মরণ পুকুর (শেষ পর্ব)

in hive-129948 •  2 years ago 

আসসালামু আলাইকুম
আমি @sajjadsohan from 🇧🇩.

৮ই মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

২২শে জানুয়ারি, রবিবার।



মার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি।অনেকদিন ধরেই মাথায় একটা গল্প ঘুরপাক খাচ্ছে, একটা ভৌতিক গল্প নিজের মতো করে আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করব আশা করি ভালো লাগবে।


মরণ পুকুর

nightmare-1699071_1280.jpg

Image by Thomas Budach from Pixabay


সুনীল দপ্তর এবং তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর গ্রামবাসী সবাই তার ছেলেকে সন্দেহ করছে পরপর দুই দিনে চারজন মানুষ নির্মমভাবে হত্যা হলো। এইদিকে আশিস দত্ত পুরো পাগল অবস্থা সে কোনভাবেই বুঝতে পারছে না তার পরিবারে এটা কি হয়ে যাচ্ছে, সে দুদিন পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিল মানুষ তাকে সন্দেহ করলেও কিছু বলতে পারছিল না কারণ সে গ্রামের মোড়লের ছত্রছায়ায় রয়েছে।

কিন্তু ঠিক দুদিন পর রহস্যজনকভাবে ওই পুকুরে আশিস দত্ত লাশটাও ভেসে ওঠে, তখন গ্রামবাসী ভয় পেতে শুরু করে সুনীল দত্তের জমিতে কেউ আর যেতে চাইত না সবাই ভাবতো এই জায়গাটা অভিশপ্ত।

পুরো পরিবারের মৃত্যু হয়ে যাওয়ার পরে গ্রামের মোড়ল আশেপাশের সবাইকে একত্রিত করে তিনি একটা প্রস্তাব রাখল যেহেতু এই পরিবারের আর কেউ বেঁচে নেই আমি তাদের জমি জমা দেখাশোনা করব, তাদের ভিটেবাড়ির এখানে আমি একটা ফলের বাগান করব গ্রামবাসীরা এখান থেকে ফল খেতে পারবে আমার কোন আপত্তি নেই।

গ্রামবাসীর আসলে কিছু বলার ছিল না এখানে ক্ষমতা ছিল তার হাতে এছাড়া সবাই এখন ভয় পাচ্ছে এই বাড়ি এবং পুকুরটাকে। সবকিছু ঠিক যাচ্ছিল তার বাগান দেখাশোনা করার জন্য রাতে পাহারাদার রাখা হয়।


hands-984032_1920.jpg

Image by Simon Wijers from Pixabay


ঘটনা শুরু হয় কোন পাহানাদার দুই দিনের বেশি চাকরি করতে চায় না, পরপর ৬ জন এখানে পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু কেউ কোনো কারণ না দিয়েই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। শেষেরজনের বাড়ি সুনীল দত্ত বাড়ির কাছেই ছিল, তাই তাকে জমির কাছে আসতে হতো না সে তার ঘর থেকেই বাগান পাহারা দিত। তবুও সেই চাকরিটা করতে চায় না শেষে তাকে ভালোভাবে ধরা হলে সে কারণটা বলতে বাধ্য হয়।

কি হয়েছে বলোতো বাপু, কি সমস্যা বল তুমি তো তোমার ঘর থেকেই আমার বাগানটা দেখতে পারো, শেষে জানতে পারলো আশিস দত্ত তার স্বপ্নে আসে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় সে চাকরিটা আর করতে চায় না।

ব্যাপারটা তখন পর্যন্ত মোড়লের কাছে সিরিয়াস মনে হচ্ছিল না, ঠিক দু সপ্তাহ পর ওই পুকুরে মোড়লের ছোট ছেলের লাশ পাওয়া যায়, তখন মোড়ল ভয় পেতে শুরু করে সে আর বাড়ি থেকে বের হয় না তার পুরো পরিবার ভয়ে গৃহবন্দী হয়ে রয়েছে।

হঠাৎ করেই তার বাড়ির উঠোনে একজন লোক এসে দাঁড়ালো, লোকটার পরিচয় জানতে চাইলে সে বলে উঠলো আমি সেই কবিরাজ যে আপনার জন্য কালো জাদু করেছিল, মোড়ল কোনভাবেই চিনতে পারছে না কারণ সে যে কবিরাজ এর কাছে গিয়েছিল তিনি ছিল সুদর্শন এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, কিন্তু তার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সেই মানুষটা একটা জীবিত কঙ্কাল। যেন এখনই মারা যাবে এরকম, কিন্তু তার কথা শুনে বিশ্বাস করতে পারল তিনি ছিলেন সেই কবিরাজ।


mysterious-4830751_1920.jpg

Image by Sam Williams from Pixabay


হঠাৎ করে সেই কবিরাজের আগমন দেখে সে আশ্চর্য হয়ে যায়, কবিরাজ তাকে বলে যেই জিনের মাধ্যমে সুনীল দত্তের পরিবারকে শেষ করে ফেলা হয়েছিল, সকলের মৃত্যুর পর সেই জ্বীনদের দাবি মানতে পারেনি কবিরাজ, তাই এখন সেই জিনেরাই মূলত আশিস দত্ত রূপ ধারণ করে সকলকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখানে কবিরাজকেও ভয় দেখানো হয়েছে সেও ধুকে ধুঁকে মারা যাবে।

