হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে পুরী জগন্নাথ মন্দিরে ভ্রমণ চতুর্থ পর্বটি উপস্থাপন করছি ।আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।
এরপর হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে কিছুটা সময় ঘুমিয়ে নিলাম। আমাদের পরের দিন জগন্নাথ মন্দিরের পূজা দেওয়ার কথা ছিল। তাইতো রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছিল না যে জন্য পুরীতে এসেছি সিটি কাল সকাল হতেই পূরণ হবে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে রাত শেষ হয়ে গেল নিজেই জানিনা। যাই হোক খুব ভোরে উঠে স্নান করে পরিষ্কার জামা প্যান্ট পড়ে বের হলাম জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। বাইরে প্রচন্ড কুয়াশা পড়েছিল। জগন্নাথ মন্দিরের পূজা দিতে গেলে খুব ভোরে যাওয়া উচিত কারণ সময় যতই পার হবে ততই ভক্তের সংখ্যা বাড়বে।
যাইহোক আমরা একটি টোটো ভাড়া করে জগন্নাথ মন্দিরে গেলাম। হোটেল থেকে জগন্নাথ মন্দিরে যেতে আমাদের সময় লেগেছিল মাত্র ১৫ মিনিটের মতো। আমরা টোটো থেকে যখন নামলাম তখন দেখলাম ভক্তরা দলে দলে মন্দিরে যাওয়ার জন্য ছুটছে। হাজার হাজার লোক এখানে। একটিবার আপনি হারিয়ে যান এই হাজার মানুষের মাঝে। তাহলে আপনাকে খুঁজে পাওয়া খুব কষ্টদায়ক হবে। তাই এখানে সব সময় খেয়াল রেখে চলতে হবে। আপনার সঙ্গে সাথী যারা এসেছে আপনি যেন তাদের সঙ্গেই থাকতে পারেন। এখানে কেউ দলে দলে নাম কীর্তন করছে। সত্যিই অপরূপ দৃশ্য নানান জায়গার নানান মানুষ দলে দলে জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথ দেব কে একটিবার দেখার জন্য ভিড় করছে।
আমি দূর থেকে মন্দিরের চুড় দেখতে পেলাম বুঝতে পেলাম আমরা মন্দিরের খুব কাছেই চলে এসেছি। অনেক বড় জায়গা জুড়ে মন্দিরটি অবস্থিত। আমি youtube ভিডিওতে জগন্নাথ দেবের মন্দির দেখেছি। কিন্তু আমি যখন স্বচক্ষে মন্দিরটি দেখতে পেলাম সত্যি বলতে এত সুন্দর লাগছিল সেটি বলার বাইরে। আমার ইচ্ছে ছিল যে মন্দিরের খুব কাছ থেকে মন্দিরের কিছু ফটোগ্রাফি করার জন্য কারণ অনেক দূর থেকে এসেছি হয়তো আর কোনদিন আসতে পারবো কি পারবো না এই স্মৃতিগুলো রেখে দেওয়ার জন্য ছবি তোলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো মন্দিরে ভেতরে ফোন নেওয়া নিষিদ্ধ। আমি জানিনা এটি করার কারণ। তাই আমি বাইরে যতটা সম্ভব মন্দিরে চারিপাশের ফটোগ্রাফি করলাম। আপনি যদি গোপনও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আপনি পারবেন না। কারণ এখানে এত পরিমাণে চেকিং করা হয় এক একজনকে যে আপনি ইচ্ছা করলেও এনাদের চোখ ফাঁকি দিতে পারবেন না। এখন আপনারা ভাবছেন যে যারা জানেনা এই বিষয়টি তাহলে তারা ফোনটি যখন নিয়ে যাবে তখন তারা কি করবে। তারা কি জগন্নাথ মন্দিরের ভেতরে না যে চলে আসবে। আমি বলব তারাও ভিতরে যেতে পারবে কিন্তু তার জন্য একটি সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।অনেক দোকান রয়েছে যেখানে আপনি আপনার ফোনটি এই দোকানে রেখে যেতে পারবেন এবং তারা আপনাকে একটি কার্ড দিয়ে দিবে। পরবর্তীতে আপনি যখন পূজা শেষ করে আসবেন তখন আপনি এই কার্ডটি দিয়ে আপনার ফোনটি নিতে পারবেন প্রতি পিস ফোনের মূল্য মাত্র ১০ টাকা।
মন্দিরের ভেতরে ঢুকতে হলে এখানে অনেক বড় লাইন দিয়ে তারপরে ঢুকতে হচ্ছে কারণ অসংখ্য অসংখ্য মানুষ এখানে হুট করে গেলে মন্দিরের ভিতরে ভীড় হবে। যার কারণে এখানে একটা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে অল্প অল্প করে লোক ভেতরে প্রবেশ করাচ্ছে যাতে ভিতরে ভীড় না হয়। আমি এখানে ছবি তুলেছি আপনারা দেখলে বুঝতে পারবেন যে কত বড় লাইনে দাঁড়িয়ে একটিবার জগন্নাথ দেবের মুখটি দেখার জন্য তারা কষ্ট করছে। এখানে প্রথম থেকে একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি যে প্রচুর পরিমাণে এখানে বানর রয়েছে। পথে-ঘাটে দোকানে যেখানে চোখ যাবে সেখানে আপনি দেখতে পারবেন বানর। আর আপনারা তো জানেন যে বানর কত বড় দুষ্টুমি করে থাকে। আমার সামনে একটি লোক কলা খাচ্ছিল হঠাৎ করে কোথা থেকে একটি বানর এসে ছো মেরে তার হাত থেকে