয়তো বেশি দিন বাঁচবেন না। কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে রাতুলের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে সবকিছু অন্ধকার লাগে। রাতুল ডাক্তারের দুহাত ধরে বলতে থাকে এমন কথা বলবেন না। আপনারা তো ঈশ্বরের সমতুল্য ঈশ্বরের পরেই আপনাদের স্থান আপনারা চাইলে অবশ্যই তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন। ডাক্তার রাতুল কে বলে ক্যান্সারটা অনেক দিন তার শরীরের ভেতর বাসা বেধেছে। আমাদের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে আমরা চাইলেও তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারব না। যতদিন এই পৃথিবীতে থাকবেন ওনার ইচ্ছাগুলো পূরণ করার চেষ্টা করবেন। রিপোর্টগুলো নিয়ে ডাক্তারের রুম থেকে বেরোতেই সুইটির সঙ্গে দেখা হয়। সুইটি দেখতে পায় রাতুলের দুচোখে জল সঙ্গে সঙ্গে সুইটি রাতুল কে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে তোমার চোখে জল কেন? রাতুল সুইটিকে জড়িয়ে ধরে আর হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। সুইটি রাতুল কে বলে কি হয়েছে তুমি এমন কেন করছো সুলতানার কিছু হয়েছে?রাতুল সুইটিকে বলে সুলতানা আর বেশি দিন আমাদের মাঝে থাকবে না। সুইটি কিছুই বুঝতে পারে না। সুইটি বলে তুমি এমন কেন বলছো কি হয়েছে? রাতুল বলে তার ক্যান্সার হয়েছে ডাক্তার বলেছে সে আর বেশিদিন বাঁচবে না আমি এখন কি করবো আমার সবকিছু অন্ধকার লাগছে। আমি ওর সামনে যে কি করে বলবো যে তুমি আর বাঁচবে না। সুইটি বলে তুমি এমন ভাবে ভেঙ্গে পরো না কারণ তুমি ভেঙে পড়লে সুলতানা ও ভেঙে পড়বে নিজেকে শক্ত করো।


হাসপাতাল থেকে সুলতানা কে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাড়িতে আসার পর সবাই চুপচাপ থাকার কারণে সুলতানা রাতুল কে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে তুমি এমন মুখ অন্ধকার করে আছো কেন। আমার তো কিছু হয়নি তুমি এমন করলে কিন্তু আমার ভালো লাগবে না। ডাক্তার কি বলেছে কোন বড় কোন সমস্যা? রাতুল বলে কিছু হয়নি তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে ডাক্তার তোমাকে রেস্টে থাকার কথা বলেছে আর নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার কথা বলেছে। সুইটি সুলতানা কে বলে চলনা আমরা সবাই একদিন কোথাও যে ঘুরে আসি। সুলতানা বলে আমার কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু রাতুল বলে চলো আমরা সবাই কোথাও যাই। সবাই মিলে আনন্দ করবো খুব ভালো লাগবে। পরের দিন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে রাতুল সুইটি, সুলতানা,ফাতেমা তারা সবাই সমুদ্রে ঘুরতে যায়। সমুদ্র দেখে ফাতেমা অনেক খুশি হয় সুলতানা ও খুব খুশি হয়। সুলতানা রাতুল কে ধন্যবাদ জানায় কারণ সুলতানার পছন্দের একটি জায়গা হচ্ছে সমুদ্র। সে অনেকদিন ধরে স্বপ্ন দেখতো সমুদ্রে পাড়ে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের জল স্পর্শ করবে। তাদের এই সুন্দর মুহূর্তটা সুইটি ভিডিও করে রাখে এবং সবাই মিলে তারা একটি গ্রুপ ছবিও তোলে। সুলতানা জানতো না এসব তারা কেন করছে। সমুদ্রের জলে স্নান করে আনন্দ করে তারা চলে আসে হোটেল রুমে। ফ্রেশ হয়ে তারা সবাই মিলে খাবার খেতে যায়। খাবার খেতে খেতে সুলতানা কাশি দেয়। কাশি দিতেই মুখ থেকে রক্ত বেরিয়ে আসে তার হাতে এটি দেখে সুলতানা ঘাবড়ে যায়। রাতুল সেটি দেখতে পায় সঙ্গে সঙ্গে সুলতানা কে বলে কিছু হয়নি ওটা মাঝেমধ্যে হয়ে থাকে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। কিন্তু সুলতানা অবুঝ ছিল না সে ভালো করেই বুঝতে পারছিল তার হয়তো অনেক বড় কোন রোগ হয়েছে যেটা রাতুল তাকে বলেনি।


এরপর থেকে প্রায়ই সময় সুলতানা রক্ত দেখতে পেত। আর দিন যত যেতে থাকে সে ভিতর থেকে দুর্বল হতে থাকে। রাতুল সেগুলো মুখ বুঝেই দেখে যাচ্ছিল কিছুই বলতে পারছিল না। অবশেষে একদিন সুলতানা রাতুলকে এবং সুইটিকে জিজ্ঞাসা করে তোমরা আমার কাছ থেকে কিছু একটা লুকাচ্ছো। আচ্ছা বলতো, ডাক্তার কি বলেছে? রাতুল বলে নিয়মিত ওষুধ খেতে বলেছে আর রেস্ট নিতে বলেছে। তোমরা আমার কাছে মিথ্যা বলছো। আমার শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছে আমি দুর্বল হয়ে পড়ছি। তোমরা সত্যি কথা বল আমার কি হয়েছে? রাতুল কিছুই বলতে পারেনা সে মুখ বুজে কান্না করতে থাকে। সুলতানা তখন রাতুলকে বলে কি হয়েছে তুমি কান্না কেন করছ আমাকে সত্যিটা বল আমার কি হয়েছে? তখন সুইটি বলে তোমার ক্যান্সার হয়েছে ডাক্তার বলেছে তুমি বেশিদিন আর বাঁচবে না। কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সুলতানা মেঝেতে বসে পড়ে। সুইটি সুলতানা কে জড়িয়ে ধরে আর বলতে থাকে সব ঠিক হয়ে যাবে তুমি ভেঙে পড়ো না। সুলতানা হাউ মাউ করে কান্না করতে থাকে আর বলতে থাকে হে খোদা তুমি এ কোন পরীক্ষার মধ্যে আমাকে ফেললে। আমার সন্তান যে এতিম হয়ে যাবে ওর কি হবে? তুমি আমাকে কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখো আমার সন্তানকে মানুষের মতন মানুষ করার সুযোগটুকু আমাকে দাও। রাতুল বলে তুমি এমন করে কান্না করো না আমরা তো রয়েছি তুমি এমন করে ভেঙে পড়ো না। হঠাৎ তখন ফাতেমা চলে আসে তার মায়ের কাছে এসে দেখতে পায় তার মা কান্না করছে। মায়ের কাছে এসেই জিজ্ঞাসা করে মা তুমি কান্না কেন করছ? কোথায় কান্না করছি আমি তো কান্না করছি না। তাহলে মা তোমার চোখে পানি। ও কিছু না চোখে ময়লা পড়েছিল তার জন্য চোখে পানি। তুমি রুমে যাও আমি তোমার জন্য খাবার তৈরি করে নিয়ে আসছি।

আজ গল্পের পর্বটি এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

এই গল্পের দশম পর্বটা পড়ে আমার কাছে অনেক বেশি খারাপ লেগেছে। সুলতানার শরীরে এত বড় একটা রোগের বাসা বেঁধেছে অথচ এটা তারা কেউই বুঝতে পারেনি। সে আর বেশি দিন বেঁচে থাকবে না, এটা ভাবতেই তো অনেক খারাপ লাগছে। শেষ পর্যন্ত সুলতানা নিজেও জেনে গেল তার অসুস্থতার কথা। এখন শেষ পর্যায়ে কি হবে এগুলো দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

সুলতানার জন্য সত্যিই খুব খারাপ লাগলো। ক্যান্সার আসলে প্রথম স্টেজে ধরা না পড়লে,পরবর্তীতে আর কিছুই করার থাকে না। সুলতানা মারা গেলে তার মেয়েটা এতিম হয়ে যাবে। জীবনটা আসলেই অদ্ভুত। যাইহোক গল্পটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।