সেই সাথে মোড়লের পরিবারেরও কেউ এখানে বেঁচে থাকবে না। তখন মোড়ল বুঝতে পারে তার ছোট ছেলে মারা গেছে , এখন তার পরিবারে তিনি, তার বউ, এবং বড় মেয়ে রয়েছে। তার সম্পত্তির লোভের কারণে তার পরিবারে আরও তিনটা মানুষের অপমৃত্যু হবে। তিনি কবিরাজের কাছে এটা থেকে মুক্তি হওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করতে থাকে।

তখন কবিরাজ বলে এখানে আমার কিছু করার হাত নেই তুমি বরঞ্চ রাতের বেলা সুনীল দত্তের সেই পুকুরের কাছে যাও এবং তুমি জ্বীনদের কাছে মাফ চাও ওরা যদি তোমাকে মাফ করে দেয় তাহলে তোমার পরিবারও বেঁচে যাবে আমারও প্রাণ ভিক্ষে পাওয়া যাবে।

কবিরাজ যেখানে নিজেকেই বাঁচাতে পারছে না সেখানে মোড়লকে কি বাঁচাবে, মোড়ল তার পরিবারের কাউকে এ বিষয়টি জানায়নি সে ঠিক করলো রাতের অন্ধকারে সেই পুকুরের কাছে একা যাবে, গভীর রাতে সে পুকুরের কাছে যায়। সে রাতে আর মোড়ল বাড়ি ফিরে আসেনি। ঠিক একদিন পর সে পুকুরে ভেসে ওঠে মোড়লের লাশ।

মোড়লের মৃত্যুর পর তার পরিবারের আর কোনো ক্ষতি হয়নি, মোড়লের মৃত্যু দিয়েই এই কালো জাদুর প্রভাব শেষ হয়ে যায়।

পরবর্তী সময়ে অনেকেই আত্মহত্যা করার জন্য এই পুকুরে ঝাপ দিয়েছে বটে তবে জ্বীনের দ্বারা কোন ক্ষতি হয়নি। তবে এখনো সেই পুকুরে কেউ যায় না, সেই পুকুরটা আজও সকলের কাছে পরিচিত মরণ পুকুর নামে।

সবাইকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আমার মরণপুকুর গল্পটির সিরিজ গুলো পড়ার জন্য, আজকের এই পর্বের মধ্য দিয়ে এই গল্পের শেষ হলো সকলকে আবারো ধন্যবাদ জানাই।

এই গল্পের পূর্বের পর্বগুলো: মরণ পুকুর , মরণ পুকুর (দ্বিতীয় পর্ব)



আমি কে?

আমি সাজ্জাদ সোহান
আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একজন শিক্ষার্থী। আমি ঢাকাতে বসবাস করি। আমি ট্রাভেল করতে অনেক ভালোবাসি, এছাড়া অবসর সময়ে মুভি দেখি, ফটোগ্রাফি করি, গান করি। আমি একটু চাপা স্বভাবের তাই কম কথা বলি কিন্তু আমি একজন ভালো শ্রোতা। ভালোবাসি নতুন জিনিস শিখতে, মানুষকে ভালবাসি তাই মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি।


@sajjadsohan (1).gif


image.png



logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png



VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png


image.png

115.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

image.png

শুনেছি মানুষ মৃত্যুর পরে নাকি আত্মা রুপে বা ভুত হয়ে ঘুরে বেড়ায় ৷ আসলে কি সেটা বাস্তব না কি কল্পনা জানি না ৷ তবে এই গল্পে কবিরাজ কি এমন করেছে যে এতো গুলো মৃত্যু হলো ৷
তবে আসলে এ মরন পুকুর যেখানে একেক করে কত জনের মৃত্যু ঘটলো ৷

এখানে জ্বীনদের দ্বারা ব্লাক ম্যাজিক করা হয়েছিল, সুনীল দত্ত ছেলেকে জিনের ধারা প্রজেস্ট করা হয়েছিল, এবং তার ছেলের মাধ্যমেই এ সকল মৃত্যু গুলো ঘটেছিল।

পাপ করলে পরে শাস্তি পেতে হবে সেটা চিরন্তন সত্য ছিল এবং আছে।মানুষের বেশি লোভ থাকা ভালো নয়, সেই লোভ মানুষকে অনেক ক্ষতির দিকে ধাবিত করে।শেষমেষ নিজেরও আর রক্ষা হলো না দেখে বেশ ভালো লেগেছে।তবে আফসোস একটি পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল একজন পাপিষ্ট লোকের পাপের কারণে।তবে আপনার গল্প থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।অনেক ধন্যবাদ আপনার অনেক সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

আপনি আমার গল্পের মূল বিষয়বস্তুটা বুঝতে পেরেছেন এজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, এবং আমার গল্প থেকে আপনি কিছু জিনিস শিখেছেন এটা জেনে আমি সত্যিই খুব খুশি হয়েছি।

মোড়লের মৃত্যু হওয়াটাই সঠিক ছিল। কারণ সে ই এতগুলো মানুষের মৃত্যুর কারণ। এই পর্বে খুব বেশি একটা ভয় না পেলেও ভেতরে যত সাসপেন্স ছিল সব পরিষ্কার হয়ে গেল। সত্যিই খুব ভাল ছিল আপনার এই গল্পটা।

গল্পটা আরো একটা পর্ব করতে পারলে এই পর্বটার মধ্যে ভৌতিক কিছু রাখার চেষ্টা করতাম, কিন্তু বেশি পার্ট হয়ে গেলে পাঠক পাওয়া যায় না তাই দুই পর্বটিকে একত্রিত করে ফেলার কারণে হয়তো ভয়ের মত অনুভূতিগুলো একটু কমে গেছে।