কলাটি নিয়ে চলে গেল। যাই হোক অনেক কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে জগন্নাথ দেবের মুখ দর্শন করার পর আবারও ফিরে এলাম। এত কষ্ট করে যখন আমরা এখানে এসেছি তখন এখানে প্রসাদ না খেয়ে কি করে আসতে পারি। কারণ এখানে শুনেছি যে মা অন্নপূর্ণা স্বয়ং নিজেই এখানে প্রসাদ রান্না করে থাকেন। যখন আপনি জানেন মাতা অন্নপূর্ণা স্বয়ং এখানে রান্না করে থাকেন তাহলে আপনি এত কাছে এসে আপনি এই প্রসাদ না খেয়ে কি করে যেতে পারেন। এখানে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন এটি বন্ধ ছিল যার কারণে আমরা বসে প্রসাদ গ্রহণ করতে পারিনি। কিন্তু কোন ব্যাপার না এখানে মন্দিরের দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিরা। আমাদেরকে বলল তাদেরকে কিছু টাকা দিলে তারা আমাদের হোটেলে প্রসাদ পৌঁছে দেবে।
ক্যামেরা পরিচিতি:oppo
ক্যামেরার মডেল:oppo A79 5G
ক্যামেরা দৈর্ঘ্য:4.05mm
তারিখ:১৫.০১.২০২৪
সময়: ০৫.১৮মিনিট
স্থান: ওড়িশা
আমরা চিন্তা করে দেখলাম এটাই হয়তো ভালো কারণ এখানে কখন প্রসাদ গ্রহণ কখন করব জানিনা তার থেকে হোটেলে নিশ্চিন্তে আমরা প্রসাদ গ্রহণ করতে পারবো এটাই ভালো হবে। তাই তাদেরকে কিছু টাকা দিয়ে আমাদের হোটেলের ঠিকানাটি দিয়ে দিলাম আর আমরা সেখানে কিছু সময় ঘুরাঘুরি করে আবারো হোটেলে ফিরে এলাম। হোটেলে আসার পর খুব ক্ষুধা লেগে গিয়েছিল মনে মনে ভাবছিলাম কখন সেই প্রসাদ আসবে এই ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম নিজেই জানিনা। হঠাৎ রুমের কলিং বেল বেজে উঠলো আমি দরজা খুলতেই কাকিমা বলল যে প্রসাদ চলে এসেছে আমরা প্রসাদ খেতে পারি। আমি শুনে দাদা দিদি সবাইকে বললাম দ্রুত খেয়ে নেওয়ার কথা কারণ প্রচুর ক্ষুধা লেগে গিয়েছিল। হাতমুখ ধুয়ে সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলাম প্রসাদ খাওয়ার জন্য যে দেখলাম যে পরিমাণে প্রসাদ তারা দিয়েছে তা আমার একার হবে। আমি দিদিকে বললাম এই প্রসাদ কতজনে খাবে? দিদি আমাকে বলল ছয়জনে খাবে। আমি দিদিকে বললাম এ তো আমার একারই লাগে। দিদি আমাকে ধমক দিয়ে বলল এমন কথা বলতে হয় না। যতটুকু পেয়েছ ততটুকুই ঈশ্বরের নাম নিয়ে খেয়ে নাও। আমি কোন কথা না বলে সব আইটেম দিয়ে অল্প অল্প করে একবারে মাখিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। আমি মনে মনে ভাবছিলাম যে আমার বাইরে যে আবারো খেতে হবে। এই ভাবতে ভাবতে যখন আমি প্রথম প্রসাদ মুখে দিলাম তখন আমার মুখ থেকে একটাই শব্দ বের হচ্ছিল জাস্ট ওয়াও। মনে হচ্ছিল আমি অমৃত খাচ্ছি কারণ এই প্রসাদের স্বাদ পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যাবে না। কারণ একটাই যে এখানে মাতা স্বয়ং প্রসাদ রান্না করে থাকেন। আমি নিজেকে ধন্য মনে করলাম যে আমার এই মানব জীবনে আমি মাতা অন্নপূর্ণার হাতের রান্না খেতে পেরেছি। আমি যখন খাওয়া শেষ করলাম তখন আমার মনে হচ্ছিল যে আমি এত পরিমানে খেয়ে ফেলেছি যে আমার আর কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না। আমি অবাক হয়ে গেলাম যে এটি কিভাবে সম্ভব তখন আমি ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চাইলাম কারণ ঈশ্বর চাইলে সবকিছুই করতে পারেন । কারণ আমি বলেছিলাম যে পরিমাণে প্রসাদ তারা আমাদেরকে দিয়েছে তা আমার একার লাগবে খেতে। হয়তো ঈশ্বর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল প্রসাদ তুমি যতটুকু পাওনা কেন তাতেই তুমি সন্তুষ্ট থাকো।হয়তো কোনদিন এই ঘটনাটি আমি ভুলতে পারবো না আর এটি ভোলার কোন সম্ভাবনাই নেই। সেদিনের পর থেকে আমার ঈশ্বরের প্রতি আরো বিশ্বাস আর ভালোবাসা বেড়ে গেল।
পুরী জগন্নাথ মন্দিরে ভ্রমণের আজকের পর্ব পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই। পুরী জগন্নাথ মন্দিরে বেশ সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন। জগন্নাথ মন্দিরে মুহূর্ত গুলো বেশ সুন্দরভাবে উপভোগ করছেন । মন্দিরে চারপাশের পরিবেশ খুবই সুন্দর। আজকের পর্ব আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই । আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit